নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একটা বৈষম্যহীন সমাজের স্বপ্ন নিয়ে, আমি প্রান্তিক জনতার কথা বলতে এসেছি.......!
‘দলিত’ শব্দটার আভিধানিক অর্থ মর্দিত, পদদলিত, পিষ্ট, দমিত, শাসিত, নিপীড়িত। বাংলাদেশের ‘দলিত’ সম্প্রদায় গুলোর অবস্থাও এমন। তারা মর্দিত, পদদলিত, পিষ্ট, দমিত, শাসিত, নিপীড়িত। দেশের দলিতরা ১৪টি দলিত সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত- বর্মন, ধোপা, মালো, বাগদি, নমশূদ্র, কায়পুত্র, রবিদাস, জলদাস, করনিদাস, মায়মল, বাহেরারা, রাজকরলী এবং ঋষি। সংখ্যায় এরা প্রায় ৬৫ লাখ। দলিতদের দলনের ইতিহাস বহু প্রাচীন, শোষণ-নির্যাতন যেন তাদের ভাগ্যের লিখন। বংশ পরম্পরায় এই দলিতরা মূল স্রোতধারা থেকে বিচ্ছিন্ন। সাধারনত দূর্গন্ধ, খারাপ, নিচু, বিশ্রী, অপবিত্র কাজই দলিতদের জন্য নির্ধারিত যেমন- সুইপার, ঝাড়ুদার, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ, চামড়ার কাজ, শব দাহ করার কাজ ইত্যাদি। দারিদ্র্য,স্বাস্থ্য,শিক্ষা এবং বাসস্থানের সমস্যা, কর্মক্ষেত্রে অসম সুযোগ,নারীদের প্রতি বৈষম্য,দাসশ্রম এবং শিশুশ্রম দলিতদের জন্য নৈমত্যিক ব্যপার। তাদের নিজস্ব এলাকার বাইরে বসবাসের জন্য কোনো ঘর ভাড়া করতে বা গৃহ নির্মাণ করতে অথবা জমি পর্যন্ত ক্রয় করতে দেওয়া হয় না। হোটেলগুলোতে প্রবেশের ক্ষেত্রেও তাদেরকে অনেক রকম বিধি-নিষেধের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। যেমন- হোটেল গুলোতে প্রবেশ করতে না দেয়া, হোটেলের থালা-বাসন, গ্লাসে খেতে না দেয়া ইত্যাদি। অপহরণ, ধর্ষণ, অত্যাচার, বসতবাড়ি উচ্ছেদ ও ধ্বংস,জোরপূর্বক অবৈধভাবে জমির অধিকার হরণ,জমি হতে উচ্ছেদ,ভয়-ভীতি প্রদর্শন এগুলো দলিতদের জীবনে নিত্ত নৈমত্তিক ঘটনা।
রামদাস মুচির ভক্তিতে,
গঙ্গা এল চামকেটোতে।
সে রূপ সাধলো কত মহতে
লালন কূলে কূলে বায়।
অনুরাগ নইলে কি সাধন হয়...
সে তো শুধু মুখের কথা নয়।
লালন পদাবলীতে বেশ কয়েক জায়গায় এই রামদাস মুচী নামটি এসেছে। আমি জানিনা লালন কি অর্থে এই নামটির ব্যবহার করেছিলেন, এটা কি তার শুধুই জাত-পাতের একটা বিরুদ্ধাচরন ছিল নাকি অন্য কিছু, জানিনা। তবে এটুকু বুঝি যে রামদাস মুচি তার কাছে খুব গুরুত্বের একটা জায়গায় ছিলেন।
কুমিল্লা শহরের শাসনগাছায় রেল স্টেশনের পাশে, রেল লাইনের ধারে তেমনই এক ‘মুচি’ কমিউনিটির অবস্থান। কমিউনিটির নাম রবিদাস বাড়ি। মাত্র ৫০ শতক জায়গার উপরে ৫০/৬০ টা পরিবার গিজগিজ করে থাকে। ছোট ছোট ঘর গুলোতে গিজ গিজ করে পরিবারের সদস্যরা।
ছবিঃ রেল লাইনের পাশে রবিদাস বাড়ি
ছবিঃ রবিদাস বাড়ির ঘরগুলো
ছবিঃ রবিদাস বাড়ির ঘরগুলো
ছবিঃ বসতিতে যাওয়া আসার রাস্তা গুলোর একটি
ছবিঃ বসতি সংলগ্ন পেছনের অংশ
এখানে বসবাসকারী ‘মুচী’ সম্প্রদায়ের মানুষেরা, নিজেদেরকে রবিদাস বলে পরিচয় দিলেও এলাকার মানুষজন অনেকেই জানেও না যে এসব মানুষের আরেকটা ভাল নাম রয়েছে, যে নামে তারা পরিচিত হতে উষ্ণ অনুভব করে, যে নামে দাসত্ব কিংবা অবহেলার নামধারী জীবন যাপন করতে চায়না। রবিদাসেদের দাসত্ব আর অবহেলায় ভরা জীবন বুঝতে গেলে শুরু করতে হবে সুদূর অতীত হতে, মুঘল আমলের শেষের দিকে। আনুমানিক সতেরো শতকের শুরুর দিকে ভারতবর্ষ থেকে কিছু মানুষকে এই অঞ্চলে নিয়ে আসা হয় সুইপার, ঝাড়ুদার, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ, চামড়ার কাজ, শব দাহ করা ইত্যাদি কাজ করার জন্য। আর সেই থেকে আজ পর্যন্ত এটা তাদের বংশগত এবং ঐতিহ্যগত পেশা হয়ে যায়। যুগের পর যুগ সভ্য সমাজ, রাষ্ট্র, ব্যাক্তি তাদের জন্য এমন সব সিস্টেম তৈরি করে রাখে, যা থেকে আজ পর্যন্ত তাদের পরিত্রান হয় নি।
কুমিল্লা শহরে এইসব রবিদাসেরা পরিচিত ‘মুচি’ নামে আর তাদের কমিউনিটি ‘মুচি বাড়ি', একজন রবিদাস বলছেন তার নাম ‘রামপীরিত রবিদাস’ কিন্তু প্রতিনিধিত্বশীল সমাজ, ব্যাক্তি, রাষ্ট্রের কাছে সে ‘অফিসিয়ালি’ এবং ‘আন অফিসিয়ালি’ পরিচিত ‘রামপীরিত মুচি’ নামে। কুমিল্লা শহরে, এমনকি খোদ শাসনগাছাতে গিয়েও যদি কেউ রবিদাস বাড়ি অথবা রবিদাস বলে কারো খোঁজ করেন তাহলে অনেকেই বলতে পারবেনা আমি নিশ্চিত। কিন্তু কেউ যদি ‘মুচি’ নামে অথবা 'মুচি বাড়ি' বলে খোঁজ করে তাহলে সেটা সকলেই বলে দিবে। সকলেই জানে ‘মুচি’ কারা। কোনটা মুচি বাড়ি। তাহলে এখানে প্রশ্ন এসে যায়, এই রবিদাস নামে যদি তাদের খুজে পেতে, আইডেন্টিফাই করতে এত সমস্যা হয়, এরপরও তারা কেন এই নামটা গ্রহন করতে এত স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে?
এই রবিদাস নাম স্টাবলিস্ট করার মধ্য দিয়ে একভাবে, তাদেরকে নিয়ে সমাজের যে সামগ্রিক স্টাবলিস্টমেন্ট, তা খারিজ করে দিয়ে নতুন এক ধরনের স্টাবলিস্টমেন্টের দিকে যাওয়ার প্রবনতা তাদের যেখানে তারা মানুষের মর্যাদায় আসীন হবে। থাকবে নাম, যশ, খ্যাতি, সম্মান, নিরাপত্তা ও অধিকার। এটা এক ধরনের প্রতিরোধ। প্রতিরোধ, এই সমাজ, রাষ্ট্র তথা ব্যাক্তির তৈরি করে দেয়া সিস্টেমগুলোর প্রতি যেগুলো তাদেরকে যুগের পর যুগ, শতাব্দীর পর শতাব্দী 'মুচি' করে রেখেছে। আর তারা ‘মুচি’ নয়, বরং এবার রবিদাস হতে চায়। হতে চায় দেশের আর দশটা সাধারন মানুষের মত। এ যেন তার অধিকার আদায়ের যুদ্ধের ক্ষুদ্র একটা পদক্ষেপ.................
২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৯:৩৫
অগ্নি সারথি বলেছেন: ধন্যবাদ।
বর্মন, ধোপা, মালো, বাগদি, নমশূদ্র, কায়পুত্র, রবিদাস, জলদাস, করনিদাস, মায়মল, বাহেরারা, রাজকরলী ঋষি এদের সকলকেই হরিজন নাম দিয়েছিলেন মহাত্মা গান্ধী।
২| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৯:৩৯
রুয়াসা বলেছেন: চমৎকার পোস্ট। চলুক। সাথে আছি।
২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৯:৪৪
অগ্নি সারথি বলেছেন: মাথার মধ্যে অনেক কিছুই গিজগিজ করে কিন্তু সময় এবং ধৈর্য্য হয় না। যাই হোক মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
৩| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৯:৪৭
এক্সট্রাটেরেস্ট্রিয়াল স্বর্ণা বলেছেন:
চমৎকার পোষ্ট! আপনার আগের পোষ্টগুলো দেখলাম, আপনি আগেও জ্ঞানী পোষ্ট দিতেন
কেমন আছেন?
২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:০৪
অগ্নি সারথি বলেছেন: ধন্যবাদ। জ্ঞানী চোখে আসলে সব কিছুই জ্ঞান গর্ভ হয়ে উঠে। যা দেখি,শুনি,অনুভব করি, আমি স্বপ্নি। তাই গল্পে রুপ দিতে চাই এর মধ্যে কোনটা জ্ঞানী পোস্টের তালিকায় চলে যায় ঠাহর করে উঠতে পারিনা।
ভাল আছি। কুমিল্লাতে ছিলাম কয়েকটা দিন। ব্লগে আসার সময় পাই নাই।
আপনি কেমন আছেন? ঘরে চাল নাই। বিরিয়ানী খাওয়াতে পারলাম না আইজকা। চা আর বিস্কিট দিলাম-
©somewhere in net ltd.
১| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৭:১২
ভারসাম্য বলেছেন: ভাল পোষ্ট।
হরিজন কি আলাদা কোন সম্প্রদায়? আমি শুনেছিলাম, দলিতদের বা কোন একটি দলিত সম্প্রদায়কে গান্ধীজি 'হরিজন' নাম দিয়েছিলেন।
+++