নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিজের কথা কি আর বলবো ...... নিজে সুখী মানুষ, পৃথিবীর সবাই সুখী হওক এই কামনা করি...... কয়লার মধ্যে কালো খুঁজি না, হীরা খুঁজে বেড়াই .......
এক.
দুই দিনের সাপ্তাহিক ছুটির পর আজকের দিনটি স্বাভাবিক গতিতে শুরু হয়েছে টেক্সাস সিটির কেন্দ্রে অবস্থিত বেটা ট্রনিক্সের সুবিশাল ভবনে। সকাল আটটা বাজার পাঁচ মিনিট আগেই সবাই স্ব স্ব জায়গায় উপস্থিত। বিশ তলা এই ভবনটি বেটা ট্রনিক্সের হেড অফিস। প্রথম দুইটি ফ্লোরে সারি সারি রবোট ডিসপ্লেতে রাখা। দর্শনার্থী ও ক্রেতারা এখানে নির্বিঘ্নে ঘুরে ঘুরে দেখতে পারে নানান আকৃতি ও ফাংশনের রবোট। তারপরের আটটি ফ্লোর ব্যবহৃত হচ্ছে স্টোর হাউজ হিসাবে। এখানে হাজার হাজার রবোট সারিসারি দাঁড় করানো আছে, ডেলিভারি দেওয়ার আগে এখানে এগুলোকে রাখা হয়। এখান থেকে সারা দেশে চাহিদা অনুযায়ী সাপ্লাই দেওয়া হয়। এগার তলা থেকে পনের তলা গবেষণাগার ও ল্যাবরেটরি। শতশত ইঞ্জিনিয়াররা এখানে দিনরাত কাজ করছে। তার উপরের দুইটি ফ্লোরও গবেষণাগার, কিন্তু খুব গোপনীয় এই ল্যাবে কম সংখ্যক লোকেরই প্রবেশাধিকার আছে। সব শেষে তিনটি ফ্লোর অফিসের কাজে ব্যবহৃত হয়। কোম্পানির সিইও একেবারে উপরের তলায় বসেন।
সুন্দর মেঘমুক্ত সকাল, দুপুরের তেজ কেমন হবে সূর্য এখন থেকেই তা জানান দিচ্ছে। একবার আকাশের দিকে তাকিয়েই তাড়াহুড়া করে ভবনের ভেতর ঢুকে পড়ে অরুপ। কার্ড পাঞ্চ করে দেখে সময় দেখাচ্ছে আটটা বেজে দুই মিনিট চল্লিশ সেকেন্ড। ধ্যাৎ আজকেও অল্পের জন্যে দেরী হয়ে গেলো। পনের তলার উঠে নিজের চেয়ারে বসতে বসতে কাল্পনিক কাউকে বৈবাহিক সূত্রের ভাই বলে গালি দিয়ে উঠে অরুপ।
চেয়ারটা একটু পেছনে ঠেলে পাশের কিউবিকলস থেকে মাথা বাকিয়ে তার দিকে তাকিয়ে সুমিতা বলে, কিরে আজকেও লেইট? তো কয় সেকেন্ডের জন্যে? সুমিতা ব্যানার্জি, পশ্চিমবঙ্গের মেয়ে। মেয়ে মানুষের সুন্দর মুখের সাথে যে সুন্দর মস্তিষ্কের কোনো বিরোধ নেই সুমিতা তার জলজ্যান্ত উদাহরণ। মাঝেমাঝে অরুপের মনে হয় মেয়েটি হয়তো জন্ম থেকেই স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ নিউরন নিয়ে জন্মেছে। এমআইটি গ্রেজুয়েট, মাস্টার্সও সেখান থেকে করেছে।
“মাত্র দুই মিনিটের জন্যে”, মুখ ভার করে বলে অরুপ।
- তোর মনে হয় আর পার্মানেন্ট হওয়ার সুযোগ নেই, সপ্তাহে চারদিনই লেইট। এক কাজ কর, এখন থেকেই নতুন কোনো কাজ খুঁজতে থাক। তোর যে মেধা, যে কোনো পিৎজা বার্গারের দোকানে অনায়াসে কাজ জুটে যাবে।
“খোঁচা মারছিস? মার, সুযোগ যখন পেয়েছিস তাহলে আর সমস্যা কোথায়।”
প্রথম প্রথম দেখা হলে হাই, হ্যালোতে সীমিত ছিল তাদের সম্পর্ক, কিন্তু যখন জানল দুজনেই বাঙ্গালি আবার একই ব্যাচের, তখন সুমিতা আনন্দে প্রায় লাফিয়ে উঠে বলেছিলো “আমি কিন্তু তোকে আর আপনি বলতে পারবো না, তুমিতেও আমার পুষাবে না, দেখা যাবে তুমির সুযোগ নিয়ে আমাকে প্রপোজ করে বসেছিস।”
জবাবে মৃদু হেসে অরুপ বলেছিলো, “সেটা খারাপ বলিস নি, দেশে গার্লফ্রেন্ড রেখে না আসলে তোকে একদিন না একদিন প্রপোজ করেই বসতাম।”
অরুপ হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এপ্লাইড ফিজিক্সে অনার্স করে ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস থেকে রবোটিক্সে মাস্টার্স শেষ করে বেটা-ট্রনিক্সে ইন্টার্ন হিসাবে ঢুকেছে মাস চারেক হলো। বেটা-ট্রনিক্স যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম সারির রবোট প্রস্তুতকারী কোম্পানি গুলোর একটি। বিভিন্ন রাজ্যে এর শোরুম, ফ্যাক্টরি, গবেষণাগার ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। বিভিন্ন ইউনিভার্সিটিতেও এই কোম্পানির রিসার্চ ল্যাব আছে। মাস্টার্সে অরুপের সুপারভাইজারের সুপারিশেই এখানে ইন্টার্ন হিসাবে তার ঢুকা।
দৈনন্দিন রুটিন অনুযায়ী প্রথমেই মেইলে বক্সে ঢুকে দেখে নেয় কোনো ইমেইল আছে কি না। তারপর গতকালকের অসমাপ্ত জার্নালটি খুলে বসে অরুপ। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের সাথে মানবিক আবেগের সংযোগ স্থাপন নিয়ে একেবারে মৌলিক একটি জার্নাল। একদম ডুবে ছিলো লেখাটিতে, আশেপাশের কিছুতেই মনোযোগ নেই তার। কিছু একটা অঘটন ঘটেছে, চারপাশের বিভিন্ন কিউবিকলস থেকে ফিসফিস আলাপচারীতা ভেসে আসছে। কয়েকজন চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়েছে, ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ হয়ে নিচু স্বরে কি যেন বলছে।
- আচমকা পাশ থেকে সুমিতা ফিসফিস করে বলে, এই অরুপ খবর শুনেছিস? এই অরুপ?
গভীর মনোযোগের সাথে পড়ছিলো অরুপ, সুমিতার ডাক তার মাথায় ঢুকেনি। উঠে এসে পিঠে মৃদু টোকা দিতেই চমকে পেছন ফিরে তাকায় সে। কিরে, “পিঠ চুলকাচ্ছিস কেন?” তার মুখের দিকে তাকিয়েই বুঝতে পারে কিছু একটা ঘটছে। কি ব্যাপার? কি হয়েছে?
- আমাদের সিইও স্যার কিছুক্ষণ আগে আত্মহত্যা করেছে।
আকস্মিক এই দুঃসংবাদে চমকে উঠে অরুপ। বলিস কী? কখন? কেন?
- বিস্তারিত তো জানি না। দেখছিস না সবাই কেমন ফিসফাস করছে। পুলিশকে খবর দেওয়া হয়েছে। এম্বুলেন্সও আসছে।
ঘড়ি দেখে অরুপ, নয় টা বেজে চল্লিশ মিনিট। চেয়ার ছেড়ে উঠে লিফটের দিকে এগিয়ে যায় সে।
- কি রে কোথায় যাচ্ছিস?
দেখে আসি, এখানে বসে হাওয়া ভেসে আসা খবরে আর গুজবে কান দিয়ে লাভ নেই। বলেই দ্রুত এগিয়ে চলে অরুপ।
- সুমিতাও তার পেছন পেছন লিফটে গিয়ে উঠে। এখন ক্রাইম স্পটে কি যাওয়া ঠিক হবে?
আরে এখনই তো যাওয়ার সময়, পুলিশ এসে গেলে কি আর ঢুকতে দিবে? আর পুলিশ বেশিভাগ সময় আলামত সংগ্রহ করতে গিয়ে বরং সেগুলোকে নষ্ট করে ফেলে। তার আগেই যতটুকু সম্ভব পর্যবেক্ষণ করতে চাই।
- বাহ! খুব গোয়েন্দা হয়েছিস দেখছি?
কিছু না বলে মৃদু হাসে অরুপ।
দুই.
অনেকেই ভিড় করে আছে সিইও এর রুমের বাইরে। ভেতরে ঢুকার সাহস ও সুযোগ পাচ্ছে না। কনফিডেন্সের সাথে দেখি আমাকে ঢুকতে দেন, বিরক্ত করবেন না, প্লিজ আপনারা এখানে ভীড় করে আলামত নষ্ট করবেন না তো, এমন কথা বলতে বলতে রুমে- ঢুকে পড়ে অরুপ, তার পেছন পেছন সুমিতাও ঢুকে পড়ে।
প্রথমেই সম্পূর্ণ ঘরের উপর দ্রুত গতিতে নজর বুলিয়ে নেয় অরুপ। বড়সড় খোলামেলা রুম, বিশাল ওভাল আকৃতির ডেস্ক, ভেতরের দিকে একটি রিভলভিং চেয়ারে পড়ে আছে আলবার্ট স্নায়ারের মৃত দেহ। মাথাটা একটু পেছন দিকে হেলানো, থুতনির নিচে প্রায় দুই সেন্টিমিটারের মতো একটি ফুটো সেটি মাথার তালু পর্যন্ত বিস্তৃত, ডান হাতটি দেহের পাশে ঝুলছে, ঠিক তার নিচে পড়ে আছে লেজার গানটি। সার্ট প্যান্ট টেবিলের উপর রক্তের একটা ধারা জমাট বেঁধে আছে। বুঝা যাচ্ছে থুতনির নিচে চেপে ধরে লেজার গানের ট্রিগার টানা হয়েছে। প্রায় তাৎক্ষনিক মৃত্যু ঘটেছে তার। লেজার গানটি ডান হাতে ধরা ছিলো, মৃত্যুর পর হাত ঝুলে পড়ে দেহের পাশে, আঙুল ফসকে সেটি নিচে পড়েছে, এখনো সেখানেই আছে।
টেবিলের উপর প্লাস্টিকের চায়ের কাপের, সম্পূর্ণ ভরা। টেবিলের উপর একটি কম্পিউটার স্ক্রীন, কীবোর্ড, সেখানে একটি নোটপ্যাড খোলা, বড়সড় একটা লেখা সেখানে, দ্রুত চোখ বুলিয়ে পড়ে নেয় অরুপ। সুইসাইড নোট।
প্রিয়তমা,
তোমাকে সারাজীবন অনেক যন্ত্রণা দিয়েছি, বাচ্চাদের সময় দিতে পারিনি। সারাজীবন শুধু কাজ নিয়েই পড়েছিলাম। এই কাজ কাজ করাটাই আমার কাল হলো। ........................ আমাকে ক্ষমা করে দিও।
ইতি, হতভাগা পিতা।
সারা টেবিল জুড়ে কিছু সুন্দর সো-পিস, একটি ছবির ফ্রেম। সেখানে হাসি হাসি মুখের পারিবারিক ছবি। ঘরে দুইটি জানালা, ভারী পর্দা দিয়ে ঢাকা। ভেতর থেকে আটকানো। তারমানে এদিক দিয়ে কেউ প্রবেশ করেনি।
- গা গুলিয়ে উঠে সুমিতার, পেটের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠে কিছু একটা, অনেক কষ্টে গলা ঠেলে উঠে আসা বমি ভাবটা ঠেকায় সে।
“কি তোর পর্যবেক্ষণ শেষ হয়েছে? আমার মাথা ঘুরছে, জলদি বের হই চল”
তার কথা জবাব না দিয়ে অরুপ বলে, খবরদার কোনো কিছুতে হাত দিবি না। বলেই কপাল কুঁচকে চারদিকে কি যেন খুঁজতে থাকে সে। আলবার্টের ঠিক পেছনে গিয়ে দাঁড়ায় সে; ঘরের দেয়াল, ছাদ তন্নতন্ন করে কি যেন খুঁজে। তারপর চারপাশ দিয়ে একবার হেঁটে আসে। নিচু স্বরে বলে, “কিছু একটা ঠিক মিলছে না”
- কি মিলছে না?
আনমনে বলে “যতটুকু জানি আলবার্ট বিবাহিত জীবনে সুখী ছিলেন, দুইটি বাচ্চা, প্রায়ই অফিস পার্টিতে ফ্যামিলি নিয়ে আসতেন। বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি। অত্যন্ত সফল ও দক্ষ একজন প্রযুক্তিবিদ। তার আত্মহত্যার কারণ হিসাবে ফ্যামিলি সমস্যা ও চাকরীর চাপ এটা খাপ খাচ্ছে না যেন!
- আরে মানুষের কতরকমের সমস্যা থাকে, আর এতো বড় কোম্পানির সিইও, চাপ থাকবে না মানে? প্রতি মুহূর্তে শেয়ারের দর উঠানামা দেখলে তো আমারই হার্ট বিট অনিয়মিত হয়ে যায়।
ঘরটি আবার চারপাশ ঘুরে দেখে অরুপ। ময়লা রাখার ঝুড়িটায় নজর যায়। একটি প্লাস্টিকের চায়ের কাপ পড়ে আছে। তারমানে এটি গত শুক্রবারের। হাঁটু গেড়ে বসে, পকেট থেকে কলম বের করে সেটি দিয়ে কাপটি নেড়েচেড়ে দেখে সে। উঠে গিয়ে পাশের বেসিনের খুব কাছে চোখ নিয়ে কিছু পর্যবেক্ষণ করে। ঠোঁটের কোনে মৃদু হাসি দেখা দিয়েই মিলিয়ে যায়। ঘুরে দাঁড়িয়ে বলে চল, আমার দেখা শেষ হয়ে গেছে।
হাঁপ ছেড়ে বাঁচে যেন সুমিতা। পারলে এখনি দৌড়িয়ে বের হয়ে যায় সে।
রুমের বাইরে বের হতেই দেখে চার জনের একটা সিআইডির দল এসে হাজির, সাথে ফরেনসিক এক্সপার্ট একজন। ফরেনসিকের লোকটিকে নিয়ে দুই জন ঘরে ঢুকে, আর দুইজন বাইরে দাঁড়িয়ে অফিসের লোকজনের ইন্টার্ভিউ নেয়া শুরু করে। প্রথমেই তারা কথা বলে আলবার্টের পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট মিস. তাকানী সাথে, খানিক দূরে দাঁড়িয়ে তাদের কথাবার্তা মনোযোগ দিয়ে শুনতে থাকে অরুপ।
আপনি কতদিন ধরে মিস্টার আলবার্টের সাথে কাজ করছেন?
- তিন বছর
বেশ, তাহলে তো আপনি অনেকদিন খুব কাছ থেকে উনাকে দেখার সুযোগ পেয়েছেন। আপনি কী উনার দৈনন্দিন রুটিন টা আমাদের একটু বিস্তারিত বলবেন?
- প্রতিদিনের মতো স্যার আটটা বাজার পাঁচ মিনিট আগে পৌঁছান। আটটা থেকে নয়টা এই এক ঘণ্টা উনি নিজের কাজ করেন, এই সময় তার রুমে কারও ঢুকার পারমিশন নেই। শুধু সাড়ে আটটার সময় কিচেনের একটি রবোট তার রুমে চা নিয়ে আসে। আজও এর ব্যত্যয় ঘটেনি।
ঐ রবোটটি এখন কোথায়?
- কিচেনে।
উনি কি কোনো কারণে দুঃশ্চিন্তাগ্রস্থ ছিলেন? কোনো প্রকার অস্থিরতা বা অস্বাভাবিকতা কি তার মাঝে দেখতে পেয়েছিলেন?
- নাহ, অন্য সব দিনের মতোই তিনি খুব স্বাভাবিক ছিলেন। আমার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে জিজ্ঞেস করেছিলেন, কি খবর তাকানী। এটা উনি সমসময় জিজ্ঞেস করেন, কিন্তু জবাবের অপেক্ষা না করে দরজা ঠেলে ঢুকে যান ঘরে। বলেই টিসু দিয়ে নাক মুছে।
আর কেউ কি এর মাঝে তার রুমে ঢুকেছিলো?
- নাহ।
আপনি কখন এবং কেন তার রুমে ঢুকেছিলেন?
- প্রতিদিন নয়টা বাজলে স্যার আমাকে কল করে সারাদিনের এপয়েন্টমেন্ট ও জরুরী কাজের প্ল্যান জানতে চান। কিন্তু আজ নয়টার পরেও কোনো সাড়া না পেয়ে আমি স্যারকে নয়টা বাজার দশ মিনিট পর কল করি। উত্তর না পেয়ে আরও পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করে ঘরে ঢুকে দেখি উনি মৃত পড়ে আছেন। তারপর সাথেসাথে পুলিশ ও এম্বুলেন্স খবর দেই।
আচ্ছা ঠিক আছে, আপনি যান। আরও কিছু মানুষের সাথে তারা কথা বলে। এক ফাঁকে অরুপের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে এই যে ইয়াং ম্যান, আপনি এখানে কি করেন?
আমি এখানের ইণ্টার্নি গবেষক হিসাবে আছি। খবর শুনে দেখতে এসেছি। আরও কিছু কথা বার্তা হয় তাদের মাঝে। প্রায় এক ঘণ্টা পর ভেতরের দুই জন বের হয়ে আসে। বাইরের দুই জনের সাথে মিনিট দশেক কথা বলে। মনে হচ্ছে তারা কিছু একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছুতে পেরেছে।
মৃদু পদক্ষেপে তাদের দিকে এগিয়ে যায় অরুপ। পেছনে পেছন ভীত সন্ত্রস্ত সুমিতাও এগিয়ে যায়। কিঞ্চিৎ বিরক্ত সে অরুপের উপর। তার উদ্দেশ্য ঠিক বুঝতে পারছে না সে।
নিজের পরিচয় দিয়ে জিজ্ঞেস করে, “হ্যালো অফিসার, কি মনে হচ্ছে আপনাদের?
আপাতত তো মনে হচ্ছে সুইসাইড কেইস। তবে ফরেনসিক রিপোর্ট পেলে আরও নিশ্চিত হওয়া যাবে। বাহ্যিক আলামত দেখে অন্য কিছু মনে হচ্ছে না। আর সুইসাইড নোটে স্পষ্ট করে লিখেছেন আত্মহত্যার কথা।
কিন্তু অফিসার, আমার কাছে মনে হচ্ছে এটি একটি হত্যাকাণ্ড। অত্যন্ত জটিল পরিকল্পনা করে আলবার্টকে হত্যা করা হয়েছে এবং খুনি এই কোম্পানিরই কেউ।
তিন.
চমকে উঠে তার দিকে তাকায় চারজন সিআইডির অফিসার। সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছে সুমিতা। বিরক্তি ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠে তার চোখেমুখে। কি একটা উটকো ঝামেলায় জড়াচ্ছে অরুপ নিজেকে?
আপনি কি করে নিশ্চিত হলেন এটা হত্যাকাণ্ড? একজন সন্দেহের চোখে তাকায় তার দিকে।
- কিছুক্ষণ আগে আমি ঐ ঘরে ঢুকেছিলাম। বুঝতেই পারছেন আপনাদের পর্যবেক্ষণ ক্ষমতার উপর আমার আস্থা আগেও ছিলো না,
আর এখন এটিকে আত্মহত্যা হিসাবে মেনে নিয়ে আমার সেই ধারনাকেই পাকাপোক্ত করেছেন।
একজন রেগে গিয়ে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো, তাকে থামিয়ে দিয়ে টিম লিডার মাইক বলে, আপনার পর্যবেক্ষণ কি আমাদের সাথে দয়া করে সেয়ার করবেন?
- অবশ্যই, তার আগে চলুন আমরা আবার ঘরে যাই, সেখানে পুরো ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করতে সুবিধা হবে।
একে একে তারা আবার সেই ঘরে প্রবেশ করে। সুমিতা কিঞ্চিত ইতস্তত করে ধ্যাৎ বলে দৌড়িয়ে তাদের পেছন পেছন ঢুকে পড়ে। বিরক্তের চরমে উঠে গেছে সে, ভয় হচ্ছে, গা শিরশিরে করে উঠছে মৃতদেহ চোখে পড়তেই কিন্তু শেষমেশ কৌতূহলের জয় হয়েছে। এখন বিড়াল না মরলেই রক্ষে।
- এই যে এখানে ধরে লেজার গানটি চালানো হয়েছে। লেজার বীম থুতনি ভেদ করে মাথার তালু দিয়ে বের হওয়ার কথা। কিন্তু দেখেন ছাদে বা আশেপাশের দেয়ালে লেজার বীমের দ্বারা কোনো ক্ষতচিহ্ন নেই। তারমানে যে সময়ে লেজার থুতনি থেকে মাথার তালুতে এসে পৌঁছেছে ঠিক সেই সময় পর্যন্ত ট্রিগার টানা ছিলো। এটা সেকেন্ডের লক্ষ ভাগের চেয়ে কম সময়। এটা কোনো মানুষের পক্ষে সম্ভব না। যদি না কোনো কম্পিউটারে প্রোগ্রামিং করে এই টাইমিংটা সেট করে দেওয়া হয়। তারমানে ট্রিগারটি চেপেছে কোনো একটি রবোট। এটা আমার প্রথম ক্লু।
- দ্বিতীয় ক্লু হচ্ছে, ময়লার ঝুড়িতে একটি চায়ের কাপ। গত দুইদিন অফিস বন্ধ ছিলো। তারমানে এটি শুক্রবারের চায়ের কাপ। কিন্তু কাপটি তলানিতে দেখেন জমাট বাঁধা কোনো দাগ নেই। সাধারণত চায়ের কাপের তলানিতে যে চা পড়ে থাকে দুই তিনদিন পর সেটি প্রায় কালচে খয়েরী রঙ ধারণ করে। এখন বেসিনে নিচের দিকের কোনায় দেখেন কয়েক ফোঁটা চায়ের দাগ। তারমানে সাড়ে আটটার কিছুক্ষণ আগে চায়ের কাপ নিয়ে আরেকটি রবোট দেখানে ঢুকেছিলো। সে রবোটটি চা টেবিলে রাখার সময় নিচু হয়ে ড্র্য়ার খুলে লেজার গানটি বের করে সেকেন্ডের ভেতর আলবার্টের পেছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। তারপর একহাতে মাথা চেপে ধরে আরেক হাতে থুতনির নিচে গানটি ধরেই ট্রিগার চেপে দেয়। সম্পূর্ণ ব্যাপারটা ঘটতে পাঁচ থেকে দশ সেকেন্ডের বেশি লাগার কথা না। আর ঘরটি সম্পূর্ণ সাউন্ডপ্রুফ, তাই বাইরে থেকে কিছুই শোনা যায়নি। তারপর চায়ের কাপটি বেসিনে খালি করে ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দিয়ে ঘর থেকে রবোটটি বের হয়ে যায়। তার কিছুক্ষণ পর হয়তো কিচেনের সেই রবোটটি যথারীতি প্রবেশ করে টেবিলের উপর আরেকটি চায়ের কাপ রেখে বের হয়ে যায়। তার রুটিন কাজ শুধু চা বানানো, এই কাজ সে বছরের পর বছর করে আসছে। তাই আলবার্ট মৃত না জীবিত এটা নিয়ে তার লজিক সার্কিটে কোনো ইনপুট দেয়া নেই। সে কিছু নোটিস না করেই বের হয়ে যায়।
তারমানে আপনি বলছেন এখানে পরপর দুটি রবোট ঢুকেছিলো? তাহলে কি তাকানী মিথ্যে বলেছে?
- আমার মনে হয় তাকানী সত্যি কথাই বলছে, অন্তত তার ব্রেন এটাই মনে করছে। এখানে টাইমিংটা খুব সূক্ষ্ণ ছিলো। তাকানী তিন বছর ধরে এই একই রুটিন দেখে আসছে, সাড়ে আটটা বাজলেই কিচেনের রবোট চা নিয়ে ঢুকে। আর নয়টা বাজলেই সব রিপোর্ট নিয়ে তার স্যারের কাছে পেশ করতে হবে, সে হয়তো মাথা নিচু করে কাজ করছিলো। খুনি এখানে একটা রিস্ক নিয়েছে। তাকানী হয়তো আড়চোখে দেখেছে রবোট চা নিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু তার অভ্যস্ত মস্তিষ্ক পরপর দুইটি রবোটকে চিহ্নিত করতে পারেনি। দুটাকে সে এক করে ফেলেছে।
মাইক বলে, কিন্তু রবোটিক্সের সূত্র মতে তো কোনো জীবিত প্রাণের ক্ষতি করার ক্ষমতা তার নেই। যতটুকু জানি এটি রবোটের কপোট্রনের একদম প্রাইমারি ল হিসাবে হার্ডকোর কোড করা থাকে!
- এই কারণেই আমার ধারণা খুনি এই সংস্থারই কেউ, যে রবোটের কপোট্রন প্রোগ্রামিং এর এক্সপার্ট।
বুঝতে পেরেছি। আর সুইসাইডাল নোটের ব্যাপারে আপনার কি অভিমত?
- এটি আমার শেষ ক্লু। যদিও কম্পিউটারটি আমি ঘেটে দেখেনি, আপনাদের অগোচরে এটা করা ঠিক হতো না। এখন যদি অনুমতি দেন তাহলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্লু টি আমি পরীক্ষা করে দেখতে পারি।
অফিসারদের অনুমতি নিয়ে টেবিলের কম্পিউটার নিয়ে বসে পড়ে অরুপ। কিছুক্ষণ পরেই মাথা তুলে বলে আমি যা ভেবেছিলাম সেটাই প্রমাণিত হলো।
সবাই তাকে ঘিরে ধরে ঝুঁকে পড়ে কম্পিউটার স্ক্রীনের দিকে। চোখে প্রশ্ন।
আমাদের এই কোম্পানির প্রতিটি কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেমের ব্যাক এন্ডে ‘কি-স্ট্রোক’ নামের একটি সার্ভিস রান করে। কম্পিউটার স্টার্ট হওয়ার সাথে সাথে এটি কিবোর্ডের কী কী ‘কি’ চাপা হয় সেগুলোকে লগ-ফাইলে রেকর্ড করে রাখে। দেখেন, এই যে লগ ফাইল। কম্পিউটার স্টার্ট হওয়ার পর থেকে এই ‘Liliyana38’ এটা হলো পাসওয়ার্ড, তারপর এন্টার কি চাপা হয়েছে। তারপর আর কোনো কি চাপা হয়নি শুধু মাউসে কাজ করেছেন হয়তো। তারমানে আলবার্ট এই নোট টাইপ করেন নি। ঐ খুনি রবোটটি নোট প্যাড খুলে তার মেমরিতে আগে থেকে টাইপ করা নোটটি শুধু এখানে কপি করে দিয়েছে।
মাই গড! চিৎকার করে উঠে মাইক। তার সহকর্মীকে নির্দেশ দেয়, পুরো ভবন সিল করে দাও। কেউ ঢুকবে না কেউ বের হবে না, আমি নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত। খুনি হয়তো এখনো এই ভবনেই আছে।
- তার আর দরকার নেই। আমার ধারনা খুনি নিশ্চিন্তে ছুটি কাটাচ্ছে। সম্পূর্ণ হত্যা কাণ্ডটি যেহেতু রবোট দিয়ে করিয়েছে, এবং এটা আগে থেকে প্রোগ্রামিং করা ছিলো, তাই সে যথাসম্ভব চেষ্টা করবে ক্রাইম সিন থেকে দূরে থাকার। আরেকটা বিষয় গত দুই দিন সম্পূর্ণ ভবনে সিসিক্যামেরার মেইনটেনেন্সের কাজ হয়েছে। আজকে সকাল আটটা থেকে দশটা এই দুই ঘণ্টা সব সিসিক্যামেরা বন্ধ থাকবে এমন একটা নোটিস দুই সপ্তাহ আগে জানানো হয়েছিলো সবাইকে। খুনি এই সুযোগটাই ব্যবহার করেছে।
মোটিভ কি হতে পারে? মাইক জিজ্ঞেস করে অস্থির হয়ে। সে কিছুটা বিব্রত। এই তরুণ যে কাজ করেছে সেগুলো তার টিমের করার কথা।
- মোটিভের ব্যাপারে এখনো কোনো ধারনা পাইনি। মিস. তাকানীকে আমি কিছু জিজ্ঞেস করতে চাই, যদি আপনাদের আপত্তি না থাকে।
না না, আপনি যা জিজ্ঞেস করার করুন। আপনি আমাদের কাজ অনেক সহজ করে দিয়েছেন, সময়ও বাঁচিয়ে দিয়েছেন বেশ কিছু দিন। তার ভাবখানা এমন, আরে এব্যাপারগুলো তো আমরাও বের করতে পারতাম, শুধু একটু সময় লাগত আর কী।
- মিস. তাকানো, আপনি ঠিক ঠিক দেখেছেন যে কিচেনের রবোটটি চা নিয়ে রুমে ঢুকেছে? কোনো অসামঞ্জস্য চোখে পড়েনি?
নাহ তো! অবাক হয়ে উত্তর দেয় তাকানী। চোখে এবার কিছুটা ভয় ফুটে উঠেছে তার। কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলে, তবে আজ মনে হয় চার পাঁচ মিনিট আগেই চা নিয়ে ঢুকেছিলো রবোটটি।
- হুম, মাইকের দিকে তাকিয়ে অরুপ বলে আমার ধারনাই ঠিক হলো। এখন সেই রবোটটিকে খুঁজে বের করতে পারলেই খুনি পর্যন্ত পৌঁছানো যেতো, তবে এটাই সবচেয়ে দুরূহ কাজ। আনমনে দূরে তাকিয়ে কিছু একটা চিন্তায় মগ্ন হয়ে যায় অরুপ।
কেন এটা সবচেয়ে দুরূহ কাজ? সবগুলো রবোটের টাস্ক লগ পরীক্ষা করে দেখলেই তো হয়? খুনের টুল খুঁজে পেয়ে গেলে খুনিকেও পাওয়া যাবে। কি বলেন?
- সেটা তো অবশ্যই। কিন্তু এই ভবনের প্রতিটি ফ্লোরে দশ থেকে পনেরটা এই টাইপের রবোট আছে। আর আটটি ফ্লোরে এই টাইপের হাজার হাজার রবোট ডেলিভারির জন্যে রেডি হয়ে আছে। এগুলোর যেকোনো একটিকে খুনি রি-প্রোগ্রামিং করতে পারে। আসুন আমার সাথে বলেই লিফটে দিকে এগিয়ে যায় অরুপ। তাকে অনুসরণ করে বাকীরাও পিছুপিছু এগিয়ে যায়।
তিনতলায় এসে লিফট থেকে নামে তারা। করিডোর দিয়ে এগিয়ে একটা দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকেই চোখ ছানাভরা হয়ে যায় মাইকের ও সাথে অন্য অফিসারদের। সারি সারি দাঁড়িয়ে আছে হাজার হাজার রবোট।
- এমন আটটি ফ্লোর আছে, আর সেখানে বেশির ভাগই এই কিচেন মডেলের রবোট। বাজারে এগুলোর বেশি চাহিদা বুঝতেই পারছেন। গৃহস্থালির টুকটাক কাজ ও রান্নাবান্নার কাজে এগুলো ব্যবহৃত হয়। এই রকমের চার থেকে পাঁচ হাজার রবোটকে পরীক্ষা করা অত্যন্ত সময় সাপেক্ষ কাজ, আর পরীক্ষা করতে হবে প্রোগামিং এর লাইন বাই লাইন কোড ধরে। এক কথায় অসম্ভব।
- কিছুক্ষণ চিন্তা করে অরুপ বলে, আমার মাথায় একটি বুদ্ধি এসেছে। খুনি ভেবেছে এই হত্যাটিকে আত্মহত্যা হিসাবে চালিয়ে দিলে কেউ আর রবোটগুলোকে নিয়ে চিন্তা করবে না। এর কোনো এক ফাঁকে সে তার কোডিং মুছে দিয়ে হত্যার যাবতীয় প্রমাণ নিশ্চিহ্ন করে দিবে।
হুম সেটা বুঝতে পেরেছি তো! এখন ডায়লগ বাদ দিয়ে তোর পরিকল্পনা খুলে বল, উত্তেজনায় কাঁপছে যেন সুমিতা।
- মুচকি হেসে অরুপ বলে খুবই সাধারণ পরিকল্পনা, আমরা আলবার্টকে আবার খুন করাবো।
চমকে উঠে তার দিকে তাকায় সবাই। কি বলছে এই ছেলে? অতি উত্তেজনায় মাথা খারাপ হয়ে গেলো না তো আবার?
চার.
ছয় তলার একটি রবোট হঠাৎ নড়ে উঠে। প্রথমে সেটির সিন্থেটিক চোখের এলইডি জ্বলে উঠে, মাথা উঁচু করে ডানে বামে তাকায়। তারপর ধীরে ধীরে বন্ধ দরজার দিকে এগিয়ে যায় সেটি। দরজার কি-প্যাডে দ্রুত কয়েকটি নাম্বার এন্ট্রি করতেই সেটি খুলে যায়। করিডোর দিয়ে হেঁটে বের হয়ে রবোটটি খুব সন্তর্পণে লিফটের গিয়ে উঠে। বিশ তলায় এসে লিফট থেকে বের হয়ে সোজা কিচেনের ঢুকে দ্রুত এক কাপ চা বানিয়ে আলবার্টের রুমের দিকে এগিয়ে যায়। রুদ্ধশ্বাসে সিসিক্যামেরার কন্ট্রোল রুমে বসে খুনি রবোটের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছে অরুপ, মাইক ও সাথে সিআইডির লোকজন। অরুপের ঠিক পেছনে দাঁড়িয়ে সুমিতা, ফিসফিস করে বলে, এটাই কি সেই খুনি রবোট? তার প্রশ্নের জবাব দেওয়ার মতো কারও মানসিক অবস্থা নেই। বন্ধ দমে মনিটরের উপর চোখ আটকে আছে তাদের।
রুমে ঢুকেই ঘুরে আলবার্টের চেয়ারের পাশে দাঁড়ায় রবোটটি। তারপরের ঘটনা প্রবাহ যেন বিদ্যুৎচমকের মতো ঘটে যায়। টেবিলের উপর চায়ের কাপটি রেখেই কিঞ্চিত নিচু হয়ে ড্রয়ার খুলে হাতে তুলে নেয় লেজার গানটি, সেকেন্ডের ভগ্নাংশ সময়ে আলবার্টের চেয়ারের পেছনে পৌঁছে যায় সে। মুহূর্তেই লেজার গানটি থুতনির নিচে ধরে আরেক হাত মাথার তালুতে চেপে ধরে ট্রিগার টেনে ধরে।
শিউরে উঠে অরুপের কাঁধ খামচে ধরে সুমিতা। চোখ বন্ধ করে বিড়বিড় করে কি যেন বলতে থাকে। কাঁধের কাপড় ভেদ করে নখ বসে যেতে থাকে ক্রমশ। সেদিকে প্রথমে খেয়াল ছিলো না অরুপের, কিছুক্ষণ পর মৃদু উষ্মা প্রকাশ করে পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখে সুমিতার চোখ বন্ধ, দাঁত কপাটিকা লেগে যাওয়ার মতো অবস্থা। মৃদু ঝাঁকুনি দিয়ে তার সম্বিত ফিরিয়ে আনে। দেখ তোর শরীর খারাপ লাগলে চোখেমুখে পানি দিয়ে ডেস্কে গিয়ে অপেক্ষা কর, আমি এর শেষ না দেখে উঠছি না।
“না, না, আমি ঠিক আছি।“, কাষ্ঠ হাসি দিয়ে চুল ঠিক করতে লেগে যায়। “আমিও শেষ না দেখে উঠছি না, তুই পারলে আমিও পারবো।”
যেন কিছুই হয়নি এমন ভাবে রবোটটি চেয়ারের পাশে মেঝেতে লেজার গানটি রেখে দেয়। তারপর কম্পিউটারের কিবোর্ডে টোকা দিয়ে নোট প্যাড খুলে সেখানে সুইসাইড নোটটি কপি পেষ্ট করে। অতঃপর চায়ের কাপটি তুলে নিয়ে বেসিনের দিকে এগিয়ে যায়। কাপটি বেসিনে খালি করে ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। সে ঘরে ঢুকার পর মাত্র এক মিনিট বিশ সেকেন্ড পার হয়েছে। দুই মিনিট পর আরকটি রবোট চায়ের কাপ হাতে নিয়ে ঘরে ঢুকে। খুনি রবোটটি আর দাঁড়িয়ে না থেকে সাথে সাথে ঘর থেকে বের হয়ে করিডোর ধরে হেটে লিফটের দিকে এগিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর সে ছয় তলার আগের জায়গার গিয়ে পাওয়ার অফ করে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকে।
মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে ঘরের সবাই। কি দেখলো তারা এটি, নিজের চোখকেই যেন বিশ্বাস করতে পারছে না। তাড়াতাড়ি তারা দৌড়িয়ে আলবার্টের ঘরে ঢুকে, সবকিছু যেন আগের মতো আছে। শুধু সুইসাইডাল নোটটা ফাঁকা।
একদল গিয়ে সেই খুনি রবোটটিকে জব্দ করে। মাইক অরুপের দিকে তাকিয়ে বলে, খুনের অস্ত্র তো পাওয়া গেলো এখন খুনি কিভাবে ধরা যাবে?
আসল কাজ যেহেতু হয়ে গেছে, বাকীটা সহজ। ঐ রবোটের কপোট্রন খুলে কোডিং দেখলেই বুঝা যাবে ঐ অংশটা কে কবে যুক্ত করেছে। আর খুনি যদি লজিক সার্কিট বদলিয়ে থাকে তবে, এই রবোটের উপর কে কাজ করেছে সেগুলো গত দুই সপ্তাহের সিসিক্যামেরার রেকর্ড দেখলেই পাওয়া যাবে। আমার কাজ শেষ। খুনি ধরা পড়লে আমাকে জানাবেন দয়া করে।
পাঁচ.
নিজের কিউবিকলসে এসে বসেছে অরুপ। মাথা ঝিমঝিম করছে, বাহির থেকে দেখে বোঝা না গেলোও প্রচন্ড মানসিক চাপ গেছে গত কয়েক ঘণ্টায়। তার পাশে থ মেরে বসে আছে সুমিতা।
- আচ্ছা, পুরো ঘটনাটিকে কি করে পুনরাবৃত্তি করলি?
একদম সহজ। খুনের পরিকল্পনাকারী একটি টাইমার সেট করে রেখেছিলো। আজকের তারিখে আটটা বাইশ বাজার সাথে সাথে সেই শিডিউল সার্ভিসটা একটিভেট হয়ে যায়। তুই তো জানিস পৃথিবীজুড়ে আমাদের সব রবোট একটি সেন্ট্রাল টাইম মেনে কাজ করে। আমি আমাদের সেই সেন্ট্রাল ক্লকে ছোট্ট একটি প্যাচ আপলোড করে সময় সকাল আটটা করে দিয়েছি। ব্যাস, সঠিক সময় মতো এটি আবার একটিভেট হয়ে যায়, আর সেই রবোটটি সবকিছু আবার পুনরাবৃত্তি করে।
- তুই সারা পৃথিবীর সব রবোটের টাইম চার ঘণ্টা পিছিয়ে দিয়েছিলো? বিস্ময়ে চোখ ছানাভরা হয়ে যায় সুমিতার।
আরে নাহ! কি বলিস! এটা করলে তো মহা বিপর্যয় ঘটে যেতো। আমি শুধু আমাদের ভবনের রবোটগুলোর জন্যে কোড করেছিলাম। এখন আবার টাইম আগের জায়গার নিয়ে এসেছি।
- আচ্ছা, যে এই খুনের পরিকল্পনা করেছে, যদি কোনো ঝামেলা হয়ে যেতো? যেমন ধর, আলবার্ট স্যার আজ অফিসেই আসেন নি, তাহলে?
সেটা তো আমি বলতে পারবো না। তবে আমার ধারনা, যে এমন একটি মাস্টার প্ল্যান করতে পেরেছে সে নিশ্চয় কোডিং এ এই বিষয়টাও রেখে দিয়েছিলো। হয়তো সেক্ষেত্রে রবোটটি রুমে ঢুকেই আবার বের হয়ে নিজের জায়গার চলে যেত।
- আরেকটি বিষয় বুঝতে পারছি না, পরের বার সুইসাইড নোট ফাঁকা ছিলো কেন?
প্রথমবার ‘সিলেক্ট অল’ করে ‘কাট-পেষ্ট’ করেছিলো। তাই পরের বারও ‘সিলেক্ট অল’ করে ‘কাট-পেষ্ট’করেছে, কিন্তু কোনো কনটেন্ট ছিলো না। এই কারণে।
ঠিক তখনই অরুপের মোবাইলটি বেজে উঠে, ছো মেরে সেটি তুলে নেয়। চুপচাপ অপর পার্শ্বের কথা শুনে সে। শুধু একবার জিজ্ঞেস করে, মোটিভ কি বের করতে পেরেছেন? ওহ, ওকে ওকে, নাহ কি যে বলেন না! অবশ্যই অবশ্যই। আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ। ফোনটা রেখেই সুমিতার দিকে তাকিয়ে হেসে বলে, খুনি ধরা পড়েছে। খুনের পরিকল্পনা সফল হওয়ার খবর দেখতে পেয়ে অবসর যাপনে জার্মান যাচ্ছিলো। ফোর্ট ওয়ার্থ ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে লুফথানসার ফ্রাঙ্কফুর্টগামী বোর্ডিং হয়ে যাওয়া প্লেন থেকে ব্যাটাকে নামিয়ে আনা হয়েছে। প্রথমে না কী কিছুই স্বীকার করছিলো না, বেশ হম্বিতম্বি করছিলো, মানহানীর মামলা করে দেখে নেওয়ার হুমকিও দিয়েছিলো। পরে সিসিক্যামেরার রেকর্ডিং দেখাতেই ফুটা বেলুনের মতো চুপসে গেছে।
গভীর দৃষ্টিতে অরুপের দিকে তাকিয়ে সুমিতা বলে, “আজকে সকালে তোকে বলেছিলাম না নতুন একটা চাকরী খুঁজতে?”
হুম, তো?
আমার মনে হয় এটা মন্দ হয় না। তুই একটা প্রাইভেট গোয়েন্দা সংস্থা খোল। আমিও তোর সাথে আছি।
একদৃষ্টিতে কিছুক্ষণ সুমিতার চোখের দিকে তাকিয়ে মুহূর্তক্ষণ পর বলে, “হ্যাঁ, তোকে আমার এসিসট্যান্ট হিসাবে নেই, আর ডেডবডি দেখে তুই নিজেই ডেডবডি হয়ে যাস। দেখা যাবে খুনের কেসের তদন্ত করতে গিয়ে আমিই খুনের দায়ে আটকা পড়েছি”। তারপর উদাস হয়ে ছাদের দিকে তাকিয়ে আনমনে বলে “আর আমার দ্বারা এই সব টিকটিকি ফিকটিকির কাজ হবে না।
নোটঃ ছবি সূত্র ইন্টারনেট
বিশেষ ধন্যবাদ ব্লগের অপু তানভিরকে। এই ছেলেটার পিড়াপিড়িতে ঝিমিয়ে পড়া লেখার আগ্রহ ফিরেফিরে আসে।
১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:২৬
শান্তির দেবদূত বলেছেন: প্রিয় পাঠক, অনেক ধন্যবাদ চমৎকার মন্তব্যে উৎসাহিত করার জন্য। শুভকামনা রইল, অনেক।
২| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:১০
ঢাকার লোক বলেছেন: বেশ গল্প ! প্রথমে ভেবেছিলাম আর সব গল্পের মতো এটিও সুমিতা অরূপের প্রেমের গল্প হবে , কিন্তু এ যে দারুন ডিটেক্টিভ গল্প ! লেখা দারুন ! শুভকামনা !!
১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৩০
শান্তির দেবদূত বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ প্রিয় পাঠক। আপনার সুন্দর মন্ত্যবে লেখার আগ্রহ বেড়ে গেলো বহুগুণ। শুভেচ্ছা ও শুভকামনা নিরন্তর।
৩| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:১৪
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: অনেক দিন পর আবার সেই আগের আমেজে একটা ফিকশন পড়ে মজা পেলাম
মাঝখানে কয়েকটা মিস হয়ে গেছে মনে হয়।
পড়ে পুষীয়ে নেতে হবে
+++++++++
১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৩১
শান্তির দেবদূত বলেছেন: প্রিয় বিদ্রোহী'দা, অনেক ধন্যবাদ। আপনাদের টানেই তো ফিরে ফিরে আসি। শুভকামনা রইল।
৪| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:২০
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: ওয়েলকাম ব্যাক! ব্রো
পাক্কা তিন বছর পর এসে আবারো মাতিয়ে দিলেন আগের ফ্লেভারে
আর যাবেন না আশা করি
১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৩৪
শান্তির দেবদূত বলেছেন: ইয়ে ব্রো, থ্যাংক্স
ইচ্ছা আছে অরুপকে নিয়ে সিরিজ আকারে বেশ কয়েকটা গল্প লেখার। এটা সেই সিরিজের প্রথম গল্প। তাকে রবো-ডিটেকটিভ হিসাবে দাঁড়া করাবোর পরিকল্পনা আছে।
৫| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:৩৩
ঢাকার লোক বলেছেন: লেখাটাতে সিআইডি র বদলে এফবিআই এর লোক বললে কেমন হতো ?
১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৪৬
শান্তির দেবদূত বলেছেন: মনোযোগী পাঠক, আপনি খুব সুন্দর একটি পয়েন্ট তুলে ধরেছেন। এটা প্রথমে আমার মাথাতেও এসেছিলো। তবে তিনটি কারণে এখানে এফবিআইকে নিয়ে আসিনি।
প্রথমত, গতানুগতিকাতাকে পাশ কাটিয়ে একটু অন্যভাবে উপস্থাপন করা। আমেরিকার যে কোনো ক্রিমিনাল কেসের বিষয়ে প্রথমেই এফবিআই এর কথা মাথায় আসে (এই যে আমার মাথায়ও প্রথমে এটা এসেছিলো, আর পাঠক হিসাবেও প্রথমেই এটা আপনার চিন্তায় এসেছিলো)
দ্বিতীয়ত, এফবিআই সাধারণত খুব জটিল কেসগুলোতে উপস্থিত হয়। যে কোনো সমস্যায় প্রথমে লোকাল পুলিশ ডিল করে। কিন্তু খুব বেশি চাঞ্চল্যকর কেস হলে সেক্ষেত্রে এফবিআইকে এনগেইজ করা হয়। আর সিআইডি একটি সাধারণ টার্ম, প্রায় অনেক দেশেই পুলিশের এই ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টটি আছে।
তৃতীয়ত, আমার গল্পের পটভূমি হয়তো এখন থেকে আরও ষাট, সত্তর কিংবা একশ বছর পরের। তাই বর্তমানের এফবিআইকে এখানে দেখাতে চাইনি। আরেকটা বিষয় হলো, অরুপকে কেন্দ্র করে রবোটিক্স নিয়ে আরও কয়েকটি ডিটেকটিভ গল্প লেখার ইচ্ছা আছে। সেখানে দেখাবো, সিআইডির ভেতর একটি স্পেশাল ডিপার্টমেন্ট করা হয়েছে এই রবোটিক্সকে কেন্দ্র করে।
হয়তো, পরের কোনো গল্পে এফবিআইকে নিয়ে আসতেও পারি, যদি তেমন চাঞ্চল্যকর কোনো কেসে অরুপ ফেসে যায়। যদিও তার এই বিষয়ে তেমন আগ্রহ নেই, কিন্তু ঘাড়ে চেপে বসলে তো আর কিছু করার নেই, কি বলেন?
৬| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৪৯
ডি মুন বলেছেন: ওয়েলকাম ব্যাক।
গল্প ভালো লেগেছে।
অপু তানভীর ভাইকেও ধন্যবাদ আপনাকে দিয়ে গল্প বের করানোর জন্য
১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:০০
শান্তির দেবদূত বলেছেন: হা হা হা, অনেক ধন্যবাদ, প্রিয় মুন ভাই। শুভকামনা রইল।
৭| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ভোর ৫:০৪
ঢাকার লোক বলেছেন: এফবিআই না ব্যবহার করে সিআইডি ব্যাবহার পিছনে আপনার বিস্তারিত কারন জেনে খুশি হলাম ! তবে আরেকটা পয়েন্ট, একজন প্রোগ্রামার একজন হাই প্রোফাইল সহকর্মীকে খুন করার জন্য ( মোটিভটা কিন্তু কোথাও স্পষ্ট হয়নি , খুনি কি ডেপুটি সিইও ছিল, সিইও হওয়ার উচ্চাশা ছিল , নাকি বসের সাথে কোনো কনফ্লিক্ট ছিল ?) রোবটকে প্রোগ্রাম করে দিয়ে কি হলো বা হচ্ছে ফলো না করে বেলা ১০-১১ টা অবধি নিশ্চিন্তে নাক ডেকে ঘুমিয়ে থাকাটা একটু কেমন যেন লাগছে, তার চেয়ে ওকে ফোর্ট ওয়ার্থ ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে লুফথানসার ফ্রাঙ্কফুর্টগামী বোর্ডিং হয়ে যাওয়া প্লেন থেকে ধরে নামিয়ে আনলে কেমন হতো ?
১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:০৪
শান্তির দেবদূত বলেছেন: প্রিয় পাঠক, অনেক ধন্যবাদ সুন্দর একটি পয়েন্ট তুলে ধরার জন্যে। আপনার মতো বিদগ্ধ পাঠকের ইনপুটে গল্পটা আরও সমৃদ্ধ হয়েছে।
আপনার উপদেশ মোতাবেক কিঞ্চিৎ পরিবর্তণ সাধিত করেছি। আবারও অনেক অনেক ধন্যবাদ। শুভকামনা রইল নিরন্তর।
৮| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:২৩
রাজীব নুর বলেছেন: বোমকেশের মুভি দেখেই। আপনার পোষ্ট পড়লাম। বেশ ভালো।
১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:০৫
শান্তির দেবদূত বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ প্রিয় পাঠক। শুভকামনা রইল।
৯| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:৪২
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আপনার গল্প সময় নিয়ে পড়তে হবে। আপনাকে অনলাইন দেখেই হাজিরা দিয়া গেলাম এবং দেখলাম আপনি গতকল্য গল্প দিয়েছেন। ভালো লাগলো।
১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:১২
শান্তির দেবদূত বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ প্রিয় লেখক। আপনারা আমাকে এখনো মনে রেখেছেন দেখে বেশ আনন্দিত বোধ করছি। অনেকদিন পর আসলাম কিনা!
আশা করি আপনার শরীর ভালো আছে। মাস তিনেক পর দেশে আসছি, ইনশাআল্লাহ দেখা করবো।
১০| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:৪৪
ঢাকার লোক বলেছেন: আপনাকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ ! আমার মন্তব্যটাকে এতটা গুরুত্ব দিবেন ভাবতে পারিনি ! এতটা সিরিয়াসলি আমি লিখিনি ! ছেলেবেলায় কিরীটি রায় এর কিছু কাহিনী পড়ে ডিটেকটিভ গল্প ভালবাসতে শুরু করেছিলাম, আপনার গল্পটাও তাই খুবই ভালো লেগেছে !! ভবিষ্যতে আরো ভালো করুন!! অনন্তর শুভ কামনা !!
১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:২৭
শান্তির দেবদূত বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ প্রিয় পাঠক। আপনার পয়েন্টটা খুবই যুক্তিসঙ্গত ছিলো, আমলে না নিলে বোকামি হতো। আপনার মতো পাঠকদের আলোচনা সমালোচনাতেই তো লেখার ভুলগুলো ধরতে পারি। অনেক ভালো থাকুন। শুভকামনা।
১১| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:২৫
অপু তানভীর বলেছেন: আমি তো সবার আগে পড়েছি এই গল্প !
১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:৪৮
শান্তির দেবদূত বলেছেন: তুমি আমার নাম্বার ওয়ান বেটা রিডার। তুমিতো আগে পড়বাই।
১২| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:৪২
অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: অনেকদিন পর পড়লাম তোমার লেখা। নতুন লিখছ এটা ?
এক ঝটকায় পড়তে বেশ ভালই লাগছে। মাইক আর তার টিমের বারোটা বাজায় দিছ অরুপের ডিটেক্টিভগিরিতে। গল্প অনেক তড়তড়ায় আগাইছে। আর সেইভাবেই শেষ হইছে। এত শর্টকার্ট গল্প শেষ হইল এবং অরুপের ব্রেইন খাটাইছ, সি আই ডি টিমকে এত রিলাক্স দিছ এটা আমার কাছে একটু চোখে লাগছে। সময় নিয়া কি আবার লিখতে পারো এটা ? অরুপের কাজকর্ম সিনেমাটিক লাগতেছে। হিরোই ১০০ তে ১০০ পাইয়া ফেলছে এমন আর কী! আমাদের পাঠকদের মাথা ঘামানোর সুযোগই রাখো নাই !!!
১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:৫৩
শান্তির দেবদূত বলেছেন: ৩ দিন আগে। সারারাত এক বসায় টাইপ করছি। আর একবার লেখা হয়ে গেলে কখন পোষ্ট দিব সেই চিন্তায় অস্থির থাকি, রিভিউ তেমন একটা করা হয় না। এর জন্যে কিছু দুর্বলতা হয়তো রয়ে গেছে।
সিআইডির আর পাঠকের জন্যে খুনের মোটিভ অপ্রকাশিত রেখে দিয়েছি তো!
পরিকল্পনা আছে, অরূপকে নিয়ে সিরিজ আকারে কয়েকটা গল্প লেখার, সামনের গুলো আরও সময় ও মনোযোগ দিয়ে লেখার চেষ্টা থাকবে। তোমার ইনপুট, আলোচনা ও সমালোচনা সবসময়ই বেশ উপভোগ্য। শুভকামনা রইল।
১৩| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:২৬
অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: ভালো মন্তব্য আর কই দিলাম! তা পরের সিরিজ কয় বছর পর দিবা ? হ্যা খুনী কে সেটা অপ্রকাশিত রাখছ কিন্তু যখন সিরিজ আকারে লেখার প্ল্যান আছে সেই হিসাবে শুরু থেকে রি রাইট কইরো। মানে একটু স্লোলি। সব যদি অরুপই বলে দেয়, সব সলিউশন দিয়ে দেয় পাঠকের চিন্তার স্পেসটা থাকে না। পাঠককে রিলেট করার সময় দিতে হবে এখানে।
একটু জ্ঞান ফলাইলাম আর কী!
নিয়মিত ব্লগিং করলে জানিও। আমিও চেষ্টা করব আসতে
১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:৩২
শান্তির দেবদূত বলেছেন: তোমার পয়েন্টগুলো মাথায় থাকল।
আর, ব্লগ তো জ্ঞান ফলানোরই জায়গা! তোমার জ্ঞান সমসময়ই আমার আলোকবর্তিকা।
নিয়মিত হতে পারবো কি না জানি না, তবে চেষ্টা থাকবে। আর আশা করি বছর ঘুরবে না, তার আগেই নতুন গল্প দিতে পারবো
১৪| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:৪০
অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: ওকে এবার যাইয়া আমার ব্লগের শেষ গল্পটা পইড়া আসো আর পড়লেই বুঝবা ওইটা কারে নিয়া লেখা
১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩৫
শান্তির দেবদূত বলেছেন: পড়েছি। বুঝতে পেরেছি কাকে নিয়ে লিখেছ।
১৫| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ভোর ৫:৩৪
মলাসইলমুইনা বলেছেন: ব্লিপ ব্লিপ ব্লিপ ....মানে দারুন হয়েছে I
সাব্বাস বা সাধু সাধু যে কোনো একটা বলে বা দুটো বলেই কংগ্রাটস জানানো যায় গল্পে I সেটা জানালাম I খুব ভালো হয়েছে গল্প I নতুনত্বও আছে I গল্প গাঁথুনির একটা জায়গায় খানিকটা খটকা লেগেছে I সেটা হলো যে রোবটের প্রোগ্রামিংয়ে চেঞ্জ করে এতসব গোলমাল করলো সে নিশ্চই একজন এক্সপার্ট এ'ব্যাপারে I তারতো আগেই চিন্তা করা দরকার ছিল যে অন্য কোনো রোবোটিক এক্সপার্ট এই ব্যাপারটা যে ইন্টারনাল সেটা ধরতে পারবে যে রোবট দিয়ে এই কাজটা হয়েছে আর সেটা করেছে ভেতরেই কেউ (যেহেতু ক্রাইমটা অফিসেই হয়েছে আর সেখানে অনেক এক্সপার্ট আছে !) কারণ যে সহজেই অরূপ সমস্যাটা ধরে ফেললো সেটা আরেকজন এক্সপার্ট চিন্তা করবে না সেটাই গল্পের গাঁথুনিতে একমাত্র প্রব্লেম বলে মনে হয়েছে |তাছাড়া এককথায় চমৎকার কাহিনী, বর্ণনা I আর প্রিয় ব্লগার অপর্ণা মন্ময় যা বলেছেন গল্প সম্পর্কে সেগুলো খুব প্রাসঙ্গিক বলে আমার মনে হয়েছে I আবারো অনেক ধন্যবাদ I
১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:০১
শান্তির দেবদূত বলেছেন: টিক টিক টিক............. মানে অনেক অনেক ধন্যবাদ
আসলে খুনির পরিকল্পনা ছিল এটাকে আত্মহত্যা হিসাবে দেখানো। হাতের নিচে লেজার গান ফেলে রাখা, সুইসাইডাল নোট ইত্যাদি সাজিয়েছিলো এই কারণেই। এটা হয়ে যাওয়ার পর, পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হয়ে এলে সে ছুটি কাটিয়ে এসে কোনো এক ফাঁকে রবোটের কপোট্রন থেকে এই সিডিউল প্রোগ্রামটা মুছে দিয়ে সব প্রমাণ গায়েব করে দিতে পারতো। আর খুনি সমসময়ই তো কিছু না কিছু ক্ল পেছনে ফেলে যায়। তবে বিষয়গুলো আরও জটিল করার সুযোগ ছিলো। আপনার মুল্যবাদ পর্যবেক্ষণ পরবর্তি পর্ব লেখার সময় মাথা থাকবে।
অনেক ধন্যবাদ, মলাসইলমুইনা (নাইমুল ইসলাম) ভাই। শুভকামনা রইল।
১৬| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:৩৯
দি ফ্লাইং ডাচম্যান বলেছেন: একটানে পড়ে ফেললাম! প্রথমে ভেবেছিলাম আপনার অন্যন্য সাইফাই এর মত গল্প। পরে দেখি এ যে রীতিমত ডিটেক্টিভ গল্প! ভালো লেগেছে বেশ।
একটা বিষয়, আমার কাছে এটাই একটু অসংগতিপুর্ণ লাগছে! কোন বড়সড় কম্পানীতে কীলগার থাকার কথা না প্রত্যেকটা পিসি তে। কিছু কনভেনশন রুলটুল আছে ওটার ভিত্তিতে। ওয়ার্কপ্লেসে বসার জায়গাতে যেমন সিসি ক্যাম ব্যবহার করা যায়না সেরকম। যদি ধরেই নেই যে রুল চেঞ্জ হয়ে গেছে, গল্পটা যেহেতু নিকট ভবিষ্যত এর! সেক্ষেত্রে কী লগার থাকলেও সেটার ম্যানেজমেন্টে খুব অল্পসংখ্যাক সিকিউরিটি এক্সপার্ট থাকার কথা, কোম্পানীর বিজনেস সিক্রেটও যেহেতু নির্ভর করে এর উপর। যেহেতু অরুপ নতুন এবং মাত্র ইন্টার্ন হিসেবে যোগ দিয়েছে, তার এই কন্ট্রোল প্যানেলে এক্সেস থাকার কথা না। তাইনা?
অরুপ নামটা দেখে বেশ মজা পেয়েছি অবশ্য। ক্যানো সেটা পরে বলব!
১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১১
শান্তির দেবদূত বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ, তোমার (আগে তো মনে হয় তুমি করেই বলতাম, তাই না? অনেক আগে তো ভুলে গেছি) সুন্দর কমেন্টের জন্যে।
আসলে এই ব্যাপারটা মাথায় ছিলো। কী-স্ট্রোক সার্ভিসটি পাসকোড শুধু মাত্র সিইও এবং আইটি চিফের কাছেই থাকে। এটা তার কাছ থেকে নিয়েই অরূপ কী-হিস্ট্রি বের করেছে। এই জায়গাটা ইচ্ছা করেই একটু উহ্য রেখেছি। আরেকটা জায়গায় একই কাজ করেছি; ঐ যে সেন্ট্রাল ক্লক এর টাইম চেঞ্চ করা। এটা কিন্তু কারও পারার কথা না, শুধু মাত্র চিফ ছাড়া। এটাও তার সাহায্যেই করা হয়েছে আর ব্যাপারটা উহ্য রেখেছি। পাঠকেরও তো কিছু চিন্তার সুযোগ দিতে হবে, তাই না?
তুমিই শুধু ব্যাপারটা ধরতে পেরেছে, ভেরি গুড
অরূপ নামের রহস্য জানার জন্যে চাতকের মতো অপেক্ষায় রইলাম।
অনেক অনেক শুভকামনা রইল, প্রিয় ফ্লাইং ডাচম্যান।
১৭| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:০৭
অন্তরন্তর বলেছেন: বেশ কিছুদিন পর লিখলেন। সেই আগের শান্তির দেবদূত ভাই। ডিটেকটিভ গল্প সবসময় ভাল লাগে তাই এটা ভাল লেগেছে। শুভ কামনা।
১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ২:৪৯
শান্তির দেবদূত বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ প্রিয় অন্তরন্তর। এই প্যাটার্নে আরও কয়েকটি গল্প লেখার পরিকল্পনা আছে। শুভকামনা রইল।
১৮| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:৩২
দি ফ্লাইং ডাচম্যান বলেছেন: বিশাল টেকি হয়ে গেছি তাহলে কী বলেন ভাইয়া! হাহাহাহা
তুমি করেই বলতেন এবং বলবেন! আসলেই অনেকদিন। প্র্যাক্টিক্যালি ২০১৬ সালের মার্চের পর থেকে আমি হাওয়া। মাঝে সামু পাসওয়ার্ড রিসেট করে দিলো, আমার রিকভারী মেইল ছিলো রকেটমেইলে! ইয়াহু তো রকেটমেইল কন্টিনিউ ই করেনা আর! দীর্ঘদিন পর মাসখানেক আগে সামুর জোস মডু এবং ডেভু টিমের বদান্যতায় ডাচম্যানকে আবার ফিরে পেয়েছি!
রহস্য বেশি কিছু না! আমার ডাকনাম ওটা! তবে স্কুলের বন্ধুরা আর বাসায় ছাড়া কোথাও জানেনা! ভার্সিটি কলেজ কলিগ সবাই ভালো নামে চেনে। ভালোই লাগছিলো। যেহেতু ছোটবেলায় তিনগোয়েন্দা আর মাসুদ রানার ভক্ত ছিলাম। নিজেই গোয়েন্দাপ্রবর হয়ে গেলাম, তাও ভবিষ্যতের।
১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৩:০২
শান্তির দেবদূত বলেছেন: হুম, সেটা তো আলবৎ হয়েছ, বুঝতেই পারছি।
যাক, আইডি যেহেতু ফিরে পেয়েছ, আশা করছি ব্লগে আবার নিয়মিত হবে।
বাহ! কাকতালীয়, বলতেই হবে। সামনে তো আরও চমক দেখাবে
১৯| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:৫৮
সেলিম আনোয়ার বলেছেন: সুপ্রিয় ব্লগার শান্তির দেবদূত আবারো আপনাকে ব্লগে পেয়ে দারন ভাল লাগছে। সুস্বাগতম । হ্যাপী ব্লগিং । পোস্ট পাঠ করিনি করে ।পড়ার পর কমেন্ট করবো।
১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:০০
শান্তির দেবদূত বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ সেলিম ভাই। আপনাকে দেখেও ভালো লাগছে। শুভকামনা রইল। হ্যাপী ব্লগিং।
২০| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৪০
কাছের-মানুষ বলেছেন: চমৎকার লিখেছেন। ঘটনা প্রবাহে গতি আছে, লিনিয়ারলি বয়ে চলেছে গল্প। একটা টান টান উত্তেজনা শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে পেরেছেন, এটা গল্পের স্বার্থকতা।
আজকাল সাইন্সফিকশন খুব একটা ব্লগে চোখে পড়ে না, আপনার কিছু পুরোন লেখা আমি পড়েছি। আপনি ভাল লিখেন ।
নিয়মিত হবেন আশা করি।
১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৫৩
শান্তির দেবদূত বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ কাছের-মানুষ সুন্দর মন্তব্য করে উৎসাহ দেওয়ার জন্যে।
এখন বেশ কয়েকটা সাইন্স ফিকশন উপন্যাস লেখা নিয়ে ব্যস্ত আছি, এই কারণে ব্লগে নিয়মিত সময় দেওয়া ও পোষ্ট করা হয়ে উঠে না। তবে ইচ্ছা আছে এখন একটানা কয়েকটা ছোট গল্প পোষ্ট করার, লেখার মধ্যে আছি।
আপনার ব্লগে একটু ঢুঁ মেরে আমার তো মাথাই হাত, কল্প গল্পের ভাণ্ডার পেয়ে গেছি! শুভকামনা রইল।
২১| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:০৪
কাছের-মানুষ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
আমি আপনার অনেক লেখাই পড়েছি বিশেষ করে 'কৃত্রিম মা ও অকৃত্রিম মাতৃপ্রকৃতি ' এবং 'প্রজেক্ট নস্ট্রাডমাস' এযাবতকালের আমার পড়া শেষ্ট গল্প।
সময় পেলেই আমি আপনার লেখাগুলো পড়ি একটা একটা করে শেষ করি। লেখা অব্যাহত রাখুন ।
২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:১৭
শান্তির দেবদূত বলেছেন: ধন্যবাদ প্রিয় লেখক। আপনার মন্তব্যের জবাবে বলার মতো কিছু পাচ্ছি না, এভাবে প্রশংসা শুনলে একটু লজ্জা লজ্জা লাগে তাই আর কি! ভালো থাকুন, আর লিখতে থাকুন।
২২| ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ২:২১
চাঙ্কু বলেছেন:
গল্পডা বড় আছে। পরে এসে পড়ুমনে। খালি আপনারে একটা নক দিতে আইলাম
২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ২:১১
শান্তির দেবদূত বলেছেন: আরে চাঙ্কু ভাই যে? অনেক দিন পর আপনাকে দেখে ভালো লাগছে। ভালো থাকুন। শুভকামনা রইল।
২৩| ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:০৮
হাতুড়ে লেখক বলেছেন: ভাল লেগেছে। খেই হারাইনি একটুও।
১১ ই জানুয়ারি, ২০২০ রাত ২:৩৭
শান্তির দেবদূত বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। শুভকামনা রইল।
©somewhere in net ltd.
১| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:০৪
এস এম মামুন অর রশীদ বলেছেন: টানটান মজার একটি গল্প, এ ধরণের পোস্টই ব্লগকে সংজ্ঞায়িত করে। লিখতে থাকুন।