![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গোপন কথা রহিবে না গোপনে
০১.
হুদার বাপ। দূর সম্পর্কের নানা হলেও আমরা উনাকে হুদার বাপ বলেই ডাকতাম। প্রায় ছয় ফিট দুই ইঞ্চি লম্বা পালোয়ানের মত দেখতে লোকটির কাছাকাছি যাওয়া হয়নি কখনোই। ছোটবেলায় নানার বাড়ি বেড়াতে গেলে সবাই সতর্ক করতো- সাবধান! হুদার বাপের সামনে যাবেনা ভুলেও। আমরাও মুরুব্বীদের সতর্কবাণী মেনে "হুদার বাপ" শব্দটি শোনামাত্রই দৌড়ে নিরাপদ দূরত্বে আশ্রয় নিতাম।
মুরুব্বীদের কাছ থেকে শুনেছিলাম, হুদার বাপের দাঁতের মাড়ি ছিল খুব কালো। ফলে তিনি কোন কিছু বললেই মুখদোষ লেগে যেত এবং সেটা খুব দ্রুত ফলেও যেত। তাই নানার এলাকার সকল বয়সী মানুষ হুদার বাপকে দেখা মাত্রই পালাত। হুদার বাপকে নিয়ে একটা মজার গল্প প্রচলিত আছে। একবার ওই এলাকার এক কৃষক তার জমিতে ধান চাষ করলো। ধানের চারা রোপনের বেশ কিছুদিন পর ধান ক্ষেতে গিয়ে অলস কৃষক দেখলো ধানের চারার পাশাপাশি প্রচুর আগাছা বেশ সতেজ হয়ে বেড়ে উঠেছে। তার অলস মস্তিস্কে হঠাৎ বুদ্ধি খেলে গেল। সে ভাবল এত কষ্ট করে ধান ক্ষেতের আগাছা পরিস্কার করার কি দরকার, তার চেয়ে বরং হুদার বাপকে ডেকে এনে আগাছাগুলো দেখালে হুদার বাপ ওই আগাছা সম্পর্কে কিছু বললেই আগাছা গুলো মরে যাবে। যেই ভাবনা সেই কাজ। পরদিন সকাল সকাল হুদার বাপকে ডেকে আনা হল। ধান ক্ষেতের আলে দাঁড়িয়ে উক্ত কৃষক হুদার বাপকে আগাছা দেখিয়ে বললো- দেখলেন ভাই, ধানের চারা লাগাইলাম অল্প কয়দিন হইল, কিন্তু এই কয়দিনেই কি পরিমান জংলা (আগাছা) গজাইছে। কৃষকটি অপেক্ষায় আছে হুদার বাপ কখন বলবেন যে -"ওরে বাবা! দেখেছো কান্ড, এ্যাত্ত জংলা কি করে গজাইল।" আর অমনি সকল আগাছা মরে ছাঁই হয়ে যাবে। কিন্তু সবসময় পরিকল্পনা অনুযায়ী সবকিছু ঘটেনা। হুদার বাপ কিছুক্ষণ চুপ থেকে হঠাৎ বলে বসলেন- "ওরে বাবা! এ্যাত্ত জংলার ভেতরেও ধান গাছগুলো কি পরিমাণ মোটা হয়ে উঠেছে।" কৃষক লোকটির মাথায় হাত। অল্প কিছুক্ষণ পরেই দেখা গেল আগাছাগুলো সতেজ রয়ে গেছে আর ধানগাছগুলো আস্তে আস্তে নেতিয়ে পড়ে হলুদ হওয়া শুরু করলো।
সম্ভবত একেই বলে- হিতে বিপরীত।
০২.
জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদন্ডের রায়ের পরপরই সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দাবিতে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চ গঠিত হল। সাধারণ জনগণ একাত্মতা ঘোষণা করে ভীড় করলো সেখানে। দুদিন যেতে না যেতেই শাহবাগ মঞ্চ দখল হল সামন্তবাদীদের হাতে। সাধারণ জনতার আবেগ অনুভুতিকে পাশ কাটিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাদ দিয়ে সেখান থেকে ঘোষনা আসলো আমার দেশ নামক পত্রিকার সম্পাদক কে গ্রেফতার করে উক্ত পত্রিকা নিষিদ্ধ করতে হবে। জামায়াত নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানগুলোর একে একে তালিকা প্রকাশ করে উক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাজাকার ঘোষণা দেয়া হল। উপরন্তু সর্বস্তরে উক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো বর্জনের আষ্ফালন শুরু হল। সবাই ভাবলো এইতো মওকা। উপরোল্লিখিত কৃষকের মত কষ্ট করে আগাছা পরিষ্কারের দরকার কি, হুদার বাপ আছে না? এক গণজোয়ারেই এইসব প্রতিষ্ঠান ভেসে যাবে।
কিন্তু দৃশ্যপটে আমরা সাধারণ জনগনকে হুদার বাপ এর মত উল্টো ভুমিকায় হাজির হতে দেখি। একদিকে বর্জনের শ্লোগানে মুখে ফেনা উঠে শাহবাগে, অন্যদিকে আমারদেশ কপি প্রতি ১২ টাকা মূল্য রাখার পরও তরতর করে এর সার্কুলেশন বাড়তে শুরু করলো। মাহমুদুর রহমান একজন "বাইচান্স এডিটর" থেকে মজলুমের প্রেরণাশক্তিতে পরিণত হলেন। সরকার কর্তৃক গ্রেফতার হলো, রিমান্ডে গেলো, বন্ধ হল আমারদেশ কিন্তু মাহমুদুর রহমান আর আমার দেশের জনপ্রিয়তা ততদিনে সাধারণ জনগনের কাছে আকাশচুম্বি।
শাহবাগ কর্তৃক বর্জনের তালিকায় খুব উপরের দিকেই থাকা ইসলামী ব্যাংক স্কুল ব্যাংকিং-এ শ্রেষ্ঠ পুরস্কার গ্রহণ করলো বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান এর কাছ থেকে, খোদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর হাততালি সমেত উপস্থিতিতে। শাহবাগে অবাঞ্চিত দিগন্ত টিভি সারাবছর টিআরপির (টেলিভিশন রেটিং পয়েন্ট) তলানিতে থাকলেও ঠিক বর্জনের ঘোষণার পর পরই তরতর করে উপরের দিকে ওঠা আরম্ভ করলো। সর্বশেষ প্রকাশিত টিআরপিতে মিশ্র ঘরানার চ্যানেলগুলোর মধ্যে সংবাদ শাখায় শীর্ষে রয়েছে দিগন্ত টেলিভিশন। জামায়াত নিয়ন্ত্রিত অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোও কি এইভাবেই উঠে আসবে?
কবে আবার না শুনি মুখে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি সমেত ইমরান এইচ সরকার ছিল শাহবাগে জামায়াতের চর। জামায়াতের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবসায়িক সাফল্য এনে দিতেই সে এই বর্জন নাটক মঞ্চস্থ করেছিল।
বিপরীতে হিত, নাকি হিতে বিপরীত। আমরা আর অবাক হব না...।
©somewhere in net ltd.
১|
২২ শে এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৫
মেহেদী হাসান ভূঁঞা বলেছেন: বিপরীতে হিত, নাকি হিতে বিপরীত। আমরা আর অবাক হব না...।
কি ঘটতেছে কিছুই বুঝবার পারিনা।