নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একটা বৈষম্যহীন সমাজের স্বপ্ন নিয়ে, আমি প্রান্তিক জনতার কথা বলতে এসেছি.......!
জাতিস্বরের হারানো অধ্যায়(পর্ব-১)
জাতিস্বরের হারানো অধ্যায়(পর্ব-২
তিনঃ
কাল সারাটা রাত, ঢাকা শহরে কাটিয়ে দেয়া বিগত চৌদ্দটা বছরের স্মৃতি হাতরিয়ে রুমু নামের কাউকে কোথাও খুঁজে পেলাম না, বারবার ঘুরে ফিরে ভিয়েনা নামটাই আসছিল। ভিয়েনা প্রেমিকা ছিল না, ছিল আমার বাগদত্ত্বা। পারিবারিক ভাবে আমাদের বিয়ের কথা পাকা হলেও তার প্রবাসী ভাই দেশে না ফেরা পর্যন্ত আমাদের বিয়ের তারিখ ঠিক হয়ে উঠছিল না। উভয়ের ঢাকায় থাকার সুবাদে দুজনকে জানা ও বোঝার জন্য এই শহরে আমরা পেলাম অফুরন্ত সময়, প্রায় তিন মাস। বিয়ের আগে চুটিয়ে প্রেম। তার ভাই দেশে ফিরলেন এবং ফেব্রুয়ারী-১৪ তথা বিশ্ব ভালবাসা দিবসে বিয়ের দিন তারিখ নির্ধারন হল। প্রেম পিয়াসী হৃদয়ে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে এই দিবসটি তাই আর কনে পক্ষের মতের বিরুদ্ধে দ্বিমত করলাম না, যদিও পন্যবাদী এই দিবসগুলোর প্রতি আমার রয়েছে বিশেষ অশ্রদ্ধা। কিন্তু ততদিনে আমাদের প্রেম গভীর থেকে আমার মেসের রুম পর্যন্ত পৌছে গেছে। মেসের রুম ডেটিং নামক টার্মটার সাথে পরিচিত ছিলাম, ঢাকা শহরে আমার প্রথম মেস জীবন থেকেই। পলাশ দা স্মৃতি আপাকে সপ্তাহের কোন একটা দিন লোকচক্ষুর অন্তরালে, বাসায় নিয়ে এসে সারা দিনের জন্য দরজা বন্ধ করে দিতেন। কোন সাড়া-শব্দ নেই। আমরা জানতে পারতাম না যে ভেতরে কি হচ্ছে তবে বুঝতাম কিছু একটা হচ্ছে যেটা খুব গুরুত্বপূর্ন এবং তাকে কোন ভাবেই কোন কিছুর জন্য বিরক্ত করা যাবে না। ভিয়েনার আমার মেসে আসতে কোন লোক চক্ষুর অন্তরাল হতে হয় নাই কারন আমার বাসার মালিক ততদিনে জেনে গিয়েছিলেন আমাদের বিয়ের খবর এবং প্রথম পরিচয়েই ভিয়েনাকে তিনি বৌমা সম্বোধন করা শুরু করে দিয়েছিলেন। যাই হোক, অতঃপর বৌমা বস্তি পরিদর্শন তথা মেসে আসলেন এবং আমিও কতকটা নির্লজ্জ্বের মত সারা দিনের জন্য দরজা লাগিয়ে দিয়েছিলাম। এটা সম্পূর্ন নতুন এবং বিকট একটা অভিজ্ঞতা, যা সামলানোর মত সাহস এবং স্বক্ষমতা কোনটাই আমার মত ভীত সন্ত্রস্তজনের তখন হয়ে উঠেনি। ফলাফল প্রিম্যাচিওর ইজ্যাকিউলেইশন। আমার অদক্ষতা হয়ে ওঠে আমার ব্যার্থতা আর পরিনতিটা ছিল আরো ভহাবহ।
চরম অনিচ্ছা স্বত্ত্বেও আমাকে বাধ্য হতে হয় চিকিৎসা বিজ্ঞানের স্মরন্নাপন্ন হতে, প্রিম্যাচিওর ইজ্যাকিউলেইশন যৌন জীবনে অনভিজ্ঞদের জন্য খুব কমন একটা সমস্যা সেটা জানার পরও। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান এই সমস্যার পেছনে দায়ী হিসেবে দুটো বিষয়কে চিহ্নিত করে। মানসিক এবং জৈবিক। জৈবিক কারন গুলোর মধ্যে- হরমোনের অস্বাভাবিক মাত্রা, মস্তিষ্কের রাসায়নিক উপাদান বা নিউরোট্রান্সমিটারের অস্বাভাবিক মাত্রা, বীর্যস্খলন ব্যবস্থার অস্বাভাবিক ক্রিয়া, থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা, প্রোস্টেট অথবা মূত্রনালীর প্রদাহ এবং সংক্রমণ বংশগত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, সার্জারি কিংবা আঘাতের কারণে স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি হওয়া। নারকোটিকস বা মাদক কিংবা দুশ্চিন্তার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ ট্রাইফ্লুপেরাজিন প্রত্যাহার করা এবং অন্য মানসিক সমস্যা ইত্যাদিকে চিহ্নিত করে থাকে। তবে আমার মত অনভিজ্ঞ মানুষদের জন্য মানসিক সমস্যাটাই বেশি হয়। সাধারণত প্রথম যৌনমিলনের পূর্বে প্রবল উত্তেজনা ই এর কারন।
চরম কৌতুহলের রুম ডেটিং নামক ৩/৪ দিনের পরীক্ষায় আমি ফেইল করে যাই। সে আমাকে ফিজিক্যালি সিক ট্যাগিং করে ঠিক বিয়ের ৪ দিন পূর্বে পারিবারিকভাবে বিয়েটা ভেঙ্গে দেয়। আমি হতবাক হয়ে যাই তাদের এমন সিদ্ধান্তে। আমার আর যাবার কোন জায়গা ছিল না। গ্রামে অনেক অনেক লোককে দাওয়াত করার কাজ শেষ। অনেক স্বাধ আর নগন্য সাধ্যের এই পরিবারটি সাধ্যের বাইরে চলে গিয়ে বাড়ির বড় ছেলের বিয়ে ধুমধাম করে দেয়ার নিমিত্ত্বে খরচের পাল্লাটা বেশ ভাড়ি করে ফেলে। সাথে মান-সম্মানের প্রশ্নটা তো ছিলই। আমার বাবা মা সব থেকে যেটা ভয় করছিলেন সেটা হল, এত্ত এত্ত মানুষ বিয়ের দাওয়াত খেতে এসে কিভাবে খালি মুখে ফেরত যাবে? কি উত্তর দিবেন তারা তাদের। সমাজে মুখ দেখাবেন কিভাবে? এই সমাজের চিন্তায় তারা শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। গ্রাম দেশে কোন ছেলে বা মেয়ের যদি একবার বিয়ে ভেঙ্গে যায় তবে তার বিয়ে দেয়া খুব কষ্টের হয়ে উঠে। ছেলেদের জন্য এই আইন সামান্য শিথিল হলেও মেয়েদের জন্য কোন ছাড় নাই। বিয়ে ভাঙ্গা মেয়েকে পাত্রপক্ষ দেখার আগেই না করে দেয়। জানিনা পরবর্তীতে ভিয়েনাকে এমন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল কিনা তবে আমি প্রানান্ত চেষ্টা করেছিলাম বিয়েটা না ভাঙ্গার। তার বাড়ির সামনে ঠায় দাড়িয়ে ছিলাম তিনটা দিন, অনেক ভাবে বোঝানোর চেষ্ঠা করেছি, অনেক অনেক কেঁদেছি তার সামনে এমনকি আমার বাবা পর্যন্ত তাদের বাসায় গিয়ে যদি কোন ভূল হয়ে থাকে তার জন্য ক্ষমা চেয়ে আসে কিন্তু তারা তাদের সিদ্ধান্তে অনড় ছিল। কোন মানবিক আচরন করতে তারা ব্যার্থ হয়েছিলেন। একবার মনে হয়েছিল তাদের উপর মানহানি এবং ক্ষতিপূরন মামলা করে দেই। কিন্তু যেই দেশে ঘি আর তেলের দাম সমান সেখানে আইন কানুন সর্বনেশে। এমনিতেই লক্ষ লক্ষ মামলা নিয়ে আমাদের আদালত পাড়া গুলো গরম হয়ে আছে সেখানে আমি আমার হয়ে আরেকটি বোঝা চাপিয়ে দিয়ে দিনের পর দিন কোর্টের চক্কর কাটতে চাই নাই। বাবার ভাষায় আমরা মামলা মোকদ্দমার লোক নই রে! মাফ করে দে তাদের।
মাফ আমি করতে পারি নাই আর তাদেরকে। ১৪ তারিখ অর্থ্যাৎ আমার বিয়ের দিন ভিয়েনা যখন জানতে পারল যে আমার বিয়ে ঠিকই হচ্ছে সেদিনই, শুধু পাত্রী বদল তখন সে তার ভূল বুঝতে পেরেছিল। আমার সাথে পালিয়ে যাওয়ার জন্য পাগল হয়ে গিয়েছিল তার পরিবারের অমতে। কিন্তু আমি তাকে ক্ষমা করতে পারি নাই। চুপ করে মোবাইল বন্ধ করে দিয়ে ভাল মানুষটি সেজে, অন্য অদেখা একজনকে স্ত্রীরুপে কবুল বলে চলে আসি।
যাই হোক, গত সারাটা রাত যখন স্মৃতি হাতরিয়ে সংক্রান্ত কোন কিছুই পেলাম না তখন দ্বারস্থ হলাম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোর। নিজেকে চরম প্রযুক্তিবাদী মানুষ হিসেবে মনে করি আমি। আর এমন একজন প্রযুক্তিনির্ভর মানুষের ৭ বছরের প্রেমের ছিটাফোটা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের কোথাও না কোথাও নিশ্চয়ই সংরক্ষিত থাকবে। কোথাও কিছু পেলাম না কিন্তু বেশ কয়েক বছর আগে ফেসবুকে আমার একটা লেখা দেখে আমি ভূত দেখার মত চমকে গেলাম। লেখাটা কখন, কবে, কার বিষয়ে কিভাবে লিখেছি কিচ্ছু জানিনা কিন্তু আমার প্রোফাইল বলছে লেখাটা আমার দ্বারাই লেখা, আর আমার ফেসবুক একাউন্টে আমার ছাড়া আর কারো তো একসেস থাকবার কথা না। তবে আমি এবার নিশ্চিত যে আমি এমনিশিয়াতে ভূগছি। যা পেলাম তাতে লেখা রয়েছেঃ
‘তার মৃত্যুর পর কত কিছুর ই না পরিবর্তন হয়েছে, হল পাড়ার এই ছোট্ট গেস্ট রুম টাতে। দীর্ঘ দেড় বছর পর আবার আসলাম এই প্রিয় ঘর খানাতে। দীর্ঘ পাঁচটা বছর যেখানে আমি আর সে বসে আমাদের ছোট ছোট স্বপ্ন গুলো বুনতাম। আমাদের আর স্বপ্ন বোনা হয়নি। হয়নি স্বপ্ন গুলোর ও আর বাস্তবের মুখ দেখা। ইস আমি যদি তোমাকে বলতে পারতাম, তোমাকে যদি বলতে পারতাম তোমাদের সেই গেস্ট রুমে আর স্যাত স্যাতে দূর্গন্ধ নেই, মশারাও এখন আর আগের মত বিরক্ত করে না। তুমি বিশ্বাস কর, এবার আমার একটি বার ও বসতে কোন কষ্ট হয়নি। বসে থাকতে চেয়েছিলাম আমি অনন্ত কাল, কালের পর কাল, দীর্ঘ কাল। কারন সেখানে তুমি আছ, আছে তোমার স্মৃতি, অস্তিত্ব। সামনের দিকে যে দেয়ালটা ছিলা না, ওই যে ভাঙ্গা ছিল যেটা। হুম সেটা। সেটা মেরামত করা হয়েছে, সামনের ছোট রাস্তাটুকুও পাকা করা হয়েছে, যেটা দিয়ে তুমি হলে চলে যেতে আর আমি হতাশ হয়ে তোমার চলে যাওয়া দেখতাম। জান এবার ও আমি এক বুক আশা নিয়ে সেই পথের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। মনে হচ্ছিল, দেড়টা বছর আমি এখানে বসে বসে স্বপ্ন দেখছি। এখনি তুমি আসবে আর আমি তোমাকে না দেখার ভান করব, আর বীভৎস এই স্বপ্নটা ভেঙ্গে যাবে। নাহ! স্বপ্ন আর ভাংলো না। তুমি জানোনা, সেখানে এবার বসে বসে আমি কতগুলা নতুন মুখ দেখলাম। একটাও আমার পরিচিত নয়। তুমি থাকলে নিশ্চয়ই ঝগড়া করতে, অন্য মেয়েদের দিকে তাকানোর অপরাধে। তবে কি জানো, আগে যেমন, যাকেই আমি দেখতাম তাকেই চিনতাম কিন্তু এবার আর সেটা হল না। মনে হচ্ছিল পুরো জগতটা আমার অপরিচিত। মাত্র দেড়টা বছরে। মাত্র দেড়টা বছরে কত কিছু হয়ে যায় তাই না? গেটের যে দাড়োয়ানটা ছিল না, ঐ যে তোমরা দাদু বলে ডাকতে। হ্যাঁ আরে ঐ বুড়াটা। সে কিন্তু স্বার্থপর হতে পারে নি। আমাকে ঠিকই চিনে নিয়েছে। এত কিছুর পরিবর্তনের মধ্যে সেই বুড়ো কিন্তু এতটুকুও বদলায় নি। সেই আগের মত কোটরে ঢুকে যাওয়া চোখ, পাকা চুল-দাড়ি, পরনে শার্ট প্যান্ট। হ্যাঁ! তার শার্ট প্যান্ট গুলোও আগের মত আছে। কি আশ্চর্য্য! জানো, জীবনে এই প্রথম আমি কারো সাথে ভনিতা করলাম। এই প্রথম কারো কাছে আমার চোখের কান্না লুকিয়ে, আমি হাসলাম। এটা যে কি কষ্টের তুমি জানো না? বিশ্বাস করো তুমি সেটা জানোনা.......’
লেখাটা খুঁজে পাবার পর থেকে মাথাটা ঝিম ঝিম করছে। এবার আমি মোটামুটি শিওর হয়ে গিয়েছি যে আমার জীবনে সত্যিই রুমু নামের কেউ একজন ছিল, যে কিনা এখন মৃত। কোন এক হলে থাকত সে এবং তার মৃত্যুর দেড় বছর পর আমি আবার সেই হলে গিয়েছিলাম আমার স্মৃতি হাতড়াতে।
(চলবে)
২৮ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ১:১০
অগ্নি সারথি বলেছেন: ধন্যবাদ মহাকাল।
২| ২৮ শে জুলাই, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:১৫
গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: আগের পর্ব গুলি পড়ে আসি
২৮ শে জুলাই, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫৩
অগ্নি সারথি বলেছেন: সাথে করে আগাম ধন্যবাদটা নিয়া যান।
৩| ৩০ শে জুলাই, ২০১৫ সকাল ৮:৫৬
রুয়াসা বলেছেন: অভিজ্ঞতা যদি সত্য হয় তবে পড়তে পড়তে বারংবার আবিভূত হচ্ছি আর কি যেন খুঁজে ফিরছি। লিখতে থাকুন। শুভ কামনা।
৩০ শে জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১:২৫
অগ্নি সারথি বলেছেন: ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ২৮ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ১২:৪৬
মহাকাল333 বলেছেন: লেখাটি ভাল লেগেছে...