নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সোহাগীর খুন, কুমিল্লা সেনানিবাস এবং প্রাসঙ্গিক কথা
প্রাসঙ্গিক বিধায় কুমিল্লা সেনানিবাস সন্বন্ধে অভিজ্ঞ জনৈক Imran Choudhury এর মূল্যায়ন কপিপেস্ট করা হল...
গত রবিবার অর্থাৎ ২০ মার্চ তারিখে কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের এক ছাত্রীর লাশ উদ্ধার হয়। মেয়েটিকে বলৎকারের পর অত্যন্ত নৃশংস উপায়ে খুন করা হয়। হত্যার ধরণটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। সোহাগী নামের সেই মেয়েটির উপর এমন অনাবশ্যক নিপীড়ন করা হয়েছে, যা বিশ্লেষণ করলে একে নেহায়েত একটি ‘ওয়াক ইন রেপ’ বলে মনে হয়না। এই পয়েন্টটি খেয়াল রাখার মতো।
যাহোক, অনলাইনে এই ব্যাপারে হেলদোল শুরু হয় আরও পরে। ঘটনাটি আমার গোচরীভূত হয় মঙ্গলবার। তখনও মূলধারার প্রচারমাধ্যমে সোহাগীর কোন খবর আসেনি। মঙ্গলবার স্রেফ অনলাইনে একজন হিজাবী মেয়ের নৃশংস হত্যার ব্যাপারে তথাকথিত প্রগতিশীল ও নারীবাদীদের শীতল মনোভাব নিয়ে কটাক্ষ চলছিলো।
কিন্তু বুধবার, অর্থাৎ গতকাল থেকেই আমার নজরে এলো সোহাগীর ব্যাপারে না হোক, সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি বিষয় নিয়ে অনলাইনে নতুন মুদ্দা খাড়া করানো হলো। কিছু পরিচিত ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে সোহাগীর হত্যার পেছনে সেনাবাহিনীকে দায়ী করার চেষ্টা করতে দেখা গেলো। প্রথমে যদিও কেবল সেনানিবাসের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সেনাবাহিনীর ব্যর্থতার আরোপ দেয়া হয়েছিলো। দিন গড়াতে গড়াতে দেখা গেলো, অনেকেই বলতে চাইছেন, সেনাবাহিনীই সোহাগীর ধর্ষণ ও হত্যার পেছনে প্রত্যক্ষভাবে দায়ী।
কুমিল্লা সেনানিবাসের ভৌগলিক অবস্থিতি
সেনাবাহিনী এই ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত কী না, সেটা নিয়ে কিছু বলা অর্থহীন। তবে সেনানিবাসের নিরাপত্তা বিধানে সেনাবাহিনীর উপর ঢালাও আরোপ দেয়ার আগে আমাদের জানতে হবে কুমিল্লা সেনানিবাস ও এর প্রকৃতি সম্পর্কে। এই সেনানিবাসের সাথে অন্য সেনানিবাসের মূল পার্থক্য হচ্ছে, এর বুক চিরে চলে গেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও সিলেট-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। সিলেট অভিমুখী সড়কটি সেনানিবাসের ভেতরেই চট্টগ্রাম অভিমুখী গ্র্যান্ড ট্রাংক রোডের সাথে যুক্ত হয়েছে। ষ্টেশন সদরদফতর থেকে শুরু করে বেশ কিছু স্থাপনার অবস্থান একেবারেই মহাসড়কের লাগোয়া। সেনানিবাসের মধ্যে অথবা গা ঘেঁষেই রয়েছে বেসামরিক বাজার, আবাসিক এলাকা; যা সেনানিবাসের নিরাপত্তায় বাড়তি ঝুঁকি আরোপ করে। এমন স্থানে বিশেষ নিরাপত্তা প্রদান করা যেমনি দুরূহ, তেমনি তা নিশ্চিত করতে গেলেও বেসামরিক প্রশাসনের সাথে সেনা প্রশাসনের টানাপড়েন শুরু হয়ে যায়। মোটকথা, এই সেনানিবাসে গেট দিয়ে, চেকপোস্ট বসিয়ে যদি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যাওয়া হয়, তবে মহাসড়কগুলো যানজটে ফেঁসে থাকবে সর্বদা। যারা এই বিষয়টা সম্পর্কে অবগত, তারা নিরাপত্তার শৈথিল্যের জন্য সেনাবাহিনীকে দায়ী করার আগে দুইবার ভাববে।
কুমিল্লা সেনানিবাস নামে সমধিক পরিচিত ময়নামতি সেনানিবাস প্রথম স্থাপিত হয় ১৯৪৩ সালে কুমিল্লা শহর থেকে খানিকটা উত্তরপশ্চিম দিকে। এটি স্থাপিত হয়েছিলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় জাপানের বিরুদ্ধে মিত্রশক্তির যুদ্ধ প্রচেষ্টায় মোতায়েন করা ব্রিটিশ চতুর্দশ আর্মির প্রধান সেনাপতি জেনারেল উইলিয়াম স্লিমের সদর দফতর হিসেবে।
যুদ্ধের পর এই সেনানিবাস কার্যত বিরানই পড়ে থাকে। ১৯৪৭ সালে পূর্ববঙ্গের প্রধান সেনাধ্যক্ষের দায়িত্বে থাকা পরবর্তীতে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ফিল্ড মার্শাল মুহম্মদ আইয়ুব খানের ‘ফ্রেন্ডস নট মাস্টার্স’ বই থেকে জানা যায়, পাকিস্তান আমলের শুরুর দিকেও কুমিল্লা সেনানিবাস সম্পর্কে তিনি ভাবেন নি। তিনি বরং ঢাকার উত্তর দিকে রাজেন্দ্রপুরেই নতুন সেনানিবাস গঠনের উদ্যোগ নেন। পাকিস্তান আমলের শেষের দিকে ময়নামতিতে প্রথম একটি সেনাদল মোতায়েন করে পাকিস্তান। তবে এটি একটি ক্ষুদ্র লাইট ইনফ্যান্ট্রি ইউনিটের চেয়ে বেশি কিছু ছিলোনা।
বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর প্রথমে ময়নামতি সেনানিবাসে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমী স্থাপন করা হয়। তবে ১৯৭৬ সালে জেনারেল জিয়াউর রহমান ময়নামতি থেকে মিলিটারি একাডেমী সরিয়ে নিয়ে রক্ষীবাহিনী থেকে উদ্ধার করা ভাটিয়ারীতে তা স্থানান্তর করেন। এভাবেই কুমিল্লায় গড়ে ওঠে আজকের ৩৩ পদাতিক ডিভিশন।
আমি কুমিল্লা জেলারই সন্তান। ছোটবেলা থেকেই কুমিল্লা সেনানিবাস সম্পর্কে অনেক অলীক শিশুতোষ গল্প শুনেছি। যেমন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সব গোলাবারুদ নাকি এই সেনানিবাসে মাটির নিচে ভল্টে সংরক্ষণ করা হয়। এখানে এমন সংখ্যক বারুদ আছে, যা দিয়ে নাকি পুরা কুমিল্লা শহর উড়িয়ে দিয়ে একটি প্রকাণ্ড দীঘির জন্ম হতে পারে!
কুমিল্লা সেনানিবাসের কৌশলগত বিশেষত্ব
তবে নানান গাঁজাখুরি গল্পের যোগান দিলেও কুমিল্লা সেনানিবাস সম্পর্কে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে তথ্য বেশিরভাগেরই অজানা তা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে মাত্র পাঁচ মাইল দূরে অবস্থিত এই সেনানিবাসই বাংলাদেশের একমাত্র আক্রমণাত্মক সামরিক স্থাপনা। বাকি সব সেনাছাউনি সীমান্ত থেকে দূরে, মূলত রক্ষণাত্মক অবস্থানে অবস্থিত। বলা বাহুল্য, সীমান্তের লাগোয়া একটা আস্ত পদাতিক ডিভিশন পাক-ভারত সীমান্তে দেখা যায়, কারণ সেই সীমান্তে সবসময়ই যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করে। সীমান্তের এতো কাছে এতো বড় সেনাদল রাখা এমনিতেও দুনিয়াতে বেশ কমই দেখা যায়। আর এটাই কুমিল্লা সেনানিবাসের মূল কৌশলগত গুরুত্ব।
সম্ভবত এই কারণেই, বাংলাদেশের অন্য যেকোনো সেনানিবাসের তুলনায় ময়নামতি সেনানিবাসে অন্তর্ঘাতমূলক ঘটনা ঘটেছে সবচেয়ে বেশি। সেনানিবাস আর ভারতের প্রায় মাঝামাঝি বয়ে চলেছে গোমতী নদী। পাকিস্তান আমল থেকেই প্রায়শই বর্ষার সময় সেনানিবাস লাগোয়া গোমতী নদীর বাঁধ কোন কারণ ছাড়াই কেটে যেতো, যাতে পাহাড়ের উপর স্থাপিত ক্যান্টনমেন্ট না হলেও এর চারিদিক প্লাবিত হয়ে যাতে এটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিগত শতাব্দীর শেষ দিক পর্যন্ত বর্ষা এলেই নদীর বাঁধ ভেঙ্গে যাবার এই সিলসিলা জারী ছিল। কুমিল্লা শহরের বেশিরভাগ তরুণের হয়তো এই তথ্য জানা নেই।
সেনানিবাসের নিরাপত্তা সংহত করতে আগে গৃহীত ব্যর্থ পদক্ষেপ
আগেই লিখেছি, কুমিল্লা সেনানিবাস অন্যান্য সেনানিবাসের চেয়ে অধিক পরিমাণে বেসামরিক আবাদি দ্বারা ঘিরে আছে। নিয়ম অনুযায়ী, সেনানিবাসের নিজস্ব এলাকা তো বটেই, তার চতুর্দিকেও দেড়শ গজ চওড়া জমি চ্যাপ্টার্ড এরিয়া হিসেবে খালি রাখতে হয়, যাতে যুদ্ধ বা শান্তিকালীন উভয় সময়েই সেনানিবাসের নিরাপত্তা সংহত রাখা সম্ভব হয়। গত শতকের শেষের দশকে সেনানিবাসের সীমানা নির্ধারণ বিষয়ে নিষ্পত্তির জন্য উচ্চ আদালতে মামলা চলমান ছিল। ২০০০ সালে এই মামলায় সেনাবাহিনী জয়লাভ করলে সেনানিবাসের চারিদিকে চ্যাপ্টার্ড এরিয়া সহ নিরাপত্তা সংহত করার কাজ শুরু হয়। এর জন্য সেনানিবাসের ফটকসমূহ রাত বারোটার পর বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
কিন্তু এই সিদ্ধান্ত প্রবল বাঁধার সম্মুখীন হয়। বেসামরিক লোকজন এ নিয়ে হাঙ্গামা শুরু করে। তৎকালীন জিওসির কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে প্রতিবাদ ও দুয়োধ্বনিও চলে। পরিস্থিতি বেগতিক হয়ে পড়লে খোদ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী হাসিনা ওয়াজেদকে এতে হস্তক্ষেপ করতে হয়। এক পর্যায়ে সাধারণ জনগণের বাঁধার মুখেই সেনা কতৃপক্ষ বাধ্য হয় সেনানিবাসের প্রার্থিত নিরাপত্তা শিথিল করতে।
এরপর ২০১০-১১ সালেও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চওড়া করার সময় বেসামরিক ও সামরিক প্রশাসনের মধ্যে চাপানউতোর হয়। সেনাবাহিনী বিকল্প প্রস্তাব হিসেবে সেনানিবাসে ভারী যানবাহন ও জনগণের গমনাগমন কমাতে সেনানিবাসের দুই দিকে দিয়ে মহাসড়ক টানার প্রস্তাব করেছিলো।
একটি ভিন্নমতাবলম্বী বিশ্লেষণ
যাহোক, এতো কিছুর পরও সোহাগী হত্যাকাণ্ডই এখানে আলোচ্য মূল বিষয়। আমি আগেই বলেছি, সোহাগীকে হত্যার ধরণ, হত্যাকে কেন্দ্র করে সংঘটিত সংঘবদ্ধ প্রতিক্রিয়ার ধাঁচে তাৎপর্যপূর্ণ কিছু বিবেচ্য বিষয় আছে। প্রথমত, সোহাগীর লাশ সেনানিবাসের এলাকাতে পাওয়া গেলেও তাকে সেনানিবাসেই খুন করা হয়েছে কিনা, সে ব্যাপারে কিছু জানা যায়না। যতদূর জানি, সোহাগীর লাশ সেনানিবাসের অভ্যন্তরের কোন সংরক্ষিত এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়নি, বরং সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত এক রাস্তায় এক কালভার্টের নিচে পাওয়া গেছে। যদি এর সাথে সেনাবাহিনীর কেউ জড়িত থাকতো, তাহলে প্রথমত লাশ খুঁজেই পাওয়া যেতো না, এবং দ্বিতীয়ত, যদি খুঁজেও পাওয়া যেতো, তবে এমন কোন স্থানেই তা পাওয়া যেতো, যেখান থেকে সেনাবাহিনী বা সেনানিবাসের গায়ে আঁচড় লাগার সুযোগ সৃষ্টি না হয়।
সোহাগীর বিষয়ে সেনাবাহিনীর নীরবতা কি রহস্যময়?
যারা সোহাগীর বলৎকার ও খুনের ঘটনায় সেনাবাহিনীকে অভিযুক্ত করছে, তাদের সবাই এক্ষেত্রে মূল প্রতিপাদ্য হিসেবে এই ঘটনার বিষয়ে সেনাবাহিনীর নীরবতার দিকে ইঙ্গিত করছে। যদি নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে সেনা কতৃপক্ষ নীরবতার আশ্রয় নিতো, তাহলে আমি তাকে একটি পেশাদার বাহিনীর চরম অপেশাদার আচরণ হিসেবেই ধরে নিতাম। কিন্তু আমার সাধারণ কাণ্ডজ্ঞান অনুযায়ী এধরণের কাঁচা কাজ তারা করতো না। বস্তুত, সামরিক বাহিনী গণযোগাযোগের দিক থেকে যথেষ্ট কাঁচা। এর কারণ নিহিত আছে আমাদের সেনাবাহিনীর রক্তাক্ত ইতিহাসে। পৃথিবীতে এখনও টিকে থাকা আধুনিক জাতীয় সেনাবাহিনীসমূহের মধ্যে খুব কম সেনাবাহিনীই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মতো এমন রক্তপাত অতিক্রম করতে পেরেছে। বিগত শতকের সত্তুরের দশকের পুরোটাই এই বাহিনী আত্মঘাতী বিদ্রোহ, অভ্যুত্থান ও প্রচুর অনাকাঙ্ক্ষিত রক্তক্ষয়ের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করেছে।
এমনিতেই প্রকৃতিগতভাবে সামরিক বাহিনী গণযোগাযোগের দিক থেকে অপেক্ষাকৃত অনুদার। তার উপর অতীতে এতো রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থান সামলাতে গিয়ে সেনাবাহিনীর মধ্যে গণযোগাযোগ এড়িয়ে যাবার সাধারণ প্রবণতা দেখা যায়। এছাড়াও বেসামরিক শাসনের সময় যথাসম্ভব নিজেদের বাইরের জগত থেকে বিচ্ছিন্ন রাখার প্রবণতাও সেনাবাহিনীর এই নীরবতার পেছনে দায়ী। গণযোগাযোগের কৌশল সম্পর্কে ধারণাগত সীমাবদ্ধতার কারণেই সেনা সদর থেকে কিছু ব্যক্তি ও প্রচারমাধ্যমকে কুমিল্লা সেনানিবাসের ঘটনায় সংযম অবলম্বনের জন্য সেনা সদর থেকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
বাইরের কোন কারণ কি জড়িত থাকতে পারে?
এমনও হতে পারে, সোহাগীর খুন আসলে পুরো দৃশ্যপটে একটি গৌণ ও সহযোগী বিষয়। দুই দিন আগেও পত্রিকায় দেখলাম, প্রায় ৯২ বছরের পুরানো সামরিক বিধি বদলে সেনানিবাসের স্থাবর সম্পত্তির উপর সামরিক কতৃপক্ষের বদলে বেসামরিক কতৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ আরোপ করার বিষয়ে একটি আইনের খসড়া সশস্ত্র বাহিনীর আপত্তির মুখে মন্ত্রীসভা ফিরিয়ে দিয়েছে। এই আইন বলবত হলে সেনানিবাসসমূহের ভূসম্পত্তির উপর সামরিক ভূমি ও সেনানিবাস অধিদফতর এবং ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডসমূহের নিয়ন্ত্রণ কমে যাবে। এই উদ্যোগের পেছনে কে দায়ী, সেটা না জানা গেলেও সরকার এটির নথি ফিরিয়ে দিয়ে উচিত কাজই করেছে।
আমার প্রশ্ন হচ্ছে, সেনানিবাসের নিরাপত্তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে মানুষের মনে সেনাবাহিনী সম্পর্কে বিরূপ ধারণার জন্ম দিয়ে এই আইন গ্রহণে সরকার বা সামরিক বাহিনীকে মনস্তাত্ত্বিক চাপ প্রয়োগ করা, এবং ক্ষেত্রবিশেষে মানুষের সমর্থন ছিন্ন করিয়ে বাড়তি ফায়দা লাভের উদ্দেশ্যে কি সোহাগী হত্যার প্রসঙ্গকে কাজে লাগানো হচ্ছে?
উপসংহার
সোহাগীর খুনের সামনে-পেছনের অমীমাংসিত বিষয় নিয়ে আমার ধারণা দিলেও এই বিষয়ে খোদ আমি নিজেই নিশ্চিত নই। তবে এই বিষয়ে আমি নিঃসন্দেহ, যে এই হত্যার বিচার হতে হবে। ফুটফুটে মেয়েটি বয়সে আমার ছোট বোনের মতো। যে বা যারা এর জন্য দায়ী, তার চূড়ান্ত শাস্তি ছাড়া আর কোন কিছু আমার কাম্য হতে পারেনা। তবে উপরিউক্ত বিষয়সমূহ মদ্দেনজর করলে আমার একটা আশা থাকবে যে, আমরা সাধারণ মানুষ যেন এই হত্যাকাণ্ডের উসিলায় আরেকটি আত্মঘাতী কদম না ফেলি। একটি ফুটফুটে মেয়ের খুনের বদলা যেন কোনোভাবেই জাতীয় প্রতিরক্ষার জন্য অত্যন্ত কৌশলগত একটি সেনানিবাস তথা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য কোন লিঞ্চিং মবে পরিণত না হয়। যাদের জন্য বিদেশে বাংলাদেশ বিরলতম কিছু সম্মান, শ্রদ্ধা ও মর্যাদায় ভূষিত হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে বাংলাকে একটি দূরদেশ কতৃক সম্মানসূচক রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা প্রদান; তারা আমাদের কাছে ন্যূনতম দায়িত্ববোধ প্রত্যাশা করতেই পারে।
যখন আমি এই লেখার মুসাবিদা করছি, তখন ক্যালেন্ডারের পাতায় এসেছে ২৫ মার্চ। এই রক্তস্নাত দিনের কসম, আমাদের বুঝতে হবে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী আর বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কোনোভাবেই এক নয়। যারা এমন তত্ত্ব প্রচার করে, তাদের সদুদ্দেশ্য সম্পর্কে আমার ভরপুর সন্দেহ আছে। সেনাবাহিনী দেখলেই নাক উঁচু করা তাদের সাজে, যাদের সাথে সেনাবাহিনীর গোষ্ঠীগত বিবাদ রয়েছে। একজন তরুণ, কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রের সাথে সেনাবাহিনীর কোন গোষ্ঠীভিত্তিক দ্বন্দ্ব থাকতে পারে না। বরং তরুণদের থাকতে হবে একটি সচেতন ও সচল বর্ম হিসেবে, যা বর্মে রাষ্ট্রবিরোধী যেকোনো প্রচেষ্টা প্রতিহত করবে।
ব্যক্তিগতভাবে আমি কোন দিক থেকেই সেনাবাহিনীর সুবিধাভোগী নই। আমার তেমন কোন রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়স্বজনও সামরিক বাহিনীতে কর্মরত নেই, যে আমি গোষ্ঠীগত স্বার্থের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষে ওকালতি করতে নেমেছি। আমি বাংলাদেশকে মধ্যযুগে আড়াই শতাব্দী যাবত বলবত সমৃদ্ধশালী স্বাধীন বাংলা সালতানাতের ভাবগত উত্তরসূরি হিসেবেই দেখি। আমার এই দৃষ্টিকোণ একজন পুনরুজ্জীবনবাদীর দৃষ্টিকোণ। একজন পুনরুজ্জীবনবাদী হিসেবে নেহায়েত দেশপ্রেমের বশবর্তী হয়েই আমি এই দীর্ঘ আলোচনাটির অবতারণা করলাম…।
২৬ শে মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৩:৩৩
ক্ষতিগ্রস্থ বলেছেন: ধন্যবাদ প্রকাশ রায়।
২| ২৬ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১:২৭
স্বামী বিশুদ্ধানন্দ বলেছেন: কেহই সেনাবাহিনীকে দোষ চাপানোর চেষ্টা করছে না ! অপরাধী রাজনৈতিক নেতা, সেনা সদস্য, প্রভাবশালী, বা যেই হোক না কেন তার বিচার চাইছে !
২৬ শে মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৩:৩২
ক্ষতিগ্রস্থ বলেছেন: আপনি নিশ্চিত এ বিষয়ে? কিন্তু গভীর বেদনার সাথে আমি এই জিনিসটি এই সামুতেই দেখতে পাচ্ছি।
সামুতে এই মুহূর্তে নেফার সেটি এর দৃষ্টি আকর্ষণী পোস্টে এমন অভিজ্ঞতা আমি লাভ করেছি। ঐ পোস্টে আমার ১১৮, ১২০, ১২২ ও ১২৫ নম্বর কমেন্ট ও তার উত্তর দেখুন, আপনার বক্তব্য পাল্টাবে আশা করি। আমি বরং ১২৫ নম্বর কমেন্টটি আপনার জন্য কপিপেস্ট করি...
----------------------------------------------------
---------------------------------------------------
ক্ষতিগ্রস্থ বলেছেন: আপনার সেনাবিদ্বেষের মাত্র কয়েকটা নমুনা দেয়া হল...
১) জ্বি, দেশের সবথেকে নিরাপদ স্থান বলা হয় ক্যান্টনমেন্টগুলোকে তেমনই একটা ক্যান্টনমেন্টে ধর্ষণ করে হত্যা করা হলো কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে ইতিহাস বিভাগের ২য় বর্ষের ছাত্রী সোহাগী জাহান তনুকে।
২) চেষ্টা করলে তারা ক্যান্টনমেন্টের মধ্যে তনুকে ধর্ষণ করে হত্যাকারীদের ঠিক খুঁজে বের করতে পারবে।
< ক্যান্টনমেন্টে ধর্ষণ করে হত্যা করা হলো - পুলিশ জানেনি, কোন সাংবাদিক জানেনি, আপনি নিশ্চিত জেনে গেলেন তনুকে ক্যান্টনমেন্টেই ধর্ষণ ও খুন করা হয়েছে? খুন-ধর্ষণ করে বাইরে থেকে এখানে এনে লাশ ফেলে গেছে, এটা হতে পারে না? এত বেশি নিশ্চিত জেনে গেলে অসুবিধা হতে পারে, পুলিশ তখন আপনাকে জেরা করতে নিয়ে যেতে পারে!
৩) ২৯ নম্বর মন্তব্যে বলেছেন, লেখক বলেছেন: ক্যান্টনমেন্টের নীরবতা বিষয়টাকে সিভিল আর আর্মিকে মুখোমুখি করে দিচ্ছে। আমি পুরোপুরি বিশ্বাস করি আর্মি ইন্টেলিজেন্স যদি চায় খুব দ্রুতই অপরাধীকে বের করতে পারবে। তাদের উচিত রাখঢাক না করে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে সবকিছু প্রকাশ করা।
< আর্মি আপনার মুখোমুখি হয়নি, আপনি ব্লগে মুখ খিচড়ে এক গাদা হিংসা নিয়ে সেনাবাহিনী মুখোমুখি দাড়িয়ে গেলেই আপনার জবাব দিয়ে দেবে? কি বলবে? রাজনীতিকদের মত সত্যানুসন্ধানের ধার না ধরে বলে দেবে যে, না, লাশ ক্যান্টনমেন্টে পাওয়া যায়নি বা এতে আর্মি জড়িত না! পুলিশ তাদের তদন্ত করছে, আর্মিও তাদের তদন্ত করছে, তদন্ত শেষ হোক। সেনাবাহিনী কোন মিডিয়া চালায় না, ব্লগও না। সেই অধিকার আপনার, সেই অধিকার এবিউজ করার অধিকারও আপনার, যেটা করছেন, সেনাবাহিনী ঢাকের বাদ্য না...
৪) ৪৯ নম্বর মন্তব্যের জবাবে লিখেছেন, দেখা যাক ক্যান্টনমেন্টবাসীরা আমাদের তনু হত্যার বিচারের জন্য কতটুকু সাহায্য বা কতক্ষণ রাখঢাক করে।
< আর্মি কোন ঘটনায় মাইক নিয়ে নেমে পড়ে 'একটি বিশেষ ঘোষনা' বলে চেচাতে থাকে যে, রায় দিয়ে দিলেন আর্মি রাখঢাক করছে?
৫) ৭৫ নম্বর প্রশ্নের জবাবে লিখেছেন, আর ক্যান্টেমেন্টেই যখন ধর্ষণ করে হত্যা করা হয় তখন তো তারা সুযোগটা ভালোভাবে পেয়ে যায়। ...বিষয়টা যখন ক্যান্টনমেন্টের মত স্থানে হয়েছে ...তিতো হলেও সত্যি যে সবসময়ই শোনা যায় বাঙালি সেটেলার কর্তৃক পাহাড়ি ধর্ষণে সেনাবাহিনীর ইন্ধন থাকে। এটা যদি সত্যি হয়ে থাকে তবে বলতে হবে পাকবাহিনী থেকে তাদেরকে আলাদা করে দেখাটা অনেক কষ্টসাধ্য বিষয় হয়ে দাড়াবে।
< সুশিল আর থাকা হল না, ছত্রে ছত্রে সেনাবিদ্বেষের নোংরা শ্বদন্ত বেড়িয়ে পড়েছে...
৬) Mahmudur Rahman বলেছেন: vai cantonment nirapod elakay.....ghotonata ghotse CCA te NOt CC a.Cantonment area and cantonment is a vinno jinish.....
লেখক বলেছেন: ভিন্ন জিনিসটার মধ্যে কি খুব পার্থক্য? ক্যান্টনমেন্টের বাইরে অনেক দূর পর্যন্ত সেনাবাহিনীর দখলে থাকে। তাদের চেকপোস্ট থাকে, গার্ড থাকে, টহল গাড়ী থাকে, সিসি ক্যামেরা থাকে। পার্থক্য খুব বেশি থাকে না।
< Mahmudur Rahman একটি অত্যন্ত বাস্তব ও উপযুক্ত যুক্তি দেখিয়েছেন, ক্যান্টনমেন্ট ও ক্যান্টনমেন্ট এলাকা এক না, তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ভিন্ন, অথচ আপনি এতটুকু আমলে নিলেন না, উড়িয়ে দিলেন। ঢাকায় কচুখেত বাজার ক্যান্টনমেন্ট এলাকার মধ্যে পরেছে, কিন্তু তা ক্যান্টনমেন্টের নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে না। এই বস্তব সত্যটা প্রত্যাখ্যান করা থেকে আপনার সেনাবিদ্বেষটা অনায়াসে বেড়িয়ে পড়ে।
--------------
< ব্লগিং কোন গালাগালের জায়গা না, আমাকে ফাজিল বলা বা ব্রেন ক্ষতিগ্রস্থ বলা দিয়ে আমার কিছু আসে যায় না, কিন্তু আপনি আপনার জাত চিনিয়ে গেলেন। আপনার জাতটাতো আপনারই, সেটা চেনাতে থাকুন... এবং সুস্থ থাকুন।
৩| ২৬ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ১১:৫৪
প্রামানিক বলেছেন: লেখাটি পড়ে অনেক কিছু জানা হলো। ধন্যবাদ আপনাকে।
২৬ শে মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৩:৩৪
ক্ষতিগ্রস্থ বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ২৬ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১:২১
ডাঃ প্রকাশ চন্দ্র রায় বলেছেন: অনেক কিছু অজানা তথ্য জানতে পারলাম আপনার তথ্যবহুল পোষ্টটি পড়ে এজন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।।