নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আফিফা আফরিন

আফিফা আফরিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

“বউ” তোমার গৃহকর্মে মন নাই ??

২৫ শে জুন, ২০২০ রাত ৯:২৮

১। আমার মা, আমার বাসায় আসলে খুব বিরক্ত হন। কারন হচ্ছে (ওনার ভাষ্য) আমি মেরাজকে দিয়ে সংসারের কাজ করাই। যতবার বলি মেরাজ করে, ততবার উনি তেতে উঠেন। একদিন বললাম, আম্মু সারাজীবন দেখলাম আব্বু খাওয়ার আগে আমাদের টেবিলে বসাচ্ছে, পানি এনে দিচ্ছে, আমাকে খাওয়ায় দিচ্ছে, দরকার হলে কাপড় চোপড় পরিস্কার করে দিচ্ছে, নাতনীদের আদর করে কোলে নিয়ে বেরাচ্ছে, মেরাজ করলে সমস্যা কোথায়? আম্মু গজ গজ করতে থাকলেন বললেন মেরাজদের বাসায় এইগুলি পছন্দ করে না এবং ঘোষনা দিলেন আমি একটা বেয়াদব!

২। আমাদের বিয়ের পরে আব্বু যখন রংপুরে অনুষ্ঠান করলেন, মেরাজদের বাসা থেকে যারা গিয়েছিলেন বরযাত্রী হিসেবে, তারা বেশ কয়েকদিন বাসায় ছিলেন। বিয়ে বাড়ি যেমন গম গম করে, সেই রকম অপরিস্কার ও হয়। আব্বু পর পর কয়েকদিন নিজের হাতে সিড়িঘর, সামনের উঠান পরিস্কার করছিলেন। আমি দেখিও নি, আমার শ্বাশুড়ি আম্মা পরে আমাকে এই গল্প বলেছিলেন। আব্বুকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, এতগুলি কাজের লোক থাকতে তোমার অসুস্থ্য শরীরে কেন ক্লিন করতে হবে? আব্বু হাসতে হাসতে বলতেছিলো যে, ওরা সারাদিন কাজ করে ক্লান্ত, সকালে উঠেই সেটা করতে বললে হয়তো ভালো করে করতোও না।

৩। বিয়ের পর গৃহকর্ম করা নিয়ে কমবেশি মনোমালিন্য হয়েছে পরিবারের সদস্যদের সাথে। বিয়ের আগে এবং পরে কিছুটা সময় আমি একা বগুড়া থাকতাম চাকুরির সুবাদে। সপ্তাহে বেশ কিছুদিন ফিল্ডে যেতে হত, অফিস আওয়ারের ঠিক ঠিকানা ছিলো না। সুতরাং কাজের লোক রাখার সুযোগ ও ছিলো না। অফিস, বাজার, রান্না, ক্লিনিং সব একহাতে করতে হতো। করতামও। মেরাজ যতদিন বাসায় থাকতো সহযোগীতা করতো খুব। আমার শ্বাশুড়ি বেড়াতে এসে বলেই ফেললেন যে, “আমাদের বাসায় ছেলেরা কাজ করে না” । আমি বুঝতেই পারি নি উনি কেন বললেন। পরে রেফারেন্স হিসেবে ২ নম্বর ঘটনা উল্লেখ করলেন, এবং আমাকে বোঝানো হলো যে যেহেতু আমার মা বাবাকে দিয়ে কাজ করান/ বাবা বাসার কাজ করেন, সুতরাং আমি এটা শিখেছি। ঘটনা এখানেই সীমাবদ্ধ থাকে নি, সেটা আমার মাও কোন উপায়ে জানতে পেরেছেন এবং পরবর্তীতে আমাকে অপ্রয়জনীয় ভাবে শাসন করেছেন এবং এখনো করেন।

৪। অফিসের কাজে মিটিং এ বাড়ি ফিরতে দেরী হবে। শাশুড়ি বাসায়। সেটা জেনে অফিসের কলিগ ফট করে বলে বসলেন, কী, কাজে ফাকি দেয়ার জন্য মিটিং এ যাচ্ছেন? সহজ বাংলায় মানেটা হচ্ছে আমি আমার শাশুড়িকে দিয়ে ঘরের কাজ করানোর জন্য দেরী করে বাসায় ফিরবো। আমি “থ”। অপ্রয়োজনে কেউ অফিসে বসে থাকে? বা মিটিং রাখে? আমি মেয়ে জন্য আমার বাড়ির কাজ আগে? বাসায় শাশুড়ি আছেন জন্য প্রফেশনাল কাজ কে আমি প্রায়োরিটি দিতে পারবো না ?

৫। মেরাজ এর অফিসের ডে আউট। ওর সব কলিগরা ফ্যামিলি সহ বেড়াতে গিয়েছি। ওর একজন কলিগ হঠাৎ করে বলে বসলেন, “মেরাজ ভাই আপনার অফিসের ডে আউটে আসার সুযোগ হলো তাহলে”! মেরাজ বরাবরের মত হেসে চুপ। আমি ওর কলিগদের সাথে কথা বলে জানলাম মেরাজ অনেক পার্টি অ্যাভয়েড করার সুযোগ থাকলে ডুব মারে। মেরাজকে জিজ্ঞাসা করলাম, ও বললো আমার হই হুল্লোড় ভাল্লাগেনা তুমি তো জানোই। পরে বুঝলাম যে, আমি যেহেতু অফিসের প্রয়োজনে অনেক ট্যুর করি, যদি বাসায় থাকি তাহলে হয়তো আমাকে সময় দেয়, নাহলে বাসায় কেউ থাকে (আমার বাবা মা/ অথবা ওর মা), অফিসের বাহিরের সময়টা অপ্রয়োজনীয় পার্টি অ্যাভয়েড করেে। আমি হলেও অবশ্যই তাই করতাম বা করি।

এখন গৃহের কাজের পলিটিক্সটা বোঝেন ! এইসব ঘটনা উল্লেখ করা মানে শাশুড়ি আম্মা ভিলেন/ অফিস আওয়ারের বাহিরে মিটিং রাখা আমি ভিলেনই তা না, আমাদের পুরা স্ট্রাকচারটা কি পরিমান ভিলেন সেইটা বোঝার চেষ্টা করেন। আমি প্রয়োজনীয় মিটিং এ গেলে সেটা খারাপ কারন “বাসার কাজে ফাকি দিচ্ছি” মেরাজ অপ্রয়োজনীয় পার্টি অ্যাভয়েড করলে সেটা দেখা খারাপ কারন “বাসায় সময় দিচ্ছে”। যারা চাকুরি করি এবং বিবাহিত তাদের মধ্যে গুটিকয়েক সৌভাগ্যবান যাদের ফুল টাইম গৃহকর্মী আছে তারা ছাড়া বেশিরভাগ নারীকেই এই ঘরের কাজ, বাহিরের কাজ ব্যালেন্স করে চলতে জানতে হয়। ভাই, বিশ্বাস করেন কোন জ্বীন পরী এসে করে দিয়ে যায় না।

আমি একবার এইসব কোন একটা পলিটিক্স এ খুব মন খারাপ করে মেরাজকে বলেছিলাম, “আমার না বলার কোন অপসন নাই”। মেরাজ সোজা উত্তর দিয়েছিলো, “না” বলা অভ্যাস করো। তোমার সমস্যা কি, এত সারাক্ষন আমি ভালো বউ/ মেয়ে প্রমাণ করতে হবে এই ধারনা নিয়ে চলো কেন? আমি বলেছিলাম যে, এত সহজ না বুঝলে, এইগুলি এয়ার প্রেসারের মত, তুমি চাও বা না চাও আশেপাশে থাকেই।

আমাকে সবাই ভাগ্যবতী বলে। কারণ আমার জীবনটা আমি যার সাথে শেয়ার করি, তার সাপোর্ট আমি পাই । আমাদের বাসায় আমরা বাসি খাই, এবেলার তরকারি ও বেলা খাই, ভাগ করে ঘরের কাজ করি। যাদের সমস্যা হয় এইসবে তাদের আসতে “না” বলে দিয়েছি, আমার অপ্রয়োজনীয় গৃহকর্মে মন নাই। আমার যোগ্যতা বোঝার যোগ্যতা যাদের নেই তাদের আমি পুছি না !!

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে জুন, ২০২০ রাত ১০:২৬

সামু পাগলা০০৭ বলেছেন: দুলাভাই ব্যক্তিত্ববান মানুষ; লাইকে দে সে - এ স্ট্রং ম্যান ক্যান হ্যান্ডেল এ স্ট্রং লেডি, এ উইক ম্যান উইল সে শি হ্যাজ এন এটিটিউড! যেসব বরেরা শিক্ষিত ও সাকসেসফুল বউয়ের ঘর করতে পারেন না, তারা নিতান্তই ইনসিকিউর। বউ একটু পড়াশোনা করলেই ক্লাসমেটের হাত ধরে চলে যাবে, অফিসে প্রমোশন পাওয়া মানেই বসের সাথে সম্পর্ক এমন ভাবনা পোষণ করা "বেচারারা" বোঝে না একটা মেয়ের সংসার করার ইচ্ছে থাকলে সব সামলেও করবে। নাহলে অশিক্ষিত কোন মেয়ে যে সারাক্ষন বাড়িতে থাকে সেও ফেসবুকে দশটা ছেলের সাথে প্রেম করার সুযোগ বের করবে। কিছু পুরুষ ভাবেন যে নারীকে বশে রাখার একটাই উপায় - তাকে পড়াশোনা/কাজ থেকে দূরে রেখে পরনির্ভরশীল করে রাখা! এরা বুঝতেও পারে না, যে আজ আপনার সাথে অর্থ/ক্ষমতার দায়ে আছে, সে কাল অন্যকারো হাত একই কারণে ধরবে!

আপনার গুরুজনদের নিয়ে কিছু বললাম না, আমরাও তাদের যুগে মানুষ হলে এমনই ভাবতাম যে স্বামীকে ঘরের কাজ করতে দেওয়া নারীরা অলক্ষ্মী! আমি তাদের অবস্থান বুঝি এবং চেষ্টা করি মতপার্থক্য থাকলেও সম্মান বজায় রাখতে।

কিন্তু এযুগের শিক্ষিত ছেলেরা? সারাজীবন সহপাঠী, সহকর্মী হিসেবে নারীদের বুদ্ধি, গুণ, মেধা, সাফল্যের সংস্পর্শে থেকেও একই ধারণা পোষণ করেন! তারা বউ আর বুয়ার মধ্যে পার্থক্য করতে পারেন না! নাহ, গৃহবধু হবার মধ্যে বা ঘরের কাজ করার মধ্যে কোন লজ্জা নেই - আমি সেজন্য বুয়া শব্দটি ব্যবহার করছিনা। একটা মেয়ে সংসারের কাজে সাহায্য করবে স্বাভাবিক কিন্তু তাকে রীতিমত জোর করা এবং পড়াশোনা/ক্যারিয়ার ছাড়তে বাধ্য করা - এমনভাব করা যে বউ হিসেবে তার ফাংশনই হচ্ছে বাড়ির কাজ করা - এজন্যেই তাকে আনা হয়েছে এবং এর জন্যেই তাকে খেতে পড়তে দেওয়া হচ্ছে - তাহলে তো সেটা বুয়ার মতো ট্রিট করা হয়ে যায়।

আপনি তো লাকি আপু - এই মেয়েটির ভাগ্য দেখুন এবং মানুষদের মেন্টালিটি দেখুন - নই অবলা, নই সামান্যা নারী

ইউ আর এ স্ট্রং এন্ড ট্যালেন্টেড লেডি, ডোন্ট লেট এনি সোসাইটাল নয়েজ হার্ট ইউ। টেক কেয়ার। :)

২৯ শে জুন, ২০২০ রাত ১২:২৮

আফিফা আফরিন বলেছেন: ধন্যবাদ সামুপাগলা। ভালো থাকবেন।

২| ২৫ শে জুন, ২০২০ রাত ১০:২৭

রাজীব নুর বলেছেন: বউ এর চেয়ে প্রেমিকা ভালো।
বউ বিরক্তকর। প্রেমিকা আনন্দময়ী।

২৯ শে জুন, ২০২০ রাত ১২:২৭

আফিফা আফরিন বলেছেন: অনেক অভিজ্ঞতা বুঝি!!! যেভাবেই থাকুন, ভালো থাকুন আর অপরকেও ভালো থাকতে দিন।

৩| ২৬ শে জুন, ২০২০ রাত ১২:০৮

কহেন কবি কালীদাস বলেছেন: একটা মেয়ে বিয়ের পড়ে চাইলে চাকুরি করতে পারেন বা সংসারের কাজ করতে পারেন। সেটা নির্ভর করবে তার পারিপার্শ্বিক অবস্থার উপরে।
সমস্যা হোলও, বেশীরভাগ মানুষের ধারনা হোলও, সংসারের কাজ কোন কাজ না। যার ফলে সম্মান তেমন পাওয়া যায় না। ফলে আমি মনে করি বেশীরভাগ মেয়েরা চায় চাকুরি করতে চায় যাতে সংসারে তার সম্মান থাকে, কেউ খোটা দিয়ে বলতে না পারে-সারাদিন কি কর!
তবে যারা মনে করে সংসারে বউ/মা/ বোন কি করে, তাদের বলবো, আপনারা পারলে প্রতি সপ্তাহে ছুটির দিনে সংসারের কাজ করবেন, যেভাবে আপনার বউ/মা/ বোন করে। তাইলে টের পাবেন, চাকুরি করার চে সংসারের কাজ অনেক কঠিন। এবং সম্মান তখন এমনি এমনি চলে আসবে, মন থেকেই।

২৯ শে জুন, ২০২০ রাত ১২:৩২

আফিফা আফরিন বলেছেন: আসলেই কিন্তু। মূল ব্যাপার পারস্পারিক সমঝোতা ও সম্মানবোধ নিজের প্রতি, পাশের মানুষটির প্রতি। তার কাজের প্রতি, সেটা যাই হোক না কেন। কোনো কাজ ছোট বা তুচ্ছ নয়। সব কাজেরই ভ্যালু বা বিনিময় মূল্য আছে।

আপনাকে ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য।

৪| ২৮ শে জুন, ২০২০ দুপুর ১২:২১

শায়মা বলেছেন: আপুনি তোমার জন্য আর মেরাজভাইয়ার জন্য অনেক অনেক ভালোবাসা। অনেক অনেক ভালো লাগলো জেনে অন্তত মেরাজ ভাইয়া বুঝেন কোনটা সঠিক আর কোনটার দামই নাই আসলে। অনেক অনেক ভালো থেকো দুজনে!!! :)


আর শ্বাশুড়ি বশীকরণ মন্ত্র লাগলে আমাকে বলো....... এক ফুয়ে চোখে ধুলো কানে কুলো বশিয়ে দেবো তার..... :P

২৯ শে জুন, ২০২০ রাত ১২:২৬

আফিফা আফরিন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপু আপনার মিষ্টি মন্তব্যের জন্য। শ্বাশুড়ি বশীকরণ মন্ত্র লাগলে আপনার কাছেই যাবো :P

৫| ২৮ শে জুন, ২০২০ দুপুর ১২:২৩

শায়মা বলেছেন: ৩. ২৬ শে জুন, ২০২০ রাত ১২:০৮০

কহেন কবি কালীদাস বলেছেন: একটা মেয়ে বিয়ের পড়ে চাইলে চাকুরি করতে পারেন বা সংসারের কাজ করতে পারেন। সেটা নির্ভর করবে তার পারিপার্শ্বিক অবস্থার উপরে।
সমস্যা হোলও, বেশীরভাগ মানুষের ধারনা হোলও, সংসারের কাজ কোন কাজ না। যার ফলে সম্মান তেমন পাওয়া যায় না। ফলে আমি মনে করি বেশীরভাগ মেয়েরা চায় চাকুরি করতে চায় যাতে সংসারে তার সম্মান থাকে, কেউ খোটা দিয়ে বলতে না পারে-সারাদিন কি কর!
তবে যারা মনে করে সংসারে বউ/মা/ বোন কি করে, তাদের বলবো, আপনারা পারলে প্রতি সপ্তাহে ছুটির দিনে সংসারের কাজ করবেন, যেভাবে আপনার বউ/মা/ বোন করে। তাইলে টের পাবেন, চাকুরি করার চে সংসারের কাজ অনেক কঠিন। এবং সম্মান তখন এমনি এমনি চলে আসবে, মন থেকেই।



হা হা হা হা কালিদাস ভাইয়ার কথা শুনে আজ বুঝলাম কালিদাস পন্ডিৎ কাহাকে বলে!!! :P

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.