নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আদনান সৈয়দ

আদনান সৈয়দ। জন্ম : ঢাকা। পেশাঃ ফাইনানসিয়াল এনালিষ্ট এবং প্রফেশনাল বিজনেস প্লানার। যুক্তরাষ্ট্র থেকে এমবিএ। নেশা: লেখালেখি ও সাংবাদিকতা। বর্তমানে বাংলাদেশের একটি প্রতিষ্ঠানে পরামর্শক হিসেবে কর্মরত। মেইল: [email protected]

আদনান সৈয়দ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশ, তুমি ভালো আছ তো?

২৬ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১২:৪০





একাত্তর আমার মায়ের অশ্রু, আমার মায়ের স্বপ্ন, আমার মায়ের কান্নার দাগ। একাত্তর আমার সকল অস্তিত্বের ঠিকানা, আমার প্রেরনার সকল উৎস, আমার দীপ্ত শপথ। ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তস্নাত এই স্বাধীনতা। দু লক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে পাওয়া আমার এই বাংলাদেশ। ২৬ মার্চ এর স্বাধীনতা দীবসকে ঘিরে আমাদের চারপাশে শুরু হয়েছে স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের নানান রকম বর্ণাঢ্য আয়োজন। শহরের অলিতে গলিতে লাল সবুজের পতাকা পত পত করে উড়ছে। শাহবাগের ফুলের দোকানগুলোতে উপচে পরা ভীড়। বিভিন্ন সংগঠন, দল নিজ নিজ ফুলের তোরা বানানোতে ব্যাতিব্যাস্ত। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে রংবেরং এর

অনুষ্ঠান নিয়ে তৎপর, পত্র-পত্রিকার বিশেষ পাতায় স্বাধীনতা দিবসের তরতাজা কবিতা আর প্রবন্ধের ঘ্রাণ! এদিকে আমার বাংলাদেশ চুপচাপ নীরবে তার পথটি হাটে। তখন খুব জানতে ইচ্ছে করে, হে আমার বাংলাদেশ, স্বাধীনতা অর্জনের দীর্ঘ ৪২ বছর পর তুমি কেমন আছ?



যুদ্ধ অপরাধীদের বিচার এবং জামাত-শিবির এর রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবীতে গোটা জাতি এখন একতাবদ্ধ। কবে হবে যুদ্ধপরাধীদের সেই কাংখিত বিচার? সমস্ত তথ্য প্রমান থাকার পরও এই রাজাকারদের বিচারে কেন এত গড়িমসি, জানতে পারিকি? মাস যায়, বছর আসে কিন্তু রাজাকাদের বিচারের প্রহসন বুঝি আর শেষ হয় না। খুব অবাক হয়ে দেখি বাংলাদেশের বড় একটা রাজনৈতিক দল খুব আহ্লাদের সাথে রাজাকারদের সাথে গাট্টা বেধেছেন!! তাদের ভাবসাব দেখে মনে হচ্ছে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য এমন হেন কোন কর্ম নেই যা তারা করতে পারেবেনা। আদর্শ তো পরের কথা। ভাবা যায়? না, আমার ভাবনায় আর চেতনায় যে বিবেকবোধ আর সততাকে এতদিন খুব যত্নে লালন করেছিলাম মনে হচ্ছে তা যেন এখন ধীরে ধীরে লোপ পেতে শুরু করে দিয়েছে। এখন চোখ খুললেই দেখি ভোটের রাজনীতি। ক্ষমতায় যাওয়ার নোংরা রাজনীতি। হরতালের পর হরতালে বাংলাদেশের অর্থনীতি রিতীমত পঙ্গু। কিন্তু তাতে কার কি আসে যায়? কে ভাবে বাংলাদেশ কি নিয়ে? বরং চারপাশে চলছে বাংলাদেশকে নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র। যে জামাতে ইসলামের ক্যাডারদের হাতে মানুষ খুন হচ্ছে, হিন্দুদের বসতভিটা পুড়ছে সেই খুনি জামাতে ইসলামের পক্ষ নিয়েছে বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল। হায়রে আমার কপাল! অথচ দলটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা। ভাবতেই অবাক লাগে। এই সাঈদি, নিজামি, গোলমা আযম, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীদের হাতে রক্তের দাগ এখনো লেগে আছে। আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের খুন করা সেই রক্ত! সেদিন শুনতে পেলাম জামাতের এক নেতা বলছেন যে গোলাম আজম নাকি কখনই রাজাকার ছিলেন না। ভারতের বিরুদ্ধে জেহাদ করতে যেয়েই পবিত্র পাকিস্তান রক্ষায় তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ছিলেন। অবাক হবো না যদি দেখি আর কিছুদিন পর নতুন একটা দল ক্ষমতায় আর এই রাজাকারগুলো পিশাচের হাসি হাসতে হাসতে জেল থেকে বেড় হয়ে দেশটার মন্ত্রীত্ব বরণ করছে। যেমনটা এর আগেও হয়েছিল। বর্তমান সময়ের এই অসহনীয় গন গনে কঠিন রৌদ্রে পোড় খাওয়া আমার মাতৃজননীর কাছে খুব জানতে ইচ্ছে করে, স্বাধীনতা অর্জনের ৪২ বছর পর তুমি সত্যি ভালো আছোতো?



যুদ্ধপরাধীদের বিচারের দাবীতে শাহবাগের তরুনদের চোখে ঘুম নেই। আজ পৃথিবীর সব বাঙালী দেশপ্রেমিকরা যুদ্ধাপরাধীদের দাবীতে রাস্তায় নেমে এসেছে। নিউইয়র্ক জাগরণ মঞ্চের শত শত মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় লালিত যোদ্ধারা নিউইয়র্ক এর কঠিন শীতকে উপেক্ষা করে যুদ্ধপরাধীদের ফাঁসির দাবীতে রাস্তায় নেমেছে। বাঙালী রক্তে এখন প্রতিবাদের আগুন ধাউ ধাউ করে জ্বলছে। আগুনের এই লেলিহান শিখা এখন লন্ডন, ইটালি, রোম, কাতার সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বাঙালিদের শিরা উপশিরায় জায়গা করে নিয়েছে। কিন্তু তারপরও মনে কেন যেন শান্তি নেই। বার বার মনে হচ্ছে কোথায় যেন খুব একটা ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমার বাংলাদেশকে নিয়ে ষড়যন্ত্র। মনে শংসয় জাগে, এই ষড়যন্ত্রের মুল উৎপাটন হবে তো? আরেকটা ভয় হল জামাতকে বাঁচাতে বিএনপি এখন উঠেপরে লেগেছে। যখন তখন হরতাল ডেকে দেশটাকে ধ্বংস করে দেওয়ায় মেতে উঠেছে। সব দেখে শুনে মনে হচ্ছে এই ‘হরতাল’ নামের শব্দটি বুঝি এখন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলটির এক জাতীয় সম্পদে পরিনত হয়েছে। যখন যুদ্ধপরাধীদের ফাঁসির দাবীত গোটা বাংলাদেশের মানুষ উত্তাল ঠিক তখন এই খুনিদের বাঁচাতে বিএনপি নেতাদের কপালে গভীর চিন্তার ভাঁজ! আমরা লক্ষ্য করেছি পৃথিবীর সবদেশেই যুদ্ধ অপরাধীদের বিচার হলেও কোন এক অজানা কারনে আমাদের বাংলাদেশের যুদ্ধ অপরাধীদের বিচার হয় না। কেন বিচার হয় না? খুব জানতে ইচ্ছে করে। হে আমার জন্মদাতা দেশমাতা! স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪২ বছর পর তুমি কেমন আছ?



১৯৭১ সালের কোন এক রাত। মুক্তিযোদ্ধাদের একটা দল কোন এক অপারেশন এ যাচ্ছে। যাত্রাপথে একটি বাড়িতে এক রাতের জন্য তাদের আশ্রয় নিতে হল। বাড়িতে আছেন একজন বৃদ্ধ মা আর তার একমাত্র মেয়ে। হত দরিদ্র এই মহিলা তাঁর বাড়িতে এক ঝাক মুক্তি সেনার উপস্থিতি দেখে চোখে আনন্দ অশ্রু ধরে রাখতে পারেননি। কিন্তু মাথায় একটাই চিন্তা। এত রাতে ছেলেপেলেদের কি খেতে দেই? তখন তার মনে হল বাড়িতে তো দুটো মুরগি আছে। তাই দিয়েই এই সোনার ছেলেদের খানাপিনার একটা ব্যবস্থা করি। সাথে সাথেই পাশে বসে থাকা মেয়েটাকে বললেন, ”মুরগী দুটো এখনই জবাই করার ব্যবস্থা কর। আমার ছেলেদের জন্য রান্না বান্না করবো।” মার এই কথা শুনেতো মেয়ের চোখে বিস্ময়ের চিহ্ন! ” মা, তুমি বলছো কি? এই দুটো মুরগীর ডিম বিক্রি করে আমাদের গরীবের সংসার চলে আর তুমি কিনা এদের জবাই করার কথা বলছো? এদের জবাই করলে আমরা খাবো কি?” এবার মার গলায় আগুনের ঝংকার। ” ওরে হারামজাদি, আমাদের জীবন বড় নাকি এই মুক্তিযোদ্ধাদের জীবন বড়! আমাদের এই মুক্তিসেনার জীবন বাজি রেখে দেশটার জন্য কত বড় কাজ করতে যাচ্ছে আর তুই কিনা ভাবছিস আমাদের কথা?” না, এটা কোন বানানো গল্প নয়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন সময়েরই একটা সত্য ঘটনা। বলছিলেন ৭১ এর রনক্ষেত্রের এক মুক্তিযোদ্ধ। হতদরিদ্র এই মায়ের মত হাজার নাম না জানা মুক্তিযোদ্ধারা হারিয়ে গেছেন ইতিহাসের পাতা থেকে। যাদের কথা আমরা জানি না। অথচ যাদের চোখে ছিল স্বপ্ন। একটা স্বাধীন দেশ। নতুন দেশ যার নাম বাংলাদেশ। অনেক রক্ত ঝড়ার পর সেই কাংখিত দেশটি আমরা পেয়েছি। কিন্তু স্বাধীন সেই দেশটাকে আমরা কতটুকু দিতে পেরেছি? স্বাধীনতার সোনার ফসল কতটুকু আমরা উঠাতে পেরেছি? খুব জানতে ইচ্ছে করে। জানতে ইচ্ছে করে, স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪২ বছর পর আমার প্রাণ প্রিয় দেশ বাংলাদেশটা সত্যি ভালো কি?

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৮

আমার মন বলেছেন: ভালো নাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.