নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পৃথিবী আমার আবাস। মানুষ আমার পরিচয়।

আবীর চৌধুরী

ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার

আবীর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

যত্রতত্র সিগারেট ফিল্টারঃ বদঅভ্যাস, অজ্ঞতা নাকি উদাসীনতা?

১৫ ই জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ১১:৫৫

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন ও নৈসর্গিক অংশটাতে (যদি অণুবীক্ষণ যন্ত্র বা দুরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়েও খুঁজে পান) নিজের পরিবার নিয়ে সুস্থ বিনোদনের সময় কাটাতে গিয়ে সৈকতের বালিতে এরকম দৃশ্য দেখতে পাওয়া খুবই স্বাভাবিক। মানুষ নিজের একাকীত্ব বা কারো সঙ্গ উপভোগ করতে গিয়ে ধূমপানের সাহায্য নেয় প্রায়সময়ই। কিন্তু চলে আসার সময় ফেলে আসে নিজের পরিত্যক্ত এমন অনেক কিছু, যা প্রকৃতির সাথে কিছুতেই খাপ খায় না, বরং প্রকৃতিকে মেরে ফেলে তিলে তিলে।


ঢাকা বা চট্টগ্রামের সবচেয়ে সুন্দর, নিরাপদ, পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যসম্মত উদ্যানটাতে (আবারও- যদি খুঁজে পান!) মর্নিং ওয়াকে, বা বিকেলে খেলতে, বা রাতে কারো সঙ্গে হাঁটতে গেলেন। হ্রদের পাড়ে, ফুলের ঝোপের পাশে, ছায়াদায়ী গাছটার নিচে, পুকুরের ঘাটে, খেলার মাঠের পাশে ঘাসের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েও যেতে পারেন। বসতে গিয়ে ঘাসের মধ্যে পিঁপড়া বা পোকামাকড় ছাড়াও পেয়ে যেতে পারেন সিগারেটের এই ফিল্টার বা বাট। আরো পাবেন দলা দলা থুথু- কোনটা শুকিয়ে যাওয়া, কোনটা টাটকা। চাইলেই আমরা সিগারেটের এই উচ্ছিষ্টগুলো ফেলতে পারি ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট জায়গায়। ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট জায়গা মানেই সেটার আশেপাশে ময়লা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকতে হবে, ময়লা উপচে পড়তে হবে, কাক-কুকুর-ইঁদুর ময়লা নিয়ে হাতাহাতি করবে, আর আমরা পাশ দিয়ে বা দূর দিয়ে যাওয়ার সময় ঘৃণাবশত থুথু ফেলবো যেকোনখানে। এটাই চিরায়ত বাঙ্গালিত্ব- যা স্কুলে বইয়ে পড়ানো হয় না।


বন্ধুদের সাথে ব্যস্ততার ফাঁকে ছুটিতে ঘুরতে গেলেন দেশের কোন এক প্রান্তে- রেইনফরেস্ট, ঝিরিঝর্ণা, পাথুরে নদী, কিংবা পাহাড়ের পথে। যে জায়গায় গিয়ে মনে হবে, সেখানে কখনো মানুষের পা পড়ে না, কিংবা কেন আপনি সারাজীবন এরকম সুন্দর পরিবেশে থাকতে পারেন না, সেরকম জায়গাতেও মন বিষিয়ে উঠতে পারে- ফাঁকেফোকড়ে এরকম আবর্জনার অস্তিত্ব দেখে। সেন্টমার্টিন, জাফলং, সাজেক, এরকম হাজারো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের স্থানগুলো একমাত্র নিজেদের বেপরোয়া, উদাসীন আর অনিয়ন্ত্রিত উপস্থিতি দিয়ে আমরা ধ্বংস করেছি। সুইজারল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, নরওয়ে বা ফিনল্যান্ডের মত অপার সৌন্দর্যের দেশগুলো দেখে আমাদের চোখ অক্ষিকোঠর থেকে বের হওয়ার জো হয়। কিন্তু কখনো ভেবে দেখি না, তারা কেন ও কিভাবে পারলো। সচেতনতা, সত্যিকারের দেশপ্রেম, এবং নিয়ন্ত্রিত জনসংখ্যার কারণেই সম্ভব হয়েছে এসব।


পশুপাখির উপর জাতিগতভাবেই আমাদের প্রেম কম। আমরা তাদেরকে নিজেদের খাবার মনে করি, ঝামেলা মনে করি, ভয়ের কারণ মনে করি, অবহেলা ও তুচ্ছতাচ্ছিল্য করি। নিজের আশেপাশের পাখপাখালির কলকাকলি ও দিনব্যাপী উপস্থিতি মানুষের কাজের মনোযোগ ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে; মানসিক ও শারীরিক সুস্বাস্থ্যে ভূমিকা রাখে। সম্প্রতি বিজ্ঞানীদের গবেষণায় এই ফলাফলই এসেছে। যদিও আমাদের নিজেদের বা আমাদের পূর্বজদের জীবনের ব্যবহারিক অভিজ্ঞতাই আমাদেরকে এর সত্যতা প্রমাণ করে। আমাদের ফেলা বর্জ্য পাখি, পোকা, মাছ থেকে শুরু করে চক্রাকারে ঘুরেফিরে আমাদের পেটেই আসে। আমরা কয়জনে জানি, সিগারেটের ফিল্টারের ভয়াবহ রাসায়নিক উপস্থিতি সম্পর্কে?


নাহ, এটা বাংলাদেশ না। বাংলাদেশে এরকম নান্দনিক, পাথুরে শহুরে রাস্তা নাই (আমার জানামতে)। এটা ইউরোপের এক শহরের রাস্তার ক্লোজআপ শট। ওইসব দেশেও অবাধ্য, অসচেতন, বেপরোয়া, আইন-অমান্যকারী, পরিবেশকে থোড়াই কেয়ার করা লোকজন আছে। শুধু যে রাস্তার সৌন্দর্য নষ্ট করে তা-ই না, এরকম আবর্জনা বৃষ্টির বা মানুষের ব্যবহারের পানি দ্বারা ধুয়ে নালা-নর্দমাকে ব্লক করে ফেলে, মিঠাপানির জলাধারকে দূষিত করে, পানিতে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি বাড়ায়।


পৃথিবীতে মানুষের প্রচুর পরিমাণে ফেলে দেওয়া বস্তুগুলির মধ্যে শীর্ষে আছে সিগারেটের বাট- প্রায় সাড়ে ৪ ট্রিলিয়নের মত। ৪৫০০০০০০০০০০০০ সিগারেটের পেছনের অংশ।
একান্তে ধূমপান করুন; সমস্যা নেই। আপনার জীবনের সিদ্ধান্ত- আপনার কাছে। কিন্তু সিগারেটের ফিল্টার যেখানে সেখানে ফেলে আসাটা শুধু আপনার জীবনকেই প্রভাবিত করছে না। গোটা পৃথিবীর স্বাস্থ্যে সেটা প্রভাব ফেলছে- ভুলবেন না।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১:৪৮

রানার ব্লগ বলেছেন: আমরা নোংরা জাতি। সুন্দর পরিষ্কার কোন কিছুই আমাদের সহ্য হয় না। নোংরা করে তা যে পরিছন্ন করতে হয় এটাই জানি না।বা জানার চেস্টা করি না।

২| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৩:০৩

রাজীব নুর বলেছেন: জাতি হিসেবে আমরা উন্নত চরিত্রের নই।
এই কিছুদিন আগে একদল লোক, পদ্মা সেতুতে গিয়ে পিকনিক করে এলো।

৩| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৩৩

সালাহ উদ্দিন শুভ বলেছেন: ফিল্টার ফেলা পরের কথা, পাবলিক প্লেসেই বা কেন সিগারেট খাবে মানুষজন? আমি এই ব্যাপারটাই বুঝছিনা যে তার নিজের অ্যাকশনের জন্যে অন্যরা প্রথমত অস্বস্তি অনুভব করে, দ্বিতীয়ত শারীরিক ও মানুষিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। আরেকজন মানুষের ক্ষতি করা কি কোন অপরাধ নয়! পাবলিক স্পেসে সিগারেট নিষিদ্ধ কেন করা হবেনা এটাই আশ্চর্য্য লাগে।

৪| ২১ শে জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ৭:০৫

স্প্যানকড বলেছেন: যে জাতি বেশি দিন হয় নাই মাত্র শিখল হাগামোতার আগে টিস্যু লওয়া লাগে তাদের কাছে বিড়ির গোয়া কোন কিছু!তারপর তো আছে যেহানে খুশি ঐহানে দাঁড়াইয়া গরম জল ঢালা! আশেপাশের মানুষ দেহে লইজ্জা নাই!সো এ লইয়া এত চিন্তিত হয়ে লাভ নাই। ভালো থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.