নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিজের ভেতর আড়াল

চুপ, আমি আড়ালেই আছি

জয়ন্ত জিল্লু

চেহারাহীন মানুষ আমি। আর যেটা ছবির আদলে দেখছেন সেটা আমার মুখ। খুব সম্ভবত জন্মেছিলাম মায়ের বাড়িতে। প্রিয় অনুষঙ্গ মা, মাটি ও মানুষ। মা আমাকে অন্ধকার রাজ্যে পাহারা দিয়েছেন দশ মাস। আমার জীবনের প্রথম পাণ্ডুলিপিকার তিনি। খুব ভালোবাসি বাবাকে। তিনি আমার বিরহের পাটিগণিত। আমার ভালো লাগে কষ্টের নোনা চোখ, গুমোট আকাশ, মুখ মুছে রেখে যাওয়া গামছা, বই ও মানুষের ঘ্রাণ। আর এখনো একা স্বপ্ন দেখছি। আমার প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'পৃথিবীর কোথাও রাস্তা দেখি না'।

জয়ন্ত জিল্লু › বিস্তারিত পোস্টঃ

কাপুরুষ--গল্প

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:৪৫

একটি মেয়ে স্টলের সামনে এসে দাঁড়াল। সাজানো বইগুলোর দিকে একবার চোখ বুলিয়ে বলল—‘ভাই, ভূতের বই নেই।’ মেয়েটি স্কার্ট পড়েছে, অগোছালো চুল। সচরাচর মেলায় ঘুরতে আসা মেয়েদের এমনটি হয় না। তারা কিছুটা গোছালো থাকে। যেমন—সুন্দর করে চুল বাঁধে কিংবা এলিয়ে দেয়, ঠোঁটে রঙ্‌ করে; কাজল আঁকে এবং সর্বোপরি মিলিয়ে মিলিয়ে জামা পরে। মেয়েটির মধ্যে তেমন কিছুই দেখলাম না। আমি ধরে নিলাম, মেয়েটি বড়জোর এগার-বারতম ক্লাসে পড়ে। স্বাভাবিকভাবে তার একটা প্রেমিক আছে। আমি একে বলি—পুরুষ থাকা। একটা সময় সব মেয়েরাই এই পুরুষ থাকাকে পছন্দ করে। তারা ভেবে নেয়—হাঁটলে গেলে, চলতে গেলে নারীর জন্য এই পুরুষ থাকাটা জরুরী। তো, তার চোখের ভেতর আমি একটা পুরুষ আবিষ্কার করলাম।

কিন্তু বিষয়টা এমন, যদি বলি—‘মন খারাপ। ও-কি বকা দিয়েছে।’ সে নির্ঘাত আমাকে ঝাড়ি মেরে বলবে-—‘আপনাকে কে বলেছে। আমার চেহারা দেখে কি এমন মনে হয়?’ আসলে তার চেহারা দেখে আমার খুব বিষণ্ণ মনে হচ্ছে। মানুষ বিষণ্ণ থাকলে অদ্ভুত কিছু করতে চেষ্টা করে। মেয়েটিও নিজের বিষণ্ণতা ঢাকতে ভূতের বই খোঁজছে। ভাবলাম—‘আচ্ছা, কী কী কারণে মেয়েটির মন খারাপ থাকতে পারে?’ আমার ঘুরেফিরে সেই একই কারণ, একই হেতু মাথায় আসছে; মনে হচ্ছে কাল রাতে ভীষণ বকা দিয়েছে তার পুরুষটি। হয়ত মেয়েটির আবদার তেমন কিছু না; হয়ত মেয়েটি নিজেকে একটু হালকা করতে বলেছিল—‘নিঃশ্বাস নিবে?’ না, ছেলেটার এসব একদম পছন্দ না। সে বিরক্ত কণ্ঠে বলল—‘দ্যাখো, এতো ন্যাকামী আমার পছন্দ হয় না। তোমরা মেয়েরাও না...’ মেয়েটির মাথা ঘুরতে শুরু করেছিল। আসলে ‘মেয়ে তুলে’ কিছু বললে সে স্থির থাকতে পারে না। ভাবে—‘মেয়ে হয়েছি তো কী হয়েছে?’ সত্যিইতো মেয়ে হয়েছে তো কী হয়েছে! আমার তার জন্য মায়া হতে লাগল। আমারও একটা রোগ, কারও জন্য মায়া হলে লজ্জা পেতে শুরু করি, চোখে চোখ রাখতে শরম লাগে। এই শরম আবার ঢুক গিলে গিলতে হয়। এমন অবস্থায় নিজেকে একটু সময় দিলাম। ছেলেটার কথা ভাবছিলাম; যে কিনা কাল রাতে মেয়েটিকে বকা দিয়েছে। তারপর না-খেয়ে ঘুমিয়েছে মেয়েটি, সকালে মায়ের উপর রাগ ঝেড়েছে।

—‘এই যে ভাইয়া, কিছু বলছেন না যে!’ মেয়েটির ডাকে নিজেকে তার দিকে ফেরালাম, ফেরালাম বলতে কি চোখে চোখ রাখলাম। তখনো আমার সব লজ্জা খাওয়া হয়নি। আমার এমন অবস্থা দেখে মেয়েটি একটি মুচকি হাসি দিয়ে বলল—‘ওই যে বলছিলাম ভূতের বই।’
—‘এখন কি ভূতের গল্প পড়ার বয়স আছে আপনার। তারচেয়ে বরং ফেইসবুকের গল্প পড়ুন, ভালো লাগবে।’

আচ্ছা, মেয়েটি কি তবে কাল ছেলেটিকে আনফ্রেন্ড করে দিয়েছে কিংবা ডিসএবল করে দিয়েছে নিজের একাউন্ট? ভাবতে ভাবতে মেয়েটির হাতে আমার' ছায়া শরীরের গল্প’ বইটি দিলাম। পাতা উল্টিয়ে পড়তে দিলাম ‘ফেইসবুকের সবুজ বাতি’। সে পড়তে পড়তে আরও বিষণ্ণ হয়ে গেল। তার চোখ জোড়া তখন মরা ধানখেতের মতো মনে হলো। ভীষণ বিষণ্ণ হয়ে পড়ল মেয়েটি। চোখে পানি টলমল করছিল। আমার মনে হলো তার টাইমলাইন থেকে একে একে উড়ে যাচ্ছে স্টাটাস, পোস্ট ও ছবি। প্রোফাইল পিকচারের পুতুলটি ততক্ষণে কেঁদে দিলে বইয়ের একটি পাতা ভিজে গেলো।

কাপুরুষ আমি। ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও তার চোখের জল সেদিন মুছে দিইনি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.