নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মধ্যবিত্ত পরিবারের ব্যাচেলর ছেলে!!! \nফেসবুকঃ \nhttps://www.facebook.com/rajshahjahan

শুন্য বাইট

মধ্যবিত্ত পরিবারের ব্যাচেলর ছেলে!!! ফেসবুকঃ https://www.facebook.com/rajshahjahan

শুন্য বাইট › বিস্তারিত পোস্টঃ

লেকের ধারের গল্প

১৬ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:৩৩

এই যে এখানে এতো শত লোক আসে তা নতুন নয় অনেক পুরাতন।একেবারে এই জায়গাটার জন্ম থেকেই।প্রতিদিন নয় প্রতিটা মূহুর্তে এখানে নতুন নতুন লোক আসে।নতুন নতুন সব চিন্তা আসে।সব কিছু ঠিক আগের মতোই থাকে শুধু চরিত্র গুলো বদলে যায়।ক্রমান্যয়ে নতুন মুখ বেড়েই চলছে।কে রাখে তার হিসেব?
এক একটা মুখ এক একটা গল্প।সকালের গল্পে এক ধরনের মুখ আবার বিকেল এ আরেক ধরন।সন্ধ্যায় বা রাত্রে অন্য রূপ।সামগ্রিকভাবে এদের ধরন ভাগ করা যায় তবে একই ধরনের সবাইকেও আবার একই ভাবা যায় না।
খুব সকালের মুখ গুলো কেমন জানি ত্যাক্ত আর তারা হুরায় ভর্তি।কাক ডাকা ভোরে এক গ্লাশ নিম পাতার রস খেয়েই এদের যাত্রা কিনা কে জানে।খুব দ্রুত হাটে তারা গিয়ে আবার অফিস ধরতে হবে। এদের কেউ কেউ আবার দৌড়ায়ও।কানে হেডফোন গুজে দুনিয়াকে ভুলে যাবার ব্যার্থ চেষ্টাও চালিয়ে যায় তারা।এদের সবার আবার ব্যাস্ততা থাকে এমন নাহ কেউ এসে লেকের ধারে বসে সকালের সূর্যের আলোর প্রতিফলন কেমোন হয় তা নিয়ে একটা বিশদ গবেষনাও করে ফেলে।
সকালের যাত্রীদের আরো একটা অংশ আছে প্রেমিক প্রেমিকা সম্প্রদায়।এরা আগের রাতে খুব দ্রুত ঘুমিয়ে যায় পরদিন সকালে লোকচক্ষুর আড়ালে একান্তে মিলিবার আশায়।এদের মাঝেও কেউ কেউ আছে যারা চোখে ঘুম নিয়েই চলে আশে,তাদের দেখে এটুকু বুঝতে বাকি থাকে না গেছে রাত্রিতে এক বিশাল ঝড় বয়ে গেছে তাদের উপর যার সুরহা করতেই এই সাত সকালেও তাদের উপস্থিতি।
এদের প্রস্থানে নতুন কিছু মুখ এসে হাজির হয়।আগের মুখ গুলো এবার কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করিয়াছে।আর এই মাত্র প্রবেশ করা মুখগুলোর হয়তো সে চিন্তা নাই থাকলেও সেটা সারাদিনের অন্য কুনো সময় করা যাবে।এরা বেশ আয়েশী মেজাজে ঘুরে বেরায়।সবে মাত্র সকালের নাস্তা করে আসছে তারা।ধীরে ধীরে এরা সিগারেট টা জ্বালায়।খানিক গল্পে মেতে উঠে একে অপরের সাথে।এদের মাঝে একটা উল্লেখযোগ্য অংশ থাকে ড্রাইবার আর স্কুলগামী সন্তানের পিতামাতা।কোথাও দেখা যায় কয়েকজন ড্রাইবার একত্রিত হয়ে তাশে মেতে উঠেছে আর কয়েকজন পিতামাতা পেপার নিয়ে উলট পালট করে সারা কাগজ এই অবসরে মুখস্থ করে ফেলেছে।
দুপুর বেলার রোদ মাথায় করে যাদের আগমন ঘটে তাদের কেনো জানি একটু বেশী সুযোগ সন্ধানি মনে হয়।এরা আসে যেমন একাকীত্বের ছাপ নিয়ে আসলে তারা তা নয়।বরং এই দুপুরে প্রায় লোকশুন্য লেকের মজাটা নিতে চায় তারা তবে তা আর হয়ে উঠে নাহ।কারন তাদের নিজেদের সংখ্যাও একেবারে কম নয়।
বিকেলে চারদিকের হইচই ই বলে দেয় এবার আর কুনো কিছু বাদ নেই।নাটকের পরিচালকের অনুপস্থিতিতে একেবারে সব গুলো মুখের প্রবেশ। সব ধরনের লোকের প্রবেশ ঘটে এক্সাথে।পরিবার এর সবাইকে নিয়েও হাজির হয় কেউ কেউ।নদীর ধারে বিকেল কাটানোর স্বপ্ন বাস্তবায়ীত হয় লেকের ধারে কাটিয়ে।নদীর মতো বহমান জীবন স্বাদ নেয় লেকের ধারের বদ্ধ জীবনের।
নানা সংগীতের আয়োজন চলে চারিদিকে বিকেল গরিয়ে সন্ধ্যা হয়ে যায়।আড্ডা আর থামেনা।বিকেলে যারা এসেছিল তাদের অনেকেই এখন নেই।এখন আবার চারিদিকে প্রেমিক প্রেমিকায় গিজ গিজ করছে।একান্তে বসে প্রিয়জনের সহিত প্রেমালাপ এ ব্যাস্ত তারা।পৃথিবীর সবকিছুকে বাই বাই করে বসে আছে তারা। শহরের ভীতরের তীব্র যানজট অথবা লোডশেডিং এর অসহ্য গরম কিছুই ভাবায় না তাদের।একান্তে প্রিয়জনের চোখে চোখ মিলে তাকাবার এই সময়টা হেলায় হারাতে চায় না তারা।

এরা কেউই বেশীক্ষন থাকেনাহ।পরবর্তী মুখগুলোকে সুযোগ দিতেই এদের প্রস্থান হয়।এই লেকের ভীতরে বসার কুনো বেঞ্চি না থাকলেও কেউ কেউ বেশ কায়দা করে বসার যায়গা বানিয়ে নিছে।ময়লা থেকে পরিত্রানের জন্য কেউ কেউ পেপার নিয়ে ঘুরে কেউ কেউ তো একটু বেশীই কিপটা যারা প্রতিদিন কাগজ নষ্ট করতে চায় না একেবারে লেমোনেটিং করা কাগজ নিয়ে ঘুরে।একদিক থেকে এরা অনেক বড় মানের সমাজকর্মী প্রতিদিন পেপার বা কাগজ জাতীয় কিছু ফেলে অন্যদের মতো লেকের পরিবেশ নষ্ট করছে নাহ।

বেলা বাড়ার সাথে সাথে যেমন এখানে চরিত্রের পরিবর্ত্ন হয় তেমনি এই লেক কে ঘিরে যাদের ব্যাবসা তাদের ব্যাবসার ধরন ও পরিবর্তন হয়।সকালে লেকের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে ডায়বেটিস পরীক্ষা,ব্লাড প্রেশার পরিমাপ করা, সাস্থ্য নিয়ে লেখা বই বিক্রি হয় এগুলো সময়ের সাথে হারিয়ে যায়।নতুন কোন দোকানী আসে নতুন কোন ব্যাবসা নিয়ে।সকালে কেউ একজন আদা দিয়ে লাল চা বিক্রি করে বা চিনি ছাড়া চা বিক্রি করে তাকে বিকেল বা দুপুরে দেখা যায় নাহ।আবার দুপুরে কেউ কেউ ভেনে করে ভাত বিক্রি করে বেড়ায়।
তবে বিকেল থেকে সন্ধ্যায় আবার সব ধরনের দোকানির মিশেল থাকে।এসময় কেউ কেউ ডাক্তারি দোকান নিয়ে বসে যায় কারন সকালে যারা দৌড়ানোর সময় পায়না তারা এসময়ই একটু সাস্থ্যের চর্চায় ব্যাস্ত হয়ে পরে।এই সময়ে কেউ কেউ আবার মৌসুমি পিঠা বানিয়ে বিক্রি করে।শিশুদের টার্গেট করে যাদের ব্যাবসা তারা কেবল এ সময়টাতেই হাজির হয়।নানান রকম লোকের নানান রকম চাহিদা আর নানান রকম ব্যাবসা।
এতো সবকিছুর মাঝেও কিছু জিনিস থাকে যা কখনোই পরিবর্তন হয় নাহ।এই যে লেক,লেকের ধারে ব্যাবসা করা দোকানি তারা প্রতিদিনের।প্রতি মহুর্তের। তাদের কোন নতুন মুখ সহজে আসে নাহ।ওদের সাথে আরো একটা অপরিবর্তীত মুখ আছে।আদিত্য।আদিত্য রায়।
একেবারে অপরিবর্তীত বলা যায় না তাকে।সকালের দোকানি টা যেমন প্রতিদেনের কিন্তু তাকে বিকেলে দেখা যায় না অনেকটা ওই ধরনের।তবে আদিত্যর আর দোকানির মধ্যে পার্থক্য দুইটা।প্রথমত, আদিত্য এখানে কুনো প্রকার ব্যাবসা নিয়ে আসে নাহ।আর দ্বিতীয়ত,সকালের দোকানি কে সারাদিন আর দেখা না গেলেও দিনের অন্য কোন সময় আবার আদিত্যকে ঠিকই দেখা যায়।মধ্যা কথা হইল সারাদিনের একটা উল্লেখযোগ্য সময় ধরে আদিত্যের উপস্থিতি থাকে।
আপাত দৃষ্টিতে আদিত্যকে দেখে উদবাস্তু মনে হলেও সে আসলে তা নয়।ঢাকার একটা স্বানামধন্য কলেজে পড়ে সে।তবে ক্লাশের ধার সে ধারে নাহ।তার মতে “জীবনে পড়ালেখার বাইরে ঢের জিনিস আছে যা একালে না করতে পারলে ওপারে গিয়ে আফসোস করতে হবে কেনো সে এ জিনিসটা করতে পারে নাই।”
অদ্ভুত এক জীবন তার।যেখানে কোন প্রকার চাপ নাই আসলে চাপ সে নেয় নাহ।সবার থেকে একটু আলাদা ভাবেই ভাবে সে।লেকের পারে লুকিয়ে লুকিয়ে দাড়িয়ে অন্যদের প্রেম করা দেখে।মুচকি মুচকি হাঁসে। আবার হেঁটে চলে আপনে মনে।
এর ফাকে সে তার ক্লাশ করে আসে।তারও পরিবার পরিজন আছে।যাদের নিয়ে তাকে চলতে হয় তাদেরকে সময় ও সে দেয়।তবে তার থেকে বেশী সে সময় সে এই লেকের ধারেই দেয়।এখানে জীবন একটু ধীর।তার খুব মজা লাগে এটা দেখতে।ধীরগতির জীবন।
সেও একসময় এখানে আসতো।তারও একজন ভালোবাসার মানুষ ছিলো।প্রতিদিন তাদের দেখা হতো।তারাও এমন লুতুপুতু প্রেম করিয়াছে।প্রেমিকার মুখে সেও দুনিয়ার বড় বড় সাহিত্যিকদের কবিতা একেছে,প্রেমিকার ঠোটে সেও চুমু একেছে,একসাথে দুজনে হেঁটে চলেছে অনেকটা পথ।তবে সেসব কিছুই আর তাকে তারা করে নাহ।এখন সে একেবারে নিজেতে মগ্ন।অন্যের প্রেমে দেখায় মগ্ন।অন্যের প্রেম দেখে এক প্রকার পৈশাচিক আনন্দ সে পায়।অবশ্য তার প্রেমিকার আর কোন খবর ও সে পায় নাই কোনদিন।লেকের ধারে হাজারো মানুষের ভীরে তাকে অনেক বার খুজে বেড়েয়িছে তবে পায় নাই।এখন আর তাকে খুজে বেড়ায় না সে।
বিরহ থেকে বদ্ধ উন্মাদ সে হয়নি।তার সাধারন জীবন তা প্রমান করে।তবে এ পাগলামি কেন করে সে।এটা তো কোন সাধারন সুস্থ্য মানুষের জীবন নয়।এতা তার অভ্যাস হয় গেছে।একসময় সে এখানে আসতো তার প্রেমিকার সাথে।এখন সে একা আসে। না এটা মানতে সে রাজী নয়।তার প্রেমিকা ও আছে তার সাথে।তার প্রেমিকা সারা দুনিয়ার কাছে মরে গেলেও তার কাছে জীবিত।এটা তার বিশ্বাস।
আর সেই বিশ্বাস থেকে তার এখানে ছুটে চলা,এই লেকের ধারে সময় কাটানো।একান্ত নিরালয়ে প্রেমিকার ছবি আঁকা। আজকাল কার নতুন প্রেমিক প্রেমিকাদের সাথে মিলিয়ে সে তার পুরাতন জরাজীর্ন প্রেমের ছবি আকে। বড্ড বেশী সেকেলে ছিল তাদের প্রেম।এটা ভেবে সে নিজেই একমনে হাঁসতে থাকে।ছবি গুলোর সাথে সে নিজেই কথা বলে।
সে ছবিও কোনদিন সে কাউকে দেখাইতে পারে নাহ।তার সে ছবির সাথে কথা বলা ও কেউ কোনদিন শুনতে পারে নাহ।আদিত্যের মতে, মানুষকে দেখাবো বলে তো ছবি আকি নাই। এটা আমার মনের মধ্যেই থাকবে আর আমি একান্তে গভীর রাত্রিতে তা খুলে খুলে দেখবো।পৃথিবীর কোন কাগজে সে তার প্রেমিকাকে আকতে পারে নাই।তার রূপ কোন কাগজে আটকে যাবে এটা সে চায় নাহ।
না সে তার প্রেমিকাকে কল্পনা করে নাহ।কল্পনায় তার প্রেমিকা কে দেখে সে তার পিছে ছুটে চলে নাহ।আজ তার প্রেমিকা বেচে থাকলে তো সেও এখানে আসতো।তার সাথে কিছু মধুর আলাপে কেটে যেতো তার সময়।সে এই সময়টা অন্য কাউকে দিতে চায় নাহ।পার্থিব কোন কাজে এই সময় টুকু নষ্ট হবে সেটা হবে নাহ।পাছে যদি তার প্রেমিকা বলে বসে, এতোই যদি ভালোবাসতে আমায় তবে কেনো আমার অনুপস্থিতিতে আমাকে ভুলে গেলে।





মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.