![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অনেক নাটকীয়তার মধ্যে চলছে দেশ, চলছি আমরা! কি হচ্ছে এসব? মানবতা বিরোধী অপরাধ মামলায় ’৭১ এর রাজাকার কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর করার মাত্র দুই ঘন্টা আগে ফাঁসি স্থগিত করেছে আপিল বিভাগ। দিয়েছে রিভিউর সুযোগ। দেশের হাজার হাজার স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী মানুষের আনন্দকে মুহুর্তে মিইয়ে দিয়ে ফাঁসি স্থগিত করা হয়েছে আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। কিন্তু কেন?
প্রথম প্রশ্ন সবার মাথায় এটাই আসে যে, রিভিউ আবেদনের যে চেষ্টা করা হচ্ছে। সেটা আসলে কতটুকু যৌক্তিক?
১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন ২০ (৩) ধারা এর মতে একজন ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত “যুদ্ধাপরাধী” আসামী কোনদিনই তার রায়ের রিভিউ চাইতে পারেন না। তার রায় ঘোষণার পর জেলকোডের ৯৯১ ধারা অনুযায়ী তিনি সাতদিন সময় পাবেন রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার জন্য! যদি তা না চান, তাহলে সরকারি নির্দেশ মতে এর ২৫ থেকে ২৮ দিনের মধ্যে যে কোন দিন ফাঁসি কার্যকর করা হবে।
সবার মাথায় এবার যে প্রশ্নটি আসবে সেটা হল, যদি ফৌজদারী আইনের দন্ডপ্রাপ্ত আসামীরা ফাঁসির আদেশে রিভিউ এর সুযোগ পান, কাদের মোল্লা কেন পাবেন না? এর উত্তর হল, প্রচলিত ফৌজদারি আইন ও জেল কোডের বিধান যুদ্ধাপরাধের দণ্ড কার্যকর করার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয় না।
কেননা আন্তর্জাতিক অপরাধসমূহ ট্রাইব্যুনালস (আইন) ১৯৭৩ একটি বিশেষ আইন। প্রয়োগের ক্ষেত্রে সাধারণ আইনের চেয়ে বিশেষ আইন প্রাধান্য পাবে। ওই আইনের ২০ (৩) ধারায় বলা আছে, "এই আইনের অধীন প্রদত্ত দণ্ড কার্যকর হইবে সরকারের আদেশাবলী অনুযায়ী।" অর্থাৎ রাষ্ট্রপতি প্রাণভিক্ষার আবেদন যেদিনই নাকচ করবেন সেদিন থেকে যেকোন দিন মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হবে। তিনি প্রাণভিক্ষার আবেদন না করলে যেদিন রায়ের কপি জেল কর্তৃপক্ষের হস্তগত হবে সেদিন থেকে সাতদিন পর অর্থাৎ ১৪ ডিসেম্বর রাত ১২টার পর ফাঁসি কার্যকর করা যাবে।
কিন্তু কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করার ক্ষেত্রে একটি মৌলিক প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। আসামি পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, সংবিধানের ১০৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রিভিউ পিটিশন দাখিলের সুযোগ কাদের মোল্লার রয়েছে। কাদের মোল্লার আইনজীবীরা সংবিধানের ১০৫ অনুচ্ছেদ অনুসারে রিভিউ করে একটি প্রতিকার চাচ্ছেন। কিন্তু ৪৭ অনুচ্ছেদের (৩) দফায় উল্লেখিত মানবতাবিরোধী অপরাধ করায় ৪৭(ক)(২) অনুযায়ী সেই প্রতিকার তিনি চাইতে পারেন না। তাই এটা স্পষ্ট যে কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে রিভিউর সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে বার বার তারা সংবিধানের উদাহরণ টেনে আনছেন, যা বস্তুতঃ হাস্যকর ও সম্পূর্ণ অযৌক্তিক!
কারণ সংবিধানের ১০৫ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, "সংসদের যেকোন আইনের বিধি-বিধানাবলী সাপেক্ষে এবং আপিল বিভাগ কর্তৃক প্রণীত যেকোন বিধিসাপেক্ষে আপিল বিভাগের কোন ঘোষিত রায় বা প্রদত্ত আদেশ পুনর্বিবেচনার ক্ষমতা উক্ত বিভাগের থাকিবে।"
এছাড়া সংবিধানের ৪৭(ক)(২) এ বলা হয়েছে, "এই সংবিধানে যাহা বলা হইয়াছে, তাহা সত্ত্বেও যে ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই সংবিধানের ৪৭ অনুচ্ছেদের (৩) দফায় বর্ণিত কোনো আইন প্রযোজ্য হয়, এই সংবিধানের অধীন কোনো প্রতিকারের জন্য সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করিবার কোনো অধিকার সেই ব্যক্তির থাকবে না।"
এখন দেখা যাক ৪৭ অনুচ্ছেদের (৩) দফায় কি বলা হয়েছে। সংবিধানের ৪৭ অনুচ্ছেদের (৩) দফায় "গণহত্যাজনিত অপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ বা যুদ্ধাপরাধ এবং আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে অন্যান্য অপরাধের জন্য কোনো সশস্ত্র বাহিনী বা প্রতিরক্ষা বাহিনী বা সহায়ক বাহিনীর সদস্য, বা অন্য কোনো ব্যক্তি, ব্যক্তি সমষ্টি বা সংগঠন কিংবা যুদ্ধবন্দিকে আটক, ফৌজদারিতে সোপর্দ কিংবা দণ্ডদান" সম্পর্কে বলা হয়েছে।
সুতরাং এটা স্পষ্ট যে যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষেত্রে সংবিধানের ১০৫ অনুচ্ছেদ প্রযোজ্য হবে না। সংবিধানের ৪৭ ক (১) (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আসামির রিভিউ আবেদন দাখিলের সুযোগ নেই। ওই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, "যে ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই সংবিধানের ৪৭ অনুচ্ছেদের (৩) দফায় বর্ণিত কোন আইন প্রযোজ্য হয়, সেই ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদ, ৩৫ অনুচ্ছেদের (১) ও (৩) দফা এবং ৪৪ অনুচ্ছেদের অধীন নিশ্চয়কৃত অধিকারসূমহ প্রযোজ্য হইবে না।" (২) "এই সংবিধানে যাহা বলা হইয়াছে, তাহা সত্ত্বেও যে ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই সংবিধানের ৪৭ অনুচ্ছেদের (৩) দফায় বর্ণিত কোন আইন প্রযোজ্য হয়, এই সংবিধানের অধীন কোন প্রতিকারের জন্য সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করিবার কোন অধিকার সেই ব্যক্তির থাকিবে না।"
অতএব, কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে সংবিধানের ৪৭ (৩) অনুচ্ছেদ প্রযোজ্য হয়েছে। সেক্ষেত্রে সংবিধানে যা কিছুই থাকুক না কেন রিভিউ করার অধিকার তার নেই।
আগেই বলেছি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের ২০ (৩) ধারা অনুযায়ী কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হবে। ওই ধারায় বলা রয়েছে, "এই আইনের অধীন প্রদত্ত দণ্ড কার্যকর হবে সরকারের আদেশাবলী অনুযায়ী।" কারণ আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন-১৯৭৩ একটি বিশেষ আইন। ফলে এই আইনে কাদের মোল্লা রিভিউ আবেদন করতে পারবেন না। তবে আসামিপক্ষ যদি রিভিউ আবেদন নিয়ে যান তাহলে সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে সর্বোচ্চ আদালত। এবং সেটা অবশ্যই ১৯৭৩ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন অনুসারে!
সুতরাং সংবিধান ও আইন অনুসারে অযৌক্তিক হওয়া সত্বেও একজন ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীকে কেন রিভিউ পিটিশনের সুযোগ দেয়া হল, তা যথেষ্ট প্রশ্নের উদ্রেক করে। আর যদি করা হয়ও, এবং তাতে যদি ফাঁসি স্থগিত করে আবার নতুন রায় প্রদান করা হয়, তাহলে সেটা যে আইন ও সংবিধান অবমাননা করবে এ বিষয়ে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই!
সরকারি প্রশাসনের যে রায় নিয়ে এসব নাটকীয়তার পেছনে ইন্ধন রয়েছে তা এখন স্পষ্ট! কিন্তু তাদের মূল লক্ষ্য কি, সেটা সময়ের সাথেই ধীরে ধীরে প্রকাশ হবে!
কারণ প্রশ্ন রয়েছে কিছু সূক্ষ্ম ব্যাপার নিয়ে। আগামী শনিবার থেকে আপিল বিভাগের বিচারকদের গ্রীষ্মকালীন অবকাশ শুরু। সেটা চলবে কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ দিন। এখন যদি রিভিউ অনুমোদন দিয়ে আপিল বিভাগ মামলা আবার হাতে নেয়, তাহলে সেটার শুনানীর জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরো ১৫/২০ দিন। তার মানে হল বিজয় দিবস তো দূরের কথা, নির্বাচনের আগে কাদের মোল্লা কে ফাঁসি দেয়া নিতান্তই অসম্ভব! কেন এই কালক্ষেপণ? প্রশাসন কি ইচ্ছা করে এইধরণের কোন নাটকীয়তা সৃষ্টি করতে চাচ্ছে? নাকি ফাঁসির রায় নির্বাচনের পরে নিয়ে সেটাকে ইস্যু করে পুনরায় ক্ষমতার আসার চেষ্টা?
এসব আমজনতা কোনদিন জানবে না। তবে দুঃখ হবে কেবল এটুকুতেই, ৪২ বছর আগে স্বাধীনতার মূল্য আজ আমাদের এভাবে দিতে হচ্ছে। জাতি আজ লজ্জিত, কিন্তু এই লজ্জা থেকে তাদের উদ্ধার করার কেউ নেই, কেউ না!
২| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:০২
সৈয়দ মোহাম্মদ আলী কিবর বলেছেন: দেশে যা হচ্ছে তা দুঃখজনক।
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৫৬
শিলা সুলতানা বলেছেন:
দুঃখ হবে কেবল এটুকুতেই, ৪২ বছর আগে স্বাধীনতার মূল্য আজ আমাদের এভাবে দিতে হচ্ছে। জাতি আজ লজ্জিত, কিন্তু এই লজ্জা থেকে তাদের উদ্ধার করার কেউ নেই, কেউ না!