নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একটা বৈষম্যহীন সমাজের স্বপ্ন নিয়ে, আমি প্রান্তিক জনতার কথা বলতে এসেছি...!

অগ্নি সারথি

একটা বৈষম্যহীন সমাজের স্বপ্ন নিয়ে, আমি প্রান্তিক জনতার কথা বলতে এসেছি.......!

অগ্নি সারথি › বিস্তারিত পোস্টঃ

হরতাল, নাস্তিক- আস্তিক এবং মানবতা

০৮ ই মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১:২৭

গত বৃহস্পতিবার (২৮ শে ফেব্রুয়ারী) জামায়াতের হরতালের ঠিক আগের দিন রাতে সিদ্ধান্ত নিলাম দেশের বাড়িতে যাওয়া দরকার। আমি চাকুরিরত নব্য বিবাহিত তাই আন্দোলনের থেকে আমার সংসার ধর্মটাই মূখ্য মনে হয়েছে। বউ আমার দেশে থাকে। শাহবাগে না গিয়ে দিনাজপুরে যাওয়াটাই ফরজ মনে হয়েছে। বুধবার রাতে নাবিল পরিবহনের পঞ্চগড় গামী পৌনে ১১ টার একটা গাড়িতে খুব কষ্ট করে একটা সিট পেয়ে যাই। সিট পেয়েছি শুনে আমার বউ খুব খুশি। তার একটাই কথা তোমার ওসব আন্দোলনে যাওয়ার লাগবেনা। তুমি বাড়ি আসো। আন্দোলনে আমাদের কাজ নেই। সামনে তো শুক্র, শনি তোমার বন্ধ থাকে। তিনদিন তোমাকে কাছে পাব। মনের মধ্যে এটুকু আশা নিয়ে নিয়ে আমি বাড়ির পথে যাত্রা করি যে সকাল ৬ টার মধ্যে ইনশাল্লাহ আমি দশ মাইলে যেতে পারব (দশ মাইল দিনাজপুর শহরের সামনে একটা বাজার তিন রাস্তা, যার একটা রাস্তা যাবে পঞ্চগড়, ঠাকুরগাও, একটা দিনাজপুর এবং আরেকটা সৈয়দপুর, রংপুর)। দশ মাইল গেলে পরে একটা ভ্যান গাড়িতে করে দিনাজপুর যেতে পারব কোন সমস্যা ছাড়াই। ঠিক সকাল ছয় টার দিকে আমার গাড়ি যখন রংপুরের সামনে তখন আমার ভয় হওয়া শুরু হয়। হরতাল তো শুরু হয়ে গেছে, এখন কি পারব রংপুর পার হতে, গাড়ি আটকিয়ে দিবে না তো জামাতি গুলা। গাড়ি কোন ঝামেলা ছাড়াই রংপুর পার হয়, সৈয়দপুর পার হয়। সকাল ৭ টা ১৫ এর দিকে আমাদের গাড়ি সৈয়দপুর পার হয়ে রানীর বন্দর নামের একটা ছোট বাজারের সামনে একটা পেট্রল পাম্পে ঢুকিয়ে দেন ড্রাইভার সাহেব। সেখানে আরো বেশ কিছু হাইওয়ে বাস এবং যাত্রীদের উদ্বেগ দেখে আমার আর বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, এখানে হরতালটা বেশ করা। না হলে যেখানে সারা বাংলাদেশে কোন পিকেটার এত সকালে বের হয় না, তারা কেন বের হয়েছে। বাস আর যাবে না। আমার গাড়িতে এক মহিলা তার দুই বাচ্চাকে নিয়ে পড়েছেন বিপদে। তিনি যাবেন পঞ্চগড়ে। পঞ্চগর সেখান থেকে প্রায় ১২০/১৩০ কিলোমিটার দূরে। আমাকে এসে বার বার বলছেন ভাই আমি কি করব? এই দুই বাচ্চাকে নিয়ে কিভাবে যাব এতটা রাস্তা। তার চিন্তায় এবং বাচ্চা দুটোর নির্ঘুম, ক্লান্ত মুখের দিকে তাকিয়ে আমার খুব মায়া হল। ইতোমধ্যে পেট্রল পাম্পে কিছু ভ্যান গাড়ি চলে এসেছে। তারা দশ মাইল পর্যন্ত আমাদের নিয়ে যেতে রাজী আছে। ভাড়া ৩০ টাকা। আমি সেই মহিলাকে বলি আগে ভ্যানে উঠেন, দশ মাইল যাই তারপর চিন্তা করা যাবে। মহিলা ভ্যানে উঠবেন না। তিনি তখনো আশা ছাড়েন নাই, মনে করেছেন গাড়িটি যাবে। রীতিমত তাকে জোড় করে ভ্যানে উঠতে বলি এবং বাচ্চা দুটোকে ভ্যানে উঠিয়ে দেই। পাম্প থেকে আমরা যখন রানীর বন্দর বাজারে প্রবেশ করি তখন দেখি রাস্তার মাঝ খানে টায়ার জ্বালিয়ে হরতাল পালন করছেন আমাদের ইসলামের কিছু ঠিকাদার। তাদের চিৎকার চেচামেচিতে অন্য ভ্যান চালকেরা ভয়ে একটা মাটির বাইপাস রোড দিয়ে একটা গ্রামে ভ্যান ঢুকিয়ে দেন। আমি সাহস করে পিকেটার দের কাছে গিয়ে তাদের অনুরোধ করি যে ভাই এই মহিলা এবং বাচ্চা দুটো যাবে পঞ্চগড়। প্লিজ এদের মুখের দিকে তাকিয়ে আমাদের যেতে দেন। ভ্যানেই তো যাচ্ছি। গাড়িতে তো আর যাচ্ছি না। তারা আমাকে উল্টা চার্জ করা শুরু করে যে হরতাল জেনেও আমরা কেন গাড়িতে উঠেছি। তাদের আমি বলি যে ভাই আমাদের যমুনা ব্রিজে জ্যামে অনেক দেরী হয়ে গেছে। বুঝতে পারি নাই। বুঝলে আসতাম না। এরপর ও তারা যেতে দিবে না। এক পর্যায়ে আমি রেগে গিয়ে তাদের বলি আপনারা কি মানুষ? আল্লাহ্‌ আল্লাহ্‌ করেন আপনারা তাহলে আপনাদের মনে তো অনেক দয়া থাকার কথা? এটা কি, ইসলাম বলে? আর যায় কোথায়? কিছু বাচ্চা ছাগু আমার দিকে ঐটা ছাত্রলীগ বলে তেড়ে আসে। গায়ে হাত তুলে নাই। কিন্তু মারার জন্য তেড়ে আসে। আমার ভ্যানে বসা শিশু দুটি ভয়ে চিৎকার দিতে থাকে। তাদের অবস্থা এবং নিজের অবস্থা বেগতিক দেখে আমি চুপ হয়ে তাদের কাছে ক্ষমা চাই। ভ্যান চালক কে বলি গ্রামে ভ্যান নিয়ে যেতে। সেদিক দিয়ে ঘুরে যেতে বেশ সময় লাগবে বলে তিনি জানান। আমি তাকে বলি তুমি চল ভাই, ভাড়া বেশি লাগলে দিব। আমার ভ্যান যখন ঘুরে গ্রামে ঢুকছিল তখন দেখি চরমোনাই পীরের একটা বাস আসে। তারা মনে হয় উরসে যাচ্ছিল। প্রথমে পিকেটার রা সেই বাসটিকে আটকিয়ে রাখে। পরে শুনেছি তারা সেটাকে নির্বিঘ্নে যেতে দেয়। হায় রে ধার্মিক, অবোধ শিশু দুটির দিকে তোদের চোখ পরে না, কিন্তু উরসে যাওয়া টুপিওয়ালাদের ফেরেসতা জানলি। থু তোদের মুখে।

এরপর আমরা দশমাইল এর পথে, গ্রাম ঘুরে রওনা দেই। ভ্যান চালকের নাম শীতেন। সে বলা শুরু করে, স্যার আমাদের এই এলাকায় হিন্দু নাই তো তাই জামাতের এত প্রতাপ (প্রভাব)। আমি তাকে বলি আপনারা লোক ভাল না। শীতেন বলেন, স্যার এটা আমাদের দোষ না। আজকের হরতাল আপনাদের, মুসলমানদের। আমি তাকে জিজ্ঞেস করি, মুসলমানদের হরতাল তুমি জানলা কি করে? তিনি উত্তরে বলেন, স্যার গত কালকে তারা (জামাত- শিবির) বলছে এটা মুসলমানের হরতাল। নাস্তিক না কি, যেন তাদের বিরুদ্ধে। সে আমাকে জিজ্ঞেস করে, নাস্তিক কি স্যার আমরা (হিন্দু)? সে এটুকু বুঝতে পেরেছে যে যারা নাস্তিক তারা মুসলমান নয়। তাকে একটু উদ্বিগ্ন মনে হয়। সে নিজের মনেই বলে যায়, আমার কোন চিন্তা নাই স্যার ভারতে আমার অনেক কুটুম (আত্মীয়) আছে। কিছু হলেই ওখানে চলে যাব। ওরা আমাকে ফেলে দিতে পারবে না। গত দিন আমার হঠাত করে এরশাদ সাহেবের কথা মনে পড়ে যায়। তার কথাই কি ঠিক? হরতাল কি মুসলমানের? না হলে এরশাদ সাহেব কেন শাহাবাগের উদ্দেশ্যে বললেন- ইসলাম ভাল না লাগলে ধর্মান্তরিত হোন । শীতেন তার মত করে ভ্যান চালাতে থাকে। তার ভ্যানে শব্দ হয় ক্যাচ ক্যাচ। প্রায় দেড় ঘন্টা লাগে আমাদের দশ মাইল মোড়ে পৌছাতে। সেখানে এসে দেখি হরতালের কোন চিহ্ন নাই। বাস না চললেও ভটভটি গুলো অবলীলায় চলছে। আমি সেই আপা এবং বাচ্চা দুটোকে একটা ভটভটিতে তুলে দেই। সেটাতে করে তারা যাবেন বীরগঞ্জ। সেখান থেকে আবার ভটভটিতে যাবেন ঠাকুরগাও, তারপর পঞ্চগড় কিভাবে যাবেন জানি না। মহিলা বলেন ভাই অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। আপনি না থাকলে থাকলে অনেক ভয় পেতাম। কি করতাম বাচ্চা দুটোকে নিয়ে জানিনা। মহিলাকে বিদায় দিয়ে আমিও দিনাজপুরের দিকে একটা ভটভটিতে রওনা দেই। হঠাত মনে হল মহিলার নাম্বার নেয়া হয় নি। নিজের মনেই ভাবতে থাকি থাক। নাম্বার না নেয়াই ভাল। নতুন সম্পর্ক আর করতে চাই না । আবার হয়ত জীবনে কোন দিন তার সাথে দেখা হবে। হয়ত আবার কোন হরতালে। (চলবে)

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৪

মহামহোপাধ্যায় বলেছেন: অসহায়ের উপর জুলুম কখনোই ইসলামের শিক্ষা নয়। এরা শুধু পোষাকেই ইসলাম ধারণ করেছে, অন্তরে নয়।

০৮ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৪:৪৭

অগ্নি সারথি বলেছেন: সহমত

২| ০৮ ই মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৫৯

আব্দুর রহ্‌মান বলেছেন: খারাপ লাগলো। লেখা নয়, লেখার কথাগুলো।

০৮ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ৮:৪৫

অগ্নি সারথি বলেছেন: স্যার গত কালকে তারা (জামাত- শিবির) বলছে এটা মুসলমানের হরতাল। নাস্তিক না কি, যেন তাদের বিরুদ্ধে। সে আমাকে জিজ্ঞেস করে, নাস্তিক কি স্যার আমরা (হিন্দু)? সে এটুকু বুঝতে পেরেছে যে যারা নাস্তিক তারা মুসলমান নয়। তাকে একটু উদ্বিগ্ন মনে হয়। সে নিজের মনেই বলে যায়, আমার কোন চিন্তা নাই স্যার ভারতে আমার অনেক কুটুম (আত্মীয়) আছে। কিছু হলেই ওখানে চলে যাব। ওরা আমাকে ফেলে দিতে পারবে না।

৩| ০৮ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ৮:৫৫

ঝটিকা বলেছেন: আপনাকে শ্রদ্ধা জানায়, অসহায় মহিলাকে এভাবে সাহায্য করার জন্য।

০৮ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ৯:১০

অগ্নি সারথি বলেছেন: মহিলার অসহায়ত্বের চেয়ে শীতেনদের অসহায়ত্ব অনেক বেশি বেদনাদায়ক। নিজের দেশে কতটা অনিরাপদ থাকলে একটা মানুষ শীতেনের মত কথা বলতে পারে!!!!! ভেবেছেন কি?
ধন্যবাদ এত বড় লেখা পড়ার জন্য।

৪| ০৮ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ৯:৪৯

প্রেম_হীন_পথিক বলেছেন: হাজার হাজার ধন্যবাদ ভাই, প্রত্যেকেই যদি অন্যের উপকারে আসতে পারি, তবেই মানুষ নামের স্বার্থকতা।
হয়ত কোনদিন ঐ শিশু দুটি আপনার কাছ থেকে পাওয়া শিক্ষা কাজে লাগাবে, কোন অপরিচিত মানুষকে বিপদে সাহায্য করবে।
ভাল থাকবেন।

০৮ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ৯:৫৬

অগ্নি সারথি বলেছেন: আমার জায়গায় আপনি থাকলেও, শিশু দুটিকে ফেলে রেখে আসতে পারতেন না। কারন আপনি, তাদের কেউ নন। আমি এখনো শিশু দুটির ভয়ার্ত মুখ মনে করলে আতকে উঠি।

৫| ০৯ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৭

রাজীব দে সরকার বলেছেন: ভালো লেখা
খুবই মর্মস্পর্শী - আমরা কিছু পশুর সাথে বসবাস করি, এটাই দুঃখ
মনে মনে, আমরা সবাই এক একজন শীতেন

আশা করি, আরো লিখবেন

০৯ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৫:২৩

অগ্নি সারথি বলেছেন: শীতেনদের সরলতাকে কোটি কোটি লাল সালাম,, যারা পশুদের এমন পাশবিক নির্যাতনে এখনো পশু হয়ে উঠে না।

৬| ০৯ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৫:১২

এেলক্সান বলেছেন: জামাতের ইসলাম আর দ্বীন ইসলামের মাঝে অনেক তফাৎরে ভাই।

০৯ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৫:২৫

অগ্নি সারথি বলেছেন: কিসের সাথে কার তুলনা?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.