নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\" ন হি সর্ববিদ: সর্বে \"

খোলা মনের কথা

স্বাধীন জীবনের সন্ধানে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছি জন্মলগ্ন থেকে কিন্তু সে আমায় এতটায় অপছন্দ করে যে আমার থেকে ১০০ কিমি দূরে থাকে। জানিনা তার সন্ধান পাবো কিনা। তবে আমি তার পিছু নিয়েছি, তাকে যে আমার পেতেই হবে!!!

খোলা মনের কথা › বিস্তারিত পোস্টঃ

জীবন থেকে নেওয়া-০২ (শৈশব ও স্কুল)

২৫ শে নভেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৫৬


বিজয়নগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অনীল স্যার। আদর্শ বাংলা বই বা বাংলা চলচিত্রে শিক্ষকদের যেমন দেখানো হয় তার থেকে বেশি এই স্যার। স্যারের অনেক গুলো গুণ ছিল। তার ভিতর একটি হল, সমস্ত বিদ্যালয়ের দেওয়ালে নানা মনীষীগনের বিখ্যাত কথা, কবিগনের বিখ্যাত কবিতার চরণ, নানা উক্তি, উপদেশ বানী ইত্যাদি রং বেরংয়ের কালি দিয়ে লিখে রাখতেন। সামনে-পিছনে, ডান-বাম দেওয়ালের কোন জায়গা খালি পাওয়া যেত না। স্যারের হাতের লেখা ছিল অসাধারন, যখন ব্লাকবোর্ডে লিখতেন মনে হতো প্রতিটি অক্ষর একটা একটা করে স্কেল দিয়ে মেপে মেপে লিখে রেখেছেন।

প্রাইমারি স্কুলটি ছিল আমাদের গ্রাম ও বিজয়নগর দুগ্রামের মাঠের মাঝে। স্কুল থেকে দুই গ্রাম আধা কিলোমিটার করে দুরত্ব হবে। (বিজয়নগর গ্রামে জন্ম বাংলাদেশের বিখ্যাত ৩ অভিনেত্রী ববীতা, চম্পা, সুচান্দা। তাদের ভাতিজী আমাদের সাথে পড়তো।) আশেপাশে কোন বসতবাড়ি নেই, কাচাঁ মেঠে রাস্তা, বিদ্যুৎ ব্যবস্থাও ছিল না। এগুলো এখনো নেই মনে হয়। গ্রীষ্মে হাটু আবদি ধুলা আর বর্ষায় হাটু আবদি কাদা নিয়ে স্কুলে পৌছাতাম আমরা।

স্কুলের চারপাশে পাতাকপি, ধান,পাট, নানা শাকসবজির চাষ। ক্লাসে বসে এগুলোর গন্ধ নাকে চলে আসতো। দক্ষিনমুখ করা স্কুল থেকে মাঝে মাঝে জানালা দিয়ে তাকিয়ে যেন আলাদা একটা জগৎতে হারিয়ে যেতাম। অনেকটাই স্বপ্নের স্কুল ছিল তখনই। এখনতো ভাবলে আরও মায়া বেড়ে যায় সেই সোনালী দিনের ভাবনায়। আর এই স্বপ্নের স্কুলেটা স্বপ্নের মত করে গড়ে ছিল আমাদের অনিল স্যার নিজের হাতে।

স্কুলের আঙিনা থেকে শুরু করে স্কুলের মাঠ প্রতিদিন দুবার করে পরিস্কার করাতেন নিজে দাড়িয়ে থেকে। মাঠের চারপাশের মেহেগনি গাছের পাতা পড়তো মাঠে। চাষীরা মাঠে পাতা কপি, নানা সবজি রাখতো। চাষীরা সবজি নিয়ে চলে গেলে ছাত্র দিয়ে সব পাতা বা আবর্জনা পরিস্কার করে গাছের গোড়ায় রেখে দিতেন। স্কুলের মাঠ অবশ্যই আগাগোড়া সমান থাকতে হবে কোথাও উচুনিচু থাকবে না এবং এক ইঞ্চি জায়গাও ঘাস ছাড়া থাকা চলবে না। স্কুলের একপাশে ফুল গাছের বাগান। সব কিছুই ছিল সাজানো গোছানো।

স্যারের শিক্ষাদানও ছিল চমৎকার। বিশেষ করে ঐ সময় যারা ক্লাস ফাইভে বৃত্তি দিতো স্যার তাদের একটু বেশি যত্ন করে পড়াতেন। স্যার মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের একটু বেশি ভালবাসতেন। অনেকেই বলতেন স্যারের ৫ কন্যা, কোন ছেলে নেই তার জন্য ছেলেদের বেশি ভালবাসতেন। আমাদের ক্লাসে বলতেন, তুই (আমার নাম ধরে) সম্রাট আর আমার মা ফাতিমা থাকলে আমার আর কারো দরকার নেই। স্যার হিন্দু ধর্মের হলেও মুসলিম ধর্মের প্রতি অন্য রকম ভালবাসা ছিল।

স্যার বেঁচে আছেন কিনা জানিনা। আমাদের গ্রামে অনেক আগে দেখতাম রেনেসাঁ ফাউন্ডেশনে একটা মেয়ে সাইকেল চালিয়ে এসে চাকরি করতেন। অনেক দিন পর জানতে পারলাম তিনি আমাদের স্যারের মেয়ে। একদিন ডেকে বললাম, আপনি অনিল স্যারের মেয়ে?? স্যার কেমন আছেন? দিদি বললেন, বাবা ভাল আছেন তবে বেশি হাঁটাচলা করতে পারেন না। বেশির ভাগ সময় বিছানায় থাকতে হয় উনার বার্ধক্যর জন্য।

স্যার যেখানেই থাকুক, যেভাবে থাকুক ভাল থাকুক। স্যারের মত এমন শিক্ষক প্রতিটা স্কুলে গড়ে উঠুক। মিস ইউ স্যার.....

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৩৬

জগতারন বলেছেন:
লিখাটি আমার ভালো লেগেছে।
বিজয়নগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অনীল স্যার ভালো থাকুক কামনা করি।

২৫ শে নভেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৫৯

খোলা মনের কথা বলেছেন: প্রতিটা বিদ্যালয়ে অনীল স্যার গড়ে উঠুক। ধন্যবাদ আপনাকে

২| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:২২

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: এমন আদর্শ শিক্ষক আজকাল বিরল!

আহা! উনাদের শাসনে সোহাগে আর শিক্ষার প্রতি দায় সবই ছিল অতুলণীয়।

উনার প্রতি শ্রদ্ধা রইল

+++

২৫ শে নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:৫৫

খোলা মনের কথা বলেছেন: সত্যিই এমন শিক্ষক বর্তমানে পাওয়া বিরল। তাদের কথা মনে হলে এমনিতেই ভালবাসা চলে আসে মনে। ধন্যবাদ

৩| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:৪০

নুরহোসেন নুর বলেছেন: প্রতিটি শিক্ষক ছাত্রের কাছে আইকনের মত,
জীবনের প্রয়োজনীয় বিষয় বস্তর মত প্রিয় শিক্ষকদের স্মৃতি ধরে রাখা গৌরবের বিষয়।

২৫ শে নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:৫৭

খোলা মনের কথা বলেছেন: প্রতিটি শিক্ষক ছাত্রের কাছে আইকন কথাটি একদম সত্য। তবে স্যারের জন্য আলাদা একটি জায়গা আছে ভালবাসার। কারন স্যার ভালবাসার মত অনেক কিছু অর্জন করেছিলেন। ধন্যবাদ

৪| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:৫১

রুমী ইয়াসমীন বলেছেন: ভালো লাগলো খুব লিখাটা পড়ে।
যুগেযুগে এমন আদর্শ শিক্ষকরা ছিলেন বলেই আমাদের শৈশব কৈশোরের বিদ্যাপিঠ আমাদের কাছে হয়ে উঠেছে প্রাণের বিদ্যাপিঠ প্রিয় স্কুল।
শ্রদ্ধা জানাই আপনার এই মহান শিক্ষকের প্রতি।
উনি ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন এই কামনা করি।

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ১১:৩৩

খোলা মনের কথা বলেছেন: স্মৃতিময় সুন্দর সময়গুলো হারিয়ে গেলেও তাদের অনুভুতি আজও মনে পড়ে। ধন্যবাদ আপনাকে

৫| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:৩৪

রাজীব নুর বলেছেন: শৈশবের দিন গুলো বড় আনন্দময় থাকে।

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ১১:৩১

খোলা মনের কথা বলেছেন: এখন সেগুলো স্মৃতি মাত্র। ভাবি আর খারাপ লাগে....

৬| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১২:১২

স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: স্যারের মত এমন শিক্ষক প্রতিটা স্কুলে গড়ে উঠুক। মিস ইউ স্যার.....
....................................................................................................
এমন স্যার সব জেলা উপজেলায় থাকলে , দেশটা এতদিনে
সোনার বাংলা হতো ।

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১২:৪৬

খোলা মনের কথা বলেছেন: আমরা যে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখি সেটি সম্ভব। তার জন্য এমন আদর্শ মানুষ গড়ার কারিগর খুবই দরকার। ধন্যবাদ

৭| ২৮ শে নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১২:৩৭

মেহরাব হাসান খান বলেছেন: জানেন, ভালো লোকগুলো এখন আর শিক্ষক হন না, হতেও চান না! দ্বিতীয় শ্রেণির লোকগুলো শিক্ষক হন যাদের প্রধান কাজ প্রাইভেট পড়ানো।

২৯ শে নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ১১:৪৯

খোলা মনের কথা বলেছেন: আগে আদর্শবান মানুষ শিক্ষকতা করতেন। এখন এই কোঠা, সেই কোঠা আর ইনকাম চাকরী করার জন্য শিক্ষকতা করে। শিক্ষকতায় আদর্শ বলে কিছু নেই এখন..

৮| ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:০৫

শায়মা বলেছেন: অনেক ভালো লাগা!!!

৩০ শে নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:৪৩

খোলা মনের কথা বলেছেন: ধন্যবাদ আপু....

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.