![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আদনান সৈয়দ। জন্ম : ঢাকা। পেশাঃ ফাইনানসিয়াল এনালিষ্ট এবং প্রফেশনাল বিজনেস প্লানার। যুক্তরাষ্ট্র থেকে এমবিএ। নেশা: লেখালেখি ও সাংবাদিকতা। বর্তমানে বাংলাদেশের একটি প্রতিষ্ঠানে পরামর্শক হিসেবে কর্মরত। মেইল: [email protected]
আমি থাকি নিউইয়র্ক এ। ভাবলাম এবার লম্বা ছুটিতে বাংলাদেশে যেয়ে কিছু তাজা মাছ মাংস, ফলমুল-শাকশব্জি উদরস্থ করি। কিন্তু বিধিবাম! গত মাস দুয়েক যাবৎ ঢাকার আনাচে কানাচে বিভিন্ন ফলফলারির দোকানে একটা ভালো পেঁপেঁ কেনার সৌভাগ্যও আমার হল না। কি অদ্ভুৎ এক কথা! দেখতে শুনতে বাইরে থেকে এই পেঁপে নামের বস্তুটা এত সুন্দর দেখায় অথচ ভেতরটা একেবারেই অন্যরকম। বেশ বোঝাই যে অপরিপক্ক থাকা অবস্থাতেই এই ফলটাকে গায়ের জোরে পাকানো হয়েছে। জানি, আপনারা অনেকেই ভ্রু কুচকিয়ে বলবেন ” এ আবার নতুন কি কথা। এই দেশে একটা ফল কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো হবে আর তা আমরা চোখ বুজে নিশ্চিন্ত মনেই খাবো এইকি স্বাভাবিক না??” সেদিন টিভিতে একটি অনুষ্ঠান দেখে রিতিমত ভিরমি খাওয়ার উপক্রম হল। ছয় মাসের আনারস কিভাবে তিন মাসে পাকানো যায় প্রতিবেদনটি ছিল সে বিষয়টির উপরই। এক আনারস চাষী খুব শান্ত গলায় অনেকটা গর্বের সাথেই আনারসের জন্মলগ্ন থেকে শুরু করে এর জন্য কি ধরনের রাসায়নিক বস্তু তাতে তিনি মেশাচ্ছেন তার এক প্রাঞ্জল বর্ণনা দিলেন। সেই একই টিভি অনুষ্ঠানে আরেকটি ভয়াভহ রকম তথ্যও শুনতে পেলাম। পৃথিবীর সব দেশেই কোলন কেন্সার সাধারনত পঞ্চাশ উর্ধ্ব মানুষের হয়ে থাকে কিন্তু ডাক্তারগন বলছেন এই কেমিক্যাল যুক্ত খাবারের কারনে এখন ত্রিশ বছর বয়সেই এখন বাংলাদেশের মানুষজন কোলন ক্যান্সারের শিকার হচ্ছেন। কি ভয়াবহরকম তথ্য! কিন্তু না, আশেপাশের সব কিছু দেখে শুনে মনে হয় এই সব ক্যামিকেল টেমিকেল আর ফরমালিন শব্দ গুলো যেন আমাদের একেবারেই গা সওয়া হয়ে গেছে। একটি মাছে ফরমালিন থাকবে আর বিষাক্ত ক্যামিকেল যুক্ত ফলমুল অথবা শাক-শব্জী আমরা নির্দিধায় পাকস্থলিতে হজম করব বিষয়টি এখন যেন এমনিই এক মামুলি ব্যাপার। আমরা প্রতিদিন সকাল বেলা মনের আনন্দেই বাজারে যাচ্ছি আর বাজার থেকে ব্যাগ ভর্তি বিষাক্ত মাছ, তরিতরকারি, ফলমুল কাঁধে বয়ে ঘরে নিয়ে আসছি। কই? এর জন্য কোথাও কোন ক্রন্দন তো চোখে পরছে না?
আমেরিকায় দেখেছি সেখানকার মানুষজন কি ধরনের খাবার খাচ্ছেন সে নিয়ে দেশটির সরকার খুব বেশি রকমভাবেই সজাগ। শরিরের জন্য অনিষ্ঠ এমন কোন খাবার যেনো একজন মানুষ খেতে না পারে সেজন্য স্থানীয় প্রশাসন খুবই সোচ্চার। কোন মুদির দোকানে অথবা রেস্তোঁরায় যদি কোন পুরনো বা বাসি হয়ে যাওয়া খাবারের তথ্য পাওয়া যায় তাহলে সেই দোকান বা রেস্তোঁরার মালিকের কপালে যে দুর্ভোগ আছে তা চোখ বুজেই বলে দেওয়া যায়। মেয়াদ উত্তির্ণ কোন খাবার বিক্রি করা বা পরিবেশনা করা আমেরিকার ”খাদ্য ও পানীয় প্রশাসন” বিভাগের আওতায় একটি ”ফেডারেল ক্রাইম” হিশেবে বিবেচিত। সেক্ষেত্রে ভেজাল খাবার পরিবেশনকারি দোকানীদের জেল-জরিমানা থেকে শুরু করে ব্যাবসার লাইসেন্স বাতিল, সেইসব ব্যাবসায়ীরা যাতে আর অন্য কোন ব্যাবসায় বিনিয়োগ করতে না পারেন অথবা তাদের কালো তালিকা করে এই অসাধু ব্যাবসায়দের নাম জনগনের সামনে স্থানীয় গ্যজেটের মাধ্যমে প্রকাশসহ বিভিন্নরকম ব্যাবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে। বাংলাদেশেও ভেজাল খাবার পরিবেশনকরীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির বিধান রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে ভেজাল বিরোধী অভিযানের কথা কানে আসছে। দেদারছে মোটা অংকের টাকা ভেজালকারীদের বিরুদ্ধে জরিমানাও করা হচ্ছে। কিন্তু এর ফল কতটুকু হচ্ছে সেটাই হল ভাববার বিষয়। ” মাছে ফরমালিন আছে কিনা তা যাচাই এর জন্য আমরা প্রায় সময়ই বিভিন্নরকম ছোটবড় শপিং সেন্টার গুলোতে বিনা নোটিসে অভিযান চালাই। আমাদের সাথে মেজিস্ট্রাট থাকেন, আইনের লোকজনরাও থাকেন। খুব স্বাভাবিকভাবেই অভিযুক্ত সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের ত্যাৎক্ষনিক বিচারের আওতায় আনা হয়। কিন্তু এর মানে এই নয় যে বাংলাদেশের মাছ খুব শিগগিরই ফরমালিন মুক্ত হয়ে যাবে। মানুষের নৈতিক চরিত্র না বদলালে এর থেকে পরিত্রানের কোন উপায়ই আমাদের হাতে নেই।” কথা গুলো বললেন ঢাকা জেলার মৎস বিভাগের পরিচালক ড. সৈয়দ আলি আজহার।
ফরমালিন মিশিয়ে মাছকে তাজা রাখা, পেট্রল দিয়ে চানাচুর ভাজা, মিষ্টি বানানোর দুধের কিমার সাথে টিস্যু পেপার মেশানো এখন যেন একেবারেই দুধভাত বিষয়ে পরিনত হয়েছে। আপেল, কমলা, কলা, আম, পেঁপে, আনারস সহ প্রায় সব ফলই এখন বিষাক্ত কেমিকেলের সৌজন্যে পাকানো হচ্ছে। সেদিন এক বন্ধু বললেন তিনি নাকি এখন আর কোন রকম ফল ফলারির কাছেও যান না। ”যদি চোখের সামনে গাব অথবা আমড়া পাই তখন সেটা খাই।” তার বিশ্বাস এই সস্তা ফলগুলো হয়তো আর যাই হোক কেমিক্যাল মুক্ত থাকবে। এই কিছু দিন আগেও বিষযুক্ত লিচু খেয়ে তের জন শিশুর প্রাণ চলে গেল। এই সব বিষ মেশানো খাবারের পাশ্ব প্রতিক্রিয়য় ইতিমধ্যেই মানুষজন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালমুখি হচ্ছেন। গোটা বিশ্বে যখন পরিবেশ সচেতনতার প্রভাবে মানুষের গড় আয়ু দিন দিন বাড়ছে সেখানে বাংলাদেশের মানুষ এই ভেজাল খাদ্যের রাসায়নিক বিক্রিয়ার কুফল হিশেবে বয়স ত্রিশ ছুঁতে না ছুঁতেই কোলন ক্যান্সারের মত জীবন নাশক ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। এই নাজুক পরিস্থিতি থেকে দ্রুত পরিত্রনা প্রয়োজন। দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি এবং আইন প্রয়োগের পাশাপাশি এই ফরমালিন এবং বিষাক্ত রাসায়নিক বস্তুগুলোর বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা প্রয়োজন। একটি ফরমালিনযুক্ত মাছকে কিভাবে ফরমালিন মুক্ত করা যেতে পারে অথবা মাছটিতে ফরমালিন আছে কিন এর যাচাই-বাছাই পদ্ধতিটি একজন নাগরিক এর হাতের মুঠোয় থাকা খুব জরুরী। যে কোন ফল-ফলারী বা শাক-শব্জী থেকে কিভাবে বিষাক্ত কেমিক্যাল দুর করা যায় সে বিষয়ে একজন নাগরিকের সাধারন জ্ঞ্যান থাকা খুবই প্রয়োজন। সর্বপোরি বাংলাদেশে এই মুহুর্তে প্রয়োজন ফরমালিন আর খাবারে বিষাক্ত ক্যামিকেল মুক্ত এক সমাজ গড়ার মহান বিপ্লব। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে একটি সুস্থ জাতি গঠনের জন্য প্রয়োজন একটি সুস্থ মানুষ।
০৬ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:৩৯
আদনান সৈয়দ বলেছেন: একমত আপনার সাথে...এ কথাটাই আমি সামাজিক বিপ্লব বলে উল্লেখ করেছি।
২| ০৬ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:২৫
মিষ্টি মেয়ে বলেছেন: আর সাতে নোংরা রাজনীতি মুক্ত বাংলাদেশ চাই!!!
০৬ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:৪০
আদনান সৈয়দ বলেছেন: ভাইরে, সে আর বলতে...? আমাদের রাজনীতি যেদিন ফরমালিন আর ক্যামিক্যালমুক্ত হবে সেদিন সোনার বাংলাদেশ হয়ে যাবে।
©somewhere in net ltd.
১|
০৬ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:১৪
আকাশ_পাগলা বলেছেন: এই আলোচনাই সবাই করে। আর ঘাসের ভেজিটেবল ফ্যাট দিয়ে বানানো বিষাক্ত কন্ডেন্স মিল্কের চা খেয়ে "হুম ঠিক বলেছেন ভাই" বলে।
আপনি যা বলেছেন, সবাই তাই বুঝে।
কিন্তু তারপরও কোন সমাধান নাই।
ব্যাপক মিডিয়া কভারেজে ইন্সট্যান্ট সুপার মার্কেট চেকিং আর পাবলিকের শক্ত মাইরই এইটার সমাধান।