নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

i blog/therefore i exist

অচিন্ত্য

"জগতে আনন্দযজ্ঞে আমার নিমন্ত্রণ"

অচিন্ত্য › বিস্তারিত পোস্টঃ

‘ক্ষ’র ‘আমার সোনার বাংলা’ বিষয়ক

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৮:২৪

‘ক্ষ’ নামের গানের দলের কাজটির একটি এক কথার বিবরণ এমন দাঁড়ায়- দলটি গানটির সাথে অপেক্ষাকৃত কম প্রচলিত যন্ত্রানুষঙ্গ প্রয়োগ করেছে; আর গায়নে স্বরবিতানে নির্দেশিত স্বরলিপি কিছুটা এড়িয়ে গেছে। কাজটি নিয়ে অনেকের মত আমারও কিছু বক্তব্য তৈরি হয়েছে।



গানটির দু’টি প্রধান পরিচয়; এটি একটি রবীন্দ্রসঙ্গীত, এটি আমাদের জাতীয় সঙ্গীত। রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশনে সম্প্রতি একটি নতুন মাত্রা যোগ হচ্ছে। রবীন্দ্রসঙ্গীতের ট্র্যাডিশনাল সাঙ্গীতিক আবহে নিরীক্ষামুখী সংযুক্তি সমসাময়িক কানে সহনীয় হয়ে উঠেছে বলে মনে হয়। বিষয়টি নিয়ে আমিও উদ্বেল। আমার মনে হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এখনকার মানুষ হলে তিনি নিজেও একই কাজ করতেন। আর জাতীয় সঙ্গীতের আলাদা একটি জায়গা অবশ্যই আছে। তবে এটি প্রযোজ্য হওয়া উচিত তখনই যখন তা জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে পরিবেশিত হচ্ছে। আলোচ্য ক্ষেত্রে মনে হয় তা হচ্ছে না।



একটি গানের পরিবেশনাকে দু’টি সাব টপিকে ভাগ করে দেখা যেতে পারে; এক- গীত এবং তার গায়ন এবং দুই- তার যন্ত্রানুষঙ্গ। একেক সঙ্গীতায়োজক যেমন নিজের রুচি-বুদ্ধি-সাধ্য অনুসারে নিজেদের মত ভিন্ন ভিন্ন যন্ত্রানুষঙ্গ প্রয়োগ করে থাকেন, তেমনি একই গান একেক গায়েন নিজ রুচি-বুদ্ধি-অধিকার অনুসারে নিজের মত করেই গেয়ে থাকেন। তবে, যন্ত্রানুষঙ্গে যতটা স্বাধীনতা শোভন, গায়কীতে ততটা শোভন কিনা এ বিষয়ে আমার সন্দেহ আছে। তার কারণ, যন্ত্রানুষঙ্গ একটি স্বতন্ত্র সৃষ্টি, যা গীতটির সাথে সমান্তরাল বাদনে একটি যৌথ পরিবেশনার জন্ম দেয়। অপরদিকে গায়ন পুরোপুরি স্বতন্ত্র সৃষ্টি নয়। এটি একটি পূর্বতন সৃষ্টির ঘোষণা (পারফরম্যান্স)। এক্ষেত্রে যা ঘোষণা করা হচ্ছে সেই বিষয়টি মনে হয় অটুট থাকা উচিত। সৃষ্টিশীলতায় মনযোগ দেওয়া যেতে পারে উপস্থাপনকৌশলে।



বাঙালির বাংলা গানের বিশেষত্ব এখানে যে প্রথা আয়ত্ব করেও সে প্রথা মানে নি কখনো। এর প্রেরণা এসেছিল গীতসাহিত্যের সমৃদ্ধ ক্ষেত্র থেকে। কারণ বাংলা সাহিত্য এবং বাংলা গানের শুরুটা ছিল গীত এবং সাহিত্যের এক অবিচ্ছেদ্য যৌথ প্রয়াস। রামপ্রসাদ তাঁর সুরে ‘জাত রক্ষা’ করেন নি। তাঁর সুরে একই সাথে কীর্তন সহ আঞ্চলিক অন্যান্য লোক সুর এবং দরবারী আনুকূল্যে বিকশিত রাগসঙ্গীতের সৌকর্য সমাহিত হয়েছিল। এবং আগে পরে সর্বদাই বাংলা গানে প্রথার স্খলন ঘটে এসেছে। বাংলা গানকে কখনো প্রথার বাঁধন বেঁধে রাখতে পারেনি। “যখন যে রূপবন্ধ অবলম্বনেই বাংলা গানের একটি ধারা গড়ে উঠেছে শীঘ্রই বাঙালি রচয়িতাগণ তা থেকে মুক্তি খুঁজেছেন।... বাঙালির সাঙ্গীতিক অর্জন তখনই বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত হয়ে উঠেছে, যখন বহিরাগত ক্রিয়াপর সাঙ্গীতিক উচ্ছ্বাস সমূহকে তাঁরা আঞ্চলিক ভাবগভীরতার সঙ্গে সমন্বিত করতে সমর্থ হয়েছেন” (বাংলা গানের বিবর্তন- করুণাময় গোস্বামী)। তবে একথাও ভুললে চলবে না যে পূর্বতন সৃষ্টিই নূতনের প্রেরণা। জয়দেবের ‘গীতগোবিন্দ’ যেমন বড়ুচণ্ডীদাসের ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ এর অন্যতম প্রধান অনুপ্রেরণা, তেমনি ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ ও পরবর্তীতে বৈষ্ণব পদাবলীর প্রেরণা।



সতর্কতার সঙ্গে খেয়াল করার বিষয় হল এই যে, উত্তরসূরীগণ পূর্বসূরীগণ থেকে একটু একটু করে স্বতন্ত্র হওয়ার চেষ্টা করেছেন এবং হয়েছেন। কিন্তু এই স্বাতন্ত্র্য তাঁরা প্রয়োগ করেছেন নতুন সৃষ্টিতে। পূর্বতন সৃষ্টিসমূহ চর্চায় এবং পরিবেশনে তাঁরা ধ্রুপদী মনোভাব বজায় রাখতে কুণ্ঠিত হন নি। ক্ষেত্রবিশেষে তাঁরা পূর্বসূরীগণের কাছে থেকে ধার করে নিজেদেরকে সাজিয়েছেন। অবশ্য একটি ক্ষেত্রে এর ব্যত্যয় ঘটতে দেখা যায়। ‘গীতগোবিন্দ’ রচনার পরপরই দক্ষিণ ভারতে এর অনুশীলন ব্যাপক বিস্তার লাভ করে। নানা কারণে উত্তর ভারতে এর ধারাটি লুপ্ত হয়। জয়দেবের মৃত্যুর প্রায় দুই শত বছর পর মেবারের রাণা কুম্ভ ‘গীতগোবিন্দ’ তে নতুন করে সুরযোজনা করেন। এর উদ্দেশ্য ছিল উত্তর ভারতে তার প্রচলন করা এবং এই উদ্দেশ্য শতভাগ সফল হয়েছিল। ‘গীতগোবিন্দ’র পদগানকে আরেকবার নতুন করে বিন্যাস করেছিলেন ঊনবিংশ শতকের সুপ্রসিদ্ধ সঙ্গীতগুণী ক্ষেত্রমোহন গোস্বামী। এছাড়া এরূপ নজির আর আছে বলে আমার জানা নেই।



আলোচ্য গানটির সঙ্গীতানুষঙ্গে যে নবতর বাদন প্রয়াস তা নিঃসন্দেহে সুপ্রাচীন কাল থেকে চলে আসা বাংলার সেই অনিবার্য সাঙ্গীতিক প্রবণতারই চিহ্ন যা কখনো প্রথার বেড়া মানে নি। তবে গীতটি গায়নের ক্ষেত্রে যথেস্ট ওনেস্ট থেকে গাওয়া হল কিনা এ বিষয়ে আমি নিঃসন্দেহ নই। আমার মনে হয় আমাদের নিরীক্ষাধর্মী প্রয়াসসমূহ আনকোরা সাঙ্গীতিক উদ্যোগেই বেশি মানানসই এবং সেখানেই তাকে স্বাগত।

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৮:৪২

এক্সট্রাটেরেস্ট্রিয়াল স্বর্ণা বলেছেন:
কিছুই তো বুঝলাম না। এত কঠিন ভাষা।

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৮:৫৩

অচিন্ত্য বলেছেন: অনিচ্ছাকৃত জটিলতার জন্য দুঃখিত। বলতে চেয়েছি -
গানটির সাথে যে নতুন ধরণের বাদন, তা বেশ ভালই লেগেছে। তবে গানটি গাওয়ার ক্ষেত্রে আরো স্বরলিপিঘনিষ্ট হলে আরো ভাল লাগত। ইন ফ্যাক্ট, গানের রচয়িতা গানটিকে যেভাবে কল্পনা করেছেন, যথাসম্ভব তা মেনে নিয়ে গাওয়াটাকেই শ্রদ্ধার চোখে দেখি। গানটি শুরু করা হয়েছে সঞ্চারি (মাঝ) থেকে। পুরনো গান নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট না করে নতুন গান নিয়ে তা করাটাই মনে হয় বেশি শোভন।
ধন্যবাদ

২| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৮:৪৭

হুমায়ুন তোরাব বলেছেন: sorna apai bujhe nai,soja koira lekho..

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৮:৫৯

অচিন্ত্য বলেছেন: হাহ হাহ। হ্যাঁ, আসলে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে জটিল না করে ফেলি সেই ভয়ে বেশি ব্যাখ্যা দিলাম না। তবে এটুকু বলি যে, বাংলা গানের ইতিহাস থেকে দেখা যায় যে সে সব সময় প্রথাকে ভেঙে চুরে নতুন প্রথা তৈরি করেছে। তবে রচয়িতাগণ পূর্বের গানগুলো নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট না করে নতুন কাজ নিয়েই বেশি এক্সপেরিমেন্ট করেছেন।

আরেকটি কথা একটু উল্লেখ করি, পবন দাশ বাউল যখন স্যাম মাইলস এর সাথে 'আসল চিনি' অ্যালবামে দেশি গানের সাথে বিদেশি যন্ত্র ব্যবহার করেছিলেন, অনেকে বিরূপ সমালোচনা করেছিলেন। পবন দাশ বাউল বলেছিলেন, "গাওয়ার প্রতি ওনেস্ট থাকলে নতুন যন্ত্র তাকে নষ্ট করে না, বরং নতুন মাত্রা যোগ করে।" কথাটা আমার মনে গেঁথে যায়।

'ক্ষ'র গানে নতুন ধরণের বাদন বেশ ভাল লেগেছে। কিন্তু গায়নের ক্ষেত্রে আরো 'ওনেস্ট' হলে আরো ভাল লাগত। এই আরকি

ধন্যবাদ

৩| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:১৬

সময়একাত্তর বলেছেন: নিরীক্ষার পেছনের উদ্দেশ্যই আসল। মূল থেকে বেশি দূরে না সরে বা বিকৃতি না ঘটিয়ে নতুনভাবে উপস্থাপনে ক্ষতি কি?

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৮:৩৭

অচিন্ত্য বলেছেন: তেমন ক্ষতি আছে বলে মনে হয় না। ধন্যবাদ।

৪| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:২৬

রেজোওয়ানা বলেছেন: বিশ্লষেণ চলুক....

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৮:৩৭

অচিন্ত্য বলেছেন: সময় করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ

৫| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:১৪

আমি বন্য বলেছেন: আমার কাছে ভালোই লাগছে.। তারা তাদের নিজস্ব ভংগিতে গেয়েছে । জাতীয় সঙ্গীত কে অন্যভাবে উপ্থাপন করেছে ।ওনেক ভালো হয়েছে। আমাদের তাদেরকে appreciate করা উচিত।

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৮:৩৮

অচিন্ত্য বলেছেন: ধন্যবাদ

৬| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:৩২

নস্টালজিক বলেছেন: ক্ষ-এর ভোকাল চমৎকার! ভালো লাগসে আমার!

জ্যাজ কম্পোজিশন এমন আহামরি কিছু মনে হয়নাই! ক্ষ-এর এই গান এত হাইপ পাওয়ার মত কোনো গানই না! ইট ওয়াস জাস্ট আ গুড এফোর্ট!


রবীন্দ্র সঙ্গীত নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট ভালো লাগে! হারমোনিয়াম দিয়ে রবীন্দ্র সঙ্গীত এর যেমন আবেদন আছে, তেমনি ব্লুজ বা পিওর জ্যাজি কম্পোজিশন-এ রবীন্দ্র সঙ্গীত অন্য মাত্রা পাওয়ার কথা!


শুভেচ্ছা, অচিন্ত্য!

পোস্ট ভালো লাগলো!

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৮:৩৯

অচিন্ত্য বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ সক্রিয় পাঠ এবং ভাল লাগার কথা জানানোর জন্য।
শুভ সকাল

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.