নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বেলা প্রায় ৫ টা। বেশ কিছু বই কিনে, অনেক বইয়ের উপর লোভাতুর দৃষ্টি নিক্ষেপ করতে করতে সোহরাওয়ার্দী থেকে বেরিয়ে তারপর ঢুকলাম বংলা একাডমী প্রাঙ্গনে। বারবার মিতুলকে অনুরোধ করছিলাম (আমার পিঠাপিঠি আন্টি) বলছিলাম “আরেকটা বই কিনে দাও না প্লিজ!” ও বলল আর টাকা নেই হাতে। আর আমার কাছেও টাকা ছিলো না তেমন।
যেতে যেতে সামনে পড়ল একটা ক্যান্টিন! ওকে কিছু খাওয়াতে বলার সাথে সাথেই ও রাজি হয়ে গেলো!
আমার খুশি আর দেখে কে! গিয়ে বসলাম ভেতরে! কিছু খাবার অর্ডার করে আমি কেনা বইগুলো উল্টে পাল্টে দেখতে লাগলাম পরম উৎসাহে।
অল্প সময়ের মাঝেই খাবার এলো। খাবার এর মানটা খুব সন্তষ্টিজনক ছিলো না। মনটা একটু খারাপ হলেও চালিয়ে নিলাম।
হঠাৎ পাশে ঝোলানো খাবারের মূল্য তালিকায় চোখ পড়তে চক্ষু চড়কগাছ! এ কি! যে না খাবার, তারাবার এত দাম! আমরা সেসবকথা ভাবতে ভাবতেই খাবার শেষ করলাম। কারণ দুইটা কলেজ ও ভার্সিটির প্রথম বর্ষে পড়ুয়া শিক্ষার্থীর কাছে সংখ্যাটা বেশ বড়ই ঠেকছিল। এবার বিল দেওয়ার পালা। খাবার যে লোকটি দিয়ে গিয়েছিলো তাকে জিজ্ঞেস্করি বিল কত হলো?
চমক আরো অপেক্ষা করছিলো আমাদের জন্যে! সেই লোকের কথা শুনে তো মাথা ঘুরে যাওার উপক্রম! আমরা যা হিসেব করেছি তার থেকে প্রায় দ্বিগুন দাম বলছে! আমি বিস্তারিত জানতে চাইলাম কোনটার কত টাকা হল। আশ্চর্য হয়ে লক্ষ করলাম কোন এক অদ্ভুত কারণে তিনি প্রতিটা আইটেমের দাম তিনি অনেক বড়িয়ে বাড়িয়ে বলছেন!
আমরা অস্বাভাবিক দামের কথা জিজ্ঞেস করলে উনি বলেন যে এটা এভাবেই চলে আসছে! তারপর ক্যাশ কাউন্টারে গিয়ে জিজ্ঞেস করলে কাউন্টারের ভদ্রলোক রীতিমত আমাদের উপেক্ষা করলেন আর পাশের একজনকে বললেন, আমাদের সাথে কথা বলতে!
তার সাথে কথা বলার আগে আমি মূল্য তালিকার একটা ছবি তুললাম এবং লক্ষ্য করলাম যে সেই ভদ্রলোক আড়চোখে আমার ছিবি তোলা দেখলেন। তারপর উনার কাছে আমি ক্যাশ মেমো চাইলে উনি বললেন ক্যাশ মেমো দেওয়া হয় না এখানে। বললাম ভাই খালি কাগজে হলেও লিখে দিন আমাকে, উনি তাতেও রাজি হলেন না এবং রীতিমত তাচ্ছিল্যের সাথে আবারো শুনিয়ে দিলেন যে এটা এভাবেই চলে!
(মিতুল ইতিমধ্যেই তার হাত খরচের একটা বড় অংশ দিয়ে বিলটি পরিশোধ করে দিয়েছিলো)
মন খারাপ করে বের হয়েই ভাবলাম কিছু একটা তো করা উচিৎ সেটা কার্যকর কিছু কোক আর না হোক।
সামনের পুলিশের সদস্যকে জানানোর কথা মাথায় এলো। যেই ভাবা সেই কাজ, গিয়ে বললাম পুলিশ সদস্যদেরকে। কিন্তু উনি আমাদেরকে বললেন তারা এসব ব্যাপারে কিচ্ছু করতে পারবেন না। যদি করতে যান তাহলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কা আছে বলে তাদের অনীহা স্পষ্ট করেন আমাদের কাছে। এবং শুনিয়ে দিলেন, তারা শুধুমাত্র “আইন-শৃঙ্খলার” ব্যপারটি দেখেন এবং আমরা যদি কোনকারণে “নিয়াপত্তাহীনতায়” ভুগি, তাহলে তাদের জানাতে, উনারা তাদের সর্বোচ্চ সেবা আমাদেরকে দিবেন!
কিন্তু আমাদের সেই সর্বোচ্চ সেবা গ্রহণে আমরা আগ্রহী না হওয়ায় উনারা নিজেদের কাজে গেলেন এবং আমাদের কে বাংলা একাডেমী কর্তৃপক্ষের কাছে নালিশ জানাতে উপদেশ দিয়ে গেলেন!
কিন্তু ততক্ষণে আমাদের মাথায় জেদ চেপে বসেছে, এর শেষ দেখব আজ। গেলাম তথ্যকেন্দ্রে, বললাম অভিযোগ করতে চাই। তথ্যকেন্দ্র থেকে একজন মহিলা আমাদের জিজ্ঞেস করল কি নিয়ে অভিযোগ করব। মোটামুটিভাবে ঘটনা শুনে তিনি আমাদের একটা রেজিস্টার বের করে দিলেন ও অভিযোগ লিখে ফেলতে বললেন। অভিযোগ দেখে তিনি একজনকে ফোন করলেন এবং আমাদেরকে একজন বড় কর্মকর্তার (ড. জালাল সাহেব) কক্ষ নির্দেশ করে দিয়ে বললেন সেখানে যেতে। বিশেষভাবে উল্লেখ করছি, তথ্যকেন্দ্রে যিনি ছিলেন তিনি যথেষ্ট সহযোগীতামূলক মনোভাবের অধিকারী ছিলেন এবং আন্তরিকতার সাথে কথা বলেন।
যাই হোক, গেলাম সেই বড় কর্মকর্তার ভবনে, তিন তলায় তিনি বসেন। ওনার কক্ষ খুজে বের করে তারপর প্রবেশ করলাম উনার কক্ষে। তাকে আরেকদফা পুরো ঘটনা বললাম এবং তিনি যথেষ্ট গুরুত্বসহ শুনছিলেন। তিনি আমাদের কাছ থেকে কত টাকার খাবার কত টাকা নেওয়া হয়েছে তা খাতায় লিখে নিজেই হিসেব করলেন এবং তিনি কাকে যেন ফোন দিলেন এবং আমরা তাকে যে পরিমান টাকা আমাদের কাছ থেকে বেশি নেওয়া হয়েছে বলে জানাই, তিনি সেই ব্যক্তিকে সমপরিমান টাকা নিয়ে ওনার কক্ষে হাজির হতে বলেন। তিনি আন্তরিকতার সাথে আমাদের খোজ খবর নিচ্ছিলেন এবং কি কি বই কিনলাম দেখলেন বলছিলেন, এদিকে আসলে কোথায় খেলে ভালো হবে ইত্যাদি উপদেশ দিচ্ছিলেন। উনার ব্যবহারে প্রতিমুহূর্তে মুগ্ধ হচ্ছিলাম!
এমন সময় একটি লোক কক্ষে ঢুকল, এবং অভিযোগ শুনে আমাদের কাছে টাকা বুঝিয়ে দিলেন। তিনি ছিলেন ক্যান্টিনের মালিক।
আমরা মনে সন্তুষ্টি নিয়ে বিদায় নেবার কালে বাংলা একাডেমীর কর্মকর্তা ভদ্রলোক আমাদেরকে আনন্দের সাথে একটা নিজের লেখা বই ও টেবিল থেকে একটা নোটপ্যাড উপহার দিলেন অভিযোগ স্মরণীয় করে রাখার কথা বলে।
বের হওয়ার পর মনটা যথেষ্ট উৎফুল্ল ছিলো। তিক্ত অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়েও কিছু ভালোমানুষের সন্ধান পাওয়ার আনন্দে!
১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১০:০৩
শোভনের শোভন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে ভাই
২| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১১:১৫
ওমেরা বলেছেন: আপনার এনার্জি আছে বলতে হয় ।
২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:৩৪
শোভনের শোভন বলেছেন: হা হা হা! তবে দিনশেষের অনুভূতিটা কি সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।
ধন্যবাদ ওমেরা আপনাকে।
©somewhere in net ltd.
১| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ৯:০৬
মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: শুভ ব্লগিং। শুভ হউক আপনার পথচলা।