![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অয়ন ছোটবেলা থেকেই গ্রামে বেড়ে উঠা। হেটে স্কুলে যাওয়া,বৈশাখে ঝুম বৃষ্টিতে আম কুড়ানো কিংবা পুকুরে সাতাড় কাটা এসব ছিল তার দৈনন্দিন জীবনের অংশ।পরে একটা সময় সে শহরে আসল পড়ালেখায় ভাল করার নিমিত্তে। শহরে এসেই প্রথম বিপত্তি ঘটল রুট পার হতে গিয়ে।সে দেখল মোড়ের সিগ্নালে লাল বাতি জ্বলছিল আর অমনি নিশ্চিন্তে রুট পার হইতেছিল ওইখানেই ঘটল বিপত্তি অল্প একটুর জন্য বড় দুর্ঘটনা থেকে বেচে গেল।এর মাধ্যমে সে বুঝল আর যাই হোক চলাফেরার সময় চোখ কান খোলা রাখতে হবে।ক্লাশ পর্যন্ত পৌঁছাইল। ক্লাসরুমে প্রবেশ করে খেয়াল করল প্রথম বেঞ্ছিতে কয়েকজন বসা আর ম্যাক্সিমাম ই পিছনের দিকে। সে তো বেজায় খুশি গ্রামে প্রথম বেঞ্চে বসার জন্য রীতিমত যুদ্ধ লেগে যেত আর এখন বিনা বজ্রপাতেই বৃষ্টি পেয়ে যাওয়ার মত অবস্থা।স্যার প্রবেশ করলেন প্রথম প্রশ্ন “যে যে জুতা পড়ে আস নাই বের হয়ে যাও”। আবার বিপত্তি।প্রথম ক্লাশ বলে মাফ করে দিলেন স্যার।গ্রামের স্কুলে ইউনিফর্ম বলতে সাদা শার্ট আর কালো প্যান্ট হইলেই চলে।ইস্ত্রি করাই হোক আর না করাই হোক।এবার আসল টিফিনের পালা।টিফিনের অভিজ্ঞতাটাও নতুন তার জন্য।তো কয়েকদিনে অনেক বন্ধু হয়ে গেল অয়নের।মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে, বাবা সরকারী চাকুরিজীবি আসা যাওয়ার খরচ বাবদ প্রতিদিন চার টাকা করে পায় অয়ন।আর কয়েকদিনের মধ্যেই সে আবিষ্কার করল বাসে যাতায়াত না করে হেটে যাতায়াত করলে কিছু টাকা বাচানো যায়। যেই ভাবা সেই কাজ। দুই সপ্তাহে পনের টাকা জমিয়েছে সে।টিফিনের ছূটিতে একদিন আইস্ক্রিম খাচ্ছে আর তাতেই অনিক এসে বলে “দোস্ত ১০ টাকা ধার দিবি? কাল দিয়ে দিব নে”। অয়ন্তো জমানো টাকা নিয়ে মহানন্দে আছে.১০ টাকার নোট দিয়ে দিল।এরই মধ্যে ২-৩ মাস পার হল। কিন্তু ১০ টাকা আর পাওয়া হইল না।অনিক রীতিমত অস্বীকার ই করল বিষয়টা। নতুন অভিজ্ঞতা!!এক ঝড়ের দিন স্কুল ছুটির পর বৃষ্টি নামল হাতে ১০০ টাকার নোট (বেতন পরিশোধের দিন ছিল)।রিকশা ঠিক করল ১০ টাকা ভাড়া কিন্তু হাতে ১০০ টাকার নোট ছাড়া কিছুই নাই।রিকশা মামার কাছে সব মিলায়ে ৭০ টাকার মত ছিল.৭০ টাকাই দিল আর মামা বলল বাকি টাকাগুলা মোবাইলে পাঠিয়ে দিব।অয়ন তার আম্মার নাম্বারটা একটা ছোট কাগজে লিখে দিল।রাত ১০ টার দিকে মোবাইলে ইজি লোড আসল।
অয়ন তখন নবম শ্রেণীতে। তার প্রায় সব বন্ধুরাই কোন একবার স্কুল পালিয়েছে।কিন্তু সে পালায়নি।টিফিনের পরের পিরিয়ডে জীববিজ্ঞান ক্লাশ। অয়ন ছাড়া কেউ ই বাড়ির কাজ করেনি।আর বাড়ির কাজ না করে আনলে জব্বার স্যারের পিটুনি থেকে বাচার কোন উপায় ই নেই।তো সবাই মিলে ডিসিশন নিল টিফিনের পোর স্কুল পালাবে।কিন্তু অয়ন লা-পাত্তা।সে ক্লাশ করবেই।পরে সবার কথাই বাধ্য হয়েই স্কুল পালাল সে।
শহরের গন্ডি পেরিয়ে এবার রাজধানীর দিকে যাত্রা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হল সে।হলে উঠার প্রথমদিনেই ঘটল বিপত্তি.২০৯ নাম্বার রুমে দাওয়াত দিলেন এক বড় ভাই।তাও অনেককেই একসাথে।তারপর সবারই ১৮+ প্রশ্নপত্রের একটা পরীক্ষা হয়ে গেল।পরীক্ষার পোর সে আবিষ্কার করল সে আসলে জগতের অনেক ব্যাপারেই অন্ধ।পরেরদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এলাকা ঘুরাঘুরির পর রুমে প্রবেশ করল।দেখে চারজনের দুইটা গ্রুপ কার্ড খেলতেছে।দেখামাত্রই তার বাংলা ব্যাকরনের সেই ডায়লগটা মনে পড়ে যায় “তাস খেলে কত ছেলে সময় নষ্ট করে”।তারপর মাকে ফোন দিয়ে কথা শেষ করার পরো দেখে তারা তাস খেলেই যাচ্ছে।রাত ১১টা খেয়েদেয়ে ঘুমুতে গেল সে।ভোর ৫টার দিকে নামাজ পড়তে উঠে দেখে তখনো তাহা্রা তাস পিটিয়ে যাচ্ছেন।এভাবে সপ্তাহ দুয়েক যেতে না যেতেই সে তাস খেলা শিখে ফেলল।সাথে রাত জাগাটাও রপ্ত করে নিল।শুধু রুটিনে একটু পরিবর্তন আগে ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ পড়া হইত আর এখন ঘুমুতে যাওয়ার আগে ফজরের নামাজ পড়া হয়।প্রতি উইকেন্ড এ রাজনৈতিক মিটিং এ যাওয়াটা ও রুটিন এর অংশে পরিণত হল।
একদিন ঘুমুতে যাওয়ার প্রাক্কালে বন্ধু আক্কাস ডাইকা বলে “বন্ধু একটা ভিডিও দেইখা যাও মজা পাবা”। সে ভিডিওটা দেখল।এরপর রীতিমত ওই ধরনের ভিডিওর ফ্যান হয়ে গেল।
ও আচ্ছা অয়নের আরেকটা ideology ছিল সে অন্য যা কিছুই করুক না কেন সিগারেট ধরবেনা কারণ তার বাবা smoke করত যেটা তার অপছন্দের জিনিসগুলার মধ্যে একটা ছিল।
ওইকারণেই যারা সিগারেট ফুকত তাদের কাছ থেকে ১০০ হাত দূরে থাকত সে।
দুই সেমিস্টার শেষ। রুটিন চেঞ্জের কারণে ১-২ ওয়াক্ত নামাজ রেগুলার ই miss হয়।আর তাসের ৫-৬ ধরনের খেলা এখন তার হাতের মুঠোই।
একদিন সে দেখল ৪ তলায় সারারাত জুড়ে পোকার খেলা হয়।এতদিন বন্ধুরা মিলে পোকার খেলতে খেলতে একটু ভিন্নস্বাদ নিতেই চারতলাতে কয়েকজন মিলে গেল।গিয়েই ঘটল বিপত্তি।ক্যাশ-ইন করতে হবে।প্রথমে আপত্তি জানালেও পরে বসে পড়ল এরপর থেকে ১ সেমিষ্টার বন্ধের রাতে পোকার ই চলত সারারাত।এখন আর ফ্রেন্ড দের সাথে না চারতলায়।
কিছুদিন পর সে আবিষ্কার করল সে এখন জুম্মার নামাজটাও রেগুলার পড়ে না।তার আড্ডা হয় সব সিগারেটখোর বন্ধুদের সাথে,সারারাত অকাজে জেগে থাকা,মুভি দেখা,এরমধ্যে পছন্দের মানুষটির ও বিয়ে ঠিক হয়ে গেল।তাই সে চিন্তা করল সুইসাইড করবে।একদিন বন্ধুদের সাথে ছাদে আড্ডা দিচ্ছিল সে।হঠাত বন্ধুদের আড্ডা থেকে আলাদা হয়ে ছাদের কিনারায় এসে দাড়াল।কেউ না জানে মতই লাফ দিল ছাদ থেকে।পরে হলের সবাই মিলে তাকে DMC নিয়ে গেল,এরপর ইব্রাহিম কার্ডিয়াক এরপর যথারীতি জীবন ফেরার কোন আশঙ্কা না থাকায় হল এ।
অল্পকিছুক্ষন পর সে বুঝতে পারল সব ই আসলে ঘোরের মধ্যে।
©somewhere in net ltd.
১|
২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ ভোর ৫:৫২
লোহিত বামন বলেছেন: ভালো লাগসে। প্লাস