নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবনের খেলাঘরে পাশাঘর পাশে রেখে। ভাঙ্গা টেবিলে বসেছি খাতা কলম নিয়েকিছু লিখব বলে।গল্প বা কবিতার ছলে।

আবদুল্লাহ আফফান

খুব সাধারণ একজন, ভালবাসি ঘুরতে আর পড়তে। মানুষ হতে চাই।

আবদুল্লাহ আফফান › বিস্তারিত পোস্টঃ

লাল সোয়েটারের গল্প

৩০ শে অক্টোবর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৫৮



দ্বিতীয় পর্ব

আনিস ঢাকায় চাকরী করে। সেই সুবাদে ঢাকাতেই থাকতে হয়। বৃহস্পতিবারে অফিস করে বাড়ির পথে রওয়ানা হয়। শুক্রবার থেকে শনিবারে এসে অফিস করে। আনিসের একমাত্র মেয়ে সামিয়া। মেয়েকে প্রচন্ড ভালবাসে সে। মেয়ের জন্য তার সব ভালবাসা। মেয়েকে সময় দিতে পারে না বলেই মেয়ের প্রায় সব আবদার পূর্ণ করতে চেষ্টা করে আনিস। কিছু লাগবে কি না! তাই জানতে বাড়ীতে একটা ফোন করে আনিস।

আজ বুধবার, কাল সে বাড়ি যাবে। বাড়িতে কোন কিছুর প্রয়োজন আছে কিনা জানার জন্য ফোন দিল। কেনাকাটার জন্য অন্যর জায়গার চেয়ে ঢাকায় সুবিধা বেশি। তাই সে সবসময় চেষ্টা করে ঢাকা থেকে কেনাকাটা করে নেয়ার জন্য।

আজানের ধ্বনি ভেসে আসছে, যদিও এখন আজানের সময় না, এশার নামাজের আজান দেয়া হয়েছে অনেক আগেই। মসজিদে এশার জামাতও হয়ে গেছে। আজানের ধ্বনি কোন মসজিদের মিনার থেকে নয়, আসছে সাদিকার মোবাইল থেকে।

মোবাইলের যেসব রিংটোন সেসব ভাল লাগেনা সাদিকার। তাই আনিস এফএম থেকে আজান রেকর্ড করে রিংটোন বানিয়ে দিয়েছে। সমিয়া পড়ছিল। মোবাইলের রিংটোন শুনে দৌঁড়ে এসে ফোন ধরল।
হ্যালো, আব্বু কেমন আছ?
হ্যাঁ মামনি ভাল আছি। তুমি কেমন আছ?
ভাল, আব্বু তুমি খেয়েছ?
না মামনি এখনো খাইনি।
সামিয়া অভিযোগ সুরে বলল, এখনো খাওনি কেন। অসুখ করবে তো। তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও। ঠিক আছে মামনি,
ফোন রেখেই খাব।
আচ্ছা ঠিক আছে, মনে করে খেও কিন্তু ভুলে যেও না আবার।
আচ্ছা মামনি।
আব্বু তুমি কবে আসবে?
কালকে আসব। তোমার কিছু লাগবে?
হু, আমার জন্য সুন্দর দেখে একটা সোয়েটার আনবে।
গতবার না একটি সোয়েটার কিনে দিয়েছি। ওটা চলবে না?
না, ওটা পুরোনো হয়ে গেছে। নতুন একটা লাগবে।
ঠিক আছে মামনি, আসার সময় নতুন সোয়েটার নিয়ে আসব।
ঠিক আছে।
আম্মু কোথায়?
মামনি তো রান্না ঘরে। খাবার গরম করছে।
আম্মুকে দাওতো একটু।
দিচ্ছি আব্বু।
সামিয়া ফোন নিয়ে রান্না ঘরে আম্মুর কাছে ফোন দেয়। সামিয়া ফোন দিয়ে ঘরে চলে যায়। সন্ধ্যার পর থেকে সামিয়া পড়েনি। আম্মু বকা দিবে বিধায় পড়ার টেবিলে বসে ছিল। তার পড়া আগেই হয়ে গিয়েছ। তাই পিছনের পড়া রিভাইজ দিচ্ছিল আর অপেক্ষা করছিল কখন আব্বু ফোন দিবে। কখন সোয়েটারের কথা বলবে সে। সোয়েটারের কথা বলা পর্যন্ত সে অস্বস্তিতে ভুগছিল। এখন স্বস্তি লাগছে তার। সোয়েটারের কথা ভেবে তার চোখ চকচক করছে। অজানা এক অনুভূতি মনে ভর করেছে সামিয়ার মনে। সোয়েটারটা কেমন হবে, তার রং কী! ডিজাইন কেমন হবে? সে এটা কী করবে এসব নিয়ে ভাবনার অন্ত নেই।

তৃতীয় পর্ব


আনিসের বাড়ি আসতে আসতে রাত হয়ে গেল। রাস্তায়ও জ্যাম কম ছিল না। বাড়ি এসেই সামিয়াকে কোলে তুলে নিল সে। বাবার কোলে উঠেই সামিয়া বলল, আব্বু আমার সোয়েটার।
এনেছি মামনি। ব্যাগেই আছে।
সামিয়া কোল থেকে নেমে ব্যাগ নিয়ে বসল। সারা ব্যাগ ঘেঁটে একাকার করে সোয়েটার বের করল। সোয়েটারটা লাল রঙে বুকের কাছে সুন্দর ছবি দেয়া। সামিয়া খুব আগ্রহ নিয়ে সোয়েটারটি দেখছে। আনিস মেয়ের এমন উৎসাহ দেখছে, আর মুচকি মুচকি হাসছে।
আনিস বলল, মামনি পছন্দ হয়েছে।
সামিয়া মাথা নাড়িয়ে বলল, হ্যাঁ আব্বু।
তুমি পরো। দেখি কেমন মানিয়েছে।
আনিস নিজেই সোয়েটারের ভাজ খুলে পরিয়ে বলল, বাহ! বেশ মানিয়েছে তো।
সামিয়া আয়নার সামনে গিয়ে নিজেকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে। ওকে আসলেই ভাল লাগছে।

বাপ-বেটির কি শুধু গল্প করলেই চলবে! না খাওয়া-দাওয়াও কিছু করতে হবে। সাদিকা কথাটা বলে, টেবিলে খাবার সাজায়। সাদিকা খুব ভাল করেই জানে আজ বাপ-বেটি এক হয়েছে। অনেক রাত পর্যন্ত গল্প তো করবেই। তা করুক কে মানা করেছে, আগে তো খাবারটা খেয়ে নিক।

রাতের খাবার খেয়ে বাপ-বেটি আবার গল্প করতে বসে। সামিয়া গল্প করতে করতে বলল, আব্বু তোমাকে একটা কথা বললে কি রাগ করবে।
আনিস বলল, রাগ করবো কেন? বল।
আব্বু তুমি জানো এটা আমি কেন কিনেছি।
আনিস কিছুটা অবাক হয়ে বলে, কেন আবার তোমার জন্য!

সামিয়া মাথা নাড়িয়ে বলে, আমার জন্য আনতে বলিনি।
তাহলে কার জন্য এনেছ?
আমাদের ক্লাসে একটি মেয়ে আছে। তার নাম লিমা। তার আব্বু না অনেক গরীব। তাই তার কোন সোয়েটার নেই। সে শীতে অনেক কষ্ট পায়। তার জন্য আনেছি।
এতে রাগ করার কি আছে। সে শীতে কষ্ট পাচ্ছে তার জন্য আনিয়েছ এটা তো ভাল কাজ। আর ভাল কাজ করলে কি কেউ রাগ করে! বোকা মেয়ে। সামিয়া আনিসকে জড়িয়ে ধরে বলে তুমি পৃথিবীর সবচেয়ে ভাল আব্বু।

আনিসও তার মেয়েকে পরম আদরে জড়িয়ে ধরে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১০:২৯

রাজীব নুর বলেছেন: চমৎকার।
সুন্দর লিখেছেন।

৩০ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১১:৫৮

আবদুল্লাহ আফফান বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।

২| ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৯ দুপুর ১২:৪৩

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: দুর্দান্ত বা ভাল কাজ পরিবার থেকেই শুরু হ্য়।
পিতা-মাতা যদি ভাল এবং মানবিক হন তবে তাদের সন্তানও একইভাবে বেড়ে ওঠে।

সুন্দর গল্প ।

০১ লা নভেম্বর, ২০১৯ রাত ২:০৭

আবদুল্লাহ আফফান বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.