![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রতিদিন এখানে সেখানে বহু জায়গায় দেখতে পাই, লেখা “আসুন সবকিছু বদলাই, বদলে দেই সমাজকে”। একজন বলে, নিজেও বদলে যাই, সমাজকেও বদলে দেই! আরেকজন বলে দিন বদল করতে হবে। সরকার বলে দেশটারে বদলানো দরকার! আর রাজনৈতিক নেতা নেত্রীরা কেবলমাত্র দলবদল করেই খুশি!
আমার প্রশ্ন হল, যে জাতি এখনো নিজেকে বদলাতে পারলো না সে সমাজ বদলাবে কি?
এইসব বদলা বদলির মাঝে মাঝে মাঝে আমরা চিপায় পড়ে যাই! তাও যেই সেই চিপা নয়, এক্কেবারে ফার্স্ট লেভেলের মাইনকার চিপা! করার কিছুই থাকে না, মাথা নিচু করে ঢোক গিলতে গিলতে সেখান থেকে উদ্ধার পাওয়ার চেষ্টা করি। কারণ প্রতিবাদ করার ইচ্ছা বা সাহস কার আছে?? এই যেমন ছোট্ট একটা উদাহরণ দেই, সেদিন এক বন্ধুর সাথে কোন একটা এলাকা দিয়ে রিকশা করে যাচ্ছিলাম। বন্ধুর আবার কাউবয় হ্যাটের খুব শখ! গেল ঈদে নতুন একটা কিনেছে। নিয়মিত পরে ঘুরেও বেড়ায়! তো রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি, এমন সময় কোন একটা গলি থেকে কয়েকটা ছেলের চিৎকার শুনতে পেলাম “ওই ব্যাটা টুপি খোল!” আমি থতমত! কিছু বলি নি, তাকাইও নি! চুপচাপ চলে এসেছি!
পরে চিন্তা করলাম যে আসলে সমস্যা কি? এইদেশে যদি হ্যাট পরা নিষিদ্ধ হত তাও মানতাম! কিন্তু হ্যাট পরার পর যদি সেটা নিয়ে এই ধরণের কথা শুনতে হয় তাহলে আর কিছু বলার নেই। ধরে নেই যে ছেলেটা এই কথা টা বলেছে সেও ছাত্র লেভেলেরই কেউ একজন। শুধুমাত্র এলাকায় “পাওয়ার” আছে তাই এই কথা টা বলার সাহস পেয়েছে। এই ধরণের চিন্তাভাবনা এলাকা ভিত্তিক কিঞ্চিৎ বংশ পরম্পরায় চলে আসছে। ছোট বেলা থেকে এইসব ছেলেরা দেখে আসছে এলাকায় বড়ভাই নামের কিছু মানুষ থাকে যারা ব্যাচেলর লাইফে এলাকা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে। গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল টাইপ আর কি! এলাকার অন্য ছেলেরা এদেরকে ভয় পায়। এটা দেখে এদেরও শখ জাগে এলাকা নিয়ন্ত্রণ করার। আশ্রয় নেয় সেই ভাইয়ের ছায়ায়! তার নাম ভাঙ্গিয়ে করতে থাকে মারামারি – হেনতেন কর্ম! সেই সব ভাই যখন বিয়ে করে বউয়ের ঠ্যালা সামলাতে গিয়ে আর এলাকায় নজর দেয়ার সময় পায় না, তখন তার চ্যালারা এলাকার বড় ভাই হয়ে ওঠে। বহুদিন থেকে এই জিনিস চলে আসছে, আরো কত দিন চলবে কে জানে!
আরেকটা ব্যাপার বলতে নিচ্ছিলাম! একটা উদাহরণ দিয়েই বলি, একবার আমার এক বন্ধু আমাকে ফোন দিল। “কি রে? কি ব্যাপার?” “আরে বলিস না! আমার ছোট ভাইটা একদম গ্যাছে! কোন বন্ধুর বাসায় গ্রুপ স্টাডি করার নামে সারারাত মাতাল হয়ে বমি করেছে! তার উপর পাশের বাসার জানালার গ্লাস ভেঙ্গেছে! বাড়িওয়ালা পুলিশে তুলে দিয়েছেন। এখন ছাড়াতে গিয়ে গ্যাঞ্জাম বাঁধছে! তোর এই লেভেলে কোন হাত আছে না কি??”
আমার আবার এইসবে কোন যোগাযোগ নেই! সাতে পাঁচে থাকা খুব একটা হয়ে ওঠে না। তবে যেটা বলতে ইচ্ছা হচ্ছে সেটা হল এই অ্যালকোহল জিনিসটা আমাদের দেশে নামে মাত্র নিষিদ্ধ! স্কুল-কলেজ স্টুডেন্ট রা এখন খায় এটা! পুলিশ ধরতে পারে, সেই ভয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে আনে। কিন্তু পার্টি ঠিকই চলে! যদি নেহায়েত ধরা পড়েই যায়, তখন দুইশ টাকা ঘুষ কিংবা এক্সট্রা এক বোতল পুলিশকে দিয়ে ছাড়া পাওয়া কোন ব্যাপারই না! আর অ্যালকোহলের নীতিটাই এমন যে তুমি বাসায় খাও অথবা অভিজাত বারে গিয়ে খাও কোন সমস্যা নাই! কিন্তু বহন করতে পারবে না! আজিব রীতি!
আমার কথা হল একবার এই জিনিস আমাদের দেশে ১৮ বা তদূর্ধ্বদের লিগ্যাল করে দেয়া হোক! আমি জানি আমাকে কিঞ্চিৎ বিকৃত মস্তিষ্ক মনে হতে পারে কিন্তু আমি খুব ভালো করেই জানি আমি কি বলছি! ধরা যাক একটা বাচ্চা ছেলের খুব চকোলেট পছন্দ! এখন তাকে বলা হল তোমার যত ইচ্ছা চকোলেট খাও, কেউ বাধা দেবে না! ছেলেটার একদিন ভাল্লাগবে, দুইদিন ভাল্লাগবে, তিনদিনের দিন আর ভাল্লাগবে না। অ্যালকোহলের ব্যাপারটাও ঠিক একই, একদিন ভাল্লাগবে, দুইদিন খেয়ে মাতাল হবে, তিনদিনের দিন বিরক্ত লাগতে বাধ্য! আমাদের টিন এজ সমাজ এসবে আগ্রহী হচ্ছে এই কারণেই! কারণ নিষিদ্ধ জিনিসে মানবজাতির কৌতূহল বেশি! কৌতূহলের বসেই আদম ও হাওয়া নিষিদ্ধ গাছের ফল খেয়েছিলেন।
এখন আরেকটা ছোট্ট ব্যাপার আসতে পারে, যে অ্যালকোহল তো ধর্মীয় দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ! এই ব্যাপারে আমি একটা লাইনই বলব! ধর্মীয় নিষিদ্ধতার সাথে এটিকে আইনসম্মত করার কোন সম্পর্ক নেই! কারণ এটি কে লিগ্যাল করলেও মানুষ খাবে, ইলেগ্যাল থাকলেও মানুষ খাবে! ঠিক যেমন গাঁজা, হিরোইন, ইয়াবা চলছে! কিন্তু না, আমি সেগুলোকে আইন সম্মত করতে বলছি না! বলছি শুধুমাত্র অ্যালকোহলের জন্য, যেটা পরিমিত পানে ঔষধের কাজ করে।
উপরের দুইটি “ফ্যাক্ট” বলুন আর যাই বলুন এই বিষয় দুইটির মূলে অন্যতম কারণ হল দৃষ্টিভঙ্গী! আমাদের এলাকাগুলোতে উঠতি ছেলেদের কে কিভাবে এলাকায় শাসন কায়েম করতে হয় এটা না শিখিয়ে কিভাবে উন্নতি করতে এটা শেখানো যেমন জরুরী, তেমনি অ্যালকোহল কেন সবসময় নিষিদ্ধ থাকবে না, সেই বিষয়ে জ্ঞান প্রদানও আংশিক জরুরী! আমাদের অতীত প্রজন্ম কিভাবে দেখে এসেছে সেটা ফলো না করে আমরা বাস্তবতা কে ফলো করলে আরো আগে উন্নত বিশ্বে ঢুকলেও ঢুকতে পারতাম!
©somewhere in net ltd.