নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একটা বৈষম্যহীন সমাজের স্বপ্ন নিয়ে, আমি প্রান্তিক জনতার কথা বলতে এসেছি...!

অগ্নি সারথি

একটা বৈষম্যহীন সমাজের স্বপ্ন নিয়ে, আমি প্রান্তিক জনতার কথা বলতে এসেছি.......!

অগ্নি সারথি › বিস্তারিত পোস্টঃ

পরম পিতৃতান্ত্রিকতা নির্ভর সমাজ ব্যাবস্থা আর একজন রমিছার সংগ্রামময় জীবনের বয়ান

০১ লা মার্চ, ২০১৭ রাত ১০:২১



আমার নাম রমিছা। ভাল নাম রমিছা বেগম। আমার জন্ম বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার ১২ নং রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের রুনশী গ্রামে ১৯৮১ সালের মার্চ মাসে। ৪ বোন ২ ভাইয়ের মধ্যে আমি তৃতীয়। আমি যখন ছোট ছিলাম তখন আমার বাবা ছাত্তার ডাকুয়া দিনমজুরী করার পাশাপাশি যখন এলাকায় কাজ থাকতোনা তখন কলা গাছের থোর (কলা গাছের ভিতরের কান্ড), শাকপাতা তুলে বিক্রি করতেন। মা আকলিমা বেগম অন্যের বাড়ীতে কাজ করতেন। ঐ সময় আমাদের খুব কষ্টে দিন যাইতো। দুইবেলা খাবার পেট ভরে খাইতে পারতামনা,সকালবেলা মা মানুষের বাড়ী থেকে ভাতের ফ্যান নিয়ে আসতো আর তা দিয়ে আমরা সকালের নাস্তা করতাম। আমাদের বাড়িতে রান্নাটা হতো শুধু দুপুরে। দুপুরের খাবারের পর যা বাকি থাকতো তার সাথে মা মানুষের বাড়ীতে কাজ করে যে খাবার পাইতো তা মিলমিশ করে রাতের খাবারের ব্যবস্থা হতো। এক বছর নতুন কাপড় দিলে পরের বছর আমার বাবা আর কাপড় দিতে পারে নাই। মানুষের বাড়ী থেকে মা পুরান কাপড় চেয়ে নিয়ে আসতো, ঐ কাপড় জোড়াতালি দিয়ে ব্যবহার করতাম আমরা। এতো কষ্টের মধ্যেও মা-বাবা চাইতো আমরা যেন লেখাপড়া করি, কিন্তু পরিবারে ভাইবোনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় পঞ্চম শ্রেনী পাশের পর বাবা-মা আর আমার লেখাপড়া খরচ দিতে পারেনি ফলে লেখাপড়া করার ইচ্ছা থাকলেও হাই স্কুলে ভর্তি হতে পারিনি আমি।

পঞ্চম শ্রেনীতে পড়া অবস্থায় গায়েপায়ে লম্বা হয়ে যাওয়ায় ঐ সময় থেকে আমার বিয়ের সম্বন্ধ আসতে থাকে। বাবা যখন লেখাপড়ার খরচ চালাতে পারছিলেন না তখন আমার অমতে ঘটা করে একদিন দিয়ে দিলেন বিয়ে। শ্বশুর বাড়ী হল রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের আউলিয়াপুর গ্রামে। আমার শ্বশুড়েরও জায়গা জমি কিছু ছিলনা, আমার স্বামী ছিল বাবা মায়ের বড় সন্তান, তারা ৫ ভাই ১ বোন। শ্বশুড়ের পাশাপাশি স্বামীও দিনমজুরী করে যা আয় করতো তা দিয়ে সংসার চলতো। বিয়ের দেড় বছরের মাথায় আমাদের প্রথম সন্তান লাকী জন্মগ্রহন করে, সন্তান জন্মদানের সময় আমার বেশ সমস্যা হয় এবং ঐ সময় আমাকে আর আমার মেয়েকে বাঁচাতে শ্বশুড় বাড়ীর লোক অনেক টাকা ঋণী হয়ে যায়। আমার বাপ-ভাই আশ্বাস দিয়েছিল ঋণের কিছু টাকা তারা পরিশোধ করবে কিন্তু আমার বাবা এবং ভাইদের আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকায় ওয়াদা মোতাবেক ঐ টাকা পরে তারা শোধ করতে পারেনি। এই নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে বেশ গন্ডগোল হয়, শ্বশুর বাড়ির লোকেরা আমাকে আর তাদের ঘরে রাখতে চায় না। আমাকে বাবার বাড়ী পাঠিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তারা। উপায় না দেখে আমার বাবা গ্রাম্য শালিস ডাকতে চায়। কিন্তু তারা সেসময় আমার বাবাকে শালিসে না বসতে দিয়ে সবকিছু মিটমাট করে নেয় এই শর্তে যে বাবার বাড়ীর সাথে আমার আর কোন সম্পর্ক থাকবেনা। বাবা সেই শর্তে রাজী হন এবং বাবার বাড়ির সাথে আমার সকল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায় শুধু আমার সংসারটা টেকানোর স্বার্থে। কিন্তু বাপ-মায়ের মন তো! আমাকে একবার দেখবার জন্য তাদের ভেতরটা ছটপট করত। এর মাঝে আমার মেঝ মেয়ে লামিয়া জন্ম নেয়। তার জন্মের পর মা-বাবা আমাদের দেখতে আসলে আমার বাবা-মায়ের সাথে শ্বশুড় বাড়ীর লোক খুব খারাপ ব্যবহার করে, পাশাপাশি পরপর দুই মেয়ের জন্ম হওয়ায় স্বামীও আমার সাথে বাজে ব্যবহার করতে শুরু কর। কাজের কথা বলে বাহিরে গিয়ে মাসের পর মাস পরে থাকা শুরু করে সে। আমরা বেঁচে আছি না মরে গেছি এই নিয়ে কোন খোঁজ-খবর করেনা।
এভাবে দুই আড়াই বছর পার হবার পর ছোট মেয়ে ইতির জন্ম হয়। ইতির জন্মের পর স্বামী আমার সাথে সংসার করবেনা সে আর একটা বিয়ে করবে এই নিয়ে আমার সাথে প্রতিদিন ঝগড়া-ঝাটি করা শুরু করে। কথা নাই বার্তা নাই ঘরে ফিরে যদি দেখছে আমি ঘরে নাই এই নিয়ে আজেবাজে গালিগালাজ করতো, মারধোর করতো। মেয়ে তিনটার মুখের দিকে চেয়ে সব সহ্য করে নিতাম আমি। একবার কাজ করতে সে বরিশাল যায়, দুই মাসেও কোন খবর পাত্তা পাওয়া যায়না হঠাৎ একদিন আর একটা বউ নিয়ে বাড়ীতে হাজির হয়। একটা নারী স্বামীর সব তুচ্ছ-তাছিল্য সহ্য করতে পারে কিন্তু সতীনের সংসার সহ্য করা তার দ্বারা সম্ভব নয়। নতুন বউ আনার পর এই নিয়ে স্বামীর সাথে আমার বেশ ঝগড়া হয়, ঝগড়ার এক পর্যায় আমাকে বেশ মারধোর করে, সেই দিন সিন্ধান্ত নেই না খেয়ে থাকবো কিন্তু এই স্বামীর সংসার আর করবোনা। বাপ-ভাইদের খবর দেই তারা গিয়ে এলাকার মাতুব্বরদের কাছে বিচার চায়, এই নিয়ে এলাকায় শালিস বসলে স্বামী সিন্ধান্ত জানায় সে আমাকে তালাক দিবে কিন্তু নতুন যাকে বিয়ে করে আনছে তাকে ছাড়বেনা। আমি যখন সতীনের সংসার করবোনা তাই ঐ বিচারে সিন্ধান্ত হয় সে আমাকে তালাক দেবে এবং আমার বড় দুই মেয়ের লালন-পালন সে করবে। ছোট মেয়ের লালন-পালনের দায়িত্ব আমাকে পালন করতে হবে। চার বছর বয়সী আমার ছোট মেয়েটাকে নিয়ে আমি স্বামীর সংসার ছেড়ে বাবার বাড়ী চলে আসি।

বাবার বাড়ীতে এসে কিছুদিন পর আমরা মা-বেটি আমার বাপ-ভাইদের ঘাড়ে বোঝা হয়ে যাই। বোঝা হলেও আমার কিছু করার ছিলনা বাপ, ভাই, ভাবীদের গালাগাল সহ্য করে মাঝেমধ্যে মানুষের বাড়ীতে কাজ করে এক বছর পার করি। যখন এলাকায় ভালো কোন কাজের সুযোগ পেলাম না তখন চিন্তা করলাম মেয়েসহ ঢাকা গিয়ে গার্মেন্টসে চাকরী করব। কিন্তু পরিবার থেকে ঢাকা গিয়ে কাজ করতে দিতে রাজী হয়না। তাদের কথা ঢাকায় আমাদের পরিচিত কেউ নাই, বিপদে আপদে সাহায্য করার কাউকে পাব না পাশাপাশি পরিচিত লোক না থাকায় ঢাকা গিয়ে যে কাজ পাব এর কোন নিশ্চয়তা নেই, কাজ করতে হলে বেতন কম পাই আর বেশি পাই এখানে থেকেই করতে হবে। অতঃপর ঢাকা যাওয়ার চিন্তা বাদ দিয়ে দেই। এরমধ্যে মেঝ বোন বুলুর এক বান্ধবী ময়না সে বাসষ্ট্যান্ডের পাশে জাহানারা ক্লিনিকে চাকরী করে। সে জানায় তাদের ঐখানে আয়া পোষ্টে লোক নিবে। আমি যদি চাকরী করতে চাই তাহলে যেন ক্লিনিকের মালিকের সাথে যোগাযোগ করি। খবর পেয়ে বোন বুলুকে সঙ্গে নিয়ে আমি মালিকের সাথে দেখা করি। মালিক প্রথমে আমাকে কাজ দিতে চায়নি। আমার জীবনের গল্প শোনার পর আমাকে চাকরী করতে সুযোগ দেয়। কিন্তু বিপত্তি হয় এখানে এক সপ্তাহে দিনে ডিউটি করতে হয় আর এক সপ্তাহে রাতে ডিউটি করতে হয়। ভাইদের সাথে কাজের ধরন নিয়ে আলোচনা করলে প্রথমে ভাইরা এখানে কাজে পাঠাতে আপত্তি করে কিন্তু ময়না আপা যখন তাদের বুঝায়ে বলে এখানে কাজ করতে কোন সমস্যা নাই, রাতে নার্স সহ ৫/৬ জন নারী কর্মী থাকে। তাছাড়া রোগীর আত্মীয় স্বজনদের রাতে থাকার কোন পার্মিশন নাই। নারীদের কাজ করার ক্ষেত্রে ক্লিনিকটি নিরাপদ এইসব কথা শোনার পর ভাই-রা আমাকে কাজে যেতে দেয়।

এখানে বেতন খুবই কম। চার বছর আগে প্রথম যখন কাজে যোগ দেই তখন বেতন ছিল ১০০০ টাকা এখন বেতন হইছে ১৫০০ টাকা। তবে ওভার টাইম এবং রোগীদের কাছ থেকে বকশিশ বাবদ ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা আয় করা যায়। আয়া হিসেবে আমাদের কাজ রোগীদের তথ্য তালাফি করা (রোগীদের খোঁজ খবর রাখা, রোগী কি বলে সেটা শোনা), ক্লিনিক পরিষ্কার করা, পাশাপাশি নার্সদের কাজে সহযোগিতা করা। প্রথম যখন কাজে যাই তখন কাজ ঠিকমতো করতে পারতামনা। নার্সরা স্টেথিস্কোপ নিয়ে আসতে বললে নিয়ে যেতাম ব্লাড প্রেসার মাপার যন্ত্র, হাইট স্কেল ওয়েট স্কেল কোনটারে কয় সেটা চিনতামনা। গায়ের শক্তি দিয়ে ফ্লোর মোছার পর মালিক এসে কইতো ফ্লোর মোছা হয় নাই। দুই তিনদিন পুরানোরা কিভাবে কাজ করে সেটা দেখার পর সব কিছু আয়ত্বে চলে আসে। চাকরীতে যখন প্রথম কাজে ঢুকি তখন মা জীবিত ছিল মেয়েটাকে মা-ই দেখাশুনা করতো। আমার অবর্তমানে ঘর পরিষ্কার করা, রান্নাবান্না করা সবই মা করে রাখতো। মা, বাপ, ভাই বোন সহায়তা করছে বিধায় আমাকে কোন কষ্ট সহ্য করতে হয়নি। বর্তমানে মেয়ে বড় হয়েছে সেই অনেক কিছু সামলে নিতে পারে।

সত্যি কথা বলতে কি, আমি যে পেশায় আছি এই পেশায় রাতে কাজ করতে হয়, রাতে কাজ করাটা সমাজের লোক ভালোভাবে নেয়না বিধায় কম বয়সী মেয়েরা এখানে কাজ করতে আসেনা। যাদের কোন পিছুটান নাই বিশেষ করে বিধবা, স্বামী পরিত্যাক্তা, যাদের বয়স একটু বেশি আমাদের এখানে তারাই এই পেশায় কাজ করতে আসে। সমাজে যারা অলোচনা-সমালোচনা করে তারাও ধরে নেয় এই সমস্ত নারীরা একদম নিরুপায় হয়ে এই পেশাগুলোতে যুক্ত হয়েছে তাই তাদের নিয়ে কোন আলোচনা পর্যালোচনা হয়না। কিন্তু কম বয়সী একটা মেয়ে যখনই এই পেশায় কাজ করতে আসবে তখনই বলা শুরু হবে “অমুকের মেয়ে অথবা বউ একদম খারাপ হয়ে গেছে, ঘরের লাং (স্বামী অথবা ছেলে বন্ধু) এ মন ভরেনা এখন রাতে কাজের নাম করে বাইরের লাংয়েদের কাছে যায়”। মানুষের ধারনা হাসপাতাল-ক্লিনিক মানে রোগ জীবানু আর কাটা ছেঁড়ার আড্ডা খানা। ঐখানে যারা কাজ করে তারা কোন স্বাভাবিক মানুষ না। হাসপাতাল ক্লিনিকে কাজ করলে পর্দার বেখেলাপ হয়। এখানে বিভিন্ন ধরনের রোগী আসে, হাসপাতাল ক্লিনিকে কাজ করলে নারী-পুরুষ সব ধরনের রোগীদের সাথে কথা বলতে হয়, ধর্মীয়ভাবে একজন নারী যদি বেগানা পুরুষের সাথে কথা কয় সেটা মহাপাপ। যার কারনে পূর্বে অন্যের বাড়ীতে কাজ করে খেলেও অফিস-আদালত, হাসপাতাল, ক্লিনিকে মেয়েদের কাজ করতে আসতো দিতোনা। আমার নানী পুরুষ ডাক্তার হাত-পা টিপে রোগ নির্নয় করে দেখে জীবনে কোনদিন ডাক্তারখানায় যায়নি। রোগ হলে কষ্ট পাইছে, ঘাস লতাপাতা খইিছে তারপরও ডাক্তার দেখাতে রাজী হয়নি। যত দিন যাচ্ছে মানুষের মধ্যে শিক্ষার হার বাড়ছে, বিভিন্ন প্রয়োজনে মানুষের বাহিরে যাবার হার বাড়ছে বাহিরে গিয়ে অনেক কিছু শিখে আসছে। আগের দিনের যে মানুষগুলোকে সমাজের মানুষ ভক্তি শ্রদ্ধা করতো, যাদের কথা মানতো তারাই তো এতো কিছু জানতোনা, না জেনে এমন একট কথা বলে দিতো সেটাকেই সমাজের মানুষ সত্য বলে ধরে নিত। বর্তমানে ঐ মানুষগুলোও আজ নেই এবং মানুষের কথায় প্রভাবিত হয় সেদিনও নেই। যার কারনে যত দিন যাচ্ছে সমাজের চেহারা ততই পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। আগে একটা ছেলে একটা মেয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা বললে এই নিয়ে কত কথা হতো, বিচার-শালিস পর্যন্ত হতো কিন্তু এখন হাসতে হাসতে একজন আরেকজনের গায়ে গিয়ে পড়লেও সেটাকে কিছু মনে করেনা। যতদিন যাবে নারীদের কাজ করার গতিশীলতা তত বাড়বে। এখন মানুষ কথাকে ভয় পায়না।

জীবন যুদ্ধে আমি নিজেকে সফল বা অসফল কোনটাই বলব না কারন, আমি যা রোজগার করি সেটা দিয়ে আমাদের মা বেটির কোন রকম খরচ চলে। পছন্দের কিছু মনে চাইলে সচরাচর তার ব্যবস্থা করতে পারিনা। নিজে এবং মেয়ের জন্য ভালো কাপড়-চোপড় কিনতে পারিনা। মেয়েটা বড় হচ্ছে ওর চাহিদা বাড়ছে কিন্তু সেটা পূরন করা আমার পক্ষে সম্ভব হয়না। সংসার খরচের পর হাতে কোন সঞ্চয় থাকেনা। বাবা এ্যাক্সিডেন্ট করে পঙ্গু হয়ে ঘরে বসে আছে তাকে কোন সাহায্য করতে পারিনা, যে ভাইরা আমাকে এতো সহায়তা করে সে ভাইদের তো কিছু দিতে পারিইনা তাদের ছেলেমেয়েদের হাতে যে কিছু কিনে দিব সে উপায়ও নেই। আবার অসফলও বলবনা কারন, শুধু মাত্র আমার দুটো হাত আর সাহসের উপর ভর করে আমি আমার লম্পট স্বামীর সংসার ছেড়ে এসেছি। অন্যায় জুলুমের সাথে আপোষ না করে বাবার বাড়ি চলে এসে যেমনই হোক একটা কাজ জুটাতে পেরেছি। এই কাজটা না থাকলে নিজে ঘর তোলার সাহস পেতামনা, বাড়ী থাকতে পারছি বলে অনেক সংস্থা থেকে সাহায্য পাই, মাস দেড়েক হলো ব্র্যাক থেকে একটা গরু ও একটা ছাগল সহায়তা পাইছি। সব মিলে আমার সন্তানটার মুখে দুটা ভাত তুলে দিতে পারছি এই ঢের আমার জন্য।


গল্পটা ছিল বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের রুনশী গ্রামের একজন রমিছার জীবন যুদ্ধের হুবহু বয়ান। এটা নিছক একজন রমিছার জীবনের গল্প নয় বরং বাংলাদেশের অবহেলিত, নিপীড়িত শ-য়ে শ-য়ে রমিছার গল্প। যাদের অনেকেই হয়তোবা চরম পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থাটার সাথে লড়াই-সংগ্রাম করে কোন রকম টিকে রয়েছে অথবা কালের শ্রোতে হারিয়ে গিয়েছে সেই কবেই। সত্যিই সমাজে রমিছাদের গল্প শুনবার লোকের বড় অভাব, তাদের মুখে হাসি ফোটানো তো অনেক দূরের কথা।
(বয়ানটি বরিশালের ভাষা হতে শুদ্ধ চলিত বাংলায় অনূদিত করবার চেষ্টা করা হয়েছে, রমিছা নাম এবং ছবি কাল্পনিক যা কিনা ইন্টারনেট হতে সংগৃহীত)

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা মার্চ, ২০১৭ রাত ১০:৩৪

চাঁদগাজী বলেছেন:


দেখেছেন, মহিলার পুরো কাহিনীতে কোথায়ও 'সরকার' শব্দটি নেই।
১৯৮১ সালে জন্ম, ১৯৮৬/৮৭ সালে স্কুলে গেছে; তখন এরশাদ।

১৯৯২ সালে স্কুল ছাড়ছে, তখন খালেদা জিয়া।

পরে, শেখ হাসিনার সময়ে সে বাঁচার সংগ্রামে।

দেখেছেন, এই ৩ অসভ্যকে মহিলাটি চিনেনও না।

০১ লা মার্চ, ২০১৭ রাত ১১:১১

অগ্নি সারথি বলেছেন: রমিছার গল্পে সরকারের সরব উপস্থিতিটা থাকাটি কি বাঞ্চনীয়? ৩ অসভ্যকে মহিলাটি চিনে রমিছা কি করবে? বিজ্ঞ সহ ব্লগার, হেজিমনি হচ্ছে এমন একটা পর্যায় যেখানে শোষিত স্বেচ্ছায় তার শাসকের নিকট মাথা পেতে দেয় এই বিবেচনায় যে এটিই তার নিয়তি, তার এমনটাই হওয়া উচিত। প্রতিরোধ কিংবা প্রতিবাদ তার কল্পনাতেও আসেনা।

২| ০১ লা মার্চ, ২০১৭ রাত ১০:৩৭

চাঁদগাজী বলেছেন:


সবচেয় বড় কথা, শিরোনামে "পরম পিতৃতান্ত্রিকতা নির্ভর সমাজ..." ইত্যাদি আপনি এনেছেন; এই মহিলার সব দায়িত্ব নেয়ার কথা সরকারের; সেটা আপনিও বলেননি। আসলে, আপনার মাথায়ও তেমন মগজ নেই।

০১ লা মার্চ, ২০১৭ রাত ১১:২২

অগ্নি সারথি বলেছেন: আপনার কি মনে হয় রাষ্ট্র যন্ত্র সমাজ ব্যাবস্থার বাইরের কোন অনুষঙ্গ? আমার শেষ লাইনটি হয়তোবা আপনি মিস করেছেন- সত্যিই সমাজে রমিছাদের গল্প শুনবার লোকের বড় অভাব, তাদের মুখে হাসি ফোটানো তো অনেক দূরের কথা।

রমিছার বয়ানটায় আমি আপনাকে অন্ততঃ একশটা জায়গা দেখাতে পারব যেখানে রমিছার জীবনের সিদ্ধান্ত গুলো কার্যকর হয়েছে পুরুষতন্ত্র দ্বারা। নারীপ্রধান সরকার হলেও খালেদা/হাসিনার সরকার এই পুরুষতান্ত্রিকতার ছাঁচেই গড়া।

আমার মাথায় যে আপনার মাথার তুলনায় মগজের পরিমানটা অনেক কম সেটা আমি অকপটে স্বীকার করতে রাজী আছি। আপনার চিন্তা-ভাবনাগুলো আবর্তিত হয় আমেরিকার তথা বৈশ্বিক রাজনীতিকে কেন্দ্র করে আর আমি গাঁও, গেরামের রমিছা, করিমন, জরিমন ইত্যাদি সব মুর্খ লোকেদের ব্লগে নিয়ে আসবার স্পর্ধা দেখাই।

৩| ০১ লা মার্চ, ২০১৭ রাত ১০:৪০

আহমেদ জী এস বলেছেন: অগ্নি সারথি ,



চমৎকার ।
এটা নিছক একজন রমিছার জীবনের গল্প নয় বরং বাংলাদেশের অবহেলিত, নিপীড়িত শ-য়ে শ-য়ে রমিছার গল্প।
এরই নাম 'জীবন" ।

০১ লা মার্চ, ২০১৭ রাত ১১:২৩

অগ্নি সারথি বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।

৪| ০২ রা মার্চ, ২০১৭ রাত ১২:৫৪

ওমেরা বলেছেন: বাংলাদেশের আনাচে কানাচে এরকম অনেক রমিছা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অনেক ধন্যবাদ ।

০২ রা মার্চ, ২০১৭ সকাল ৯:১৬

অগ্নি সারথি বলেছেন: রমিছাদের জীবনের দুঃখের গল্পটার সমাপ্তি হয়তোবা একদিন হবে। রমিছারা আবারো বাঁচতে শিখবে মাথা উচু করে মানুষের মত।
ধন্যবাদ আপনাকে।

৫| ০৬ ই মার্চ, ২০১৭ সকাল ১০:৪২

হাসান মাহবুব বলেছেন: অন্যরকম ব্লগিং। এমন কাহিনী আরো উঠে আসুক।

০৭ ই মার্চ, ২০১৭ সকাল ১১:৪৭

অগ্নি সারথি বলেছেন: উঠে আসার রাস্তাডা যে অত সহজ নয় হামা ভাই। বহুত দম লাগে, বহুত ত্যাজ লাগে।

অনুপ্রেরনাটুকুনের জন্য ধন্যবাদ ভাই। শুভকামনা জানবেন।

৬| ১৫ ই মার্চ, ২০১৭ ভোর ৬:২০

মানবী বলেছেন: "সত্যিই সমাজে রমিছাদের গল্প শুনবার লোকের বড় অভাব, তাদের মুখে হাসি ফোটানো তো অনেক দূরের কথা।"

- এই পোস্টটি তার অন্যতম প্রমান। আমার যেটুকু মনে পড়ে আপনার অন্যান্য সব পোস্টে প্রচুর মন্তব্য দেখেছি।
রমিছার গল্প শোনার আগ্রহ নেই আমাদের, রমিছারা আমাদের কাছে শুধুই প্রয়োজনের সময় হাতের কাছে পাওয়া সাহায্যকারী। ওদের গল্প শুনে সময় নষ্ট করার মতো মানুষ কোথায়!

"এখানে বিভিন্ন ধরনের রোগী আসে, হাসপাতাল ক্লিনিকে কাজ করলে নারী-পুরুষ সব ধরনের রোগীদের সাথে কথা বলতে হয়, ধর্মীয়ভাবে একজন নারী যদি বেগানা পুরুষের সাথে কথা কয় সেটা মহাপাপ। যার কারনে পূর্বে অন্যের বাড়ীতে কাজ করে খেলেও অফিস-আদালত, হাসপাতাল, ক্লিনিকে মেয়েদের কাজ করতে আসতো দিতোনা।"

- বাংলাদেশের হাসপাতালে কাজ করার সময় কখনও এভাবে ভেবে দেখিনি। আয়া বা মহিলা ক্লিনারদের দেখে কখনও মনে হয়নি তাঁদের পরিবার পরিজনের কাছ থেকে এধরনের প্রতিবন্ধকতা আছে, বরং উপার্জনক্ষম আত্মনির্ভশীল হবার কারনে আত্মবিশ্বাসের ছায়াটাই স্পষ্ট মনে হয়েছে চোখে মুখে। রাজধানী শহর বলেই তা মফস্বল বা গ্রামান্চলের চেয়ে কম ছিলো মনে হয়। আবার আমার ভুলও হতে পারে, হয়তো এমন সব প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করেই তাঁরা কাজে ছুটে আসতেন, ডাক্তারদের সাথে তো আর সুখ দুঃখের আলাপ করতেননা(নিতান্তই অর্থ সাহায্য বা চাকুরী সংক্রান্ত সাহায্য) তাই জানা হয়নি।

মূক রমিছাদের কন্ঠস্বর হবার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ অগ্নি সারথি।
অনেক ভালো থাকুন।

১৫ ই মার্চ, ২০১৭ সকাল ১১:৩৬

অগ্নি সারথি বলেছেন: রমিছার গল্প শোনার আগ্রহ নেই আমাদের, রমিছারা আমাদের কাছে শুধুই প্রয়োজনের সময় হাতের কাছে পাওয়া সাহায্যকারী। ওদের গল্প শুনে সময় নষ্ট করার মতো মানুষ কোথায়! - রমিছার জীবনের গল্পটা হৃদয় দিয়ে অনুধাবন করবার জন্য ধন্যবাদ। ধরেই নিচ্ছি আপনি অনন্য একজন, রমিছাদের গল্প শোনার লোক সমাজে এখনো রয়েছে। সত্যি বলতে কি মানবী, মন্তব্যের ধার একটা সময় ধারতাম অনেক। মন্তব্য না পেলে লেখায় ইন্সপাইরেশন হারাতাম কিন্তু এখন আর তেমনটা হয় না। কারন আমি লিখি সমাজের বিশেষ একটা প্রান্তিক শ্রেনীর মানুষের জন্য। এটাই আমার গর্বের জায়গা, আমি আর দশজনের চেয়ে একটু অন্যভাবে মানবতার জন্য ভাবতে পারি।
আপনার অভিজ্ঞতাটা শেয়ারের জন্য ধন্যবাদ। আসলে কি মানবী জানেন, একেকজন রমিছার জীবনের গল্প একেক রকম। আমি হয়তোবা এমনই এক রমিছার দেখা পেয়ে গিয়েছিলাম, চরম পুরুষতান্ত্রিক নিয়ম কানুন গুলো যার জীবনকে বিষিয়ে তুলে তাকে কঠিন জীবন সংগ্রামে লিপ্ত হতে বাধ্য করে তুলেছিল।
আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

৭| ১৬ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১০:৪৭

উদাসী স্বপ্ন বলেছেন: চাঁদগাজীর কমেন্টের সাথে আমি একমত যদিও তিনি ভালোভাবে বোঝাতে পারেননি। সরকারের কিন্তু এসব মহিলাদের সাহায্য করার জন্য আলাদা এটা অধিদপ্তর আগে থেকেই আছে। অনেক এনজিও কাজও করছে।

যাই হোক মহিলার প্রথম ক্ষতিটা করে বাল্যবিবাহ। আমাদের সমাজে এমন একটা ধারনা যে একটা মেয়ে শুধু যৌনসম্পর্ক করে বেড়াবে তাই তাকে বিয়ে দিয়ে দাও। তাতে কি হলো? উল্টো মেয়েটার লাইফ শেষ। একন মেয়েটা যদি ক্লাশ ৫ থেকেই স্কুল থেকে ঝরে পড়ে জীবন সংগ্রামেও লিপ্ত হতো তাহলে মেয়েটা অন্তত ৫-১০ বছরে নিজের জীবনটা গুছিয়ে নিজেই কাউকে বেছে নিয়ে জীবনটা গড়তে পারতো বর্তমানে গার্মেন্টস এর মেয়েরা যা করছে। প্রতিদিন ধুকে ধুকে মানুষের দয়া দাক্ষিন্যে বেচে থাকার পরিবর্তে এরা স্বালম্বিও হয় আর যদি কোনো মতে স্কুলের চৌহদ্দীটাও পার করতো এমন সংগ্রামী মহিলা আজকে নিজের পছন্দের একটা সংসার করতে পারতো। কিন্তু সমাজ, সংসার, কুশিক্ষা এসব পটেশিয়াল ব্যাক্তিত্বকে নষ্ট করে দিচ্ছে।


অবশ্যই সুন্দর একটা লেখা। এরকম লেখা নিয়ে আমাদের পর্যালোচনা বেশী করা উচিত

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ১২:৩৪

অগ্নি সারথি বলেছেন: ধন্যবাদ উদাসী স্বপ্ন, আপনার গুরুত্বপূর্ন মন্তব্য এবং বিশ্লেষণটুকুর জন্য।
উক্ত লেখাটা আমার একটা বয়ান মাত্র। গল্পের নারী যা বলেছেন তা হুবহু তুলে দিয়ে আমি আমার দায়িত্বে মুক্তি নিয়েছি সেখানে বিশ্লেষনের ধারে কাছেও আমি যাই নাই। সেটা ছেড়ে দিয়েছিলাম পাঠকের উপরেই, যা আপনি খুব সহজে ধরে ফেলে চমৎকার একটা বিশ্লেষন দাড় করিয়ে ফেলেছেন কিন্তু চাঁদ্গাজী করলেন কি- আমাকে দোষারোপ করে ব্যাক্তিগত আক্রমন করে বসলেন সরাসরি! ব্যাক্তিগত আক্রমন কোন ভাবেই কাম্য নয়।
যাই হোক, আপনার বিশ্লেষনধর্মী মন্তব্যের জন্য আবারো ধন্যবাদ। শুভকামনা।

৮| ১২ ই এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ৯:২৪

খায়রুল আহসান বলেছেন: বাঙলার নারীরা অনেক প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে অগ্রসরমান। গত পঞ্চাশ বছরের তুলনায় তারা স্বাবলম্বনের দুরূহ পথে অনেক দূর এগিয়ে এসেছে। তারা প্রকৃ্তির মত সর্বংসহা, প্রকৃ্তির মত মানবের প্রতিপালক।
ব্যাক্তিগত আক্রমন কোন ভাবেই কাম্য নয় (৭ নং প্রতিমন্তব্য) -- কথাটার সাথে পুরোপুরি একমত।
মানবী এর ভাষায় আমিও বলতে চাই, মূক রমিছাদের কন্ঠস্বর হবার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ অগ্নি সারথি!

১২ ই এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ১২:২১

অগ্নি সারথি বলেছেন: গত পঞ্চাশ বছরের তুলনায় তারা স্বাবলম্বনের দুরূহ পথে অনেক দূর এগিয়ে এসেছে - সহমত খায়রুল ভাই।
সুন্দর মন্তব্যটির জন্য ধন্যবাদ জানবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.