নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আউলা

ওয়াসিফ২৬

ওয়াসিফ২৬ › বিস্তারিত পোস্টঃ

চাঁদের গায়ে চাঁদ লেগেছে

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:৫০

ছোটবেলায় জ্যোৎস্না রাতে বাবা-মার মুখে শুনতাম চাঁদের মধ্যে একটা বুড়ি বাস করে সে একা একা বসে চড়কা কাটে! আমি শুনতাম আর নানান অদ্ভুত বিষয় নিয়ে কল্পনা করতাম। ছোট মাথায় বেশী চিন্তা আসত না যার কারনে চাঁদের বুড়িকে নিয়ে আর মাথা ঘামাতাম না! বড়বেলায় এসে লালন নিয়ে একটু ঘাটাঘাটি করতে গিয়ে একটু টাস্কি খাইলাম চাঁদের মধ্যে বুড়ি থাকত এইটা জানতাম কিন্তু লালন সাহেব নাকি চাঁদের মধ্যে নাকি "মা" দেখেন। কিভাবে?ক্যাম্নে? এই প্রশ্নের কিছু উদ্ধার করতে গিয়ে অনেক কিছু জানতে পারলাম।

লালনের গান গুলো মেটাফরিক। বলছে এক কথা, বোঝাচ্ছে আরেক কথা। কিন্তু কী বলতে চায় তা-বুঝতে পারতাম না। এখনও যে খুব পারি তা-ও না। তবুও দিনশেষে বুঝতে চাই। যাইহোক লালনের "চাঁদের গায়ে চাঁদ লেগেছে" এই গান নিয়ে বেশ বিতর্ক আছে স্বয়ং ফরিদা পারভীনের অভিমত এ রকমের! তবে এই গানের ঠিক অর্থ এখনো ঠিকভাবে কেউ বের করতে পারি নাই তবে অনেকটা করার চেস্টা করা হইছে আমার এই পোস্টে আমি চেস্টা করছি ঠিক অর্থটা দেয়ার। তবে এটা আদৌ ঠিক কিনা জানিনা :( নানান মানুষের লেখা এবং নিজস্ব কিছু মতামত দিয়ে এই লেখাটাকে একটু জাতে তোলার চেস্টা করেছি মাত্র!

চাঁদের গায়ে চাঁদ লেগেছে
আমরা ভেবে করব কি।
ঝিয়ের পেটে মায়ের জন্ম;
তারে তোমরা বলবে কে

প্রতীকী গানটিতে দুইটি চাঁদের কথা বলা হচ্ছে। দুটি চাঁদ হচ্ছে মাতা-পিতা তথা পুরুষ নারীর সূক্ষ্মস্বত্বা,যা সৃষ্টির সৃষ্টির শুরু। ‘চাঁদের গায়ে’ বলতে ‘মাতৃরজ ডিম্বাণু’ এর গায়ে ‘চাঁদ লেগেছে’ অর্থাৎ ‘পিতৃরজ শুক্রাণু’ লেগেছে।এখানে পুরুষ নারী মিলনে নতুন সৃষ্টির প্রতীকী ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।

‘মায়ে-ঝিয়ে’ কথাটি বাংলার লোকসমাজে প্রচলিত আছে। এখানে মা বলতে "মা" কে এবং "ঝি" বলতে কন্যাকে বোঝান হয়। যেমন,মায়ে-ঝিয়ে মিলে সকাল থেকে কাজটি করে শেষ করলাম।প্রচলিত মতে মায়ের পেটে ঝি তথা কন্যার জন্ম হওয়ার কথা। কিন্তু এখানে উল্টো বলা হচ্ছে। কিন্তু কেন? এখানে একটু গভীরে গিয়ে ভাবতে হবে। সন্তান জন্ম নেওয়ার আগে কি কাউকে মা বলে? বলে না। তাহলে সন্তান জন্ম দেওয়ার সাথে সাথে মা শব্দের সৃষ্টি হল। তাহলে ‘মা’ এই শব্দটির জননী কে হল? যে জন্ম নিল, সে। অর্থাৎ ঝি। সে জন্য বলা হল ‘ঝিয়ের পেটে মায়ের জন্ম’। এখন ‘তারে তোমরা বলবে কি?’ কাকে কি বলা হবে? মায়ের জন্ম হয়েছে ঝিয়ের পেটে। অর্থাৎ যে মায়ের জন্ম হল ঝিয়ের পেটে, তাকে তোমরা কি বলবে? ঝিয়ের পেটে তো ‘মা’ এর জন্ম হল, তাহলে ঝিকে কি বলবে অর্থাৎ ঝি কি হবে? এখানে বলা হচ্ছে যে ভবিষ্যতে এই ঝিও সন্তান জন্মদানের মাধ্যমে নিজে মা হবে। এটাই বলা হল। এটা সৃষ্টির ধারার চক্র।

৬ মাসের এক কন্যা ছিল
৯ মাসে তার গর্ভ হল;
১১ মাসে তিনটি সন্তান
কোনটা করবে ফকিরি?

৬ মাস পূর্ণ হলে পরিপূর্ণ মানুষের আকৃতি ধারণ করে। ৯ মাসে ভূমিষ্ঠ হয় । ১১ মাসে ৩ স্তর মানে শোয়া, হামাগুড়ি এবং দাঁড়াতে শেখে। মানে ১১ মাসে হাঁটতে শেখে।‘এগার মাসে তিনটি সন্তান’ কি কি? এগার মাস অর্থাৎ ভ্রূণ মিলনের এগার মাসের কথা তথা কোন শিশু ভূমিস্ট হওয়ার দুই মাসের কথা বলা হচ্ছে। আমরা জানি বা বিজ্ঞান বলে যে, দুই মাসের শিশু প্রথম চিন্তে শেখে, বা উপলব্ধির ক্ষমতা অর্জন করে। ভাবুকের ভাষায় এই সময় প্রথম শিশু চিন্তা করে ‘আমি কে’, ‘তুমি কে’ এবং ‘আমায় কে সৃষ্টি করেছে’। এই তিনটি চিন্তা তিনটি সন্তানস্বরূপ। এখন ‘কোনটা করবে ফকিরি?’ এর মাধ্যমে বলতে চাচ্ছে, এই তিন চিন্তার কোনটি প্রবল হলে ফকির হওয়া যায় বা ফকিরি করা যায়। এখানে বলা যেতে পারে যার ‘আমায় কে সৃষ্টি করেছে’ এই চিন্তা যার প্রবল হয়, সে ফকির হতে পারে। কিন্তু দুই মাসের বাচ্চা এত বড় চিন্তা করতে পারে না কিন্তু একবার মনের মধ্যে যদি এই টাইপ চিন্তা আসে তাহলে এই চিন্তা নিয়ে সে বড় হয়। পরবর্তীতে এই চিন্তা গুলো তাকে ফকিরি বানাতে সাহায্য করে!

ঘর আছে তার দুয়ার নাই
লোক আছে তার বাক্য নাই।
আবার কে তাহারে আহার যোগায়?
কে দেয় সন্ধ্যাবাতি?

ঘর বলতে ইউটেরাস কে বলা হয়েছে যেখানে শিশু থাকে কিন্তু তার কথা থাকে না। আর সময় না হলে এখান থেকে বের হবার পথও বন্ধ থাকে মানে দুয়ার নাই। এই ভ্রুণ মায়ের শরীর থেকে খাবার নেয়, এনার্জি নেয় এটা বোঝাতেই বলা হয়েছে কে তাহারে আহার যোগায় কে দেয় সন্ধ্যাবাতি। মাতৃগর্ভের এই সন্তানকে কে আহার দেয়? আমরা জানি যে মাতৃগর্ভে সন্তান মায়ের থেকে শক্তি গ্রহণ করে বেঁচে থাকে। সে নিজে কোন আহার করতে পারে না। আবার ‘কে দেয় সন্ধ্যাবাতি?’ সন্তান চায় মাতৃগর্ভ থেকে বের হতে। কিন্তু সময় না হলে, ভূমিস্ট হতে পারে না। সন্ধ্যাবাতি জালানো অর্থাৎ আগমনরত আঁধারকে দূর করা। এখানে মাতৃগর্ভে থাকাকালীন তাকে কে রক্ষা করছে অর্থাৎ আলোর পথে নিয়ে যাচ্ছেন, তার সাধারণ জিজ্ঞাসা। এখানে আসলে সৃষ্টি কর্তার মহিমা কীর্তন করা হয়েছে। কারণ মাতৃগর্ভে থাকাকালীন সব বিপদে আপদে সেই একমাত্র ভরসা।

ফকির লালন ভেবে বলে:
ছেলে মরে মাকে ছুঁলে,
আবার এই কয় কথার অর্থ নৈলে
তার হবে না ফকিরি।।

‘ছেলে মরে মাকে ছুলে’ কি বোঝানো হয়েছে এখানে? এখানেও সন্তান জন্মদানের কথা বলা হয়েছে। মৃত্যু মানে বিচ্ছেদ। এখানে মা এবং সন্তানের বিচ্ছেদের কথা বলা হচ্ছে। যখনই সন্তান জন্ম দানের সাথে মাতৃ শব্দের সৃষ্টি হচ্ছে, তখনই সন্তান তার জন্মদাত্রী থেকে বিচ্ছিন্ন হচ্ছে, অর্থাৎ প্রসব করাকে বোঝানো হয়েছে। প্রসব করার সাথে সাথে সন্তান তার আশ্রয়দাত্রী মা থেকে বিচ্ছিন্ন হয় অর্থাৎ মা’ শব্দ সৃষ্টির সাথে সন্তান মায়ের গর্ভ থেকে প্রসব হচ্ছে। তাই বলা হল, ‘ছেলে মরে মাকে ছুলে’।এখানে বলা হয়েছে, উপরে বর্ণিত কথা গুলোর অর্থ যদি কেউ না জানতে পারে, তার ফকির জীবন সার্থক হবে না। কে ‘মা’, কে ‘ঝি বা সন্তান’, কাকে কে জন্ম দিচ্ছে। এই যে সৃষ্টিতত্ত্ব একে জানলেই তবে ফকিরি সার্থক হয়।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:০৯

পুলহ বলেছেন: এটা লালনের দুর্বোধ্য গানগুলোর একটা; যতদূর জানি ইনফ্যাক্ট এটা আদৌ লালনের গান কি না তা নিয়েও বিতর্ক আছে... গুণী ব্লগার ইমন জুবায়ের একটা লেখা আছে সম্ভবত এই গানটার ওপর।
আপনার ব্যাখ্যায় লজিক আছে, কিন্তু এটাই ব্যাখ্যা না হওয়ার সম্ভাবনাই বোধহয় বেশি।
আবার হতেও পারে, কে জানে!!!
শুভকামনা জানবেন লেখক।

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৫৭

ওয়াসিফ২৬ বলেছেন: আপনার মন্তব্যটা দেখে ভালো লাগলো আমার স্বল্প সময়ের ব্লগ জীবনে আপনি প্রথম কমেন্টদাতা! :) আজকে আরও বেশ কিছু ইনফরমেশন দেয়ার চেস্টা করছি একটু দেখে নিবেন।আমি আপনার কথা মতন গুণী ব্লগার ইমন জুবায়ের এর লেখা পড়েছি ওনার লেখা থেকেও বেশ কিছু বিষয় জানতে পেরেছি আপনার মন্তব্যের সাথে একমত যে আসলেই এই গান নিয়ে বিতর্ক আছে এবং এই গানের আসল অর্থ খুঁজে বের করাটাও অনেক কঠিন।

ভালো থাকবেন, শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন।

২| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:২৯

জে আর সিকদার বলেছেন: জয় গুরু

১৮ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:০০

ওয়াসিফ২৬ বলেছেন: জয় গুরু। ভালো থাকবেন, শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন। :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.