![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আদনান সৈয়দ। জন্ম : ঢাকা। পেশাঃ ফাইনানসিয়াল এনালিষ্ট এবং প্রফেশনাল বিজনেস প্লানার। যুক্তরাষ্ট্র থেকে এমবিএ। নেশা: লেখালেখি ও সাংবাদিকতা। বর্তমানে বাংলাদেশের একটি প্রতিষ্ঠানে পরামর্শক হিসেবে কর্মরত। মেইল: [email protected]
প্রথমেই বলে রাখা ভালো যে লিটল ম্যাগ বা ছোট কাগজের কিছু বৈশিষ্ঠ্য আছে যা ছোট কাগজকে ছোট কাগজের মর্যাদার আসনে বসিয়ে দেয়। যেমন ছোট কাগজ সবসময়ই প্রথাবিরোধী। ছোট কাগজ অনেক ক্ষেত্রেই নিরীক্ষাধমী হয় যার কোন ব্যাবসায়িক স্বার্থ থাকে না। ছোট কাগজের প্রকাশনা বেশির ভাগ সময়েই অনিয়মিত। ছোট কাগজের লেখকগণ সবসময় প্রাতিষ্ঠানিক প্রথাবিরোধী সাহিত্যের বিপরীতে অবস্থান নেন। আধুনিক এবং উত্তর আধুনিক সাহিত্যের প্রতি ছোট কাগজের নীতিগত অবস্থান সবসময়ই। অন্ততঃ পৃথিবীতে তাবৎ প্রকাশিত ছোট কাগজের ঐতিহাসিক পটভুমিকার দিকে চোখ রাখলেই কিন্তু এর মুল সুরটি খুব সাবলিল ভাবেই আমাদের চোখে পড়ে। বোস্টন থেকে প্রাকাশিত বিক্ষ্যাত ছোট পত্রিকা ‘দি ডায়াল’, ‘ দি হাভার্ড এডভোকেট,’দি ক্রাইটেরিয়ন”(যার প্রতিষ্ঠাতা এবং সম্পাদক ছিলেন কবি টিএস এলিয়ট নিজেই), ‘দি পয়েট্রি’ ইত্যাদি কিছু ছোট কাগজের নাম এখনো খুব উচ্চস্বরেই উচ্চারিত হয়। প্রসঙ্গগত উল্লেখ্য যে টি. এস এলিয়ট ১৯১৪ সালে ফেলোশীপ নিয়ে যখন অক্সফোর্ড এ পড়াশুনা করতে যান তখন সেখানে তার সাথে পরিচয় হয়েছিল আরেক বিক্ষ্যাত কবি এজরা পাউন্ডের সাথে। এজরা পাউন্ড আমেরিকার কবি এলিয়টের কাব্য প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে সাথে সাথেই সেই সময়য়ের বিক্ষ্যাত ছোট কাগজ ‘পয়েট্রি’ পত্রিকার সম্পাদক হেরিয়েট মনরোকে একটি চিটি লিখেন। এজরা পাউন্ড এলিয়ট সম্পকে সেদিন লিখেছিলেন যে, “ তিনি(এলিয়ট) কবিতার জগৎে নিজেকে যথাযথ ভাবেই অধিষ্ঠ করে চলেছেন এবং কবিতার আধুনিকায়নে নিজেকে নিয়জিত করেছেন।”
এই কথা চোখ বুজেই বলে দেওয়া যায় যে ছোট কাগজ সর্বকালে এবং সর্বত্রই নতুন একটা পথ আবিস্কারের চেষ্টা করে। এই নতুন দিক নিদেশনায় ছোট কাগজের কোন জুড়ি নেই। লক্ষ্য করুন ১৯২৪ সালের ’কল্লোল’ যুগের যে সূচনা হয়েছিল তাও কিন্তু এই ছোট কাগজকে ঘিরেই। সেই সময় কাজি নজরুল ইসলাম, মহিতলাল মজুমদার,অচিন্তকুমারসেন গুপ্ত, সত্যান্দ্রনাথ দত্ত, প্রেমেন্দ্র মিত্র সাহিত্যে তাঁদের দাম্ভিক পদাচরনা আমাদের বাংলা সাহিত্যে কে বহুগুন বহুযোজন বাড়িয়ে দেয়। আর সেক্ষেত্রে এই ছোট কাগজই ছিল এর মুল চালিকা শক্তি। পরবতিতে কবি বুদ্ধদেব বসুর সম্পাদিত ‘কবিতা’ পত্রিকা ছোট কাগজ হিশেবে এক মাইল ফলক হিসেবে কাজ করে। বাংলা কবিতার যথাযথ পরিচর্যা এবং রক্ষনাবেক্ষন, এর নানান দিক বিনির্মান, কবিতার আধুনিকায়ন এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা সবকিছুই ‘কবিতা’ পত্রিকার অসমান্য দান।
ষাট দশকের গোড়ার দিকে হাংরি জেনারেশন ছোট কাগজ এর মাধ্যমে এক নতুন বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনার চেষ্টা করে। প্রতিষ্ঠাবিরোধী এই আন্দোলন তৎকালীন সময়ে সাহিত্যের প্রথাগত থমকে দাড়িয়ে থাকা জড়তা কে ভাঙার চেষ্টা করে। ১৯৬৪ সালে প্রকাশিত স্যাড জেনারেশন এর একটি বুলেটিনে বলা হয় , “ We don't know what we are doing. We are really undone, really helpless. We are poisoning us consciously. Yet we are helpless and helpless. We are guilty. We are bearing dynamites in our blood. We know it. But we are helpless, simply undone. We have no other alternative except SELF-DESTRUCTION". আপাত: এই কথা গুলোর মধ্যে প্রচন্ড ক্ষোভ এবং হতাসার সুর বেজে উঠলেও এই স্যাড জেনারেশন ছোট কাগজের মাধ্যমে এক সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলকে সমর্থ হয়। সেই সময় যে তুখোর লেখক সমাজ আমাদের সাহিত্যের প্রাচিরে প্রচন্ড আর শক্ত হাতে কড়া নেড়েছিলেন তাঁদের মধ্যে কোমল কুমার মজুমদার, সুবিমল মিশ্র, বাসুদেব দাশগুপ্ত, মলয় রায় চৌধুরী, ত্রিদিব মিত্র, সুবিমল বসাক এঁদের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। লক্ষ্য করা যাবে যে হাংরি জেনারেশনের সেই উত্তাল ঢেউ আমাদের বাংলাদেশেও যের আছড়ে পরে। ১৯৬৫ সালে যাট দশকের সাহিত্য পত্রিকা আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ সম্পাদিত ‘কন্ঠস্বর’ আমরা যেন সেই উত্তাপটিই গভীরভাবে অনুভব করি। ’কন্ঠস্বর’ এর ঘোষনা ছিল, “ যারা সাহিত্যের ঘনিষ্ঠ প্রেমিক, যারা শিল্পে উন্মোচিত, সৎ, অকপট, রক্তাক্ত, শব্দতাড়িত, যন্ত্রনাকাতর, যারা উন্মাদ, অপচয়ী, বিকারগ্রস্থ, যারা পঙ্গু, অহংকারী, যৌনতাস্পৃষ্ঠ কন্ঠস্বর তাদেরই পত্রিকা। প্রবীনে মোড়ল, নবীন অধ্যাপক, পেশাদার লেখক, মূর্খ সাংবাদিক, ‘পবিত্র’ সাহিত্যিক এবং গৃহপালিত সমালোচক এই পত্রিকায় অনাহূত।”
’অযান্ত্রিক’ বাংলাদেশের তরুনদরে একটি প্রয়াস। এই নতুন প্রজন্মরা শিল্প-সাহিত্য নিয়ে নিজেরা মাতামাতি করে, ভাবে এবং তাদের যাত্রাপথে অ্ন্যদেরকেও সঙ্গী করে নিতে চায়। বর্তমান ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার এই যুগে আমাদের তরুনরা এই অন্তর্জালের মাধ্যমে তাদরে চিন্তা ও মনন পৃথিবীর সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে চায়। বলা যায় কঠিন এই যান্ত্রিক সময়ে আমরা সবাই যখন বুকে হাহাকার নিয়ে নিত্য যন্ত্রনায় ছটফট করছি, ঠিক সেই সময়ে ‘অযান্ত্রিক’ চৈত্রের কাঠফাটা রোদ্রে এক পশলা বৃষ্টির মতই যেন মনে হয়। এই যন্ত্রনাকাতর জীবন থেকে বেড় হয়ে অযান্ত্রিক হতে দোষ কোথায়? তবে পরিস্কার করে বলে নেওয়া ভালো যে ’অযান্ত্রিক’ একটি শিল্প-সাহিত্য পত্রিকা। তবে গতানুগতিক শিল্প-সাহিত্য পত্রিকার মেজাজ থেকে আমরা বেড় হতে চাই। আমরা শিল্পকে পূজি করে এর ফেরি করে বেড়াতে চাই না। বরং নিখাদ শিল্প ও তার শ্রষ্ঠাকে অযান্ত্রিকের পাতায় তুলে আনতে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ’অযান্ত্রিক’ এর দুনিয়ায় আপনাকে স্বাগতম।
আমাদের প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হচ্ছে এই মে মাসে। বর্তমানে সাইটটি নির্মানাধীন রয়েছে। ফেসবুকে একটা পেজে ঢু দিতে পারেন।
Click This Link
আমাদের সাইট:
Click This Link)
আমাদের লেখা পাঠাবার ঠিকানাঃ [email protected]
-আদনান সৈয়দ
অযান্ত্রিক
©somewhere in net ltd.