নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি আহমাদ মাগফুর। ৯৪ এ ময়মনসিংহে আমার জন্ম। স্কুল, কওমি আর আলিয়া সবার অবদান প্রাপ্ত হয়ে আপাতত আমি ‘মূর্খ কবি’ হিসেবে জীবনযাপন করছি। তাই আমার অনেক কিছু জানতে ইচ্ছে করে। জানতে ইচ্ছে করে, মানুষ কেন খুন করে! জানতে ইচ্ছে করে, মানুষ কেন ভালবাসে!

আহমাদ মাগফুর

আহমাদ মাগফুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

\'আম্মা, আমার জ্বর উঠছে\'

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৪৫


পৃথিবীর যেখানেই তুমি থাকো, জ্বর এলে তোমার ঠিক একই রকম অনুভূতি হবে। যে অনুভূতি তোমার বেশ পুরনো। যে অনুভূতি তোমার খুবই পরিচিত। চুলোর উপরে ফুটতে থাকা ভাতের পাতিলের ঢাকনা কাঁপতে কাঁপতে তার ফাঁক গলে বেরিয়ে যাওয়া বাষ্পের মত মনে হতে থাকবে তোমার প্রতিটি শ্বাস নিঃশ্বাস। যে খাবারই মুখে নেবে তুমি মনে হবে লবনটা খানিক বেশি হয়ে গেছে বোধহয়, কিংবা লবন দিতেই ভুলে গেছে সারাদিন সংসার গুছানো আম্মাটা।

চোখ মেলে যাই দেখবে তুমি তার উপর ছড়িয়ে থাকবে মিহিন একটা হলদে রঙের আভা। পুরোটা ঘর, জানালার ওপারের আকাশ আর সমস্ত গাছগাছালি ছেয়ে থাকবে সেই মিহিন হলুদের আলো। বেলকনির গ্রীল ছুঁয়ে আসা বাতাস কিংবা মাথার উপর ঘুরতে থাকা একঘেয়ে পাখার বাতাসটাও মনে হবে ফ্রীজের বরফ ভেঙে ভেঙে তোমার মুখের উপর অসহনীয় হয়ে ঝড়ে পড়ছে।

আর অতীতের সকল জ্বরের দিনগুলো একে একে তোমার মনে পড়তে থাকবে। মনে পড়তে থাকবে মাগরীবের পর একদিন সবাই সবক মুখস্ত করছিল আর তুমি এক পাশে একটা তোষকের উপর শুয়েছিলে। তোমার জ্বরাক্রান্ত গরম চোখের পানিতে গাল ভাসিয়ে তুমি সেই হেফজখানার সন্ধ্যায় ভাবছিলে মূলত তোমার আম্মার কথা। মনে পড়বে তোমার এক জ্বরের রাতে তোমার মামা তোমার জন্য সন্দেশ নিয়ে এসেছিলো একটা বাদামী রঙের ঠোঙ্গায় করে। মনে পড়বে জ্বরে ভরা এক বর্ষার মধ্যরাতে তোমার বড়কাকা; যাকে তুমি খুব ভয় করতে তার কাঁধেই মাথা রেখে নেতিয়ে পড়ে ছিলে তুমি। আর উঠানের পাশে আসা বর্ষার পানিতে বড়কাকা তোমাকে টর্চ জ্বেলে দেখাচ্ছিল মাছ কী করে ঘুমায়।

এভাবেই তোমার মনে পড়তে থাকবে আরও অনেককিছু। এগুলো ভাবতে ভাবতেই তুমি হঠাৎ খুব বিরক্ত হয়ে উঠবে তোমার নিকটবর্তী কোন শব্দের যন্ত্রণায়। কারন আশে পাশের খুব ছোটছোট শব্দ গুলোও তোমার কানে এসে অহরহ বারি খেয়ে যেতে থাকবে। কেউ কাউকে ডাকার শব্দ, থালাবাসন রাখার শব্দ, কিংবা রাস্তায় চলাচল করা রিক্সার টুংটাং বেল কিংবা প্রতিবেশীদের হাসিহাসির আওয়াজগুলোও খুব সূক্ষ্ম সূচের মত তোমার কানের পর্দায় এসে বিঁধতে থাকবে। এই সচরাচর আর অতি সাধারণ আওয়াজগুলোও তোমাকে বড্ড যন্ত্রণা দেবে। কারন এসব কোন আওয়াজের সাথেই তুমি প্রতিদিনকার মত আজ আর মিশে যেতে পারছো না। এলোমেলো বাসি বিছানাটা তোমাকে কেমন যেন কারাগারের মতই আটকে রেখেছে। এই কারাগারে কোন তালা নেই তবুও কেন যেন তুমি বেরিয়ে পড়তে পারছো না। মুক্ত এই কারাগারের জীবনটা তালাবদ্ধ কারাগারের চেয়েও কঠিন মনে হতে থাকবে। সময়টাকে মনে হতে থাকবে কেবলই করুণ একটা মহাকাল। বিছানার পাশের রুটির প্যাকেট, ফলের বাটি আর দুধের গ্লাসটা তোমাকে আরও যেন বিষণ্ণ করে তুলবে। প্যারাসিটামলের পাতাটাকে মনে হবে বিষণ্ণতা পেরোনোর ভাঙাচোরা কিন্তু প্রয়োজনীয় একটা মই।

তখন জ্বরের সময়। তখন কিছুই আর ভাল লাগবে না তোমার। নিত্যদিনের পরিচিত পুরো পৃথিবীটাকেই কেবল প্রতিপক্ষ মনে হতে থাকবে। তখন ভালো লাগবে শুধু তোমার গরম কপালে প্রিয় জনের ঠান্ডা একটা হাত। ঘোরলাগা জ্বরের হলুদ পৃথিবীতে শুধু তোমারই জন্য উদ্বিগ্ন হওয়া একটা মুখ। যেই হাতটা তোমার আম্মার। যেই মুখটা তোমার আব্বার। তোমার বোনের, তোমার ভায়ের কিংবা আরও কোন প্রিয় জনের....

লাখনৌ
১৫,৯,২০১৯

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:০৩

চাঁদগাজী বলেছেন:


আপনার কি প্রায়ই জ্বর থাকে?

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:৪৪

আহমাদ মাগফুর বলেছেন: প্রায়ই বলতে বছরে দুয়েকবার আসে। যতবার আসে ততবারই এক রকম ফিল করি। মনেহয় একই সময় ঘুরেফিরে আসছে।

২| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:৩২

রাজীব নুর বলেছেন: আমার জ্বর হলে কাউকে বলি না। ওষুধ খেয়ে চুপ করে শুয়ে থাকি।

৩| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৫৩

আহমাদ মাগফুর বলেছেন: এমনিতে একলা থাকার খুব অভ্যেস আছে আমার। কিন্তু জ্বরে চুপচাপ থাকলে বড্ড নিরীহ লাগে। বাসে উঠলে পর্যন্ত ইচ্ছে করে পাশের লোকটাকে জানাই যে আমার জ্বর। আর তারপর সে আমাকে শান্তনা কিংবা কোন পরামর্শ দিক! :-)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.