নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একটা বৈষম্যহীন সমাজের স্বপ্ন নিয়ে, আমি প্রান্তিক জনতার কথা বলতে এসেছি.......!
গত পর্বের লিংকঃ
মারমা জাতিস্বত্ত্বার জীবন কথা- পর্ব এক
মারমা জাতিস্বত্ত্বার জীবন কথা- পর্ব দুই
মারমা জাতিস্বত্ত্বার জীবন কথা- পর্ব তিন
ছবিঃ বোমাং রাজপূন্যাহ
ক্রেডিটঃ demotix.com
রাজপূন্যাহ মূলত হচ্ছে সার্কেল চিফের তথা রাজার বাৎসরিক খাজনা আদায় উৎসব যাকে স্থানীয় ভাষায় বলা হয় প্যইজ্ঞারা। ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে ৫ম বোমাং রাজা সাক হ্ন ঞো প্রথম রাজপুণ্যাহর আয়োজন করেন। পাহাড়ে জুম উঠে যাওয়ার পর সাধারনত জানুয়ারী-ফেব্রুয়ারী মাসের দিকে জুমচাষীদের কাছ থেকে খাজনা আদায় করা হয়। এ সময় রাজার পক্ষ হতে রাজপূন্যাহর আয়োজন করা হয়ে থাকে। রাজা এক ধরনের মেলার/উৎসবের আয়োজন করেন যেখানে প্রজাদের মনোরঞ্জনের জন্য থাকে যাত্রা, সার্কাস, বিভিন্ন পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর জীবন-সংস্কৃতি সংশ্লিষ্ট নাচ-গান-নাটক, ঐতিহ্যবাহী পণ্যসামগ্রীর মেলাসহ নানা রকমের বিনোদনের ব্যবস্থা থাকে। এ উৎসবকে ঘিরে রাজবাড়ীতে সাজ সাজ রব শুরু হয়। কয়েকদিন ধরে চলে এই অনুষ্ঠান। রাজকীয় সাজসজ্জা আর বিউগলের সুরে মুখরিত থাকে রাজপুণ্যাহর দিনগুলো। রাজা রাজ পোশাক পরে এবং গার্ড অব অর্নার গ্রহনের মাধ্যমে রাজবাড়ী থেকে সৈন্য-সেনা সহ মঞ্চে আসেন। বিভিন্ন মৌজার হেডম্যান-কারবারীগণ রাজপুণ্যাহ তে অংশ নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের ট্যাক্স রাজার হাতে তুলে দেন। ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন বিধি অনুযায়ী প্রতিটি জুমিয়া পরিবারকে জুম ট্যাক্স হিসেবে এক বছরের জন্য ৬ টাকা করে প্রদান করতে হয়। এই ৬ টাকা হতে বোমাং রাজা ২.৫০ টাকা গ্রহন করেন, হেডম্যান গ্রহন করে ২.২৫ টাকা এবং বাকী টাকা চলে যায় সরকারী রাজস্বে।
আধুনিক যুগে ফিকে হয়ে আসা এই রাজতন্ত্রের রাজাদের মূলত ট্যাক্স আদায় আর বিচার-শালিস ছাড়া তাদের রাজত্বে তেমন কোন ভূমিকা নেই। ১৯০০ সনের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন বিধি অনুযায়ী এই রাজাকে 'সার্কেল চিফ' হিসেবে জেলার ডেপুটি কমিশনারের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন তথা সাব-কালেক্টর বা সরকারের খাজনা আদায়কারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। খাজনা আদায় ও এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখাসহ অপরাধ দমনে মৌজা হেডম্যানদের প্রতি আদেশ- নির্দেশ ও পরামর্শ প্রদান, আদায়কৃত খাজনা সরকারী কোষাগারে জমাদান নিশ্চিত করন, এলাকার জনগণের মধ্যে শিক্ষা বিস্তার ও স্বাস্থ্য সচেতনতা সৃষ্টিতে ব্যক্তিগত প্রভাব বিস্তার, নিজ সার্কেলের অধীন মৌজাসমূহে ডেপুটি কমিশনারের আদেশ নির্দেশ কার্যকরীকরণ ইত্যাদি কর্মকান্ড তাকে পালন করতে হয়।
১৮৯২ সনের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন বিধি অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামে মৌজা ব্যবস্থার উদ্ভব ঘটে। যেখানে ৩৩টি তালুককে ১.৫ থেকে ২০ বর্গমাইল এলাকা নিয়ে মৌজায় বিভক্ত করা হয়। পরবর্তীতে ১৯০০ সনের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন বিধিতে (হিল ট্রাক্টস ম্যানুয়েল) তিনজন রাজার ৩টি সার্কেলকে মৌজায় বিভক্ত করার পুনঃবিধান করা হয় এবং প্রত্যেক মৌজায় ১ জন করে মৌজা হেডম্যান নিয়োগের বিধান রাখা হয়। এই বিধি মতে, সার্কেল চীফের (রাজা) সাথে পরামর্শ করে ডেপুটি কমিশনার মৌজা হেডম্যান নিয়োগ করেন। সার্কেল চীফ তথা রাজার মত হেডম্যান নামক এই পদটি বংশানুক্রমিক নয় তবে হেডম্যানের উপযুক্ত পুত্র হেডম্যান পদে নিয়োগ লাভের বেলায় অগ্রাধিকারের দাবী রাখেন। উক্ত বিধি অনুযায়ী একজন হেডম্যান তাঁর মৌজায় নিম্নোক্ত দায়িত্ব পালন করতে পারেনঃ
১। জুমিয়া জমির মালিকদের কাছ থেকে খাজনা আদায়
২।ডেপুটি কমিশনার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং সার্কেল চীফের আদেশ মেনে চলা
৩। শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা
৪। মৌজায় চাষাবাদের আওতাধীন এলাকার (আয়তনের) কোনো পরিবর্তন ঘটলে তৎসম্পর্কে ডেপুটি কমিশনারকে অবহিত করা
৫। জুম চাষ নিয়ন্ত্রণ করা
৬।জুম তৌজি তথা জুমিয়ার তালিকা প্রস্তুত করা
৭। জুম খাজনা প্রদান থেকে রেহাই পাবার জন্য অন্যত্র পালিয়ে যাবার প্রস্তুতি নেয়া প্রজার সম্পত্তি আটক
৮। মৌজার প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষন
৯। সরকারী ভূমি বন্দোবস্ত, হস্তান্তর, ভাগ-বন্টন এবং পুনঃ ইজারা প্রদানের ক্ষেত্রে সুপারিশ প্রদান
উপরোক্ত দায়িত্ব ছাড়াও উক্ত বিধি হেডম্যানকে কিছু বিচারিক ক্ষমতাও প্রদান করে। এবং একটা বিচারকার্যে তিনি সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহন ও দোষী ব্যাক্তিকে ৫০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করতে পারেন এছাড়া জেলা প্রশাসকের আদেশ না পাওয়া পর্যন্ত দোষী ব্যক্তিকে আটক রাখবার আদেশ দিতে পারবেন।
একজন হেডম্যানের উপরে বর্নিত বিচারিক ক্ষমতা থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে, হেডম্যান গন বিচার কার্য নামক বিষয়টিকে এড়িয়েই চলেন। বরং এই কাজ গুলা তথা বিচার, মিমাংসা, সালিশ, গোত্র/পাড়া পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহন ইত্যাদি কারবারীদের হাতে ন্যাস্ত হয়ে গেছে। গঠিত হয়েছে কারবারী আদালত।
(চলবে)
১২ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১২:০১
অগ্নি সারথি বলেছেন: ধন্যবাদ।
২| ১২ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১২:১৮
সন্ধ্যা প্রদীপ বলেছেন: এটা পড়লাম।ভাল লাগল।
বাকিগুলোও পড়বো সময় নিয়ে।
১২ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১২:২০
অগ্নি সারথি বলেছেন: ধন্যবাদ সন্ধ্যা প্রদীপ।
৩| ১২ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৩
কাজী আবু ইউসুফ (রিফাত) বলেছেন: খুব ভালো লাগলো ৪টি পর্ব পড়ে। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম!
১২ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৬
অগ্নি সারথি বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ রিফাত ভাই।
৪| ১২ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১:১৭
হুসাইন অভি বলেছেন: আগের ব্যবস্থাই ভাল ছিল মনে হচ্ছে। রাজা, চিফ, হেডম্যান এঁদের হাতে প্রচুর ক্ষমতা ছিল। কল্পনা করলেই ভাল লাগে।
(মৌজা, তালুক মানে জায়গা জমি সংক্রান্ত কোন ব্যাপারই আমার মাথায় ঢুকে না)
১২ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১:২৬
অগ্নি সারথি বলেছেন: আমি আসলে জানিনা আগের ব্যবস্থা ভাল ছিল নাকি খারাপ ছিল। জমি সংক্রান্ত বিষয়গুলা আসলেই অনেক বেশি কঠিন।
৫| ১২ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১:১৮
হুসাইন অভি বলেছেন: আগের ব্যবস্থাই ভাল ছিল মনে হচ্ছে। রাজা, চিফ, হেডম্যান এঁদের হাতে প্রচুর ক্ষমতা ছিল। কল্পনা করলেই ভাল লাগে।
(মৌজা, তালুক মানে জায়গা জমি সংক্রান্ত কোন ব্যাপারই আমার মাথায় ঢুকে না)
৬| ১২ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১:২২
নীল ভোমরা বলেছেন: আমার জানা মতে মূলতঃ বান্দরবানেই মারমাদের বসবাস। এরা সধারণতঃ পাহাড়ের পাদদেশেই তাঁদের বসতি গড়ে তোলে। পাহাড়ের উঁচু অংশে খুকি, ব্যোম এদের বসতি। পাহাড়ে বহুবার গেছি...নয়ন ভরে উপভোগ করেছি পাহাড় আর পাহাড়ীদের জীবনযাত্রার সৌন্দর্য্য। পাহাড়ীদের সম্পর্কে আমরা খুব কমই জানি। আপনার পোস্ট-টা অাগ্রহ নিয়ে পড়লাম। ভাল লাগলো। পূর্বের পর্বগুলি সময় নিয়ে পড়বার জন্য প্রিয়তে নিয়ে রাখলাম। শুভকামনা!
১২ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১:২৮
অগ্নি সারথি বলেছেন: ধন্যবাদ নীল ভোমরা। আমার পূর্বের পর্ব গুলোতে এসব তথ্য রয়েছে। আশা করি আপনার ভাল লাগবে। বোমাং সার্কেল বান্দরবান জেলার ৯৫টি মৌজা এবং রাঙ্গামাটি জেলার রাজস্থলী উপজেলার ৯টি ও কাপ্তাই উপজেলার ৫টি মৌজাসহ মোট ১০৯টি মৌজা নিয়ে গঠিত।
আপনাকেও শুভ কামনা।
৭| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ১১:১২
মোঃ সাইফুল্লাহ শামীম বলেছেন: উপভোগ করছি ...শিখছি .....অনেক ধন্যবাদ
১৯ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ১১:১৯
অগ্নি সারথি বলেছেন: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ শামীম ভাই। সপ্তম পর্বটাও মাত্র পোস্ট করলাম, পড়ে দেখতে পারেন।
©somewhere in net ltd.
১| ১২ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১১:৫৫
রুয়াসা বলেছেন: প্লাস এবং প্রিয়তে।