নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জয়

জীবন কবিতার মত। আর কবিতাগুলো দুর্বোধ্য।

ৈজয়

মানুষ আমি আমার কেন পাখির মত মন তাইরে নাইরে নাইরে না সারাটি জীবন তাইরে নাইরে নাইরে না আ আআ আ…

ৈজয় › বিস্তারিত পোস্টঃ

অভাগা যেদিকে চায়, সাগর শুকিয়ে যায়

০১ লা নভেম্বর, ২০১১ রাত ১১:৪৩

মাসুকের মনটা উদাস। সামনে ঈদ অথচ অফিস থেকে ছুটি পাওয়া যাচ্ছে না। বসের রুমে থমথমে পরিবেশ। সবার মনে দুঃখ দুঃখ ভাব। প্রশাসনের ম্যানেজার সাহেব পারলে কেঁদে ফেলেন অবস্থা। শুধু বসের মুড খুব ভাল। তিনি এ ফ্যাক্টরীর স্বৈরশাসক। এমডির অত্যন্ত কাছের লোক। তার কথায় প্রতিবাদ করার কেউ নাই। তিনি অনেক ফুরফুরা মেজাজে আছেন।



সবাই চারপাশে মন খারাপ করে বসে আছে তাই বোধ হয় তিনি খুব আনন্দ পাচ্ছেন। আনন্দ জিনিসটা একা ভোগ করে আরাম পাওয়া যায় না। সবার সাথে শেয়ার করতে ইচ্ছা করে। তিনি নানান রকম জোকস শুনাচ্ছেন। তার জোকস কেউ খেয়াল করে শুনছে না। শুধু মকবুল সাহেব অত্যন্ত আগ্রহের সাথে শুনছেন। শুধু শুনছেনই না, বসের প্রতিটি কথায় দারুন রেসপন্স করছেন। প্রয়োজন মত চেহারায় অভিব্যক্তি পরিবর্তন করছেন। কখনও আহা উহু করছেন, কখনও কপাল চাপড়াচ্ছেন, কখনও হাসিতে প্রায় গড়াগড়ি খাচ্ছেন। মকবুল সাহেবের ঈদে ছুটির দরকার নেই। তার ফ্যামিলি এখানেই থাকে।



বস হঠাৎ মাসুককে জিজ্ঞেস করলেন, কী খবর মাসুক বিয়ে সাদী কবে করবা? সবাইতো ছেলেপেলের বাপ হয়ে গেল। তোমারতো বিয়ারই খবর নাই।



মকবুল সাহেবও চিন্তিত ভঙ্গিতে বললেন, জ্বী মাসুক সাহেব বিবাহ কবে করবেন? অনেকদিন বিবাহ খাই না?



‘ এত বিয়ের কথা বলেন, বিয়ে করলেতো স্যার আপনারই সবচেয়ে বেশী সমস্যা হবে। ’



বস রসিকতা করে বললেন , কেন, আমার কী সমস্যা হবে?



‘বিয়ে করলেতো স্যার আমাকে ফ্যাক্টরী পাহাড়ায় বসিয়ে এভাবে নিশ্চিন্তে বাড়িতে ঈদ করতে যেতে পারতেন না। ঈদে আমার বাড়ি যেতে হতো।’



যারা এতক্ষন জোকস শুনেও মুখ কালো করে বসে ছিল তাদের মুখ হাসিহাসি হয়ে গেছে। কিন্তু বস অত্যন্ত গম্ভীর হয়ে গেলেন। তিনি মাসুককে বলেছিলেন, ব্যাচেলর মানুষ এত ছুটি ছুটি কর কেন? তাই বলে ছেলেটা এভাবে তাকে মুখের উপর অপমান করবে এটা তিনি ভাবেননি। কেউ তার সাথে এভাবে কথা বলার সাহস পায়না। এই ছেলেটা এত সাহস কই পাইলো? এবছর এসিআরে টাইট দিতে হবে।



বিকেলে প্রশাসনের ম্যানেজার মাসুককে বললেন, মাসুক সাহেব চলেন আপনাকে খাওয়াব।



‘কেন স্যার? হঠাৎ খাওয়াবেন কোন ঘটনা আছে নাকি?’



‘ভাই আপনি যেভাবে বসকে শান্টিং দিয়েছেন, আমার কলিজা জুড়াইয়া গেছে। চলেন যাই।’



‘হা হা। চলেন যাই।’



‘বুঝলেন মাসুক সাহেব, আমি যেখানেই চাকরী করছি সেখানেই দৌড়ের উপড়ে ছিলাম। ভাল কাজ করিতো তাই কেউ শান্তিতে থাকতে দেয়না। সবাই সব কাজ আমার উপর চাপাইয়া শান্তি পায়।’



‘ভাল কাজ করেন কেন স্যার? কাজ ভাল করলে ঝামেলাতো বেশী হবেই।’



‘কী যে বলেন। একটা দায়বদ্ধতা আছে না?’



‘হুম তা অবশ্য ঠিক।’



ম্যানেজার সাহেবকে আজ কথায় ধরেছে। তিনি হরবর করে অনেক কিছু বলে যাচ্ছেন। সবই তার দুঃখ কষ্টের কথা। মাসুক কিছু শুনছে, কিছু ইথারে ভাসিয়ে দিচ্ছে। এত দুঃখ কষ্টের কথা শুনতে ভাল লাগছে না।



‘বুঝলেন মাসুক সাহেব, ঈদে বাসায় যাওয়াটা এত জরুরী হতো না। কিন্তু ভুল করে চেকটা বাসায় রেখে আসছি। এখন টাকা পাঠাতে পারছি না। এজন্যেই যাওয়া দরকার।’



‘এইটাতো স্যার কোন সমস্যা না আমি আপনাকে টাকা ধার দিব। বলেন কত লাগবে?’



ম্যানেজার সাহেব টাকার অঙ্কটা না বলে চুপ করে আছেন। মাসুক মনে মনে হাসল, কাউকে টাকা ধার দিয়েও বিপদে ফেলা সম্ভব।



কিছুক্ষন চুপচাপ থাকার পরে ম্যানেজার জিজ্ঞেস করলেন, মাসুক সাহেব কি সিগারেট খান?



মাসুক কিছুটা লজ্জ্বা পেল।



‘ আরে লজ্জ্বা পাওয়ার কিছু নাই। চলেন দুজন মিলে সিগারেট খেতে খেতে সুরমা নদীর পাড় থেকে ঘুরে আসি। আপনিও ছুটি পান নাই, আমিও ছুটি পাই নাই। আমরা দুইজনই দুঃখী মানুষ।’



সন্ধ্যা হয়ে গেছে। নদীর এদিকটায় লোকজনের আনাগোনা কম। দুএকজন কুপি বাতি জ্বালিয়ে ছিপ দিয়ে মাছ ধরছে। নতুন চাঁদ উঠে গেছে। চাঁদ এখনও পূর্ণ হয়নি। নদীর ধারে শীতের একটা আমেজ পাওয়া যাচ্ছে।



‘বুঝলেন মাসুক সাহেব আমি একটা বিরাট অভাগা। অভাগা যেদিকে চায়, সাগর শুকিয়ে চায়। এই অবস্থা আরকি।’



মাসুকের খুব হাসি পেল। তার খুব বলতে ইচ্ছে করছে, আপনাকে নিয়ে তো তাহলে নদীর পড়ে আসা ঠিক হয় নাই। এমনিতে দেশটা পানি নিয়ে নানা রকম সমস্যায় আছে। তার উপর তিস্তা চুক্তিটা হবে হবে করেও হলনা। আপনাকে নেক্সটাইম কোন বন্যা দুর্গত এলাকায় পাঠিয়ে দিতে হবে। আপনি যেয়ে শুধু তাকাবেন, সাথে সাথে বন্যার পানি শুকিয়ে যাবে।



সব কিছু চাইলেও বলা যায় না। মাসুক বলল, চলেন বসি।



‘বুঝলেন মাসুক সাহেব ঈদের দিন মেয়েটা আমার খুব কান্না কাটি করবে। মেয়েটা বাপ ছাড়া কিছু বোঝেনা। মায়ের চেয়েও আমাকে বেশী ভালবাসে।

’ কথাটা বলতে বলতে ম্যানেজার সাহেবের গলাটা ধরে গেছে।



নাহ , এত আবেগী মানুষ দিয়ে প্রশাসন চালানো ঠিক না। মাসুক বেশ বুঝতে পারছে মানেজার সাহেব কাঁদছেন। তার চোখ নিশ্চয়ই ভিজে গেছে। মাসুকেরও মন গভীর বিশাদে ভরে গেছে। সামনে দূরে ছিপ ফেলে বসে থাকা লোকটাকে চিৎকার করে জিজ্ঞেস করল, ভাই মাছ টাছ কিছু পেলেন?



ছিপ ফেলা লোকটা কী যেন উত্তর দিল। কিছু বোঝা গেলনা। অবশ্য না বোঝা গেলেও কোন সমস্যা নাই। সব প্রশ্নের উত্তর জানা এত জরুরী না।



বাদল ' ১৯৭১

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা নভেম্বর, ২০১১ রাত ১১:৪৮

নেক্সাস বলেছেন: গল্পটা পড়ে ভাল লাগল।

০২ রা নভেম্বর, ২০১১ সকাল ৭:২৩

ৈজয় বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ০২ রা নভেম্বর, ২০১১ রাত ১২:১৯

একাকী বালক বলেছেন: ৩ বছর হল টেলিকমে কামলা দেই। মনে হয় ১ টা ঈদ পুরাটা দিন বাসায় ছিলাম। ও.টির টাকা আর ভাল লাগে না। উমমম।

৩| ০২ রা নভেম্বর, ২০১১ রাত ১২:২১

একাকী বালক বলেছেন: প্লাস। ভাল লাগছে। একবার এক ইন্জি: রাতে কাজ করার সময় আমাকে বলতেছিল ভাই আমার মেয়ের বার্থডে আজকে। অতিথি সবাই আসছে। কি আর করার। অনেকক্ষণ আটকায় রাখছি এখন আমাকে ছাড়াই কেক কাটতেছে। প্রায় কানতেছিল সে। মনে আছে সেই রাতে সারা রাত কাজ করতে হইছিল।

০২ রা নভেম্বর, ২০১১ সকাল ৭:২৫

ৈজয় বলেছেন: হ্যাঁ এ বিষয়টা কষ্টকর। পরিবার নিয়ে সুখে শান্তিতে থাকার জন্যই মানুষ চাকরিবাকরি করে।

৪| ০২ রা নভেম্বর, ২০১১ রাত ৮:৪১

রিয়েল ডেমোন বলেছেন: সাদামাটা বাস্তবধর্মী কাহিনী, ভালো লাগলো :)

০২ রা নভেম্বর, ২০১১ রাত ১১:২১

ৈজয় বলেছেন: ধন্যবাদ রিয়েল।

৫| ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১১ সকাল ৮:৪৪

খেয়া ঘাট বলেছেন: খুব ভালো লাগলো।

৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ৮:৩৭

ৈজয় বলেছেন: থ্যাঙ্কু খেয়াঘাট

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.