![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শখের লেখক। লিখতে ভালো লাগে, তাই লিখি।
ভেবছিলাম কথাগুলো কাউকে বলবো না। ইদানিং মনে হচ্ছে লুকিয়ে রেখেই বা কি লাভ? কে কি ভাবলো, তাতে তো কিছু আসে যায় না। আমিও তো দুইটা বছর আগেও রেডিওতে ভূত এফ.এম. শুনলে ‘ঠাকুরমার ঝুলি’, ‘যতসব জোচ্চুরি’ এসব বলে উড়িয়ে দিতাম। সত্যি বলতে সেই সময়টা ভূতের গল্প শুনতে বেশ ভালোই লাগতো। এমনও হয়েছে, বাসায় কেউ নেই। গভীর রাত্রি, আমি একা একা ভূতের গল্প পড়ছি। বিষয়টাতে অন্যরকম একটা মজা আছে। আছে বললে ভুল হবে। বলা উচিৎ - ‘ছিলো’। অনেকেই হয়তো জানতে চাইবেন, এখন কেনো নেই?
বিষয়টাকে অনেকটা এরকমভাবে দেখা যায়- মনে করুন, আপনি কোন নির্জন দ্বীপে আপনার এক বন্ধুর সাথে বেড়াতে গেলেন। আপনি নিশ্চিত জানেন, সেখানে কোন হিংস্র জীব-জন্তু নেই। তাহলে আপনি কি করবেন? অবশ্যই দুইজন একসাথে আমোদ-ফুর্তি করবেন, বারবিকিউ পার্টি করবেন, এমনকি আপনি বেশী অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় হলে হয়তোবা চাঁদের আলোতে দ্বীপভ্রমণেও বের হয়ে যেতে পারেন। কিন্তু, সবকিছু ঠিকঠাক চলার মাঝে হঠাৎ করেই একদিন বাঘের গর্জন শুনতে পেলেন/ বাঘ দেখতে পেলেন। আপনি কি আপনার মনের অবস্থা কেমন হবে চিন্তা করতে পারেন? এমনকি, এর পর কি আর আপনার পক্ষে আমোদভ্রমণ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে? যদি উত্তরটি না হয়, তার মানে আপনি সঠিক পরিস্থিতিটি কল্পনা করতে সক্ষম হয়েছেন এবং আমার অবস্থাটাও আপনার পক্ষে বোঝা সক্ষম। যখন থেকেই আমি অশরীরীতে বিশ্বাস করা শুরু করলাম, তখন থেকেই কিন্তু জিনিসটার মর্মার্থ আমার জন্য পাল্টে গেলো। জিনিসটা যে মোটেও মজার কিছু না, সেটা আমি হাড়ে হাড়ে টের পেয়ে গেছি। সেই কথাটাই আজকে আপনাদের সাথে শেয়ার করবো।
ঘটনাটা ঘটেছিলো আজ থেকে প্রায় দুই বছর আগে। ভার্সিটিতে নতুন ভর্তি হয়েছি, ক্লাস তখনো শুরু হয়নি। এই সুযোগে গ্রামের বাড়ি বেড়াতে গিয়েছি।
তো, আমার দাদাবাড়ি সম্পর্কে কিছু কথা বলে রাখা অপ্রাসঙ্গিক হবেনা বোধ করি। ঠিক সময়মতোই আমি আবার মূল প্রসঙ্গে ফিরে আসবো। কথিত আছে (আসলে পুরোটাই সত্যি কথা। এটা আমার বাবা-চাচা সবার কাছ থেকেই স্বীকৃত) আমার দাদার বাবা( অথবা বাবার দাদা, যা ই বলিনা কেনো ) ছিলেন একজন পীর এবং তিনি জাদু-টোনা এসব ব্যাপারে অনেক পারদর্শী ছিলেন। এবং তিনি জ্বীনও পালতেন। সেই জ্বীনদের কীভাবে দেখভাল করতেন, তা নিয়ে গ্রামের মানুষদের মাঝে এখনো কথা হয়। এখনো বাজারে চায়ের আড্ডায় এই বিষয়ে আলোচনা চলে ঘন্টার পর ঘন্টা। একবার নাকি আমার দাদা ভুল করে জ্বীনদেরকে দেওয়া খাবার (সাগর কলা এবং গরুর দুধ) নিজে খেয়ে ফেলেছিলেন। এতে করে নাকি জ্বীনরা অনেক ক্ষেপে যায় এবং তাকে অনেক মারধোর করে।
জ্বীনগুলো নাকি মোটেও শান্তিপ্রিয় ছিলো না, তবে তারা দাদার বাবাকে যমের মতো ভয় করতো। তাই, তিনি সবসময়ই ভাবতেন তিনি নিজে যখন মারা যাবেন, তখন হয়তোবা জ্বীনগুলো বেশী বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে। অন্যদের ক্ষতি করতে পারে।
এই চিন্তা থেকেই তিনি মারা যাওয়ার আগে তিনি একটি চকই গাছের সাথে (আমাদের গ্রামে আঞ্চলিক ভাষায় গাছটিকে চকই গাছ বলা হয়। এ বিষয়ে আমি বিশেষজ্ঞ নই। সুতরাং, গাছটির প্রকৃত নাম অন্যকিছু হতে পারে। তবে আপনাদের সুবিধার জন্য বলে রাখি, গাছটির ফলগুলো দেখতে এবং খেতে আমলকীর মত কিন্তু অতিশয় ছোট) জ্বীনগুলোকে আটকে রেখে যান। গ্রামের মানুষের ভাষায় চকই গাছের সাথে বান মারে রেখে যান এবং বলে যান, সেই চকই গাছে কেউ যেনো হাত না দেয়। চকই গাছটি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে ধ্বংস করলে তার পরিণতি হবে ভয়াবহ। সেই সময়ে চকই গাছটি ছিলো একদম ঘন জঙ্গলের মাঝে। এখন অবশ্য ঘন ঝোপঝাড় পরিষ্কার করে সেখান দিয়ে রাস্তা বের করা হয়েছে। কিন্তু, চকই গাছটিতে কেউ হাত দিতে সাহস করেনি। সেজন্য, গাছটি মোটামুটি অক্ষতই আছে। যদিও এখন আর সেটিকে অক্ষত রাখার প্রয়োজন নেই। হয়তোবা ভাবছেন, এর মানে কি? অধৈর্য হবেন না। সেটা বলা আমার কর্তব্য।
এই যে এতোকাল, তার মাঝে কেউ যে চকই গাছের সাথে আটকে রাখা জ্বীনদের সমস্যা ঘটায় নি, এটা বলা ঠিক হবে না। বরঞ্চ, তিনি ছিলেন আমার দাদা যিনি তার বাবার আদেশ অমান্য করেছিলেন এবং এর জন্য তাকে চরম মূল্য দিতে হয়।
যেই দিনের কথা বলছি, সেটা আজ থেকে প্রায় পঁচিশ বছর আগের কথা। গ্রামে মেঠোপথ তৈরি করা হবে। এ লক্ষ্যে ঝোপঝাড় পরিষ্কার করা হচ্ছে। সব গাছপালা সরিয়ে ফেল্লেও চকই গাছে হাত দেওয়ার মত সাহস কারো ছিলো না। একজন মানুষেরই ছিলো, সেটা হলো আমার দাদা। তিনি ছিলেন সিংহের মত সাহসী। তার চেয়ে বড় কথা, তার বাবা ছিলেন একজন আধ্যাত্মিক কিসিমের মানুষ। সেজন্য, তিনি তার বাবার সবকথা বিশ্বাস করতেন না। সুতরাং, বাবার কথা অবিশ্বাস করেই হোক, অথবা নিজের সাহস জাহির করা, যেই কারণেই হোকনা কেনো তিনি ঠিক করলেন, আর কেউ হাত না লাগালে তিনি একাই চকই গাছ কাটবেন।
যেই কথা সেই কাজ। কারো কথা শুনে দমে যাবার পাত্র তিনি না। সেই দিনটির বর্ণনা আমি অনেকজনের কাছেই শুনেছি। এবং অনেকবার শুনেছি। সেটাই শুদ্ধভাবে আপনাদের সামনে উপস্থিত করছি।
দাদা একটা কুড়াল হাতে করেই নিয়ে এসেছিলেন। সবাইকে গাছের কাছ থেকে সরে যেতে বললেন। তারপর সারা গায়ের শক্তি এক করে চকই গাছের গোড়ায় কোপ বসালেন। তাতে অবশ্য গাছটার তেমন কিছু হলো না। কিন্তু, দাদাও দমে যাবার পাত্র নন। তিনি একের পর এক কোপ দিতেই থাকলেন। এবং তারপর হটাৎ করেই একটা তাজ্জব ব্যাপার ঘটলো। হটাৎ শো শো করে বাতাস বইতে লাগলো। তাতে সবাই প্রায় উড়ে যাওয়ার উপক্রম। হটাৎ বাতাসের ঝাপটায় দাদা তাল হারিয়ে মাটিতে পড়ে গেলেন এবং তৎক্ষণাৎ জ্ঞান হারালেন। সবাই ধরাধরি করে তাকে বাড়িতে নিয়ে আসলেন।
সবচেয়ে আশ্চর্যের ঘটনা হচ্ছে যে, দাদা এতক্ষণ চেষ্টা করেও গাছটার গায়ে সামান্য আঁচর ছাড়া কিছুই করতে পারেননি। ব্যাপারটা অনেকের কাছে স্বাভাবিক মনে হতে পারে। কিন্তু আমি যদি আমার দাদার একটু বর্ণনা দেই, তাহলেই আপনারা অসঙ্গতিটা ধরতে পারবেন। তিনি ছিলেন সাত ফুট লম্বা, হ্যাঁ, ঠিক পড়েছেন। সাত ফুটই লম্বা এবং গায়ে অসুরের শক্তি। আশেপাশের দশ গ্রামে তার মত শক্তিশালী কেউ ছিলো না। লোকমুখে শোনা যায়, তিনি নাকি একটা আস্ত মুরগি একবেলাতেই সাবাড় করতেন। তার মতো মানুষের জন্য বাপারটা অস্বাভাবিক বৈকি।
এখন মূল ঘটনায় ফিরে আসি। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, জ্ঞান হারানোর পর দাদা আর কখনো বিছানা থেকে উঠতে পারেননি। প্রায় একমাস সজ্জা নিয়ে অবশেষে তিনি পরলোকগমন করেন। এই এক মাসে অবশ্য অনেক কিছুই ঘটে, যার কোন ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না। দাদা মাঝেমাঝেই নাকি কার সাথে কথা বলতেন, তাদেরকে আর কেউ দেখতে পেতো। মাঝে মাঝে তিনি নাকি পাঞ্জাবি পড়া সাদা দাড়িওয়ালা এক নেক মানুষকে দেখতে পেতেন এবং ঘরে কেউ আসলেই তিনি সেই মানুষটিকে সালাম দিতে বলতেন। বলা বাহুল্য, আর কেউ সেই সাদা দাড়িওয়ালা পাঞ্জাবিপড়া মানুষকে দেখতে পেতো না। অনেকেই ভাবতো তিনি পাগল হয়ে গেছেন।
সবাই এটাই মেনে নিতো যদি না তিনি মৃত্যুর আগে কথাটি বলে যেতেন। কথাটা আমি নিজের কানে শুনিনি, কিন্তু এতোবার এতো মানুষের কাছে শুনেছি যে মনে হয় তিনি যেনো আমার সামনেই বলছেন- “তোমরা তাদেরকে বিরক্ত করো না, তাহলে তারাও তোমাদের বিরক্ত করবে না।” কথাটি বলেই নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বের হয়ে তিনি পরপাড়ে চলে গেলেন। তিনি চলে গেলেন, কিন্তু সবার জন্য রেখে গেলেন আতঙ্ক। কে এরা, যাদেরকে বিরক্ত করা যাবে না?
অবশ্য পরবর্তীকালে যেসব ঘটনা ঘটেছে, তাতে করে সবাই নিশ্চিত যে দাদা চকই গাছে কোপ দেওয়াতে তার বাবার দেওয়া বান নষ্ট হয়ে যায় এবং তার বন্দী করে রাখা জ্বীনগুলো মুক্তি পেয়ে যায়। এটাও কারো বুঝতে বাকি থাকেনা যে, সেদিনের সেই কান্ডই দাদার মৃত্যু ডেকে এনেছিলো। যদিও জ্বীনগুলো দুষ্ট প্রকৃতির ছিলো, তারা খুব একটা ক্ষতি করেনি, কিন্তু এরপর থেকে যে ঘটনাগুলো ঘটতে থাকে, সেগুলো একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। যাই হোক, এগুলো সবই ছিলো পূর্ব ঘটনা, যেটা আমার জন্মের আগেই ঘটেছিলো। কিন্তু, এটুকু নিশ্চয়তা দেওয়াই যায় যে সম্রাট হুমায়ূন যে সম্রাট বাবরের ঔরসজাত সন্তান ছিলেন, এটা যেমন ঐতিহাসিকভাবে সত্য, তেমনি এই কাহিনিগুলোও ঐতিহাসিকভাবে সত্য।
এখন আসি আসল ঘটনায়, যেগুলো ঘটেছিলো আমার জন্মের পর এবং আমি যার প্রত্যক্ষদর্শী। অবশ্য, ব্যাপারগুলো সবসময়ই আমি ভুলে থাকতে চাই। তবু, আপনাদের জানানোর স্বার্থে আরো একবার পুরোনো স্মৃতি ঘাটতে হবে।
দ্বিতীয় পর্ব এখানেঃ Click This Link
২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:৩৪
আল কাফি বলেছেন: ভালো রিভিউ। আশা করি পরের পর্বও ভালো লাগবে।
©somewhere in net ltd.
১|
২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:২৯
কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: মাশাল্লাহ!!! খুব ভালো লেগেছে। অস্বাভাবিক ভয়ে গল্প।
সাত ফুটি মানুষ, কয়েক হাজার বন্দি জীন।! দূর্দান্ত!
দিনের বেলায়ও আমার এত ভয় লাগছে যে, আমি লাইট জালিয়ে দিয়েছি।