![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গভীররাতে পৃথিবীর সবচেয়ে গভীরতম সমুদ্রখাদ এর ডকুমেন্টারি (DeepSea Challenge) দেখতে বসলাম। দেখা শেষে যখন নেটে বিষয়টা নিয়ে ঘাটাঘাটি শুরু করলাম তত জ্ঞানের গভীরে ডুবে যাচ্ছিলাম। :p ডুবতে থাকি আর ভাবতে থাকি,আমার মূর্খতার গভীরতাও কম নহে! :'(
বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গের নাম মাউন্ট এভারেস্ট। বিশাল এই হিমালয়কে পেটে রাখতে পারে এমন জিনিসও আছে পৃথিবীতে। যার নাম মারিয়ানা ট্রেঞ্চ। বিশ্বের গভীরতম সমুদ্রখাদ বা পরিখা। অবস্থান প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম অংশে। হিমালয় যদি পৃথিবীর শীর্ষতম বিন্দু হয় তবে সর্বনিম্ন বিন্দু এই মারিয়ানা ট্রেঞ্চ। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মারিয়ানা ট্রেঞ্চের গভীরতা ৩৬ হাজার ফুট বা ২৫৫০ কিলোমিটার! :O
এই খাদটি কেন মরিয়ানা ট্রেঞ্চ?
মারিয়ানা হলেন সতের শতকের স্পেনের রানী। স্পেনের রাজা চতুর্থ ফিলিপের বিধবা পত্নী। ১৬৬৭ সালে স্পেনিয়ার্ডরা প্রশান্ত মহাসাগরের যে দ্বীপগুলো দখল করে কলোনী প্রতিষ্ঠা করেন, রানীর সম্মানার্থে তার অফিসিয়াল নামকরণ করেন লা মারিয়ানাস।
অভিযান:
১৯৬০ সালে মারিয়ানা ট্রেঞ্চে প্রথম অভিজানে অংশ নেন জ্যাকুয়েস পিকার্ড আর ডন ওয়ালশ। এরপর ৫২ বছর পর পরিচালক জেমস ক্যামরন দ্বিতীয় অভিযানে অংশ নেন। তবে এর আগে গবেষণার কাজে বিজ্ঞানীরা দু'বার মনুষ্যবিহীন যান পাঠিয়েছেন মারিয়ানা ট্রেঞ্চে৷ এর একটি পাঠিয়েছে জাপান, ১৯৯৫ সালে ৷ আর অন্যটি অ্যামেরিকা, ২০০৮ সালে৷ ক্যামেরনের অভিযানে ব্যবহৃত যানটির নাম "ডিপ সি চ্যালেঞ্জার"
জেমস ক্যামেরনের অভিযান:
২৬শে মার্চ ২০১২। জেমস কামেরন ইতিহাস লিখলেন নতুন করে।
স্থানীয় সময় সকাল সোয়া ৫ টায় শুরু করেন যাত্রা। মারিয়ানা ট্রেঞ্চ বিষুবরেখার কাছে অবস্থিত বিধায় সেখানকার সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা এমনিতেই বেশি। আর সাবমেরিনের ককপিটের তাপ ছিল তার চেয়েও বেশি। ক্যামেরনের মনে হচ্ছিল তিনি যেন স্টিম বাথ নিচ্ছেন। কিন্তু সাগরগর্ভে নামতে শুরু করার সময় সাবমেরিনটি অতি দ্রুত নিচের দিকে ধাবিত হয়। মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে তিনি জলরাশির এমন স্তরে পৌঁছান যেখানে পানির তাপমাত্রা ছিল মাত্র ২.২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। অল্পসময়েই তাঁর পায়ের পাতা দুটি ঠাণ্ডায় জমে যেতে থাকে। মাথার পিছন দিকটাও জমে যায়। তবে শরীরের মাঝখানটা তখনও উষ্ণ ছিল। এরপর মিনিট দুয়েকের মধ্যে সম্পূর্ণ অন্ধকার তাঁকে গ্রাস করে নেয়। ড্রাইভের বেশিরভাগ সময় তিনি অন্ধকারে ছিলেন। কাজেই সাবমেরিনটিও অতিমাত্রায় শীতল ছিল।
২ ঘন্টা ৩৬ মিনিট পর তিনি মারিয়ানা ট্রেঞ্চের তলদেশ স্পর্শ করেন। ডিপ সী চ্যালেঞ্জার মারিয়ানা ট্রেঞ্চের তলদেশে যখন অবতরণ করে ক্যামেরনের মনে হয়েছিল ওটা যেন খুবই নরম, প্রায় জিলেটিনের মতো। নরম সমতল ভূমির উপর নেমেছে।
তার মনে হয়েছিল তিনি যেন চন্দ্রপৃষ্ঠে আছেন। ঠিক সেরকমই এক একাকিত্ব ও বিচ্ছিন্নতাবোধ তাকে গ্রাস করে নিয়েছিল। মনে হচ্ছিল তিনি যেন এক দিনের মহাকাশ অভিযানে নেমেছেন। আরেক গ্রহে গিয়েছিলেন এবং সেখান থেকে ফিরে এসেছেন। পৃথিবীর সর্বনিম্ন বিন্দুতে পৌঁছে প্রাথমিকভাবে 'অল সিস্টেমস ওকে' নামক একটি সংকেত প্রেরণ করেন তিনি।
তার অভিযানটি ছিল ৭ ঘন্টার। অভিযান শেষ করে উপরে উঠে আসতে সময় লাগল ৭০ মিনিট।
ফিরে আসার পর ক্যামেরন বলেন, ‘‘মনে হচ্ছে আমি অন্য কোনো পৃথিবীতে চলে গিয়েছিলাম, যেখানে কেউ নেই৷ আশপাশ ছিল ঘুটঘুটে অন্ধকার৷''
সময় থাকলে দেখে নিতে পারেন।
©somewhere in net ltd.