নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আবু উযাইর

আবু উযাইর › বিস্তারিত পোস্টঃ

দুঃখিত শাহরুখ খান

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:৪৮

অমিতাভ বচ্চন যখন বেল বটম প্যান্ট পরে অভিনয় করে দুনিয়া কাঁপাচ্ছে, সে সময় আমরা শিশুকাল পেরিয়ে সবে কৈশোরে প্রবেশ করছি। তখন টিভি বলতে বিটিভি আর বিশেষ অ্যান্টেনায় ধরা পড়া ভারতীয় দূরদর্শন একমাত্র ভরসা। তবে বেল বটম অমিতাভের ছবি দেখার উপায় অবশ্য ভিসিপি বা ভিসিআরই ছিলো। কৈশোরের কোন একদিনে লুকিয়ে ভিসিআরে বেলবটম অমিতাভের সাথে কোন একটি গানে সুন্দর অবয়বের এক নায়িকাকে দেখে দেখে চোখ কান লাল হয়ে উঠলো। নায়িকা এমন অশালীন পোষাক পরেছিলো যে, উপস্থিত প্রায় সবাই লজ্জায় রাঙা হয়েছিলো। সে সময় জানলাম এই নায়িকার নাম পারভিন ববি। স্কুলে বন্ধুদের আড্ডায় সিনেমার আলোচনায় পারভিন ববি আলোচনায় এলো এবং কেউ একজন জানালো সে মুসলমান। আমরা সবাই খুব খুশী হয়েছিলাম, ভারতের মতো এমন যায়গায় হিট নায়িকা একজন মুসলিম-এমনটা ভেবে। একদিন জানতে পারলাম আগের প্রজন্মের সবচেয়ে সফল নায়ক দিলীপ কুমারও একজন মুসলিম, যার সত্যিকারের নাম ইউসুফ খান, খুব খুশী হয়েছিলাম সেদিনও।



কিছুকাল পরেই ভারতের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে মুসলিমদের মোটামুটি বড় ধরণের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হলো। আমির-সালমান-শাহরুখ এই তিন খান একের পর এক হিট ছবি উপহার দিতে শুরু করলো। সেই থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত এই তিন খানের জনপ্রিয়তা পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে। এদের সাথে সাথে সাইফ আলী খান, ফারদিন খান, জাভেদ আখতার, শাবানা আজমি, কবির খান এরকম অনেক মুসলিম নাম ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে নিজেদের আসন পাকা করে নিয়েছে। নিজ ধর্মের প্রতি স্বাভাবিক অনুরাগের কারণে এক সময় এসব মুসলিম ফিল্মী কলাকুশলীর জন্য অন্যরকম একটা গর্ববোধ হতো। তবে তাদের জীবনাচরণ কিংবা কিছু কর্মকান্ডে দুঃখ যে পেতাম না তা নয়। শাহরুখ, আমির, সাইফ আলী খানদের অমুসলিমের সাথে নির্বিকার সংসার যাপন, সালমান খানের একের পর এক অবৈধ প্রেমের স্ক্যান্ডাল, সমকামী ছবিতে শাবানা আজমীর সাবলীল অভিনয় আমাদের সময়কার অনেকেই মন থেকে মেনে নিতে পারিনি বলে খুব কষ্ট পেতাম। তবে ইসলামের জ্ঞান তখন আমার শূণ্যের কোঠাতেই ছিলো।



আল্লাহ্‌ যখন তাঁর অসীম করুণায় ইসলামের কিছু জ্ঞান দান করলেন তখন ভুল ভাংলো।



মক্কা বিজয়ের পর রাসুলুল্লাহ সাঃ যখন মদীনায় ফিরে এলেন তখন প্রায় সমস্ত আরব উপদ্বীপ ইসলামের ছায়াতলে এসে পড়েছে। এমনি সময় তায়েফের একটি গোত্রের প্রতিনিধিদল রাসুল সাঃ এর সাথে দেখা করে ইসলাম গ্রহণ করে। রাসুলুল্লাহ সাঃ নওমুসলিমদের প্রতি অত্যন্ত সহানুভূতিশীল ছিলেন। তিনি তাদের উপর এমন কিছু চাপিয়ে দিতেন না যা তাদের জন্য হঠাৎ অত্যন্ত কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। তিনি সে গোত্রের নেতৃত্বের ভার তাদের চলমান নেতাদের উপরই ছেড়ে দিলেন। এবার তারা রাসুলুল্লাহ সাঃ এর কাছে একটি দাবী করলো। তায়েফের সে গোত্রের কাছে আরব উপদ্বীপের সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ একটি মূর্তি ছিলো। মূর্তিটির জন্য পূর্বে আরবের অন্যান্য গোত্রের কাছে তাদের বিশেষ মর্যাদাও ছিলো। ফলে সমস্ত গোত্রের কাছে এই মূর্তিটি অত্যন্ত প্রিয়ও ছিলো। প্রতিনিধি দল রাসুল সাঃ কে অনুরোধ করলো, "ইয়া রাসুলুল্লাহ। আমরা দীর্ঘদিন ধরে প্রজন্মের পর প্রজন্ম এই মূর্তির উপাসনা করে এসেছি। সকলের কাছে তা অত্যন্ত প্রিয়ও ছিলো বটে। ইসলাম গ্রহণের পর আমরা আল্লাহ্‌র পথে ফিরে এসেছি, তবে আমাদের মন থেকে এর ভালোবাসা মুছে যেতে কিছুটা সময় লাগবে। তাই এখনই মূর্তিটি না ধ্বংস করে কিছুদিন পর করলে তা মানুষের মনের উপর প্রভাব কম ফেলবে"। রাসুলুল্লাহ সাঃ এর পবিত্র চেহারায় ক্ষোভের চিহ্ন ফুটে উঠলো। তিনি বললেন, "ইসলাম ও শির্ক কখনো একসাথে থাকতে পারে না"। তিনি সদ্য ইসলাম গ্রহণ করা আবু সুফিয়ান ও সে গোত্রের একজন নেতাকে দায়িত্ব দিলেন মূর্তি উৎখাতের জন্য। তাঁরা সে দায়িত্ব পালন করেন। মূলতঃ রাসুল সাঃ এর এই পদেক্ষেপই হলো ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্ট্যান্ড। যখন সে গোত্র অমুসলিম ছিলো তখন সেই মূর্তি ভাঙ্গার প্রশ্ন আসেনা কিন্তু যখন তারা ইসলামে প্রবেশের ঘোষণা দিলো, তখন তাদের ভেতর মূর্তিকে ভালোবাসার মতো শির্ক থাকবে তা কিছুতেই হতে পারে না।



শাহরুখ খান বিয়ে করেছেন একজন হিন্দু ধর্মলাম্বী মহিলা। তিনি প্রায়ই গর্ব করে বলেন, "আমার বাসায় মুসলিম রীতিতে উপাসনা করার জন্য যায়গা যেমন আছে, তেমনি ঘরের ভেতর মূর্তিও আছে। যে যেটা ইচ্ছা পালন করছে। আমার সন্তানদের আমি দুই ধর্মের মিশেলে গড়ে তুলছি। তারা ঈদে যেমন অংশ নেয়, দিওয়ালিও তেমনই পালন করে"। কোন ব্যক্তি যদি নিজেকে ধর্মহীন দাবী করে তাহলে তার এমন অবস্থান ঠিক আছে। তবে শাহরুখ খানের মতো নিজেকে মুসলিম দাবীদার কোন ব্যক্তির পক্ষে এমন স্ট্যান্ড নেয়ার কোন সুযোগ নেই। রাসুল সাঃ এর আদর্শের বাইরে গিয়ে কেউ যদি নিজের এমন অবস্থান জায়েজ বলে গর্ব করে, তাহলে সে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাবে।



কিছুদিন আগে ভারতের এনডিটিভিতে ইসলাম নিয়ে এক সেলিব্রেটি সংলাপের আয়োজন করা হয়েছিলো। শাহরুখ, সোহা আলী খান, কবির খান, করন জোহরদের সাথে এখানে অংশ নিয়েছিলেন ডাঃ জাকির নায়েকও। সমস্ত সংলাপে মাত্র মিনিটখানেকের জন্য সুযোগ পেয়েছেন ডাঃ জাকির। বাকী পুরো সময়েই সকল বক্তা নিজেদের খেয়াল খুশীমতো করা কাজকে ইসলামের নামে জায়েজ করার অপচেষ্টা করেছেন। শাহরুখ-সোহা আলীরা নিজেদের ঘরে পালন করা আচারকে ইসলামের তুলনায় শ্রেষ্ঠ বলে উঁচু গলায় জাহির করেছেন।



সাম্প্রতিক সময়ে শাহরুখ খান মুসলিম পরিচয়ের জন্য বিভিন্ন দেশের এয়ারপোর্টে তাঁর সমস্যার কথা উল্লেখ করেছেন এবং নিরাপত্তা নিয়ে শংকা প্রকাশ করেছেন। এরই সুযোগ নিয়ে পাকিস্তানের কুচক্রী মন্ত্রী রেহমান মালিক মন্তব্য করেছেন ভারত শাহরুখকে নিরাপত্তা দিতে পারছে না এবং তিনি শাহরুখকে পাকিস্তানের নাগরিকত্বের প্রস্তাব দেন। এর প্রেক্ষিতে এক প্রতিক্রিয়ায় শাহরুখ বলেন, "আমার সন্তানদের আমি বলি, "প্রথমে তুমি একজন ভারতীয় এরপর তোমার ধর্ম হলো মানবতা"। যদি তিনি নিজেকে মুসলিম পরিচয় না দিয়ে মানবধর্মের অনুসারী পরিচয় দিতেন, তাহলে সমস্যা ছিলো না এবং এ নিয়ে আলোচনারও দরকার ছিলো না। তবে সবসময় নিজেকে মুসলিম পরিচয় দিয়ে এমন কথা বলা ইসলামের সাথে বিশ্বাসঘাতকাতকতার শামিল।



শাহরুখ খানের এমন কথাবার্তা ও ইসলামের নামে অপবাদ প্রচারের বিষয়টি বাদ দিয়ে তার কাজ দিয়ে বিচার করলেও বলা যায়, অশ্লীলতা প্রসারের যে ভয়াবহ অপরাধ তিনি করে চলেছেন, তার জন্যও আল্লাহ্‌ দুনিয়া ও আখিরাতে কঠিন শাস্তির কথা ঘোষণা করেছেন। মনে পড়ছে নিকট অতীতে অশ্লীলতায় ভরপুর কোন একটি সিনেমা মুক্তির আগে শাহরুখ খান এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, "ইনশাআল্লাহ্‌ আমার অন্যান্য ছবির মতোই এই ছবি হিট হবে। আল্লাহ্‌ ইজ ভেরি কাইন্ড টু মাই ওয়ার্কস"। আল্লাহ্‌র পবিত্র নামের এমন অবমাননা এর চেয়ে আর কি হতে পারে?



নিজ ঘরে শির্ক ও কুফরের আশ্রয় দিয়ে নিজের সন্তানদের মানবতার ধর্মের বলে পরিচয় দেয়া তাঁর চমৎকার বক্তব্য যে কাউকে মুগ্ধ করতে পারে, তবে এ ধরণের অবস্থান ইসলামী প্রেক্ষাপটে হিপোক্রেসি ছাড়া আর কিছুই নয়। প্রশ্ন আসতে পারে এমন চমৎকার অসাম্প্রদায়িক অবস্থা কি ইসলাম চায় না? মূলতঃ এর উত্তর নিহিত আছে রাসুলুল্লাহ সাঃ ও ইসলামের ইতিহাসে। পৃথিবীর বুকে মানবতা যেখানে বিপন্ন হয়েছে মুসলিমরা সবার আগে তার পাশে দাঁড়িয়েছে। মুসলিম হোক বা অমুসুলিম হোক, নির্যাতিত বা অসহায়ের জন্য জীবন বিলিয়ে দিতেও কুন্ঠাবোধ করেনি মুসলিমরা। আজ শাহরুখ খানরা গালভরা কথাই শুধু বলে যেতে পারে, তবে বিপন্ন মানবতার ডাকে একটি রাত নির্যাতিত যে কোন জনপদের সাহায্যার্থে কাটানোর সৎসাহস এদের নেই। নিজেকে মুসলিম পরিচয় দিয়েও কাশ্মীর, আফগানিস্তান, চেচনিয়া, ফিলিস্তিনের মতো বিশ্বব্যাপী তাঁর লক্ষ লক্ষ নির্যাতিত মুসলিম ভাইয়ের পাশে একটু সময়ের জন্য দাঁড়ানো কিংবা তাদের জন্য নিজের অগাধ সম্পদ থেকে কিছু ব্যয় করার মানসিকতা এদের নেই। হয়তো ক্যান্সারে আক্রান্ত কোন একজন ব্যক্তির জন্য অশ্লীল কনসার্টে নেচে কিংবা কোন চ্যারিটি হাউজে নিলামে তোলার জন্য নিজের কোন ছবিতে ব্যবহৃত টি শার্ট দান করে মানবতার মহান সেবক সেজে বসেন এই শাহরুখ-সালমানেরা। আড়ালে থেকে যায় ঘরের মায়া আর সম্পদের টান উপেক্ষা করে নির্যাতিত মানুষের পাশে দাঁড়ানো অচেনা সব মানুষগুলোর মহানুভবতার ইতিহাস।



ইসলাম গ্রহণ করা বা না করা, নিজেকে মুসলিম পরিচয় দেয়া বা না দেয়া যে কারো ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবে নিজেকে ইসলামের অনুসারী বা মুসলিম দাবী করে সর্বধর্ম বা মানবধর্মের গুন গাইলে তা পরিষ্কার বিশ্বাসঘাতকতা বা মুনাফেকী। ইসলাম হলো তাই, যা আল্লাহ্‌ কুরআনে বলেছেন এবং যা রাসুল সাঃ বলে বা করে গেছেন। কারো মনমতো বা মনগড়া বিষয় ইসলামের নামে চালালে তা হবে মিথ্যাচার, তা শাহরুখের মতো বড় নামধারী সেলিব্রেটি করুক এমনকি নামধারী আলিমই করুক না কেন। আমরা শুধু বলতে পারি- দুঃখিত শাহরুখ, তোমার ইসলাম ইসলাম নয়।



আল্লাহ্‌ আমদেরকে এদের গালভরা বুলি আর ভয়াবহ আদর্শ থেকে আশ্রয় দিন।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:৫৬

তামিম ইবনে আমান বলেছেন: পিএইচডী করছেন মনে হল। সাবজেক্ট কি? "শাহরুখ এবং ইসলাম" ?

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:১১

আবু উযাইর বলেছেন: আপনার গায়ে লাগছে কেন বুঝলাম না।

হ্যাঁ। শাহরুখ ও ইসলাম।

২| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:১৯

ছোট মির্জা বলেছেন: যুক্তিসংগত লেখা। ভাল লাগল।

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:২৪

আবু উযাইর বলেছেন: ধন্যবাদ

৩| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:৪২

শার্লক বলেছেন: যারা বলে আমার ধর্ম মানব ধর্ম ওদের থেকে ভন্ড দুনিয়াতে আর কেউ নাই।

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:৫০

আবু উযাইর বলেছেন: শতভাগ সত্য।

৪| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:৪৯

হুমায়ুন তোরাব বলেছেন: jahara omuslim jatir unusoron kore tara oder dolvukto..
(sunane abu dawud)..
insallah aj teke shahrukh khaner movie dakha off krlam.

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:৫২

আবু উযাইর বলেছেন: আল্লাহ্‌ আপনার সাথে থাকুন।

৫| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:৫০

মুহাই বলেছেন: শাহরুখরা যে নামধারি মুসলিম এটা পাগলেও বুঝে ।আপনি এতোদিনে বুঝলেন ।

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:৫৪

আবু উযাইর বলেছেন: আবেগ অনেক সময় অপ্রিয় সত্যিটা বুঝতে দেয় না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.