নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মানুষের অবয়ব ধারী যেন না হই।

সুখী পৃথিবীর পথে

মানুষ হিসেবে জীবন উপভোগ করা।

সুখী পৃথিবীর পথে › বিস্তারিত পোস্টঃ

শাস্তি নয় সংশোধন, প্রেক্ষিত মৃত্যুদন্ড

২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:০১


কাম্য কি? অপরাধীর শাস্তি নাকি সংশোধন? প্রচলিত আইনে অপরাধীকে শাস্তি পেতে হয়। এবং শাস্তির মাত্রা অপরাধের ধরন অনুযায়ী নির্ধারিত হলেও নির্ণীত হয় না অপরাধের কারণ। অথচ শাস্তির মূল উদ্দেশ্য কি হওয়া উচিত? অপরাধের নির্মূলতা, অপরাধীর সংশোধন নাকি অন্যকিছু? যদি অপরাধীকে সংশোধন করা লক্ষ্য হয় তবে শাস্তি দেওয়ার আগে অপরাধ করার কারণ বিবেচনা করা উচিত। কেননা সকল অপারাধের পিছেনেই এক বা একাধিক কারণ থাকে আর এমন কোন মানুষ পাওয়া যাবেনা যিনি শুধু শুধু অপরাধ করেন। শুধুমাত্র শায়েস্তা করার জন্য অপরাধীকে শাস্তি দেওয়া মূল উদ্দেশ্য হতে পারেনা। কারণ প্রচলিত শাস্তির প্রথা অপরাধের বিস্তার সাময়িকভাবে দমালেও অপরাধীকে সংশোধিত হওয়ার ক্ষেত্রে তেমন ভূমিকা রাখতে পারেনা। তাই বিষয়টি অন্য ভাবে ভাবা উচিত । যেহেতু আমরা দাবি করি যে প্রানিকুলের মধ্য মানুষ সর্বশ্রেষ্ঠ বুদ্ধি-বিবেক সম্পন্ন প্রানি এবং মানুষের রয়েছে বিবেচনা বোধ। তাই অপরাধীর ক্ষেত্রেও বিবেচনা বোধ কাজে লাগাতে হবে। উদাহরন স্বরপ মনে করা যাক একজন ব্যক্তি কোন মানুষকে হত্যা করল এবং প্রচলিত আইনে তার বিচার হলো। বিচারের রায়ে হত্যাকারীকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হলো এবং তা কার্যকরী করা হল । অর্থাৎ হত্যাকারীকেও হত্যা করা হলো। কিন্তু এতে কি অপরাধ কমবে? আপাততঃ দৃষ্টিতে ধারণা করা যায় যে অপরাধ কমবে। মৃত্যুর শাস্তির ভয়ে কেউ খুন করতে চাইবেনা। কিন্তু উপযুক্ত পরিস্থিতির উদ্ভব হলে মানুষের মনে খুন করার আকাঙ্ক্ষা জাগ্রত হবে এবং সুযোগ পেলে খুন করতেও পারে। অর্থাৎ মানুষের মন থেকে খুনের ইচ্ছা দূর করা যাবেনা।

তাছাড়া একজন খুনিকে যখন মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয় এবং এই দন্ড কার্যকর করা হয় তখন তো তাকেও হত্যা করা হয়। শুধু প্রভেদ হচ্ছে যে খুনি খুন করেছিলেন নিজের স্বার্থে একক ভাবে আর আমরা সমাজের সবাই মিলে খুনিকে হত্যা করলাম বিচারের মাধ্যমে। যদিও আমরা বলি এটাতো বিচার। বিচারের মাধ্যমে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমি বলি যে কারণে (অপরাধে) একজন মানুষকে (যদিও সে খুনি) মৃত্যুদন্ড দেওয়া হলো, সে একই কারণ (অপরাধ) কি আমরা সবাই মিলে করলাম না? আপনি প্রশ্ন করবেন তাহলে কি অপরাধী শাস্তি হবে না? আমরা কি আবার সেই বর্বর যুগে ফিরে যাব? যখন কোন বিচার ব্যবস্থা ছিল না। ছিল জোর যার মুল্লুক তার। না। আমি তা বলছিনা। অপরাধের বিচার অবশ্যই হবে। তবে তা হবে অন্য ভাবে। ভেবে দেখুন যে খুনি সে হয়তো আপনার আমার চোখে ভয়ংকর লোক। বা যাকে খুন করেছে তার পরিবারের কাছে ঘৃনার পাত্র। অবশ্যই আমি আপনার সাথে একমত। সে খুন করে জঘন্য অপরাধ করেছে। তাই বলে কি খুনির সকল মানবিক গুণাবলী লোপ পেয়েছে? সে কি কারোরই প্রিয়জন নয়? তার কি একটিও মনুষ্যত্ব গুন অবশিষ্ট নাই? ভেবে দেখুন যে উক্ত খুনি তার বন্ধু বা মা-বাবা অথবা স্ত্রী-সন্তান ইত্যাদি এদের কাছে এখনও অতি প্রিয়জন। তাই যখন আপনি একজন খুনিকে বিচারের মাধ্যমে হত্যা করলেন তখন তো আপনি বা আমরাও তো খুনির আত্মীয় পরিজনদের নিকট খুনি প্রতিপন্ন হবো। তবে এখানে পার্থক্য হলো যে আমরা অপরাধী কে হত্যা করেছি আইনের সাহায্য। কিন্তু এটাওতো এক ধরনের হত্যাকর্ম।

তাহলে অপরাধীকে শাস্তি দেওয়ার উদ্দেশ্য কি হবে? সংশোধন না কি অন্যকিছু, যেমন প্রতিহিংসা চরিতার্থকরন ধরনের কাছা কাছি কিছু !
যদি সংশোধনের লক্ষে হয় তবে সংশোধনের ধাপ হতে পারে নিন্ম রূপঃ

১।অপরাধীকে অপরাধের ক্ষেত্র থেকে পৃথিকীকরনঃ অপরাধী ব্যক্তিকে মানসিক ভাবে অসুস্থ হিসেবে গণ্য করতে হবে। যেহেতু অসুস্থ সেহেতু অপরাধী যাতে আবার অপরাধ করতে না পারে এ বিবেচনায় তাকে অপরাধের ক্ষেত্র থেকে পৃথক্ করতে হবে। উদাহরন স্বরপ বলা যায় খুনিকে এমন ভাবে পৃথক্ করতে হবে যাতে সে দ্বিতীয় বার খুন করতে না পারে। অর্থাৎ খুনিকে বন্দি করতে হবে। কিন্তু একজন ঘুষখোরকে চার দেয়ালে বন্দি করার দরকার নাই। এভাবে অপরাদের ধরন এবং মাত্রা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।

২। কারণ অনুসন্ধান ও মনোচরিত্র বিশ্লেষণঃ যেহেতু অপরাধী অসুস্থ সেহেতু অসুস্থ হওয়ার কারণ বের করতে হবে। অপরাধী ব্যক্তির জীবন-যাপন প্রণালী সুক্ষভাবে বিশ্লেষণ করতে হবে। তার আচার আচরণ, প্রতিবেশ, শিক্ষা ইত্যাদি অনুসন্ধান করতে হবে। অপরাধী কি কারণে অপরাধ করেছিলেন এবং কি পরিস্থিতির উদ্ভব হলে একজন নিরপরাধ মানুষ অপরাধ করতে প্রণোদিত হয় ইত্যাদি প্রভাবক সমূহ চিহ্নিত করতে হবে। একাজে মনোবিজ্ঞানি/মনোচিকিৎসকদের সম্পৃক্ত করতে হবে। । তারা সে ধরনের মানসিক গঠন-কাঠামোর সন্ধান দিবেন সাথে সাথে অপরাধীকে সে ধরনের মানসিক শিক্ষা অথবা চিকিৎসা দিবেন যাতে অপরাধী ভবিষ্যতে এরকম পরিস্থিতির উদ্ভব হলেও অপরাধ না করেন। সাথে সাথে অন্য মানুষেরা (নিরপরাধী) যাতে এরকম পরিস্থিতিতে অপরাধ না করেন সে শিক্ষাও মানুষকে দিবেন। অন্যদিকে অপরাধী যে পরিস্থিতিতে অপরাধ করেছিল সে পরিস্থিতি যাতে সৃষ্টি না হয় রাষ্ট্র তা নিশ্চিত করবে।

৩।ক্ষতিপূরণ আদায়ঃ অপরাধীর নিকট হতে অপরাধের ধরন অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ আদায় করতে হবে। ধরা যাক অপরাধী ব্যক্তি ‘ক’ নামক একজন মানুষ কে হত্যা করেছিল। তাহলে খুনীকে ‘ক’এর পোষ্যদেরকে ভরন পোষনের অর্থ প্রদান করতে হবে।‘ক’ এর আর্থ-সামাজিক অবস্থান বিবেচনা করে রাষ্ট্র এ অর্থের পরিমাণ নির্ধারণ করবে এবং খুনীর নিকত হতে আদায় করবে। যদি খুনীর আর্থিক অবস্থা সে পরিমাণ অর্থ প্রদানে অক্ষম হয় তবে ক্ষতিপূরণ শোধ না হওয়া পর্যন্ত রাষ্ট্র খুনীর দ্বারা উপার্জন মূলক কাজ করিয়ে ‘ক’ এর পোষ্যদেরকে সে অর্থ প্রদান করবে।
অর্থাৎ অপরাধীকে শাস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে মূল নীতি হবে অপরাধীকে পুনরায় অপরাধ করা হতে বিরত রাখা, অপরাধীর মানুষিক অবস্থার সংশোধন করা এবং অপরাধীর দ্বারা সংঘটিত অপরাধের ক্ষতিপূরণ আদায় করে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে প্রদান করা।

শেষ কথাঃ আজকে যিনি অপরাধী তিনি জীবনের বাকি সময় শুধু অপরাধই করবেন তা কিন্তু নয়। আমাদেরকে বিশ্বাস করতে হবে এবং এমনটা হওয়া খুবই স্বাভাবিক যে আজকের অপরাধী ব্যক্তি আগামী্তে সুস্থ মানুষ হিসেবে সমাজের প্রভূত কল্যাণ করবেন।

কারণ মানুষের সম্ভাবনা কক্ষনো শেষ হয় না ।
আমি মানুষের অবয়বধারী হতে চাই না।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.