নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আফিফা আফরিন

আফিফা আফরিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

এলোমেলো ভাবনা বা প্লান বি

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:০০

যখন আমরা ছোট্ট ছিলাম, আমাদের তখন বলা হতো, বড় হয়ে কি হতে চাই? উত্তরটা অবশ্যম্ভাবী ছিলো হয় ডাক্তার না হয় ইঞ্জিনিয়ার। আমার ক্ষেত্রে সেটার ব্যতিক্রম কিছু ছিলো না। আমি ডাক্তার হতে চেয়েছিলাম বা আমাকে বলা হয়েছিলো ডাক্তার হতে হবে। আমি ডাক্তার আপা না হয়ে শেষ অবধি হয়েছি জেন্ডার আপা!!

আমরা জীবনে কত কীই না হতে চাই, কত কিছুই তো পেতে চাই, সব চাওয়া আবার আমরা চাই না, নিজেরা কিছু বুঝে ওঠার আগে আমাদের দ্বারা চাওয়ানো হয়। কখনো বাবা মা, কিংবা কখনো পরিবারের কারো কথায় নিজেদের একটা লক্ষ্য ঠিক করে ফেলি, কিছু বিবেচনা না করে সেই লক্ষ্য পূরণে ছুটে চলি, এসব আসলে জীবনটাকে কী দেয়?

আমার ছোট্ট ছোট্ট কিছু কাজিন আছে, ওদের সাথে আমি যখন কথা বলি তখন এসব ভাবনা আমাকে খুব ভাবায়। আমার পিচ্চি বোন সারাদিন জিবাংলায় নাটক দেখে বড় হয়ে কিচ্ছু না শুধু সংসারী হতে চায়। আবার তার ধ্যান জ্ঞান ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়া। আমি তাকে বললাম, তুই ক্যামনে ইউনিভার্সিটিতে পড়বি তুইতো কিছুই পড়িসনা। সেই কথা শুনে তার বক্তব্য যখন দরকার তখন পড়বো! তার আগে যে তাকে পিএসসি কিংবা জেএসসি পাশ করতে হবে সেইটা নিয়ে তার কোন মাথা ব্যাথা নাই। কারন তার অনু ভাইয়া আছে, সে তাকে প্রশ্ন ম্যানেজ করে দেবে। কী ভয়ানক চিন্তা! আমার ছোট্ট বোন এইসব কী বলে ! জীবনে পরীক্ষার হলে ঘাড় ঘুরিয়ে কথা বলার সাহস পাই নাই, আর এরা সেইসব মূল্যবোধে থুতু ছিটিয়ে ধুলিস্যাত করে দেয় নিমিষেই।

আমার পিচ্চি ভাই কিছুই হতে চায়না জীবনে শুধু পয়সা কামাই করতে চায়। সে বড় হয়ে আমাকে টয়োটা গাড়ি কিনে দেবে যে করেই হোক এইটা তার স্বপ্ন। সে আমাকে ভালোবাসে এইটা প্রমান করার নাকি একটাই উপায়, সেইটা হইলো একটা গাড়ি। কবে কোনদিন আমি পত্রিকায় গাড়ির বিজ্ঞাপনের দিকে তাকায়ছিলাম, সেইটাসে মনে রেখেছে।

ওদের এই বয়সে জীবন নিয়ে স্বপ্নহীনতা আমাকে ভাবনায় ফেলে দেয়। আমি কষ্ট পাই, ওদের এভাবে স্বপ্নহীন হয়ে বড় হতে থাকতে দেখে নিজেকে দোষী মনে হয়। মনে হয় ওদের সময় দেয়া দরকার ছিলো! আমি আমাকে যা চাপিয়ে দেয়া হয়েছিলো, যেভাবে ভাবতে শেখানো হয়েছিলো সেগুলো থেকে ওদের দূরে রাখতে চেয়েছিলাম। এখন মনে হয়, ভুল করেছি, কিছু চাপিয়ে দিলেও হয়তো ওদের একটা লক্ষ্য থাকতো। আবার মনে হয়, আরেকটু বড় হলে এসব নিয়ে ওরা অন্য রকম ভাববে। ওদের সেই স্বপ্নের বীজটুকু গড়ে উঠতে হয়তো একটু একটু সাহায্য করতে পারি, সেই স্বপ্ন অবশ্যই আমার স্বপ্ন না, বরং ওদের স্বপ্নটাই ওদেরকে বুঝতে শেখানো! জটিল কাজ, সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত।

আবার আরেক পিচ্চি বোন আছে যাকে কিনা ডাক্তার হতেই হবে- এই চিন্তা তার পুরো জীবনটাকেই এলোমেলো করে দিছে। তার গণিত এবং রসায়ন কিছুই ভালো লাগেনি, অথচ তাকে আমরা পড়িয়েছি বিজ্ঞান বিভাগে, চাপিয়ে দিয়েছিলাম উচ্চতর গণিত। সে প্রথমবার এইচএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছে। সত্যিকার অর্থে আমরা অকৃতকার্য হয়েছি! এইবার সে কোনরকম উৎরে গেছে। আমি যখন ওর সাথে কথা বলি তখনএকটা শুণ্যতা দেখতে পাই। সে পড়াশোনার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে; আমরা ওর স্বপ্নগুলোকে নষ্ট হতে দিয়েছি। সে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবে, সেখানেও এক একজন মুরুব্বি সাইন্স নিয়ে পড়ার জন্য চাপাচাপি করছিলো, আমি ওকে বলেছি কারো কথা না শুনতে, যেটা ভালো লাগে সেটা করতে। এখন তার ইচ্ছা (স্বপ্ন না) সে যদি ডিজাইনার হতেপারতো! ওকে বলার কিংবা আশা দেখানোর দুঃসাহস আমার নেই, যেটা আমি করি সেইটা হলো সব রকম চাপের বিরুদ্ধে লড়াই করতে একট সমর্থন দেয়া, যেন তার বেঁচে থাকার ইচ্ছেটাও নষ্ট না হয়ে যায়।

আমার ছোট্ট ছোট্ট ভাই বোনগুলোর চিন্তা আমাকে দারুনভাবে স্পর্শ করে। আমি তাদের কাছে হিরো। তাদের বাবা মা কোন কারনে তাদের বুঝতে শিখিয়েছে যে, ফলো হার (যদিও আহমরি কিছু ছিলাম না কখনো) !! তারাও বাবা মায়ের কাছে আব্দারগুলোও আমার মাধ্যমে করায় এবং তাদের বিশ্বাস এতে তাদের অন্যায়, ন্যায় সব ধরনের আবদার পূরণ করা সম্ভব। আমিও চেষ্টা করি তাদের ছোট্ট ছোট্ট চাওয়াগুলো পূরণ করতে। কষ্ট হলো তাদের এই চাওয়াগুলোর মাঝে আমি কোন স্বপ্নের প্রতিচ্ছবি খুঁজে পাইনা। শুধু চাওয়ার জন্যই চাওয়া, যেমনটা বাঁচার জন্য আমরা বাঁচি। প্রতিযোগীতার এই পৃথিবীতে ওদের চলার পথ যে মসৃণ হবে না সেটা আমি জানি, কিন্তু স্বপ্নময় হতে তো দোষ ছিলো না। ওদের পৃথিবীটা আরেকটু অন্য রকম হলে খুব বেশি ক্ষতি হতো কিনা, এসব আমাকে ভাবায়।

জীবনের একটা অধ্যায় শেষ করে আমি যেখানে আজ দাঁড়িয়ে আছি সেখানে একটা তৃপ্তির ঢেকুর আমিও তুলতে পারিনা, আমাকে তুলতে দেয়া হয় না। আমি যা শিখেছি, সেটা নিয়ে কাজ করার স্বপ্ন আমাকে দেখতে দেয়া হয় না যতক্ষণ না পর্যন্ত সেটা নিয়ে কাজ করার প্রথম শ্রেণির পেশা বেছে না নেই! আমার কাছে মনে হয় এইগুলি এক একটা সামাজিক ট্যাবু, সেইটা আমাদের কাউকেই সুখী হতে দেয় না। এইটা শুধু আমার অভিজ্ঞতা না, আমার অনেক বন্ধুই পেশাজীবনে প্রবেশ করেছে, কেউই কোন না কোন কারনে অসুখী। সেই অদৃশ্য কারণটা বোধ হয় ছোট্টবেলা আমাদের মনে যে সর্বনাশা বীজটা রোপন করা হয়েছিলো সেইটাই। তথাকথিত প্রথম শ্রেণির স্কুলে যাওয়া, প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হওয়া, প্রথম শ্রেণির চাকুরি করা ইত্যাদি জীবনের দ্বিতীয় চিন্তার দ্বারটাকে রুখে দিচ্ছে। আমার জীবনে কোন এক অজ্ঞাত কারণে প্ল্যান বি খুব ভালো কাজ করে। এখন মনে হয় এইটার কারণ হয়তো প্ল্যান বি গুলো আমার তৈরী করা। আমার দেখা স্বপ্নের প্রতিচ্ছুবি ছিলো প্ল্যান বি গুলোতে। হয়তো না এইটাই সত্যি !!
এরকম হতে পারতাম, ওরকমটা হলে ভালো হতো এইগুলি থেকে এখন আমি মুক্তি চাই। আমার প্রজন্ম এবং পরের প্রজন্মও মুক্তি চায় আমি নিশ্চিত !!

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৫৩

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: প্রজন্মকে সঠিক পথের আলো দেখানো দেখানে আমাদের কর্ম, সেখানে আমরাই অন্ধকারে। আর কি বলবো!

ভালো লেগেছে আপনার লেখা। ভালো থাকবেন।

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ৭:৫৬

আফিফা আফরিন বলেছেন: আপনিও ভালো থাকবেন।

২| ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:০৪

নিলু বলেছেন: যে কোন কাজই সন্মাঞ্জনক তবে তাতে নিজেকে প্রতীয়মান করতে হবে যে আমি বিজয়ী বা পারি

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ৭:৫৭

আফিফা আফরিন বলেছেন: সহমত।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.