নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অ্যা জার্নি বাই ট্রে’ন
সেবার শীতের ছুটিটা সিলেটে কাটল। আরিফ সাহেবের বাবার ছিল বদলীর চাকরি। সেই সূত্রে অনেক জায়গায় থাকতে হয়েছিল। আরিফ সাহেবের জন্ম এবং শৈশব-কৈশোর সিলেটেই। সেজন্যই বোধ হয় জায়গাটা তাকে ভীষণ টানে। খুচরো কিছু বন্ধু-বান্ধব এখনো সেখানে আছে। ফেসবুকের গুণে তাদের সাথ যোগাযোগও আছে। তাদেরই সৌজন্যে ছোট্ট পাহাড়ী শহরটাতে সেবারের শীতের ছুটিটা উষ্ণ অনুভবে জমে উঠেছিল।
ফেরার পথটা পারাবতের শোভন শ্রেণীর একটা কামরায়। আরিফ সাহেব ডিপার্চারের বেশ কিছুটা আগেই চলে এসেছিলেন। লাগেজ গুছিয়ে নিয়ে একটা ম্যাগাজিনে চোখ বুলাচ্ছিলেন। ট্রেন ছাড়তে মিনিট দশেক। চশমা পরা লম্বাটে কাঁচাপাকা চুলের এক ভদ্রলোক পাশে এসে বসলেন। প্রায় সমবয়েসী সহযাত্রীকে পেয়ে ভালই লাগল। গল্পগুজব করা যাবে।
বিকালটা ছিল হালকা মেঘলা। হুইসেল দিয়ে ট্রেনটা হাঁটা গতিতে চলতে শুরু করল। সহযাত্রী মুখ খুললেন। তিনি একেবারে খাস পশ্চিমের কায়দায় প্রথমে আবহাওয়া সম্বন্ধে দু’একটা কথা যেন বা আনমনেই বলতে লাগলেন। ফুরফুরে এক ছুটি কাটিয়ে আরিফ সাহেব এমনিতেই গপ্পোবাজির মুডে ছিলেন। সৌজন্যের উসিলায় যোগ দিলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই মেঘ কেটে গিয়ে ঝলমলে রোদ। ট্রেনটা জগিং মেজাজে স্টেশন ছাড়ল।
ভদ্রলোক একটা ব্যাংকে চাকরি করতেন। অবসরে গেছেন বছর খানেক। বছরের বেশিরভাগ সময় ঢাকায় নিজের বাড়িতেই থাকেন। এই সময়টাতে দেশের বাড়ি যান। দেশের বাড়ি সিলেট। আরিফ সাহেব খেয়াল করলেন ভদ্রলোকের শোনার চেয়ে বলার দিকে আগ্রহ বেশি। তাই সই। জানালায় ছোট ছোট টিলার ওপর চনমনে রোদ পড়েছে। পেছনে অপার্থিব নীলিমা! কথার গাড়ি ঝকাঝক ঝকাঝক জগিং থেকে এক সময় রানিং হল।
প্রকৃতির গুণেই না অন্য কোন কারণে জানি না ভদ্রলোক একটু বেশিই প্রাণখোলা হয়ে উঠলেন। কথায় কথায় তার ইয়ং এইজের কিছু অপকর্মের কথা ক্রমশ ফাঁস করে দিতে লাগলেন। আশ্চর্য ! এই ক্ষণিকের পরিচয় ! নাকি এনশিয়েন্ট মেরিনারের মত কনফেশনের মধ্য দিয়ে এক ধরণের মেন্টাল রিলিজ ? জানি না।
জানেন আমি যখন চাকরি নেই তখন...তখন আমার ঠিক চাকরির বয়স হয় নি। মানে, আমি আসলে চাকরিটা পেয়েছিলাম একটা স্পেশাল রেফারেন্সের মাধ্যমে। তখনো আমার পড়াশুনা শেষ হয়নি। বয়স কম হওয়াতে আমার মেট্রিক সার্টিফিকেটটা দিলাম বদলে। ব্যাস।
শুনতে মজাই লাগছিল।
আপনি তো সেই রকম ভাই।
সেই রকমের তো এটা ছিল মাত্র সূচনা। চাকরির প্রথম মাসেই আমাকে পাঠানো হয় একটা সুপারভিশনে। গিয়ে দেখি সেই ব্রাঞ্চে অনিয়মের একশেষ। ব্রাঞ্চ ম্যানেজারের সাথে গোপন আঁতাত করে বেশ ভাল রকমের একটা অ্যামাউন্ট। হাহ হাহ। সেবারের ঈদের শপিংটা যা হয়েছিল। আরিফ সাহেব খুশি হবেন না রাগান্বিত হবেন নিশ্চিত হতে পারলেন না। আসলে লোকটি কোন মুডে গল্পটা করছেন সেটা বোঝা যাচ্ছে না। যাক, অত না ভাবলেই হয়। যাত্রাপথটা বোরিং যাচ্ছেনা। দ্যাট’স অল।
আরেকবার হল কী, নেত্রকোনায় একটা নতুন ব্রাঞ্চ উদ্বোধন উপলক্ষে আমাকে তিন দিনের ট্যুরে পাঠানো হয়। সব ঠিকঠাকমতই শেষ হল। তবে, অফিসিয়াল কাগজপত্রে লিখতে গিয়ে আমার একটা ছোট্ট ভুল হয়ে গিয়েছিল। সেই ভুলের মাশুল যদি আমাকে দিতে হত তাহলে একটা অঙ্ক আমাকে জরিমানা দিতে হত। আমি কৌশলে সেই ভুলের ভার সেই নতুন ব্রাঞ্চের এক কর্মকর্তার ঘাড়ে চাপিয়ে দেই, হাহ হাহ। তাকে কিন্তু প্রায় দশ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হয়েছিল।
বলেন কী ! লোকটাকে বেশ ইন্টারেস্টিং লাগছিল। তিনি আরো কয়েকটা ঘটনার কথা বললেন। সবই এই ধরণের। আরিফ সাহেবের মজাই লাগছিল। সন্ধ্যা হয়ে এসেছিল। চারপাশটা আস্তে আস্তে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছিল। তারারা একটা দু’টা করে উঁকি দিতে আরম্ভ করল। ট্রেনটা কোন একটা কারণে একটা স্টেশনে বেশ কিছুক্ষণ হল দাঁড়িয়ে আছে। ছোট্ট স্টেশন। কেউ কেউ নেমে একটু হাওয়া খেয়ে নিচ্ছেন। মফস্বল এলাকা। এখানে জীবন ঢাকার মত বদ্ধ নয়। এখানে হাওয়া এত দূষিত নয়। এখানেও ঘরবাড়ি আছে কিন্তু ঢাকার মত ঘিঞ্জি নয়। এখানেও অফিস আছে, লোকজন আছে, সুপারভিশন হয়, নতুন ব্রাঞ্চ হয় এখানেও।
ট্রেন আবার চালু হয়েছে। ঝগর ঝক ঝগর ঝক। সহযাত্রীটি গেলেন কোথায় ? হায় হায়। ট্রেন তো চলতে শুরু করেছে। পেছনে সামনে ডানে বাঁয়ে নাহ কোথাও তো দেখা যাচ্ছে না। তিনি কি নেমেছিলেন ? খেয়াল করা হয় নি। কী করা যায় ভাবতে ভাবতে তিনি টয়লেট থেকে বেরিয়ে এলেন। যাক। আরিফ সাহেব নিশ্চিন্ত হলেন। লোকটিকে বেশ পছন্দ হয়ে গেছে তার। যৌবনে কমবেশি সবারই কিছু দাগ থাকে। কয়জন তা অকপটে স্বীকার করতে পারে ?
আপনার ধৈর্যচ্যুতি না হয়ে থাকলে আরেকটি ঘটনার কথা বলতে চাই। আরিফ সাহেব আসলে শুনতেই চাচ্ছিলেন। শুনতে বেশ মজা লাগছিল। সায় দেওয়াতে ভদ্রলোক আবার শুরু করলেন।
সেবার কয়েকজন অফিসারকে প্রমোশনের জন্য সিলেক্ট করা হল। আমার ব্যাচের আটজন আছে অথচ লিস্টে আমি নেই। মনটা খারাপ হয়ে গেল। তখনো সার্কুলার হয় নি। কাঁচা লিস্টটা এমডি স্যারের হাতে। পরের কর্মদিবসে সার্কুলার হয়ে যাবে। পরের দিন ছিল শুক্রবার। আমি দুপুরের পর তার বাড়ি গিয়ে উপস্থিত হলাম। পরের কর্মদিবসে লিস্টের একটা নাম বাদ দিয়ে সেখানে আমার নাম ঢোকানো হয়। হৈচৈ হয়েছিল খুব। কিন্তু সেই অপরাহ্নে আমার দেওয়া উপঢৌকনের তলে সেই হৈচৈ চাপা পড়ে গিয়েছিল। তারপর যেন কিছুটা আপন মনেই বলে উঠলেন রনিটা’র আর কখনোই প্রমোশন হয় নি।
-রনি ? পুরো নাম ?
-গোলাম দস্তগীর রনি
-দেশের বাড়ি ?
- নড়াইল
-কেন ?
আরিফ সাহেব কোন কথা বললেন না। তার মুখ ধীরে ধীরে গম্ভীর হয়ে উঠল। সহযাত্রীটি খেয়াল করেন নি হয়তো। তিনি আবার তার গল্পের ভাণ্ডার খুলতে যাচ্ছিলেন। আরিফ সাহেব ঠিক উপভোগ করতে পারলেন না। তার হঠাৎ মনে হল তিনি পুরো জার্নিটা একটি অত্যন্ত বাজে লোকের সাথে কাটিয়েছেন।
ট্রে’ন রানিং থেকে আবার জগিং মুডে। জগিং থেকে হাঁটা গতি। তারপর থেমে গেল। অনেক রাত হয়েছে। স্টেশনটা তবু জেগে আছে। আরিফ সাহেব ট্রে’ন থেকে নামলেন। সহযাত্রীটি বিদায় সম্ভাষণ জানালেন। আরিফ সাহেব কোন প্রত্যুত্তর করলেন না এবং একবারের জন্যও তার দিকে না তাকিয়ে প্ল্যাটফর্ম ছাড়লেন।
১৩ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১০:০০
অচিন্ত্য বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ ডিয়ার হাসান ভাই। আপনার অনুপ্রেরণা আমার জন্য অনেক বড় বিষয়।
২| ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১০:২৪
অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: ছিমছাম ছোট গল্প। পড়তে ভালো লেগেছে।
সুপ্রভাত
১৪ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ৯:৪০
অচিন্ত্য বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। ভাল থাকুন
পূজার শুভেচ্ছা, ঈদ মোবারক
৩| ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ২:৩২
আজ আমি কোথাও যাবো না বলেছেন: ভালো লাগলো পড়ে।
১৪ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ৯:৪৩
অচিন্ত্য বলেছেন: ধন্যবাদ।
আপনার নিকটি অত্যন্ত সুন্দর !
৪| ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১:৫৪
প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: সুন্দর লেগেছে গল্পটা।
১৪ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ৯:৪৪
অচিন্ত্য বলেছেন: ধন্যবাদ ডিয়ার প্রোফেসর।
৫| ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১১:১২
অস্পিসাস প্রেইস বলেছেন:
ছিমছাম সুস্থ সুন্দর গল্প। ব্লগে কয়েকদিন ধরে ভালো ভালো complex গল্প পড়ার পর এই গল্পটি নতুন স্বাদ দিল।
+++++
১৫ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ৯:৪৩
অচিন্ত্য বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ডিয়ার অস্পিসাস প্রেইস। ব্লগে স্বাগত। এই ব্লগ সাইট নিয়ে আপনার অশ্রান্ত পরিশ্রমী পোস্টের প্রতি রইল কৃতজ্ঞতা।
ভাল থাকুন
ঈদ মোবারক
৬| ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১:১৩
শান্তির দেবদূত বলেছেন: দারুন! আসলেই দারুন লিখেন আপনি!
রহস্যটা ক্লিয়ার হয়নি। গল্পে এটা বুঝা গেছে যে আরিফেরর সাথে গোলাম দস্তগীর রনির একটা ব্যক্তিগত সম্পর্ক্ আছে। কিন্তু কি সেই সম্পর্ক্য? যেহেতু আরিফ আর ঐ সহযাত্রী প্রায় সমবয়সি তাই রনি আরিফের বাবা হতে পারে না, তবে কি তার কোন বন্ধু? কৌতুহলটা জিইয়ে আছে
অনেক অনেক ভাল লাগল, শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইল।
১৬ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১১:০২
অচিন্ত্য বলেছেন: ধন্যবাদ ডিয়ার দেবদূত।
আসলে আমি যেভাবে গল্পখানা কল্পনা করেছি তা অনেকটা এমনঃ
অনেক সময় অন্যের অনিষ্টের গল্প শুনতেও ভাল লাগে । এই অনিষ্ট নিজের পরিচিত কারো সাথে হলে বোঝা যায় যে বিষয়টি আসলে ভাল লাগার মত নয়। মমমহ.. সম্পর্কটি আসলে আমি ডিফাইন করিনি। আমার কাছে আসলে সম্পর্কটি ইম্পোর্টেন্ট মনে হয় নি। এই আর কি।
ভাল থাকুন।
কথা হবে
৭| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৩:৪২
সমুদ্র কন্যা বলেছেন: ব্যাংকারদের সবকিছুই ব্যাংক রিলেটেড হয় নাকি!
গল্প ভাল লেগেছে। ছোটখাট, ছিমছাম।
২৩ শে অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৪:০১
অচিন্ত্য বলেছেন: হুম
পালাবে কোথায় তুমিও বাঁধা সাত সতেরোর গলি
এখানে জীবন থমকে আছে উদর-বাজার থলি
ধন্যবাদ
বড়লম্বা, ধুমধাম
©somewhere in net ltd.
১| ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ৯:৩২
হাসান মাহবুব বলেছেন: রহস্য পত্রিকায় পড়া বিদেশী ছোটগল্পের ফ্লেভার পেলাম। নাইস!