নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আউলা

ওয়াসিফ২৬

ওয়াসিফ২৬ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ট্যাক্সি তেহরান রিভিউ

১৬ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ২:১৬

দেখে ফেললাম ইরানী চলচ্চিত্র নির্মাতা জাফর পানাহির ২০১৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র “ট্যাক্সি তেহরান”।

২০১০ সাল থেকে রাষ্ট্রীয় আদেশে বন্ধ হয়ে গেছে তাঁর সিনেমা বানানো, ছয় বছরের কারাদণ্ড,২০ বছরের জন্য চিত্রনাট্য লেখা, চলচ্চিত্র-নির্মাণ, সাক্ষাৎকার দেওয়া ও দেশত্যাগ নিষিদ্ধ,খবরটি পুরনো। তিনি গৃহবন্দি, যদিও দেশের ভিতর তাকে স্বল্পমাত্রায় চলাফেরার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। নতুন খবর হলো এতো কিছু করার পরেও জাফরের চলচ্চিত্র নির্মাণ বন্ধ করতে পারেনি ইরান সরকার। সরকারী নিষেধাজ্ঞার পরেও জাফর চলচ্চিত্র নির্মাণ করেই যাচ্ছেন। বন্দী থাকা অবস্থায় উনি ৩ টি সিনেমা বানিয়ে ফেলেছেন। ২০১১ সালে “দিস ইজ নট অ্যা ফিল্ম”। ২০১৩ সালে “ক্লোজড কার্টেন” এবং ২০১৫ সালে “ট্যাক্সি তেহরান”।

“ট্যাক্সি তেহরান” মূলত "ডকু ড্রামা”। পানাহির ট্যাক্সি ক্যাবের ড্যাশবোর্ডে রাখা ক্যামেরা ধারণ করে চলে যাত্রীদের দৈনন্দিন চিত্র । জাফর পানাহি এই সিনেমার প্রধান চরিত্র। ইরানের সরকার তাকে সিনেমা বানাইতে নিষেধ করছে কিন্তু অভিনয় করতে তো আর নিষেধ করে নাই :p আইনের ফাঁকটাকে কাজে লাগিয়ে উনি প্রধান চরিত্র হয়ে গেলেন! :p

যাই হোক,তেহরানের রাস্তায় নিজের ব্যাক্তিগত গাড়িটিকে ট্যাক্সি বানিয়ে উনি যাত্রীদের গাড়িতে তুলতে লাগলেন। একটি সিনেমার টিকিটের সম পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে তিনি তাঁর ট্যাক্সিতে যাত্রী হওয়ার আমন্ত্রণ জানান লোকদের । তেহরানের একজন ট্যাক্সি ড্রাইভার হয়ে পানাহি তাঁর যাত্রীদের সাথে সাম্প্রতিক রাজনীতি নিয়ে আলাপ জুড়ে দেন ।
ট্যাক্সির প্রথম যাত্রী টায়ার চোর সম্পর্কে তার অসন্তোষ প্রকাশ করে । চোরকে মৃত্যুদন্ডে দণ্ডিত করা নিয়ে পিছনের সিটে বসা নারী যাত্রীর সঙ্গে চলে তার বিতর্ক । মহিলা যাত্রীটি যুক্ত করেন ইরানে কমই মৃত্যুদণ্ড কার্যক্রম দরকার। পুরুষ যাত্রী শরিয়া আইন ও শরিয়ার কথা বলে মহিলা কে অভদ্র ভাবে চেষ্ট্রা করে চুপ রাখতে । বিদ্রূপাত্নক মন্তব্য করে নেমে যায় সে ।

এর পরের যাত্রী হিসাবে তার ট্যাক্সিতে উঠে “অমিদ”। সে মুলত ডিভিডি পাচারকারী। সারা তেহরান জুড়ে বিদেশের নাম করা ছবির ডিভিডির একমাত্র জোগানদার সে। ইরানে নিষিদ্ধ জাফর পানাহির ছবির ডিভিডিও সেই দর্শকদের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়ে থাকে। জাফর পানাহি নিজেও অমিদের কাছে থেকে সিনেমা নিত একসময়।অমিদের কারনে আমরা জানতে পারি যে ইরানে অন্য দেশের সিনেমা দেখা হারাম! :p

পরের দৃশ্যে প্রচণ্ড হট্টগোলের মাঝ থেকে এক নারী মোটর বাইক দুর্ঘটনায় আহত তার স্বামীকে হাঁসপাতাল পর্যন্ত নিয়ে যেতে পানাহির গাড়িতে উঠে । সড়ক দুর্ঘটনায় মহিলার মৃত্যু পথ যাত্রী স্বামী চায় মরণের আগে তার সহায় সম্পত্তির যথাযত বন্দোবস্ত করে যেতে।তার উইলের বাণী মোবাইল ক্যামেরায় ধারণ করে রাখার অনুরোধ করে।পানাহির মোবাইলে অমিদ মহিলার স্বামীর উইলের বাণী ভিডিও করে রাখে।তার স্ত্রী নিশ্চিত হতে চায় স্বামী মারা গেলে ভাইয়ের পরিবর্তে স্ত্রী ও সন্তান যেন তার সকল সম্পত্তির একমাত্র উত্তরাধিকারী হয়। ইরানের পুরুষ নিয়ন্ত্রিত উত্তরাধিকার আইন নিয়ে কথা উঠে আসে সিনেমাটিতে।

এবার সিনেমাটিতে যুক্ত হয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলাপের অংশ। পানাহির নিজের ভাতিজি “হানা সাঈদি”। স্কুল টিচার তাকে একটি ডকুমেন্টারি ফিল্ম বানানোর হোমওয়ার্ক দিয়েছে । স্কুলের শিক্ষক বলে দিয়েছেন কি কি বিষয় সিনেমা বানাতে হবে।

১. ছেলে-মেয়েদের একসাথে দেখানো যাবে না

২. কোন প্রকার ভায়োলেন্স দৃশ্য রাখা যাবে না

৩. ছেলেদের টাই পড়ানো যাবে না

৪. চরিত্রের নাম ধার্মিক হতে হবে

৫. কোন প্রকার অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক বক্তব্য রাখা যাবে না।

আসলে এই শিক্ষক যে ইরান সরকার আর তাদের আইনের চাপের মধ্যে থাকে ইরানী ফিল্মমেকাররা তা স্পষ্ট হয়ে যায় এই দৃশ্যে। মূলত এই দৃশ্যে ইরান সরকারের চলচ্চিত্র নীতি ফুটে উঠেছে।

এরপর পানাহিকে দেখা যায় একজন ফুল ওয়ালী কে লিফট দিতে ।জেলখানায় অনশন কারি কয়েদীদের দেখতে যাচ্ছেন তিনি। দর্শকদের সেই যাত্রীর নাম জানা হয় নাই কিন্তু সেই যাত্রী বাস্তবিকই ইরানের একজন রিয়েল লাইফ ফিগার। ইরানের প্রখ্যাত মানবাধিকার কর্মী নাসরিন স্যতুদেক। কথাবার্তা শেষে তিনি ক্যামেরার দিকে একটি লাল গোলাপ বাড়িয়ে দিয়ে পানাহির সিনেমার জন্য শুভকামনা রাখেন ।

কোন রকমের ক্রেডিট লাইন ছাড়া সিনেমাটি শেষ হয়। পানাহি আসলে চান না তার সিনেমায় কাজ করার অপরাধে তার সহকর্মীরা কোন রকম বিপদের মুখে পড়ুক।

৮২ মিনিটের এই ডকু ড্রামাটি দেখতে কখনো বিরক্ত লাগবে না। একজন ফিল্মমেকার হিসাবে তার মত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে সেটা তিনি আবার নতুন ভাবে দেখিয়ে দিলেন। ইরানের সরকারের যে নিষ্ঠুরতা আর ফালতু চলচ্চিত্র নীতি তা উঠে এসেছে “ট্যাক্সি তেহরান”তে।

কিছু তথ্য :

১. “ ট্যাক্সি তেহরান” প্রথমে মোবাইল ক্যামেরা দিয়ে শুট শুরু করা হয়েছিল এবং কোন অভিনেতা-অভিনেত্রী কে অভিনয়ের জন্য নেয়া হয় নাই। তেহরানের সাধারন জনগন ছিল এই সিনেমার অভিনেতা-অভিনেত্রী কিন্তু এক যাত্রী তার প্রাইভেসি নিয়ে প্রশ্ন তুললে পরে পানাহি এটাকে “ডকু ড্রামা” করার সিদ্ধান্ত নেয়। আর যারা অভিনয় করেছে তারা কেউ প্রোফেশনাল অভিনেতা-অভিনেত্রী নহে।

২. এই সিনেমাতে এক্সট্রা কোন লাইটের ব্যবহার করা হয় নাই। গাড়িতে “সানরুফ” ব্যবহার করা হয়েছিল যার কারনে গাড়ীর ভিতরে প্রচুর পরিমানে লাইট পাওয়া গেছে।

৩. এই সিনেমাতে ৩টি ছোট Blackmagic Pocket Cinema Camera ব্যবহার করা হয়েছিল।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.