![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিতান্তই সাধারণ একজন মানুষ। পেশায় একজন তড়িৎ প্রকৌশলী। একটা সময় ছিল যখন শখের বশে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী আর কবিতা লিখতে পছন্দ করতাম। এখন বেশিরভাগই ভূ-রাজনৈতিক বিষয়ে লিখি।
ছোটবেলায় অংকে খুব কাঁচা ছিলাম। প্রায়ই পরীক্ষায় ছোটোখাটো গণ্ডগোল বাঁধিয়ে বসতাম। রোল ১-১০ এর মধ্যেই উঠানামা করত, তা কেবল এই অঙ্কের কারণে। অঙ্ককে আমি যমের মত ভয় পেতাম। আজ থেকে ৮ বছর আগের কথা বলছি। এখন আর ভয়টয় পাই না। অঙ্কের প্রতি এই জুজুর ভয় তাড়াতে আমাকে সাহায্য করেছিলেন আমাদের এক শিক্ষক, আমার স্কুল জীবনের প্রিয় শিক্ষক। উনি আমাদের শ্রেণী শিক্ষক ছিলেন, গনিত পরাতেন। এখনো মনে পড়ে ৭ম শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের দিনটির কথা। আমার স্মরণীয় দিনগুলোর মধ্যে এটি একটি। সে বছর ২য় সাময়িক পরীক্ষায় আমি গনিতে সর্বনিম্ন নম্বর পেয়ে বসলাম, তারপরেও আমার মেধাস্থান ছিল ২য়! এক গণিতই আমাকে ডুবিয়ে দিয়েছে। স্যার এসে বললেন, কিরে এত কম নম্বর পেয়েছিস কেন? আমি বললাম, স্যার অঙ্ক করতে ভয় পাই। স্যার তো হেসেই ফেললেন, বললেন- আরে গাধা, অঙ্ক কি বাঘ না ভাল্লুক! তোর কিসে সমস্যা বল তো? আমি পাটিগণিত পারতামই না, আর জ্যামিতি আমার কাছে ছিল যমের মত। একেকটা উপপাদ্য- বুঝতেই পারতাম না- কি বলছে। স্যার এগিয়ে এলেন, বললেন- কোন সমস্যা হলে আমার কাছে চলে আসবি, বুঝলি। দ্বিধা করবি না কোন। আজকালকার যুগে এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে- স্যাররা অমন ডায়লগ দিলেই ধরে নিতে হয়, স্যারের ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য আছে। আমাদের সময় তা ছিল, কিন্তু কদাচিৎ দেখা যেত। আমার এই স্যার কখনোই ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ছাত্র পরাতেন না, তারপরেও অভিভাবকগণ খুশি হয়ে স্যারকে কিছু উপহার দিতেন।
২য় সাময়িকের অমন দুর্যোগ কাটাতে আমি স্যারের শরণাপন্ন হলাম। স্যার আমাকে নিয়ে একেবারে গোঁড়া থেকে শুরু করলেন। শুধুই যে আমাকে অঙ্ক করাতেন তা কিন্তু নয়- গনিতের ইতিহাস শুনাতেন। মিশরীয়রা যে সর্বপ্রথম জ্যামিতি ব্যবহার করেছে, ভারতবর্ষে শূন্যের ব্যবহার শুরু হয়েছে- তা কিন্তু আমি আগে জানতাম না, স্যারই আমাকে এসব শুনিয়েছেন। গনিতকে ভয় না পেয়ে কিভাবে মজা করে করতে হয়, তা শিখিয়েছেন। আজ ৮ বছর পর আবার উনাকে স্মরন করছি, স্যারের অনুপ্রেরনা না পেলে কখনই আমি এতদূর আসতে পারতাম না। আমি এখন দেশসেরা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছি। এই ইঞ্জিনিয়ারিং এর ভিত্তি কিন্তু গনিত। আমার ভিতর যে সুপ্ত একটি প্রতিভা ছিল, তিনি তা জাগিয়ে তুলছিলেন। স্যার সবসময় বলতেন, তোকে পারতেই হবে, ভয় পেলে চলবে না। আমার ভেতরেও এক প্রকার জেদ চেপে বসেছিল, ক্লাসের ছেলেপুলেরা অকারনে ঠাট্টা তামাশা করত, ফেলটুস বলে ডাকত। একদিকে স্যারের অনুপ্রেরনা, শিক্ষা অন্যদিকে কিছু করে দেখানোর জেদ আমার ভেতর চেপে বসল। কঠোর পরিশ্রম করা শুরু করলাম। স্যার প্রায়ই বলতেন- অঙ্ককে বন্ধু মনে কর, এটাকে একটা খেলা মনে কর। দেখবি ভাল লাগবে। দেখতে দেখতে বার্ষিক পরীক্ষা চলে এল। রুটিন দিল- সবার শেষে গনিত পরীক্ষা। সব পরীক্ষা একে একে দিলাম, সব ভাল হয়েছে। গনিত পরীক্ষার দিন খুব সকালে স্যারের বাসায় চলে গেলাম। স্যারের আশীর্বাদ নিলাম, বললাম- স্যার দোয়া করবেন। স্যার মাথায় হাত ভুলিয়ে দিলেন, বললেন- ভালভাবে পরীক্ষা দিস। পরীক্ষা দিলাম।
বার্ষিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের দিন চলে এল। আম্মু-আব্বু ও গেলেন আমার সাথে স্কুলে। আমরা সবাই বসে আছি ফলাফলের অপেক্ষায়। আমাদের প্রধানশিক্ষক আর আমার প্রিয় শিক্ষক ক্লাসে এলেন। এবং ফলাফল প্রকাশ করলেন। আমি ২য় স্থান অধিকার করলাম, এক নম্বরের জন্য ১ম হতে পারিনি তো কি হয়েছে- আমার পরিশ্রম সার্থক হয়েছে। স্যার আমাকে সবার সামনে ডাকলেন, আমি উনার পা ছুঁয়ে সালাম করলাম। স্যার আমায় জড়িয়ে ধরলেন, সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন- তোদের সামনে আজ এক পরিস্রমের জ্বলন্ত উদাহরণ দাঁড়িয়ে আছে- যে কিনা গতবার গনিতে কম পেয়েছিল। এবারের পরীক্ষায় সারা স্কুলের মধ্যে ও সবচেয়ে বেশি পেয়েছে। ওর কাছ থেকে তোদের অনেক কিছু শেখার আছে। পরিশ্রম করলে মানুষ কিনা পারে- একমাত্র ওকে দেখলেই বুঝবি। গর্বে ওদিন আমার বুক ফুলে উঠেছিল। জীবনে এরপর যখনি খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে গিয়েছে, তখনি ঐদিনটির কথা স্মরন করেছি, আমার প্রিয় শিক্ষকের কথা স্মরন করেছি। তার অনুপ্রেরণাময় কথাগুলো এখনো আমার কানে বাজে।
১০ম শ্রেণী পর্যন্ত উনার কাছে গনিত শিখেছি আমি। নটরডেম কলেজে ভর্তির পর স্যারের কাছে আশীর্বাদ চাইতে গিয়েছিলাম। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার আগে গেলাম- শুনলাম উনার খুব অসুখ। স্যারের বাসায় গেলাম। উনি আর আগের মত নেই, দুর্বল হয়ে পড়ে আছেন। আমাকে কাছে ডেকে বললেন- স্যারের কথা মনে আছে তাহলে? আমি কেঁদে দিলাম। স্যার বললেন- কাঁদিস নে পাগল। আমি তো আর সব সময় তোর পাশে থাকব না। আমার চলে যাওয়ার সময় হয়েছে। ভাল থাকিস তুই। জানতে পারলাম- স্যারের ব্লাড ক্যানসার। বেশীদিন বাঁচবেন বলে মনে হয় না। আব্বু অনেক সাহায্য করেছিলেন স্যারের পরিবারকে। বড় বড় ডাক্তার দেখিয়েছেন। কিন্তু স্যারের অবস্থা দিনদিন ক্রমশই খারাপের দিকে যাচ্ছিল।
গতবছর ডিসেম্বরে স্যার মারা গিয়েছেন। টার্ম ফাইনাল থাকার কারণে উনার শেষকৃত্তে যোগ দিতে পারিনি বলে এখনো আমার অনুশোচনা হয়। স্যারের স্ত্রী আমাকে পরে বলেছিলেন, মারা যাওয়ার পূর্বমুহূর্তে তিনি নাকি আমায় খুঁজেছিলেন, আমার নাম ধরে ডেকেছিলেন। আমার এখনো খুব অনুশোচনা হয়- স্যারকে শেষবারের মত দেখতে পাইনি বলে। এখনো আমি উনাকে স্বপ্নে দেখি। দেখি উনি আমায় বলছেন, তোকে পারতে হবে, তোকে জীবনে অনেক বড় হতে হবে, অনেক বড় হতে হবে। স্কুল জীবনের আমার এই প্রিয় শিক্ষকটি পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন অনেক দূরে। কিন্তু আজীবন তিনি থাকবেন আমার হৃদয়ের অন্তঃস্থলে। ভালো থাকবেন স্যার।
১৯ শে জুন, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৩১
মোঃ আদিব ইব্নে ইউসুফ বলেছেন: ১ম ২য় ছিলাম কিনা মনে নাই। তবে অনেকবার রোল ৩ ছিল
নাম কি রিজাল ফাতহনি কবির??
সরকারি এক বিখ্যাত স্কুলে পড়তাম। @রিজাল কবির
২| ২০ শে জুন, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৩৪
রিজাল কবির বলেছেন: জি ভাইয়া!!!
নাম তো চেনা চেনা লাগার কথা!!
©somewhere in net ltd.
১|
১৯ শে জুন, ২০১২ বিকাল ৫:৩৮
রিজাল কবির বলেছেন: touchy....
btw, আপনে ফার্স্ট/সেকেন্ড ছিলেন?? নাউজুবিল্লাহ!!
যাউকগা, কোন স্কুল??