নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভাটির দেশের কথা

জাকারিয়া জামান তানভীর

আত্মিক এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে লিখি।

জাকারিয়া জামান তানভীর › বিস্তারিত পোস্টঃ

হাওরাঞ্ছলের সব শিশুর পুষ্টি ও শিক্ষা নিশ্চিত করতে যা যা করা যেতে পারে।

২১ শে আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১১:৩০

শিক্ষা ক্ষেত্রে হাওরাঞ্ছলের ৬ জেলার মধ্যে সুনামগঞ্জ জেলার অবস্থান সবার শেষে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক হিসাব অনুযায়ী ২০১৩ সালে ১০ হাজার শিশু প্রাথমিক শিক্ষা থেকে ঝড়ে পড়েছে! সরকারী তথ্য মতে হাওরাঞ্ছলে প্রাথমিকে ঝড়ে পড়ার হার প্রায় ৩০ শতাংশ! ঝড়ে পড়ার শিশুর সংখ্যা বাস্তবে আরো অনেক বেশী! ভৌগলিক অবস্থান, মৌসুমি দারিদ্রতা ও অন্যান্য সামাজিক কারণে অনেক শিশু মারাত্মক অপুষ্টির পাশাপাশি প্রাথমিক শিক্ষা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী সুনামগঞ্জের শিশুদের মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশই অপুষ্টির শিকার।



হাওরাঞ্ছলের সব শিশুর পুষ্টি ও শিক্ষা নিশ্চিত করতে নিম্নে উল্লেখিত ব্যবস্থাগুলি অনুসরন করলে উপকার পাওয়া যেতে পারে।



স্কুলে খাবার দেয়ার ব্যবস্থা করলে একদিকে শিশুদের অপুষ্টি দূর করা যাবে, অন্যদিকে, স্কুলের প্রতি অভিবাবক এমনকি শিশুদেরও আকৃষ্ট করা যাবে।



প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বাধ্যতামুলক স্কুল ড্রেস পরার বিধানটি শিথিল করা জরুরী। বাচ্চারা এমনিতেই পোশাক ময়লা করে বেশী আর বাড়ন্ত শরীরের কারণে প্রতি বছর কম করে হলেও দুই সেট নতুন পোশাকের প্রয়োজন পড়ে। যা পূরণে অনেক গরিব অভিবাবক একবারে অসমর্থ। নির্ধারিত পোশাক পড়ার বাধ্যবাধকতা তুলে দিলে স্কুলে উপস্থিতি বাড়বে এবং ঝড়ে পড়াও অনেকাংশে কমবে বলে মনে করি।



খাপ খাওয়াতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে প্রতিবন্ধী (শারীরিক) শিশুদের মধ্যে ঝড়ে পড়ার সংখ্যা বেশী। তাই প্রতিবন্ধীসহ বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের শুরুতেই আলাদ নজর দিতে হবে।



প্রতিবন্ধী (শারীরিক ও অটিস্টিক) শিশুদের প্রতি বিশেষ যত্ন নেওয়া জরুরী। প্রতি উপজেলায় না হোক অন্তত হাওর অধ্যুষিত ৬টি জেলা সদরে একটি করে হলেও বিশেষায়িত প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্র খোলা উচিত। এতে বিপুল সংখ্যক প্রতিবন্ধী শিশু শিক্ষার আওতায় আসবে। এতে শুধু ভর্তি হারই বৃদ্ধি পাবে না বরং একই সাথে সকল শিশুর শিক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।



অমনোযোগী শিশুরা ক্লাসের অন্য শিশুদের সাথে এগুতে না পাড়ার জন্য শিক্ষক এমনকি অভিবাবকরা পর্যন্ত বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েন এবং এরই ধারাবাহিকতায় ওরা এক সময়ে ঝড়ে পড়ে। অবস্থা পরিবর্তনে এই ধরনের শিশুদের বাছাই করে স্নেহ ও আনন্দের সাথে শিক্ষা প্রদান করা প্রয়োজন।



একটি শিক্ষা বর্ষের প্রায় ৯ মাসই পানিতে হাওরাঞ্ছল ডুবে থাকে। অনেক শিশু পানির কারণে স্কুলে যেতে চায় না বা নিরাপত্তার কারণে তাদের অভিবাবকরা যেতে দেন না। এদের যাতায়াতের একটা ব্যবস্থা করতে পারলে স্কুলে উপস্থিতি অনেকখানি বাড়বে।



ভরা বর্ষায় স্কুলে শিক্ষার পাশাপাশি বিনোদনের দিকটা বিবেচনায় রাখলে অনেক শিশু স্কুলে আসতে উৎসাহী হবে। সবাইকে আনন্দের মাধ্যমে শিক্ষা কেন্দ্রে ধরে রাখতে পারলে হাওরাঞ্ছলের প্রাথমিক শিক্ষায় বিপ্লব ঘটানো সম্ভব।



প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্কুলে শিক্ষকদের সংখ্যা কম। শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া জটিল ও সময়সাপেক্ষ হওয়ায় চট জলদি এই সমস্যা নিরসনে স্থানীয় যুবাদের পাঠদানে নিয়োগ করা যেতে পারে। স্বেচ্ছাসেবকদের সাহায্য নিয়ে বাড়তি ক্লাসের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এতে শুধু স্কুলই উপকৃত হবে না বরং স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা মূল্যবান অভিজ্ঞতা অর্জন করেতে পারবে।



শিক্ষক নিয়োগে এলাকার স্থানীয় অধিবাসীদের প্রাধান্য দিলে ভালো হয়। এলাকার শিক্ষকদের মধ্যে একটা দায়বোধ কাজ করে। পাঠদান নিয়মিত হয়। যা প্রকারন্তরে প্রাথমিক শিক্ষার মান বৃদ্ধির সাথে সাথে ঝড়ে পড়াও অনেকখানি রোধ করতে পারবে।



ঝড়ে পড়া রোধে শিক্ষক ও অভিবাবকদের মধ্যে নিয়মিত সাক্ষাৎ অনেক ফলপ্রসূ ফল বয়ে আনতে পারে। শিশু ভর্তি করিয়ে অভিবাবকরা যেমনি ছুটি নিয়ে নেন তেমনি শিক্ষকেরাও হাত গুটিয়ে বসে পড়েন। এমন অবস্থার উন্নতিকল্পে শিক্ষক ও অভিবাবকদের মধ্যে নিয়মিত দেখা সাক্ষাৎ ভালো কাজে লাগবে।



বর্ষা, বন্যা ও পানিবদ্ধতা বিচার করে এই অঞ্চলের স্কুলগুলির কাঠামো নির্মাণে কৌশলী হওয়া জরুরি। বর্ষা মৌসুমে শিশুদের শিক্ষা, বিনোদন ও অকাল বন্যার কথা মাথায় রেখে স্কুলগুলি উঁচু জায়গায় নির্মাণ করা জরুরী।



উপরে উল্লেখিত ব্যবস্থাগুলি হাওরাঞ্ছলের স্কুলগুলিতেই যে শুধু কার্যকর এমনটা নয়। এর উপযোগিতা অন্য যেকোনো প্রান্তিক এলাকায় যাচাই করে দেখা যেতে পারে।



সুনামগঞ্জ, ২০ আগস্ট, ২০

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ৮:৪০

মুহম্মদ ইমাম উদ্দীন বলেছেন: একটি শিক্ষা বর্ষের প্রায় ৯ মাসই পানিতে হাওরাঞ্ছল ডুবে থাকে। অনেক শিশু পানির কারণে স্কুলে যেতে চায় না বা নিরাপত্তার কারণে তাদের অভিবাবকরা যেতে দেন না। এদের যাতায়াতের একটা ব্যবস্থা করতে পারলে স্কুলে উপস্থিতি অনেকখানি বাড়বে

এটার দিকেই প্রথম নজর দেওয়া দরকার মনে হচ্ছে। গুরুতর সমস্যা।

২| ২২ শে আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১১:২৫

জাফরুল মবীন বলেছেন: সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.