![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দুর্ঘম পথ পাড়ি:
সিলেট এর মৌলভিবাজার জেলার প্রতন্ত এক এলাকা কুরমা পাড়া যেখানে গত প্রায় দেড় বছর আগে খুজে পাওয়া গিয়েছিল “হামহাম জলপ্রপাত”।১৬ জন অচ সদস্যদের মধ্যে কেউই আজ পর্যন্ত দুর্ঘম পাহড়ি-বন এলাকা অতিক্রম করে হামহাম জলপ্রপাত ঘুড়ে আসে নাই। এক অর্থে কোন রকম অভিজ্ঞতা ছাড়াই রওনা দেওয়া শুরু হলো সঠিক গন্তব্যে পৌছানোর জন্য। প্রথমে আমরা সকাল ৬ টায় একটি পিক আপ ভাড়া করি, আমদের সাথে ছিলো গাড়ির ড্রাইভার এবং তার হেলপার দ্বীপ যে আমাদের যাওয়ার পথে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র তথ্য দিয়েছিলো। আস্তে আস্তে করে আমরা আমাদের সঠিক গন্তব্যে যাওয়ার পথে প্রাকৃতিক দৃশ্যের পাশাপাশি লাউয়াছড়া বনের ভাল্লুকের ঢাক শুনতে পেলাম অনেক উচ্চস্বরে; যার ফলে আমাদের সিনিয়র-জুনিয়র সদস্যদের মনের ভিতর কিছুটা ভয় অনুভব কাজ করতে লাগল। সর্বোপরি আমরা সকলে কুরমা পাড়া এলাকায় গিয়ে পৌছালাম সকাল ৯ টায় এবং ওখানে গিয়ে আমরা আমাদের হামহাম জলপ্রপাত এ যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করলাম। আমরা কুরমা পাড়া এলাকায় গিয়ে দেখতে পারলাম স্থানীয় কিছু কিছু ছেলে-মেয়ে বাশের লাঠি নিয়ে আমাদের পিক আপ এর পিছনে পিছনে আসছে আমরাতো প্রথমে মনে করলাম ওরা কি আমাদের মারতে আসতেছে নাকি। কিন্তু না আমরা পরে বুঝতে পারলাম ওরা যে লাঠিগুলো নিয়ে এসেছিলো ওগুলো আমাদের কাছে বিক্রি করবে এবং পাহড়ি-বন দিয়ে আসা-যাওয়ার পথে ওই লাঠিগুলো সর্বত্রই আমাদের সকলের উপকারে আসে। সকাল ৯:৩০ টার দিকে আমরা কুরমা এলাকার ১ জন গাইড কে নিলাম যে আমাদেরকে দুর্ঘম পাহড়ি-বনের পথ চিনিয়ে নিয়ে যাবে হামহাম জলপ্রপাত এ। সকলেই রওনা দিলাম হামহাম জলপ্রপাত এর দিকে। দুর্ঘম কুরমা বনের ভিতর দিয়ে আমরা যাচ্ছিতো যাচ্ছি, যাওয়ার পথে আমাদের সকলের মনের ভিতর ভয় কাজ করতেছে। এক বারেই নিরব নি:শব্দ পাহাড়ি-বন এলাকা। আমাদের চারপাশে বড় বড় গাছপালা, সত্যিকার বন জঙ্গল দিয়ে যাচ্ছি আমারা। এই বনে সাপ, বন মানুষ, ভাল্লুক এবং অন্যান্য আরো অনেক জীব-জন্তু আছে বলে শুনেছি। স্বাভাবিক বনের ভিতর নানা প্রজাতির জীব-জন্তু থাকবে এটা আমার সবাই জানি। আমরা যতদূর হাটছি ততই মনের ভিতর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভয় বাড়ছে এবং আস্তে আস্তে করে কমছে আবার হঠাৎ করে বাড়ছে ভয়ের পরিমান। বনের ভিতর আমরা নানা রকমের ভয়ংকর পথ অতিক্রম করেছি। কখনো সাকু পাড় হয়ে, কখনো কোমর এবং গলা সমান পানি পাড় হয়ে, কখনো কখনো পাহাড়ের দু’পাশের বড় বড় পাথরের ভিতরের মাঝখানের রাস্তা দিয়ে হেঠেছি। বিরাট আকৃতির দু’পাশের পাথরের অবস্থানগুলো এমন অবস্থায় ছিলো যে কোন সময় আমাদের উপর দিয়ে মারাত্বক দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারতো। সাকুগুলো শক্ত টাইপের কোন সাকু ছিলো না কোন রকম বানিয়ে রাখা ছিলো। কোন কোন সাকুর নিচে গলা সমান পানি ছিলো আবার কোমর সমান পানিও ছিলো। সাকু পাড় হাওয়ার সময় মারাত্বক দুর্ঘটনাও হতে পারতো, হয়েছেও কিন্তু একটা জায়গায় যেখানে আমাদের একজন মেয়ে সদস্য সাকু দিয়ে পাড় হচ্ছিল ঠিক ও সময় সাকুটি ভেঙ্গে যায় এবং ভাগ্যক্রমে সে মারাত্বক দুর্ঘটনা থেকে বেচে যায়। পাহাড়ি-বন এলাকার কিছু কিছু পিচ্ছিল্ল জায়গায় বিশেষ করে পাথরের রাস্তা দিয়ে যখন আমরা যাচ্ছি ঠিক ও সময় আমাদের প্রায় বেশির ভাগ সদস্য মারাত্বকভাবে পিছলা খায় এবং বড়-ছোট রকমের ব্যাথা পেয়েছিলো যা কিনা খুবই ভয়ংকর। বিশেষ করে সব্বার মনে আরেকটি ভয় ছিলো তা হলো “ঝোক”- এর ভয় এবং মজার ব্যাপার হলো সব্বাইকে ঝোক এ ধরেছিলো। আরোও অনেক ভয় ছিলো পাহাড়ি-বনের ভিতর যেমন: সবুজ গাছের পাতার মতো কিছু সাপ আছে যা কিনা সহজে বুঝা যায় না।
মুকাম টিলা:
মুকাল টিলা হচ্ছে হামহাম জলপ্রপাত এ যাওয়ার পথের শেষ মুক্ষম জায়গা, এটি এমন একটি জায়গা যা কিনা চোখে না দেখলে কেউই অনুভব করতে পারবেন না। মুকাম টিলা মারাত্বক ভয়ংকর উচু জায়গা, যেটিকে আতিক্রম করেই হামহাম জলপ্রপাত পৌছাতে হবে। মুকাম টিলাটি প্রায় ২০তলা বিল্ডিং এর মতো খাড়া উচু জায়গা, বুঝতেই পারছেন কি রকম খাড়া উচু জায়গা হতে পারে। মুকাম টিলা দেখে তো আমাদের ৩জন সদস্য আর যায় নি সেই সুন্দরতম হামহাম জলপ্রপাত দেখতে, তবে তারা যে এতটুকু দুর্ঘম পথ পাড়ি দিয়ে মুকাম টিলা পর্যন্ত আসতে পেরেছে তা সত্যিকার অর্থেই সাহসিকতার পরিচয় রাখে। অত:পর আমরা ১৬ জন সদস্যদের মধ্যে ৩ জন সদস্যকে এরকম ভয়ানক ঝুকির মধ্যে রেখেই মুকাম টিলা পাড়ি দিয়ে হামহাম জলপ্রপাত যাবো বলে রওনা দেওয়া শুরু করলাম। তবে আমাদের ওই ৩ জন সদস্য আমাদের কে না যাওয়ার জন্য কোন রকম বাধা দেয় নি, কিন্তু তারা জানে আমারা যদি চলে যাই এখানে তাদের অনেক কিছু হতে পারে এমনকি বন দস্যুরা তাদের মেরেও ফেলতে পারে, তবে বড় কথা হচ্ছে আমাদের ১৬ জনের এর গ্রুপটা এতাই স্ট্রং ছিলো যে আমাদের মাথায় এতো ভয়ানক ঘটনা যে হবে তা ঐ সময় আমরা ভাবেনি। ১৩ জন সদস্য আমরা একে-অপরকে সহযোগিতা করে ভয়ংকর মুকাম টিলার দিকে উঠছি। ও হা আমরা যখন মুকাম টিলা উঠছি তার অনেক আগে থেকে কিন্তু মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হচ্ছিল ফলে মুকাম টিলা ওঠার সময় অনেক পিচ্ছিল্ল ছিলো যা কিনা যে কোন মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা হতে পারতো আমাদের যে কোন সিনিয়র-জুনিয়র সদস্যের ক্ষেত্রে। ভাগ্যক্রমে কোন রকমের দুর্ঘটনা ছাড়াই আমরা আমদের সেই ঐতিহাসিক সুন্দরতম হামহাম জলপ্রপাত এ গিয়ে পৌছালাম।
উৎসবমুখর মুহূর্ত:
অবশেষে অভিজ্ঞতা ছাড়াই আমরা যখন দুপুর ১:৩০টার দিকে অচেনা কোন এক দুর্ঘম এবং ভয়ংকর পাহাড়ি-বন এলাকা পাড়ি দিয়ে হামহাম জলপ্রপাত গিয়ে পৌছলাম, তখন আমাদের মনের ভিতর দিয়ে যে কি রকম আন্দন ভয়ে যাচ্ছিল প্রত্যেকের মাঝে বলে বুঝনো যাবে না, মনে হচ্ছি কোন কিছু একটা জয় করে ফেললাম। এক পর্যায়ে আমরা বলা বলি করছি আমরা তো ছোট রকমের এভারেস্ট জয় করে ফেললাম আহ কি যে মজা লাগছে। আসলে কি দীর্ঘ ১০-২০ মাইল উচু-নিচু পাহড়ি পথ পাড়ি দিয়ে প্রথমবারের মতো যে কারও কাছে কোন সঠিক গন্তব্যে পৌছনোর মজাই আলাদা যা অনুভব করা যায় ধৈর্য, সাহসিকতা মধ্য দিয়ে। সকলে মিলে আমরা দীর্ঘ ১ ঘন্টা মজা করলাম হামহাম জলপ্রপাতে, গোসল করলাম এবং আমরা ১৩ জন সদস্যের ছবি তুললাম গ্রুপ ওয়াইজ। অবশেষে আমরা হামহাম জলপ্রপাত এবং দুর্ঘম পাহাড়ি-বনকে বিদায় জানিয়ে চলে আসলাম একই পথ ধরে।
পথ নির্দেশক জহরাল নেহেরু:
“মুন্ডা” বাঙালি আদিবাসি জহরাল নেহেরু ছিলো আমাদের দুর্ঘম পাহাড়ি-বনের স্থানীয় গাইড। যে কিনা আমাদের চিনিয়ে নিয়ে গেছে হামহাম জলপ্রপাত এ। ওখানকার মানুষগুলো খুবই ভালো যতটুকু জহরাল নেহেরু সাথে থেকে বুঝলাম। নেহেরু চলার পথে সংগি ছিলো তার হাতের দাউ। হাতে দাউ রাখার পিছনে কারন নেহেরু বললো পাহাড়ি-বনে নানা রকমের দুর্ঘটনা থেকে বাচার জন্য।
সাহসিকতার পরিচয়:
দুর্ঘম পাহাড়ি এবং বন এলাকা যেখানে যেতে সত্যিকার অর্থেই মনের ভিতর সাহসিকতা লাগে। জীবনের মায়া বাজি রেখে এক অর্থে পাড়ি দিয়েছে ১৬ জন অচ সদস্য যার মধ্যে ৩ জন সদস্য ছিল মেয়ে, যারা মেয়ে হয়ে বীরের পরিচয় দিয়েছে বিশেষ করে মুনমুন এবং রেবেকা; আমি বলবো এ জায়গায় ছেলেরা এ রকম সাহসিকতা দেখাতে পারতো কিনা তা কিছুটা সন্দেহজনক। এর আগে মনে হয় না কোন গ্রুপ এতো বড় টিম নিয়ে দুর্ঘম পথ অতিক্রম করে “হামহাম জলপ্রপাত” পাড়ি দিয়ে এসেছে। বলাই বাহুল্য দুর্ঘম পথ পাড়ি দিয়ে হামহাম জলপ্রপাত অভিযান সুষ্টুভাবে করা আসা এক বিরাট সাহসিকতার পরচিয় এবং কৃতজ্ঞের দাবিদার রাখে।
©somewhere in net ltd.