![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ইঞ্জিনিয়ারিং এর ছাত্র। লেখালেখি আমার কাজ না। তবুও মাঝে মাঝে লিখতে ইচ্ছে হয়, তাই লিখি। https://www.facebook.com/Juphon
করিম সাহেব।
অনেকদিন ধরেই ভাবছেন একটা গল্প লিখবেন।
কিন্তু কি লিখবেন এখনো ঠিক করতে পারেননি।
গায়ে চাদরমুড়ি দিয়ে থাকা লোকটা প্রায়সময় পাঞ্জাবি পড়ে থাকেন। সফেদ দাড়িগুলোয় হাত বোলাতে থাকেন প্রায়সময়।
প্রতিদিন ডায়রি লিখার চেষ্টা করতেন একসময়। তারপর সেখান থেকে পজিটিভ দিকগুলো নিজের ভেতর ধরে রাখতেন, আর নেগেটিভ দিকগুলো ঝেটিয়ে বিদায় করতেন মাথা থেকে। অবশ্য ছোটবেলা থেকেই করিম সাহেব একটু অন্যরকম। মা-বাবার চোখে করিম সাহেব ছিলেন লক্ষী একটা ছেলে।
ওনার হঠাৎ মাথায় আসলো নিজের জীবনের গল্পই উনি লিখবেন।
ডায়রিগুলো সব বের করে আস্তে আস্তে দেখছেন, কোন জায়গা থেকে শুরু করা উচিত।
তবে চিন্তা করে দেখলেন গল্পে উনি ছদ্মনাম ব্যবহার করবেন।
ঠিক করলেন নিজের চরিত্রটার নাম দিবেন "আরমান"।
সবকিছু ভেবেচিন্তে ঠিক করলেন তার পথচলার নায়ক এবং বাবা ইমামুল সাহেবের মাধ্যমেই গল্প শুরু করবেন। তাই তিনি ফিরে গেছেন ১৯৭২ এর ঘটনায়।
আরমানের দাদা ছিলেন ওদের গ্রামের সবচেয়ে বড় মাদ্রাসাটার প্রিন্সিপাল। ২৫ বছর ধরে উনি শুধু প্রিন্সিপালই ছিলেন। এর আগে ছিলেন সাধারণ শিক্ষক।
ওনাদের পরিবারের খুব নামডাক ছিল সে সময়। তা অবশ্য এখনো অটুট আছে। বরং আগের চেয়ে পরিচিতিটা বেড়েছে, কমেনি।
প্রিন্সিপালের চার ছেলে এক মেয়ে।
রুহুল, বদরুল, সাইফুল আর ইমামুল।
বড় ছেলে রুহুলের বয়স তখন ১৪ বছর। আর ইমামুলের বয়স মাত্র আড়াই বছর। ও খেলতে বের হয়েছে। হঠাৎ বাড়িতে কান্নার শব্দ শুনে ছুটে এলো। এসে দেখে বাবা নেই। প্রিন্সিপাল মারা গেছেন। ইমামুলের তখনো মৃত্যু বোঝার বয়স হয়নি।
তবুও সবার দেখাদেখি সে-ও কাঁদতে শুরু করলো।
যুদ্ধপরবর্তী সময়।
আশেপাশে সবকিছু শুধু খাঁখাঁ করছে। ইমামুলের বাবা সম্পত্তি হিসেবে কিছুই রেখে যেতে পারেনি। শুধু সম্পদ হিসেবে ছেলেদের দিয়ে গেছেন একবোঝা সম্মান।
ছেলেমেয়েদের কাছে সম্পদের চেয়ে তা অবশ্য আপদ বলেই মনে হচ্ছিলো।
ওদের কপাল ভালো ছিল যে ইমামুলদের নানা জমিদার ছিলেন।
তাই নানার পক্ষ থেকে অনেক সাপোর্ট পাচ্ছিলো তারা। তবে সাপোর্টে কি আর ঘর চলে?
তাই বাধ্য হয়ে আলিম পাশ করেই বড়ছেলে রুহুলকে কাজে নেমে যেতে হলো। ঘরের হাল ধরতে গিয়ে লেখাপড়া বন্ধ হল। কিন্তু ছোটদের মানুষ করতে চেয়েছিলেন ঠিকই।
এরপর বড় ভাইয়ের কষ্ট দেখে মেঝভাইও ইনকামের পথ বেছে নিলেন।
বদরুল শহরে চলে এলেন।
তখনো গার্মেন্টস ব্যবসার চল এতোটা হয়নি।
অল্পসময়েই দ্রুত উন্নতি হলো বদরুলের। মালিকপক্ষ ওনাকে কোরিয়া পাঠালেন ট্রেনিংয়ে।
দেখতে দেখতে বাবার মৃত্যুর পর আরও ১২ বছর পার করে দিয়েছে ইমামুল।
এতো অল্প বয়সেই ভালো ছাত্র হিসেবে ওর সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে চারিদিকে, যা কল্পনাও করা যায় না। ও পড়ে ক্লাস এইটে, কিন্তু ওর পড়া শেষ নাইনের বইও।
অনেক সময় বড়রাও আসতো ওর কাছে পড়া বুঝতে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি ছিল ঘটনাটা।
বাধ্য হয়ে ওর স্যাররা ওকে এক ক্লাস এগিয়ে দিলেন।
এবার ওর দাখিল পরীক্ষা।
তখন কি আর এখনের মতো গ্রেডিং হয়?
তখন ছিল স্টার, স্ট্যান্ড এর যুগ।
সে-ও স্ট্যান্ড করেছিলো। সারাদেশে ১৭ তম।
এবার সে আরও বড় এক মাদ্রাসায় ভর্তি হয়েছে
অল্প সময়েই ওই মাদ্রাসাতেও ভালো ছাত্র হিসেবে তার নামডাক ছড়িয়ে পড়ে।
এই সময়ে পরিবারের অবস্থারও উন্নতি হয়। তবুও ইমামুল ভাইদের উপর নির্ভর করে না।
ভালো ছাত্র হওয়ায় তার থাকার-খাওয়ার সমস্যা হয়নি।
পড়ালেখার মাঝেই ইমামুলের সাথে পরিচয় ঘটে আলোর। পরিচয় থেকে প্রণয়।
আলোরা নানার বাড়িতে থাকে।
তারও এক লম্বা ইতিহাস আছে। আলোর বাবা মানসিকভাবে শক্ত ছিলেন না। খুবই দুর্বল মানসিকতার লোক ছিলেন। আলোর মা ছিলেন তার নানার একমাত্র সন্তান মেয়ে।
ওনার (আলোর নানার) আর কেউ ছিল না।
আলোর নানী মারা যাবার পর ওর নানা আর বিয়ে করেননি সৎ মায়ের হাতে মেয়ে কষ্ট পাবে বলে।
আলোর মায়ের বিয়ে হয়েছিল মহাধুমধামের সাথে। আলোর নানার বাড়ি ঐতিহ্যবাহী পরিবার। একইভাবে বাবারাও বনেদি ঘরের সন্তান।
তারপরও কোথায় যেন শান্তির সুতাটা কেটে যাচ্ছিলো।
আলোর নানা তাই মেয়ের কষ্ট সহ্য করতে না পেরে বাধ্য হয়ে ওনার কাছে নিয়ে এসেছিলেন।
এরপর আলোর বাবা চাকরি করা শুরু করে আলোর নানাবাড়িতে থেকেই। মেয়ের অসুখী হবার ভয়ে আলোর নানা আর মেয়েকে শ্বশুরবাড়ি পাঠাননি। তাই বাধ্য হয়ে আলোর বাবা-মা আলোর নানাবাড়িতেই থেকে যান।
আলোর সাথে ইমামুলের বিয়ে হয়ে গেছে।
৩ বছর পার হয়ে গেছে, কিন্তু কোন ছেলেমেয়ে নেই তাদের।
নেই বললে অবশ্য ভুল হবে। জন্মের পর পরই মারা গেছে দুইটা বাচ্চা।
একটা ছেলে একটা মেয়ে।
পড়ালেখা অবশ্য ছেড়ে দেয়নি ইমামুল।
এখন একসাথে দুই জায়গায় ভর্তি হয়ে আছে সে।
আলোদের বাড়ির পাশের মাদ্রাসায়, সাথে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে।
পাশাপাশি এখন সে একটা ব্যবসাও করে, স্টিলের আসবাবের। কয়েকজন বন্ধুর সাথে শেয়ারে।
দেখতে দেখতে কয়েকটা বসন্ত পার করে এসেছে ইমামুল-আলোর জুটি।
ওদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। ইমামুলের ভাইয়েরাও এখন অনেক সমৃদ্ধ।
মেঝভাই বদরুল কোরিয়া থেকে এসে নিজেই ব্যবসা শুরু করেছে। এখন তার নিজেরই একটা গার্মেন্ট কারখানা আছে। আরেকটা করার চিন্তায় আছে। ঢাকায় থাকে, মহাখালীতে।
ছেলে-মেয়ের অভাবটা খুব ভালভাবেই বুঝতে শুরু করেছে ইমামুলরা।
তাই বাধ্য হয়ে বিভিন্ন তাবিজ-কবজ আর চিকিৎসা শুরু করেছে তারা ছেলেমেয়ের জন্য।
---------------------------------------------------------------------------------------------
সবাই কাঁদছে।
খুব কাঁদছে। কেন কাঁদবে না?
বাড়ির কর্তা মারা গেলে সবাই তো কাঁদবেই।
আলোর নানা ছিলেন আলোদের বাড়ির কর্তা। সবচেয়ে বড় খুঁটি।
ইমামুল এতদিন শুধুমাত্র আলোর জন্য খরচ দিতো আলোর নানার কাছে।
আর পুরো ঘর সামলাতেন আলোর নানা। ইনকামের একমাত্র উৎস ছিলেন উনি।
আলোর বাবার চোখে ছানি পড়ার পর থেকে আলোর বাবা চাকরি ছেড়ে দেয়। তখন থেকেই আলোর নানার হাতে সব।
আলোর ভাইয়েরাও সবাই ছোট। ঘর সংসারের দায়িত্ব নেয়ার মতো কেউ নেই।
লিখতে লিখতে করিম সাহেবের ঘাড় ব্যাথা করছে।
মনে হচ্ছে প্রেশারটা একটু বেড়েছে। সেই রাত আটটায় শুরু করেছেন, আর এখন ১১:৩০ বাজে। সামান্য প্রেশার বাড়তেই পারে।
নিতু,
নিতু...,
এক গ্লাস পানি দিস তো মা।
নিতু করিম সাহেবের ছোট ভাইয়ের মেয়ে। করিম সাহেবের বয়স ৬০ এ এসে পৌঁছেছে। কিন্তু এখনো ঘরসংসার করেননি।
যাই হোক, করিম সাহেব আবারো লেখা শুরু করলেন।
----
ইমামুল এতদিন চিন্তা করছিল আলোকে নিয়ে শহরে উঠে যাবে। পড়ালেখা আর ব্যবসা দুইটাই চালাবে একসাথে।
কিন্তু কোথায় কি...!!!
আলোর নানা মারা যাওয়ায় সব চিন্তা পরিবর্তন করতে হল। আলোর নানা মারা যাবার ৩ মাস পরেই ইমামুল আর আলোর ঘর আলো করে আরমানের (মানে করিম সাহেবের) জন্ম।
খুব ক্ষীণকায় বলে সবাই বলাবলি করছিলো ও বাঁচবেনা।
তবে যে যাই বলে বলুক, আরমানের যত্নের ঘাটতি নেই।
ইমামুলের ব্যবসা ভালোই চলছে।
মাঝে মাঝে ও ছেলেকে দেখতে আসে।
ওর সাথে এখন আলোর ছোট ভাই আজিজও চলে এসেছে শহরে। ইমামুলের ব্যবসায় দুইটা ভাগে কাজ করতে হয়। একটা কারখানার অংশ, অন্যটায় শো-রুম।
আলোদের ঘরও এখন ইমামুল সামাল দেয়। তা ওই আলোর মুখের দিকে তাকিয়েই।
চলবে...
©somewhere in net ltd.