![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেশে একটা বহুলশ্রুত কাহিনী আছে 'ইসলামী নাম' নিয়ে। কিয়ামাতের দিন আল্লাহ্ একটি লোককে জাহান্নামের যোগ্য হিসাবে পেলেন। তার সারা জীবনে সৎ কাজ খুঁজে পাওয়া কষ্টকর হয়ে দাঁড়াল, অথচ সে একজন মুসলমান পরিবারে জন্মেছে। অনেক খুঁজেও যখন তার এমন কোন কাজ পাওয়া গেল না যা তাকে জান্নাতে নিতে পারে, তখন আল্লাহ্ ফেরেশতাদের বলবেন, "দাঁড়াও, তার নামটা কি বল"। ফেরেশতারা বলবেন, "ইয়া আল্লাহ্, তার নাম হলো ............(কোন সুন্দর ইসলামী নাম)"। আল্লাহ্ তখন বলবেন, "যাও, তাকে আজ আমি এই নামের উসিলায় জান্নাতে দিয়ে দিলাম"।
এই একটিমাত্র বানোয়াট কাহিনী শোনার ফলে মুসলিম পরিবারে জন্ম নিয়ে বা একটি ইসলামী নাম নিয়ে এদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ জান্নাতের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে বসে আছে। শির্কের মতো ভয়াবহতম অপরাধ, যার কোন ক্ষমা হবে না বলে আল্লাহ্ ওয়াদা করেছেন এবং অবধারিতভাবে যার পরিণতি হবে জাহান্নাম-এমন শির্কে ডুবে জীবন পার করিয়ে দিয়েও শুধুমাত্র মুসলিম পরিবারে জন্ম নেয়া বা মুসলিম নাম নিয়ে জান্নাতে যাবার ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে আছে অগণিত মানুষ। শির্ক ছাড়াও নির্বিকারভাবে সুদের সাথে জড়িয়ে থাকা, তাগুতের পক্ষ নিয়ে যুদ্ধ করা, আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুলের অবমাননা করা ইত্যাদি যে সকল কাজের জন্য আল্লাহ্ চিরস্থায়ী জাহান্নামের কথা ঘোষণা করেছেন এগুলোতে জড়িয়ে জীবন পার করে দিয়েও জান্নাত নিশ্চিত ধরে নেয় অনেক মানুষ।
মদীনাতে রাসুলুল্লাহ সাঃ এর সবচেয়ে ভয়ংকর গুপ্ত শত্রুটির নাম ছিলো আবদুল্লাহ বিন উবাই বিন সুলুল। এছাড়াও তাঁর বিরুদ্ধে অশ্লীল আর কুৎসা রটনার প্রধান নামগুলো ছিলো কা'ব বিন আশরাফ, আবু রাফে। এরা দুজন ছিলো দুটি ইয়াহুদি গোত্রের ধনাঢ্য ও ক্ষমতাবান কবি। ধরা যাক এরা তিনজন বর্তমান সময়ে এসে পড়েছেন এবং এরা কাজকর্মে আগের মতোই ইসলাম ও রাসুলের বিরোধিতায় দক্ষতা দেখিয়ে যাচ্ছেন। কেউ একজন জিজ্ঞেস করল, "ভাইজান, আপনার নাম কি?" এরা বলল, "আমি আবদুল্লাহ, আমি আবু রাফে আর আমি কা'ব বিন আশরাফ"। নির্ধিধায় যে কেউ ভেবে নেবে, "ওহ, আপনি তাইলে মুসলিম"। অথচ নাম মুসলিমের মতো শোনালেই যে কেউ ইসলামে প্রবেশ করে না এরা হলো এর সত্যিকার উদাহরণ।
মুসলিম শব্দের অর্থ হলো আল্লাহ্র কাছে আত্মসমর্পণকারী ব্যক্তি। জীবনের প্রতিটি স্টেপ বা কাজে আল্লাহ্ নির্ধারিত সীমা মেনে চলার ব্যাপারটি মেনে নিয়ে সে অনুযায়ী যিনি চলবেন তিনিই হলেন মুসলিম। তার মানে কি এই যে মুসলিম মানেই সকল দোষ ত্রুটির ঊর্ধ্বে? না, তা নয়। বরং যখনই কোন পদস্খলন ঘটবে তখন তা স্বীকার করে নিয়ে আল্লাহ্র কাছে ক্ষমা চেয়ে ফেলতে হবে। ক্ষমা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আল্লাহ্ স্বয়ং। তবে অন্যায় করেও যখন কেউ তা কোন অন্যায় বলে মনে করে না কিংবা একে ন্যায় বলেই মনে করে, তাহলে তা আল্লাহ্র নির্ধারিত সীমার স্পষ্ট লংঘন। আল্লাহর ঘোষণা করা অন্যায়কে ন্যায় বলে ঘোষণা করা এক ধরণের শির্ক। এর জন্য ক্ষমা না নিয়ে আল্লাহ্র কাছে ফিরে গেলে অবধারিতভাবে যার পরিণতি হবে আগুন।
বর্তমানের এই ফিতনার যুগে আল্লাহ্র বিধি বিধানকে অবজ্ঞা করেও নিজেকে ইসলামের উপর থাকার দাবী করার অপচেষ্টা একটি স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আল্লাহ্ মুসলিম পুরুষ ও নারীর জন্য পর্দার বিধান দিয়েছেন কুরআনে। কেউ এই বিধান না মানলে তা একটি বড় ধরণের অপরাধ। না মেনে থাকলে বুঝতে পেরে এর থেকে ফিরে আসাই হলো মুসলিমের বৈশিষ্ট্য। তবে কুরআনের এই বিধানকে অবজ্ঞা করা ও একে প্রগতিশীলতার পক্ষে বাধা হিসাবে মনে করা কুফর ও শির্কের মতো অপরাধ। আর এমন কাজই নির্দ্বিধায় করে নিজেকে মুসলিম হিসাবে জাহির করার দুঃসাহস দেখাচ্ছে অনেকে। গান-বাজনাকে আল্লাহ্ নিষিদ্ধ করেছেন। রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন "এমন এক সময় আসবে, যখন আমার উম্মতের ভেতর একটি দল গান-বাজনা, মদকে হালাল বলে সাব্যস্ত করবে"। আজ একই মঞ্চে কুরআন তিলাওয়াত করে এরপর পুরুষ ও নারীদের সম্মিলিত কন্ঠ্যে গান খুব স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রসঙ্গতঃ মনে পড়ছে কবি আবু জাফরের কথা। তিনি ছিলেন বিখ্যাত লালন সঙ্গীত শিল্পী ফরিদা পারভীনের স্বামী এবং তিনি ছিলেন ভূতপূর্ব নাস্তিক। এক সময় আল্লাহ্র কৃপায় তিনি ইসলামে ফিরে আসেন। তাঁকে একবার প্রশ্ন করা হয়েছিল ফরিদা পারভীনের সঙ্গীতের ব্যাপারে। তিনি বলেছিলেন, "আল্লাহ্ কুরআনে নারীদের স্বরকে নীচু রাখতে বলেছেন, গানতো অনেক দূরের ব্যাপার"। গানের ব্যাপারে মুসলিমের স্ট্যান্ড এমনই হওয়া উচিৎ। পর্দা ও গানের মতো একই কথা প্রযোজ্য বন্ধুত্ব, প্রতিবাদ, দ্রোহ ইত্যাদির নামে নারী-পুরুষের অবাধ সম্পর্ক, হাত ধরাধরি করে তরুণ-তরুণীদের মানব বন্ধন ইত্যাদির ক্ষেত্রেও।
কেউ মুসলিম না হলে বা নিজেকে ইসলামের বাইরে দাবী করলে তাদের কথা আলাদা। তবে যারা নিজেদের মুসলিম বলে দাবী করে বা মুসলিম বলে পরিচয় দেয়, কুরআনে আল্লাহ্ স্পষ্টভাবে তাদের জন্য সীমা বেঁধে দিয়েছেন। আর তাই এই সীমা মেনে চলে নিজেকে অনন্ত জীবনের পথে প্রস্তুত করা প্রতিটি মুসলিমেরই কর্তব্য।
সীমানা না চিনে যে কেউ ভুল পথে যেতে পারে, তবে মুসলিমের সে সুযোগ নেই। মুসলিম তার সীমা ও সীমানা চিনে এবং তা মেনে চলে।
০৭ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ৯:৪৯
আবু উযাইর বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
০৭ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ৯:৪৪
িট.িমম বলেছেন: ধন্যবাদ অনেক সুন্দর একটি পোষ্ট করার জন্য।