নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি সাধারনের মাঝে অসাধারণ খুজেঁ বেড়াই। হেয়ালি একটা জিনিসের মাঝেও শিক্ষনীয় কিছু খোজার চেষ্টা থাকে । জানিনা কতটা পারি, তবে চেষ্টা করে যাই অবিরাম।

আসিফ শাহনেওয়াজ তুষার

শেরপুর নিউজ ২৪ নামক অনলাইন পত্রিকায় কর্মরত

আসিফ শাহনেওয়াজ তুষার › বিস্তারিত পোস্টঃ

চিন্তার দৈন্যতাই অহেতুক তর্কের উৎস

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১২:৩৯


আমাদের দেশের চিন্তার দৈন্যতা নিয়ে বরাবরই কথা বলে আসছি। অপ্রয়োজনীয় তর্ক আর অহেতুক উৎসাহের জন্য আমাদের দেশের কিছু মানুষ মাহের। তবে এদের সংখ্যা এমন বিশাল কিছু নয়, কিন্তু এদের আওয়াজটা জোরালো। উদাহরণ দিই, জনৈক ইসলামি বক্তার দামি গাড়ি চালানোর ছবি নিয়ে কথা উঠেছে। যারা কথা তুলেছেন তাদের বেশিভাগকে নজর-আন্দাজ করা গেলেও দু’চারজন আছেন তাদের এমন চিন্তা নিয়ে বিস্মিত হতে হয়। দুই হাজার বিশ সালে বসে একজন ইসলামি বক্তা বা স্কলার দামি গাড়ি চালাচ্ছেন তা নিয়ে ট্রল বা সমালোচনা করা সত্যিকার অর্থেই বিস্ময়ের ব্যাপার।
এমন লোকজন আছেন, যারা নিজেদের সৎ বলেন আবার এক কোটি টাকার গাড়িতেও চড়েন। তারা কি প্রশ্ন করেছেন, এই গাড়িটায় তিনি চড়ার যোগ্য ঠিক কিন্তু কেনার যোগ্য কিনা। করেননি। না করাটা দোষের কিছু নয়। হয়তো সেটা তার অর্জন। কদিন আগে দেখলাম দিনমজুরের ছেলে বিসিএস ক্যাডার হয়েছেন। যে কদিন পরে গাড়ি পাবেন। সেই গাড়ি অর্থ নয় মেধার জোরে চড়ার যোগ্যতা অর্জন করবেন তিনি। সুতরাং একজন ইসলামি স্কলার গাড়ি চড়তে, চালাতে পারবে না, এটা ভাবা শুধু অদ্ভুতই নয়, চিন্তার পশ্চাতপদতাও।
ইসলামকে সব যুগের ধর্ম বলা হয়। সময়কে সাথে করে ইসলাম এগিয়ে যায়। পিছিয়ে থাকার ধর্ম ইসলাম নয়। এটা যারা বোঝেন না, তাদের জন্য করুণা। যারা এখনো ভাবেন ইসলামি স্কলার বা ইসলাম সম্পর্কে বলা মানুষজন খেজুর পাতার পাটি বিছিয়ে শোবে, ক্লিশে জীবনযাপন করবে সেটা তাদের নেহাতই অজ্ঞতা। অনেকে বলবেন, ইসলাম প্রচার যারা করতেন তারাতো তেমন জীবনই যাপন করতেন। হ্যাঁ, তখন করতেন। তখন সময়টাই তেমন ছিলো। এখন ইসলাম প্রচার করতে ঘোড়ায় বা উটে চড়ে অন্য দেশে যেতে হয় না। যাবার প্রয়োজনও নেই। এখন রেডিও-টিভির যুগ পেরিয়ে অন্তর্জালের দুনিয়া। ইন্টারনেট বিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছে। সব দূরত্ব আর অপর্যাপ্ততার বিপত্তি ঘুচিয়ে দিয়েছে। এই যে আমি রাতে লিখছি এখন যদি চাই, আমি রেফারেন্স হিসাবে অমুকের তাফসির শুনতে চাই- সেটা অবশ্যই সম্ভব। । এখন যদি কেউ বলে, নবীজির যুগেতো ইন্টারনেট ছিলো না। আমরা তবে ইন্টারনেট ব্যবহার করবো কেনো, এটা নেহাতই মূর্খের বয়ান। এই বয়ানের সাথে অর্ধশিক্ষিত কাঠমোল্লাদের বয়ানের কোনো পার্থক্যই নেই।
একজন ইসলাম পালন করা মানুষের সাথে গাড়ি চড়ার কোনো বিরোধীতা থাকতে পারে এমন ভাবাটাও নিজ জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার প্রমান। অনেকেই ছোয়াবের নিমিত্তে আয়াতুল কুরসি পড়ে থাকেন। সেখানে আল্লাহতায়ালা পরিষ্কার জানিয়েছেন, তার সীমার বাইরে মানুষ কোনো জ্ঞানই আয়ত্ব করতে পারবে না। সুতরাং গাড়ি, কম্পিউটার, ফোন এসব আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞান থেকেই উদ্ভাবন। এর বাইরে কিছু নেই। যারা গাড়ি চড়া নিয়ে বাহাস করছেন, তারা কিন্তু ফোন বা কম্পিউটার থেকেই করছেন। আমিও লিখছি ল্যাপটপের কিবোর্ডেই। এখন যদি বলেন, আপনি ইসলামপন্থী কথা বলবেন, আবার ইহুদি-নাসা’রাদের ল্যাপটপও ব্যবহার করবেন, এটা কিভাবে সম্ভব। আবার আয়াতুল কুরসি’ কথা বলি, আল্লাহতায়ালা বলেছেন, মানুষ তার প্রদত্ত সীমার বাইরে জ্ঞানের ব্যবহার করতে পারবে না। তিনি এখানে শুধু মুসলমানদের জন্য বলেননি। কোরআন শুধু মুসলমানদের জন্য কোনো গ্রন্থ নয়, সারা মানব জাতির জন্যই। এখন যদি এভাবে কেউ ল্যাপটপ নিয়ে কথা বলেন, তখন তাকে কী বলা উচিত। আমার এক ঢাকাইয়া বন্ধু আছেন। সে থাকলে বলতো, ‘ঠাডায়া চড় দেওন উচিত।’ না, উনি সেরকম ভায়োলেন্ট নন, পুরানো ঢাকার কথা বলার ধরণটাই তাই। এই ধরণটারে ধরার মধ্যেই বুদ্ধিমানতা।
এক ইসলামি রাজনীতি করা লোকের সাথে একবার একটু বাহাসে গিয়েছিলাম। বড় বিরক্ত হয়েছিলাম তার উপর। সে বলেছিলো, ইসলামে টিভি দেখা হারাম। আমি বললাম, ইসলাম কোথায় বলেছে টিভি দেখা হারাম। চৌদ্দশ বছর আগে কি টিভি ছিলো, না থাকলে হারাম ঘোষণা করা হলো কিভাবে? ইসলামতো যুগের সাথে চলা ধর্ম। কখন কোথায় কোনটা প্রয়োজন হবে, প্রাসঙ্গিক হবে এবং কল্যাণকর হবে তা অধিগ্রহণ করে চলাই ইসলাম। তো ওই মোল্লাজি বলছিলেন টিভি দেখা হারাম। টিভিতে যে হুজুররা বয়ান করেন তা দেখা কি হারাম, এমন জিজ্ঞাসায় তিনি বললেন, না সেটা জায়েজ। বললাম টিভি দেখা হারাম হলে সেটা জায়েজ হয় কিভাবে। কোনো জবাব নেই, দেয়ার সুযোগটাও নেই। তেমনি যারা ইসলামি স্কলারের গাড়ি চালানোতে আশ্চর্য হয়ে ইসলাম প্র্যাকটিস করা মানুষগুলোকে শুধুমাত্র জোব্বা পড়া অবস্থায় উট বা ঘোড়ার পিঠে দেখতে চান, তারাও সেই ‘টিভি দেখা হারাম’ ফতোয়াবাজদের মতন। রাসুল (সা.) ঘোড়ায় চড়েছেন, উটে আরোহন করেছেন। সে সময় তাই ছিলো উৎকৃষ্ট বাহন। সুতরাং সময়টাকে যারা বিস্মৃত হন তারা হয় বোকা, নয় চালাক এবং অবশ্যই বুদ্ধিমান নন।
আমি জানি, আরও অনেক উদাহরণ, তথ্য-উপাত্ত দিলেও এই শ্রেণির মানুষ তর্ক করবে। তবে তারা বিতর্কে যাবে না, কারণ তাতে যুক্তি থাকে। তর্কে থাকে ঝগড়া। আর কিছু নয়। হুমায়ূন আহমেদ সেজন্যেই মূর্খদের সাথে তর্ক যেতে নিষেধ করেছিলেন। বলেছিলেন, ওরা তোমাকে তাদের পর্যায়ে নামিয়ে আনবে এবং তোমাকে হারিয়ে দেবে। কারণ একজন বুদ্ধিমান তার ভুলটা ধরতে পারে, যা একজন চালাক পারে না। এবং সে তর্ক করেই যায়।

পুনশ্চ : যারা আমাদের দেশের গাড়ির দামে অন্যদেশের দামী গাড়ি হিসাব করেন তাদের জন্যও করুণা। আমাদের দেশে যে গাড়ির বিশ লাখ টাকায় বিক্রি হয়, তা জাপান বা যেখানে তৈরি হয় সেখান থেকে কেনা হয় দুই থেকে আড়াই লাখ টাকায়। যা আমাদের এখানে এসে বিক্রিযোগ্য হতে দাম চড়ে বিশ লাখে। আমাদের মতন এমন অদ্ভুত ট্যাক্স অনেক দেশেই নেই। আরেকটি কথা, যে বক্তার কথা নিয়ে লিখলাম, তার ভক্ত কিন্তু আমি নই। অনুসারিও নই। কারণ তার অনুসরণের প্রয়োজন আমার নেই। আমি যতটুকু ধর্ম বোঝার তা নিজে থেকেই বোঝার চেষ্টা করি।

(লেখকঃ কাকন রেজা, কলামিস্ট)

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:১৫

রাজীব নুর বলেছেন: আমরা সারা জীবন যত কথা বলি তার তিন ভাগই ফালতু কথা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.