![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শখের লেখক। লিখতে ভালো লাগে, তাই লিখি।
দ্বিতীয় পর্বের লিঙ্কঃ Click This Link
সেদিন রাত্রে ঘুম হয়েছিলো ছাড়া ছাড়া ভাবে। ঘুম থেকে উঠে দেখি, খুব একটা বেলা হয়নি। মা’কে দেখলাম জিনিসপত্র ঠিকঠাক করছেন। এমন সময় দাদী রুমে এলেন। কোন চেয়ার ছিলো না রুমে। তাই, আমি একটু চেপে বসে দাদীকে বসার জায়গা করে দিলাম। দাদী গম্ভীরভাবে মা’কে জিজ্ঞেস করলেন- “গত রাতে কি হয়েছিলো? শব্দ শুনলাম মনে হলো।”
“বেড়াল এসেছিলো সম্ভবত মা।” মা উত্তর দিলেন।
“ও!” দাদী যেনো একটু স্বস্তি পেলেন “ভয় পাওনিতো আবার?”
মা হেসে বললেন “প্রথমে পেয়েছিলাম। আপনার সাথে কথা বলার পর ভয় কেটে গেছে।”
“আমার সাথে!” দাদী ভুরু কোঁচকালেন।
“হ্যাঁ! আপনিই না বললেন, ইদানিং বেড়ালগুলো খুব জালাচ্ছে? তারপর ঘুমিয়ে পড়তে বললেন!” সন্দেহের চোখে মা বললেন।
“কই! আমি তো কিছু বলিনি! আমি তো ঘুমের মাঝে একবার শুধু কেমন একটা শব্দ শুনেছি। এর বেশী কিছু জানিনা।” নীরস মুখে দাদী বললেন।
মা’র মুখ তার থেকেও নীরস হয়ে গেলো “তাহলে কে কথাগুলো বলেছিলো?”
দাদী কিছু সময় ইতস্তত করলেন। তারপর বললেন- “দেখো জান্নাত মা, ভেবেছিলাম তোমাকে কথাগুলো বলবো না। কিন্তু এখন তো না বললেই নয়।”
“কি কথা মা?” ভয় পাওয়া গলায় মা জিজ্ঞেস করলেন।
“তোমার শ্বশুর যে জ্বীনগুলোকে মুক্ত করে দিয়েছিলো, তারা আমাদের এলাকা থেকে যায়নি। যদিও তারা কারো কোন ক্ষতি করে না।”
“তাহলে তারা কোথায় থাকে?”
“তোমাদের ব্লকে।” ধরা গলায় বললেন দাদী।
এই উত্তরটা শোনার জন্য আমি বা দাদী, কেউই প্রস্তুত ছিলাম না। ঘটনার আকস্মিকতায় আমাদের রক্ত হিম হয়ে এলো। কথা বলার ভাষাও হারিয়ে ফেললাম আমরা দুইজন।
কোনমতে মা দাদীকে জিজ্ঞেস করলেন- “তাহলে এতদিন আমাদের বলেননি কেনো?”
দাদী একটু মন খারাপ করা কন্ঠে বললেন- “আমি বুড়ো মানুষ। আজ আছি, কাল নেই। তোমরা সবাই দূরে দূরে থাকো। বছরে মাত্র একবার দুইবার আমাকে দেখতে আসো। আমি একা একা থাকি। এমনিতেই কম আসো। এই কথা জানলে তো আসা বন্ধই করে দিতে।” তারপর একটু থেমে বললেন “বিশ্বাস করো মা। তারা কারো কোন ক্ষতি করে না। তাই আমি তোমাদের কিছু জানাই নি। সেরকম কিছু হলে অবশ্যই জানাতাম।” এই বলে দাদী ডুকরে কেঁদে উঠলেন।
মা দাদীকে চেপে ধরে সান্ত্বনা দিলেন। কিন্তু মুখ থেকে কোন কথা বের হলো না। বের হবে কীভাবে? মা’র মুখ যে একদম ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। কারণ, ততক্ষণে বুঝে গেছেন যে গত রাতের শীতল ওই হাত, যেটা তার গলা-মুখ চেপে ধরেছিলো সেটা আসলে ছিলো একটা জ্বীনের হাত! ভাবা যায়?
আগেই বলেছিলাম! এই কথা জানার পর আমাদের আর ওইখানে থাকার কোন সাহস ছিলো না। আম্মু ব্যাগ গোছাতে শুরু করলেন। যেই আমি গ্রামে আসার জন্য পাগল, সেই আমিও থাকার সাহস সঙ্কুলান করতে পারলাম না।
দাদী অবশ্য বললেন, তাদের ব্লকে জায়গা খালি আছে। আমরা তো তাদের ওখানে থাকতে পারি। কিন্তু, অবস্থা তখন এমন হয়েছিলো যে, কোনরকমে রাত হওয়ার আগে এলাকা ছাড়া হলে বাঁচি। সেই যে বিদায় নিয়ে চলে এলাম, তার দুই বছরের মধ্যে আর গ্রামের বাড়ি যাই নি। দুই বছর পরেও যে এমনিতে গেছি, সেটা ঠিক না। সেরা সেরা কবিরাজকে কাজে লাগিয়ে আমাদের ব্লক থেকে জ্বীন তাড়ানো হয় এবং এখন সেটা পুরোপুরিরূপে উপদ্রবহীন, এটার নিশ্চয়তা পাওয়ার পরই আমরা আবার গ্রামে যাই।
যদিও, দুইবছর পর যখন গেলাম সে সময়ও প্রথমদিন রাতে অনেক ভয় পাচ্ছিলাম। আগের বারের কথা কেবলই মনে হচ্ছিলো, আর মনে হচ্ছিলো, যদি জ্বীনগুলো সত্যি সত্যি না গিয়ে থাকে! যদিও সেদিন রাতে জ্বীনের দেখা না পাওয়ার পর অনেক আশ্বস্ত হয়েছিলাম। সত্যি বলতে কি, তারপর আর কখনোই আমাদের ব্লকে জ্বীনের উপদ্রব লক্ষ্য করা যায়নি।
কিন্তু, আমার মন থেকে কিন্তু জ্বীনের চিন্তা যায়নি। বরঞ্চ, আরও বেড়ে গিয়েছিলো। আমি যখনই সময় পেতাম, ব্যাপারটা নিয়ে ভাবতাম। এমনকি আমাদের বাড়িতে ঘটে যাওয়া অনেক ঘটনার সাথে আমি জ্বীনের যোগসূত্র বের করতে সক্ষম হলাম। সেরকম একটা ঘটনাই বলি।
যে ঘটনাটার কথা বলবো, সেটা ঘটেছিলো সেই রাতের ঘটনার বছর দুই আগে। সেবার বড় কাকা গ্রামে এসেছিলেন। তিনি সাধারণত গ্রামে খুবই কম আসেন। তিনি খুবই নামাজী মানুষ। খুব বেশী সমস্যায় না পড়লে নামাজ কাজা করেন না।
একদিন তিনি আছরের নামাজ পড়ছিলেন। তখনই কাহিনীটা ঘটেছিলো। তখন প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। আছরের ওয়াক্ত প্রায় শেষ হতে চলেছে। এমন সময় কাকা নামাজ পড়তে শুরু করলেন। আমাদের ব্লকের ডানপাশে যে রুমটি আছে, সেখানে জায়নামাজ বিছালেন।
ঘরে আর কেউ ছিলো না। আমরা বাইরে কথা বলছিলাম। কিছুক্ষণ পর হটাৎ একটা আত্মচিৎকার শুনতে পেলাম। সেটা যে বড় কাকার চিৎকার এটা বুঝতে কারোই কালবিলম্ব হলো না। প্রায় সাথে সাথেই আমরা সবাই দৌড়ে রুমে ঢুকলাম। আমি, মা, দাদী আর ছোট চাচা। গিয়ে দেখলাম, জায়নামাজের উপর চিৎ হয়ে পড়ে আছেন বড় চাচা। জ্ঞান হারিয়েছেন।
অনেকক্ষণ পানি ঢালার পর তার জ্ঞান ফিরলো। ভয়ার্ত চোখে তিনি চারপাশ দেখলেন। তারপর জিজ্ঞেস করলেন- “কোথায় গেলো লোকটা?”
“কোন লোক?” ছোট চাচা জিজ্ঞেস করলেন।
“আমার পেছনে যে লোকটা নামাজ পড়ছিলো।”
“আপনার পেছনে কে নামাজ পড়ছিলো? আপনি তো রুমে একাই ছিলেন। আমরা তো দরজার সামনেই কথা বলছিলাম। কেউ রুমে ঢুকলে তো অবশ্যই আমরা দেখতে পেতাম।” ছোট চাচা আশ্বাস দিলেন।
কিন্তু, তাতে কোন কাজ হল না। বড় কাকা দৃঢ়ভাবে বললেন “আমার ভুল হতেই পারে না।”
কথায় কথায় মূল কাহিনী জানতে পারলাম। কাহিনীটা সংক্ষেপে এই- বড় কাকা যখন নামাজ পড়ছিলেন, তখন তার বারবার মনে হচ্ছিলো পেছনে কেউ বুঝি আছে। নামাজ শেষে যখন তিনি সালাম ফেরালেন, তখন দেখতে পেলেন তার পেছনে ডানদিকে একটি লোক বসে আছে এবং তার সাথে সাথে নামাজ পড়ছে। অথচ সেখানে কারো থাকার কথা ছিলো না। প্রথমে তিনি ভেবেছিলেন, সেটা তার মনের ভুল। কিন্তু, ভালোভাবে তাকানোর পর যখন লোকটা তাকে অদ্ভুতভাবে সালাম দিলো, তখন তিনি নিশ্চিত হলেন, তিনি যা দেখছেন সেটা বাস্তবেই দেখছেন। এটা বুঝতে পেরেই তিনি চিৎকার করে মূর্ছা যান।
পরে তিনি লোকটার পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা দিয়েছিলেন। পাঞ্জাবি পড়া সাদা দাড়িওয়ালা সেই লোকটাকে দেখলেই নাকি কেমন একটা ভীতিকর পবিত্র ভাব আসে। মনে হয়, কোন নেক বান্দা। সবাই ভেবেছিলেন, ভয়ে বড় কাকা প্রলাপ বকছেন। বলা বাহুল্য, আমিও সেটা ভেবেছিলাম।
এখন কিন্তু দুয়ে দুয়ে চার মিলে যাচ্ছে। তিনি যে মানুষটাকে দেখেছিলেন, তার বর্ণনার সাথে পঁচিশ বছর আগে দাদার দেখা মানুষটার (নাকি জ্বীন? কারণ, তাকে দাদা ছাড়া কেউ দেখতে পেতো না) বর্ণনা হুবুহু মিলে যায়।
এর থেকে আমি কয়েকটি যুগোপযোগী সিদ্ধান্তে আসতে পারি।
এক। দাদার দেখা জ্বীন এবং কাকার দেখা জ্বীন সম্পূর্ণ একজনই। বড় কাকা যা দেখেছিলেন, সত্যিই দেখেছিলেন। তাতে বিন্দুমাত্র মিথ্যা নেই।
দুই। জ্বীনটি অবশ্যই ভালো। কেননা, সে দাদাকেও সালাম দিতো, বড় কাকাকেও সালাম দিয়েছিলো। আবার সে কাকার পেছনে নামাজও আদায় করছিলো। সুতরাং, ভালো না হয়ে যায়ই না।
তিন। এটা অনেকটা হাইপোথিসিস। জ্বীনদের বয়স আমাদের মত বাড়ে না। হয়তোবা তারা আমাদের চেয়ে অনেক বেশী বছর বাঁচে। সেজন্য দাদা এবং কাকা একই জ্বীন দেখলেও তাদের মাঝে কোন বয়সগত পার্থক্য ছিলো না।
চার। জ্বীনরা সাধারণত অদৃশ্য। কিন্তু, তারা ইচ্ছা করলে মানুষের কাছে দৃশ্যমান হতে পারে। আর তারা শুধু ভালো মানুষদেরই দেখা দেয়। কারণ, আমার দাদা খুবই পরহেজগার মানুষ ছিলেন, বড় কাকাও হয়েছেন একদম তার বাবার মত।
বড় কাকা কিন্তু এরপর আর গ্রামে আসেননি। আবার জ্বীন দেখার কোন সদিচ্ছাই তার ছিলো না। আমার কাছে কিন্তু ব্যাপারটা বেশ ভালোই লেগেছিলো। যাহেতু জ্বীনটা অনেক ভালো। সুতরাং আমি ভয় পাওয়ার মতো কিছু খুঁজে পাইনি। তবে ব্যাপারটা বেশ মজার হতে পারে। সেজন্য আমি তখন থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া শুরু করলাম। মনের গহীনে একটাই ইচ্ছা- কোনমতে যদি জ্বীনের সাথে দেখা করতে পারি, তাহলে আর কোন চিন্তা নেই। কিছু না কিছু সুবিধা আদায় করে নিতে পারবো।
অবশ্য পরে একবার জ্বীনের মুখোমুখি হয়েছিলাম। সেটা কিন্তু খুব একটা ভালো অভিজ্ঞতা ছিলো না এবং সেই রাতটি আমি সারাজীবন ভুলে থাকতেই চেষ্টা করবো। সুতরাং, এবার যে অভিজ্ঞতার কথাটা বলবো, সেটা নিতান্তই আমার নিজের অভিজ্ঞতা, খুবই ভয়ানক অভিজ্ঞতা।
চতুর্থ পর্ব শীঘ্রই আসছে......
০৩ রা মার্চ, ২০১৫ রাত ১:১৬
আল কাফি বলেছেন: আপনার অনুপ্রেরণামূলক কমপ্লিমেন্টের জন্য ধন্যবাদ। আগের পর্বগুলোর লিঙ্ক দেওয়া আছে। সময় করে পড়ে নেবেন আশা করি।
২| ০৩ রা মার্চ, ২০১৫ সকাল ১০:৩৭
অশুভ বলেছেন: ঘটনাগুলো কি সত্যি নাকি শুধুই গল্প? যেভাবে ডিটেইলিং করছেন, মনে হচ্ছে সব সত্যি।
সত্য ঘটনা বা গল্প যাই হোক আপনার লেখা অনেক গোছানো এবং সুন্দর। আরো লিখুন, সেই প্রত্যাশায় রইলাম।
০৩ রা মার্চ, ২০১৫ রাত ৮:৩৯
আল কাফি বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।
বাস্তব কোন ঘটনার সাথে এই গল্পের মিল নেই। আসলে ভূত/ জ্বীনের গল্প লিখতে গেলে বিশ্বাসযোগ্যতাই প্রধান নিয়ামক হওয়া উচিৎ। সেজন্যই এইভাবে লেখা।
৩| ০৩ রা মার্চ, ২০১৫ রাত ৯:৩৩
প্রামানিক বলেছেন: ভাল লাগল। ধন্যবাদ
০৩ রা মার্চ, ২০১৫ রাত ১০:৪৭
আল কাফি বলেছেন: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
০৩ রা মার্চ, ২০১৫ রাত ১:০৬
এম এম করিম বলেছেন: শখের লেখক আমরা প্রায় সবাই। ভালোই লিখেন আপনি। আগের পর্বগুলো পড়ার ইচ্ছে আছে।