নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি সাধারনের মাঝে অসাধারণ খুজেঁ বেড়াই। হেয়ালি একটা জিনিসের মাঝেও শিক্ষনীয় কিছু খোজার চেষ্টা থাকে । জানিনা কতটা পারি, তবে চেষ্টা করে যাই অবিরাম।

আসিফ শাহনেওয়াজ তুষার

শেরপুর নিউজ ২৪ নামক অনলাইন পত্রিকায় কর্মরত

আসিফ শাহনেওয়াজ তুষার › বিস্তারিত পোস্টঃ

জামালপুর থেকে রৌমারী পর্যন্ত রেলপথ এর নেপথ্যে

২৩ শে অক্টোবর, ২০২২ রাত ১২:৩৮



সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় এক‌টি ডকুমেন্ট ভাইরাল হয়েছে, যা মারফত জানা যায় অচিরেই জামালপুর থেকে শেরপুর ছুঁয়ে বক্সিগঞ্জ হয়ে রৌমারী পর্যন্ত রেলপথের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এটি দেখার পর আমাদের শেরপুরবাসীর মাঝে নানামুখী প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করলাম। অনেকেই খুশি আবার অনেকেই হতাশ। এখন আমার ক্ষুদ্র মস্তিষ্কে যা ধরা পড়েছে, সেটা আপনাদের সামনে তুলে ধরছি। এরপরে খুশি হবেন নাকি হতাশই রইবেন, সেটা আপনার অভিরুচি :

প্রথমে বলি পটভূমি:
শেরপুর জেলার অপার সম্ভাবনাময় জায়গা হচ্ছে নাকুগাও স্থলবন্দর। বাংলাদেশে যতগুলো স্থলবন্দর আছে, তার মধ্যে আখাউড়া স্থলবন্দর এর পরেই ঢাকা থেকে সবচাইতে কাছের স্থলবন্দর হলো নাকুগাও। এটা এমন একটি স্থলবন্দর, যেখান থেকে নাইটকোচে দার্জিলিং, সিকিমে যাওয়া যায়। এছাড়া নাকুগাও থেকে ১১০ কিলোমিটার দুরের "বনগাইগাও" রেলস্টেশন থেকে কাশ্মীর, চেন্নাই, দিল্লী, মুম্বাই গামী ট্রেনে উঠা যায়। শুধু কি তাই? এই বন্দর থেকে ভুটানের দুরত্ব মাত্র ২২০-২৩০ কিলোমিটার। এই বন্দর দিয়ে বর্ডার পার হয়েই শিলিগুড়ির নাইটকোচে চড়ে নেপালও যাওয়া যায়। অর্থাৎ এই স্থলবন্দর ব্যবহার করে একইসাথে তিনটি দেশের সাথে ঢাকার বানিজ্য এবং পর্যটন শিল্প বহুগুণে বৃদ্ধি করা সম্ভব। এমনকি বন্দরে আসার রাস্তাঘাটও যথেষ্ট ভালো। তার উপরে যদি নাকুগাঁও পর্যন্ত রেলপথ হতো তাহলে বানিজ্যিকভাবে বাংলাদেশ এগিয়ে যেতো বহুগুণে। এই বন্দর দিয়ে ক্রাউন সিমেন্ট সহ অন্যান্য পন্য ও সিমেন্ট আমি ভারতে রপ্তানি হতে দেখেছি। যেগুলো ফ্যাক্টরি থেকে কাভার্ড ভ্যানের মাধ্যমে আনতে হয়, যা অনেক ব্যায়বহুল। কিন্তু রেলপথ যদি থাকতো, সিমেন্ট সহ অন্যান্য ভারী পন্য নুন্যতম খরচে রপ্তানি যেমন করা যেতো, তেমনিভাবে পাথর, কয়লা সহ বিভিন্ন আমদানিকৃত ভারী পন্য মাত্র ৪ ঘন্টায় রাজধানীতে পৌঁছে যেতো। এছাড়া ওই তিন দেশের পর্যটকেরাও নুন্যতম সময় এবং খরচে আমাদের রাজধানীতে পৌছাতে পারতো। এই পন্থায় প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব ছিলো। সর্বোপরি দেশের জিডিপিতে এই স্থলবন্দর অনেক পজিটিভ ভুমিকা রাখতে পারতো। অথচ অজানা কারনে অপার সম্ভাবনাময় এই স্থলবন্দরকে পঙ্গু করে রাখা হচ্ছে। করোনা চলে গেছে কতোদিন যাবৎ অথচ করোনার অযুহাতে আজ পর্যন্তও এই বন্দর যাত্রী পারাপারের জন্য খুলে দেওয়া হয়নি। একই অবস্থা রেলপথেরও। স্থানীয় সাংসদ সহ এই জেলার কর্তাব্যক্তিরা আজ পর্যন্তও শক্তভাবে রেলপথের দাবি তুলতে পারেননি। আরও অবাক করার বিষয়, কিছু বছর আগের স্বয়ং রেলওয়ের ডিজির বাড়ি ছিলো এই নালিতাবাড়ী অথচ তিনিও উদ্যোগ নেননি দেশের স্বার্থে হলেও নাকুগাও পর্যন্ত রেলপথ স্থাপনের।

এখন আসুন জানার চেষ্টা করি, রৌমারী পর্যন্ত রেলপথ হচ্ছে আসলে কোন কারনে এবং কার স্বার্থে?

এ ব্যপারে অনেকেই বলছেন, নাকুগাও বাদ দিয়ে রৌমারীতে রেলপথ যাওয়াতে আঞ্চলিক পলিটিক্স জড়িয়ে আছে। কিন্তু আরেকটু গভীরভাবে বিষয়টি পরখ করলে দেখা যায় এখানে আঞ্চলিক নয় বরং আন্তর্জাতিক পলিটিক্স ঢুকে গেছে। এ বছরের ৪ মে ভারতের মেঘালয়ের শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা শিলং টাইমস প্রকাশ করে , "ভারতীয় রেল কতৃপক্ষ দিনাজপুরের হিলি থেকে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে রেলপথ টেনে নিয়ে কামালপুর এর পরেই মেঘালয়ের মাহেন্দ্রগঞ্জ পর্যন্ত ট্রেন লাইন স্থাপনের পরিকল্পনা করছে। এবং এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭০০০ কোটি রুপি। এর দুইদিন পরেই কোলকাতার পত্রিকা "এই সময়" একই নিউজ বাংলাতে প্রকাশ করে। তারা এই প্রকল্পের ব্যয় পর্যন্ত প্রকাশ করে ফেললেও বাংলাদেশের তরফ থেকে অনুমতি দিয়েছে কিনা সেটা স্পষ্ট করেনি। কিংবা অনুমতি দিয়ে থাকলেও সেটা ভেতরে ভেতরে হয়েছে এবং বাংলাদেশের কতৃপক্ষ এ ব্যপারে অফিসিয়ালি সাধারণ জনগনকে জানানোর প্রয়োজন বোধ করেনি। অথচ ভারতীয়রা পরিকল্পনার সাথে সাথে সম্ভাব্য ব্যয় পর্যন্ত প্রকাশ করে দিয়েছে।

এই জিনিসটাকে হালাল করার জন্য আরও চার মাস পরে অর্থাৎ সেপ্টেম্বর মাসে বনিকবার্তায় একটা সংবাদ সম্মেলনের নিউজ ছাপা হয়। যেখানে দিনাজপুর প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ‘জয়েন্ট মুভমেন্ট কমিটি ফর করিডোর’ নামধারী কমিটির সদস্যরা নাকি দাবি জানিয়েছে : বাংলাদেশের বুক দিয়ে দিনাজপুর জেলার হিলি থেকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের মাহেন্দ্রগঞ্জ জেলার তুরা পর্যন্ত ১২০ কিলোমিটার সড়ক ও রেলপথ নির্মাণ করার। এই কমিটির নাম আমি আগে শুনিনাই। তারা স্বপ্রণোদিত হয়ে এটা করেছে, নাকি তাদের দিয়ে কেও এটা করিয়েছে এটাও স্পষ্ট নয়। এর দুইদিন পর কালেরকন্ঠে নিউজ করেছেঃ "India proposed rail route through Bangladesh to connect 2 states" . অথচ ভারতের পত্রিকায় চারমাস আগেই কিন্তু এসব নিয়ে লিখেছে। যা এতোদিনে আস্তে আস্তে এদেশের জনগনকে স্থানীয় পত্রিকার মাধমে জানানো হচ্ছে। (উপরে উল্লেখ করা চারটা নিউজের লিঙ্কই লেখার শেষে দিয়ে দিচ্ছি)

রৌমারীতে রেলপথ হলে যতটা না লাভ হবে এই দেশের, তার চাইতে বহুগুনে লাভ হবে ভারতের। কেননা জামালপুর থেকে রৌমারী পর্যন্ত রেলপথ হয়ে গেলে হিলি টু মাহেন্দ্রগঞ্জ রেল প্রজেক্টে ৪৫-৫০ কিলোমিটার এর অর্থ সাশ্রয় হবে ভারতের। অর্থাৎ লাভের উপর আরও লাভ। আর আরেকটা জিনিস অনেকেই খেয়াল করেননাই। কোলকাতা থেকে ছেড়ে আসা ট্রেন যমুনা সেতু পার হয়েই টাঙ্গাইলের ভুয়াপুর হয়ে সরিসাবাড়ি এবং জামালপুর হয়ে মাহেন্দ্রগঞ্জ তথা মেঘালয়ে পৌছে যাবে। অর্থাৎ কোলকাতা টু তুরার রেলপথও ভারত এমনি এমনিই পেয়ে গেলো। আর এটা হবে বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার করে এবং ফ্রীতে কিংবা নামমাত্র ট্রানজিট ট্যাক্সের মধ্যমে। হ্যাঁ, এটাই হলো ভারতের মাস্টারপ্ল্যান। আর যেটাতে প্রত্যক্ষ সহায়তার অংশ হিসেবেই রেল মন্ত্রনালয় এই উদ্যোগ নিচ্ছে। রেল মন্ত্রণালয় তথা সরকার যদি এদেশের স্বার্থ না দেখুক, নুন্যতম উভয় দেশেরই সামঞ্জস্যপূর্ণ স্বার্থ দেখতো তাহলে এই রেলপথ রৌমারী নয় বরং প্রথমে নাকুগাওয়েই যেতো। কিন্তু আফসোস, আমাদের দেশের নীতিনির্ধারকদের সাধ্য নাই, ভারতীয় চাওয়া পাওয়াকে পাশ কাটানোর কিংবা নিজের দেশের কোন গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ ভারতের কাছ থেকে আদায় করে আনার। তাছাড়া সামনে জাতীয় নির্বাচন। নির্বাচনে কে কাকে টিকিয়ে রাখে, তা তো এদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেনই। অতএব এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ভারতীয় চাওয়া পাওয়াকে পাশ কাটানোর মানে সাপের লেজ দিয়ে কান চুলকানো। কে চাইবে এই রিস্ক নিতে? তাইতো তাদের খুশি করতে এই রেলপথ। আমিও নাহয় খুশি হয়ে শীতের ফাটা ঠোঁট নিয়ে হাসার চেষ্টা করলাম । তবে পরিপূর্ণ খুশি হতাম যদি এইসব আন্তর্জাতিক পলিটিক্স না ঢুকে জনগণের দাবির প্রতিফলন হিসেবে এই রেলপথ পাইতাম। কিন্তু আপাতত তা আর হবার নয়।

যাইহোক, আমি ছোটখাটো একজন মানুষ। নিজ দেশের একজন নাগরিক হিসেবে, এলাকার প্রতি দায়িত্ব বোধ থেকেই আমি সবসময়ই চেয়েছি যাতে দেশ উপকৃত হয়। আমার ক্ষুদ্র মস্তিষ্ক মাঝেমধ্যেই ব্যস্ত থাকে কিভাবে এলাকার একটু মঙ্গল হয়, কিভাবে সমাজটা সমৃদ্ধ হয় এই চিন্তায়। সেই চিন্তাধারা থেকেই, সেই দায়বদ্ধতা থেকেই এই লেখা। লেখাটি অনেকের ভালো নাও লাগতে পারে। কিন্তু কিছুই করার নাই। আমার কাছে সবার আগে দেশ।

পুনশ্চ: আজ আন্তর্জাতিক পলিটিক্সে পড়ে আমার মতো হাজারো মানুষের স্বপ্নভঙ্গ হলেও আমার জীবদ্দশায় যাতে নাকুগাওয়ের বুকে রেল চলাচল দেখতে পাই, আল্লাহর কাছে এই মিনতি করি।

সেই চারটা নিউজের লিঙ্কঃ
শিলং টাইমস : (মে মাস)
view this link

এই সময়ঃ (মে মাস)
ক্লিক করুন

বনিক বার্তাঃ (সেপ্টেম্বর)
ক্লিক করুন

কালের কন্ঠ (সেপ্টেম্বর):
ক্লিক করুন

অফটপিক বোনাস লিঙ্ক (ভেরি ইন্টারেস্টিং):
ভিডিও

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে অক্টোবর, ২০২২ রাত ১২:৫২

মোগল বলেছেন: চলেন নৌকায় ভোট দেই

২| ২৩ শে অক্টোবর, ২০২২ রাত ১:০৫

কামাল৮০ বলেছেন: খাল কেটে পানি না হয় আনলেন।কিন্তু এক শ্রেনী চিন্তা করে সাথে কুমিরও আসবে।কোন দিকে যাবেন।

৩| ২৩ শে অক্টোবর, ২০২২ রাত ১:০৬

কলাবাগান১ বলেছেন: চলেন জামাতি-রাজাকার দের ভোট দেই তাহলেই তারা বাংলাদেশের সব সীমান্ত বন্ধ করে, আমদানি/রপ্তানী বন্ধ করে দিয়ে ভারতীয়দের ভাতে-পানিতে মারতে পারবে কেননা ভারতীয় রা খেয়ে পড়ে বেচে বাংলাদেশের এই খোলা সীমান্তের বদ্যানতায়

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.