নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দিনের কোন শেষ নেই । এ এক অনন্ত ধারা....।

রক্তাক্ত-আমি

খুব বাজে স্বভাবের স্বর্থপর একটা বদ্ধ পাগল মানুষ আমি ! আমাতে কারো সুখ খুঁজতে নেই ! অনেক ইচ্ছা হয় ভালবাসবার, কিন্তু ভয় হয় মর্যাদা রক্ষার, তাই ভালবাসার সাথে আমার আঁড়ি, মাঝে মাঝে ভালবাসা আমাকে ধিক্কার দেয়, আমি প্রতিবাদ করতে পারিনা, মুখ বুজে মাথা নুইয়ে শুধু সয়ে যাই । অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকি সৌন্দর্যে, একটু পরেই ঘোর কাটে, বুঝি সে আমার নয় ! এভাবেই কেটে যায় আমার না পাবার রিক্ত হস্ত জাগরিত প্রহরগুলো, আর দিবা - সে তো নিশির অপেক্ষার ব্যস্ততায় ! তাই অতৃপ্তির কষাঘাতকে অমরলোকীয় মেনে ভেতর থেকে কেউ বলে ওঠে - এই বেশ ভাল আছি ! জানি ভাল থাকতে নেই, ভাল মানুষ ভাল থাকেনা, নিজেকে ভাল বলে কখনো মনেও করিনা । শত বিপত্তির মাঝেও এই একটা সান্তনামূলক বাণীর গর্ভেই সন্তুষ্টি খুঁজে পাই । বার বার বাহুল্য দোষে দুষ্ট আমি, তাই বর্জনীয়, ঘৃণ্য, আর ভাগ্যের কাছে তো বার বারই অপদস্ত, নিগৃহিত, বিতাড়িত । খুব আশাবাদী, ওটাই বারবার সঞ্জীবণী শক্তি জুগিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছে আমায় । বুঝেছি ভালবাসা না দিলে ভালবাসা পাওয়া যায় না, তাই তো এ জীবনে আর ভালবাসা হল না । ঝলসে যাওয়া এক নাগরিক আমি ।

রক্তাক্ত-আমি › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুক্তিযুদ্ধের গল্পঃ

১৮ ই জুন, ২০১৩ রাত ১২:১২





বাজার ছেড়ে হিজলদীঘির রাস্তায় নামতেই গাড়ি আগলে দাঁড়িয়েছে এক পাগল । বারবার হর্ন দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু কোন মতেই যেন যেতে দেবে না । মুখে তার একটাই বুলি, "আর কতদিন? আর কতদিন??" তারপর একটা ঢিলা কুঁড়োতে রাস্তার পাশে যেতেই গাড়ি তার পথ পেয়ে নিল । পেছন থেকে পাগলটা ঢিল একটা ঠিকই মারল, কিন্তু তা আর গাড়ীতে লাগল না ।



সজীবের বাবা, কামরুল হাসান, পাশের সীট থেকে ঘৃণা ভারে বলে উঠলেন, রাবিশ । কথাটা সজীবের শোনা হয়ে উঠল না । সজীব তখনও শুনতে পাচ্ছিল, আর কতদিন? আর কতদিন??



হিজলদীঘি, সজীবের পৈতৃক ভিটা । কামরুল হাসানের বড় হওয়া এখানেই । এখন শহরে তার নামডাক হয়েছে । কী করে এতো অর্থ-সম্পদ করেছে কেউ সঠিক বলতে পারে না ।



আব্দুস সোবহা, কামরুল হাসানের বাবা, সজীবের দাদা । জীবনে সফল,ছেলে তার প্রতিষ্ঠিত । ৩বারের চেয়ারম্যান,অর্থ-সম্পদ বাড়িয়েছেন । এলাকায় সম্মান আছে । সবাই মানে । শেষ বয়সটা ইবাদাত-বন্দেগীতেই কাঁটছে । প্রত্যেক ভালো মানুষেরই বিরুদ্ধ শক্তি থাকে, এনারও আছে । বিরোধী কেউ থাকে বলেই ওনারা 'স্বনীতিতে' আগাবার তাগিদ পান ।



বেলা গড়িয়ে বিকেল । সজীব দাদুর ঘরে বই দেখছিল । বেশির ভাগই ইসলামিক বই । বাইরে থেকে ডাক পড়ল - গ্রাম দেখতে যেতে হবে । পরিচিতদের সাথে দেখা করতে হবে । সঙ্গে বাড়ির পুরনো লোক আইয়ুবও থাকবে ।



পথে নানান জনের সাথে দেখা হচ্ছে, হাসান সাহেব কথা বলছেন । ছেলেকে চিনিয়ে দিচ্ছেন । সজীব নিজেকে আগন্তুক ভেবে সংকীর্ণ বোধ করছে । একবার খুব ছোট থাকতে এসেছিল সে গ্রামে । তারপর আর হয়নি ।



রফিক স্যার, স্থানীয় প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক । চুল পেকেছে । কিন্তু দেখে মনে হয় তারুণ্য, তেজ কিছুই কমেনি । স্যার চলে যেতেই হাসান সাহেব আইয়ুবকে বললেন, সজীবকে নিয়ে আরেকটু পর ঘুরে বাড়ি চলে যাস । একটু বাজারে যাব । ফিরতে দেরী হবে ।



ঘুরতে ঘুরতে আইয়ুব আর সজীবের অনেক কথাই হচ্ছিল । একসময় একটা উঁচু মিনারের সদৃশ একটা স্থাপনার সামনে এলো, তাতে লেখা - "তোমাদের সম্মানে, তোমাদের চেতনায়" ।



সন্ধা হয়ে আসছিল, সেখানে আর দাঁড়ানো হল না । ফিরতি পথে সজীব আইয়ুবের কাছে গ্রামের মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনছিল । সেই স্মরণেই এই মিনার । জানল ওখানে একটা বদ্ধভূমি আছে, আর জানল একটা পাগলের কথা, '৭১এর বীরযোদ্ধা জীবদ্দশায় এখন পাগল, উন্মাদ।



সজীব প্রশ্ন করেই যাচ্ছিল । এতো প্রশ্নের জবাব দিতে না পেরে আইয়ুব বলল কাল সকালেই রইস পাগলার কাছে নিয়ে যাবে । ওর মুখেই সব শুনবে ।



রইস পাগলাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না । জানা গেল রুটি চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েছে, বাজারের পার্শ্বস্থ স্কুলের বারান্দায় বেঁধে রাখা হয়েছে । সেখানে উৎসুক লোকের ভিড়, যেন বনের চিড়িয়া বাঁধা পড়েছে লোকালয়ে ।



পিলারে বেঁধে যত্রতত্র মারা হয়েছে । আইয়ুব সবাইকে তাড়িয়ে দিল । সজীব দেখল গতকালের সেই পাগল যে পথ আগলে দাঁড়িয়েছিল । সজীব আইয়ুবকে কিছু খাবার কিনতে পাঠিয়ে দিয়ে রইসের সাথে গল্প জুড়ে দিল, প্রসঙ্গক্রমে শুরু হল '৭১এ ফেরা...



...একাত্তর - উত্তাল মার্চ । ৭ তারিখ । জাতির জনকের শেষ ডাক । রইসরা ৭ তারিখে শুনতে পায়নি । পরে রেডিওতে শুনেছে বারবার ।



তখন কলেজে পড়ত । বাবা নেই, শুধু মা । সাহাবুদ্দিন ওর প্রাণের আপন । দুজনার পারিবারিক সম্পর্কও অনেক ঘনিষ্ঠ । দুষ্টুমিতেও দুজন সেরা ।



একবার খেজুর রস চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে, সালিশ হয় । পরের দিন পুরো গাছটাই উধাও করে দেয় ওরা । সাহাবুদ্দিনের এক বোন, শেফালী । রইসের সাথে ভাব । বাড়ি থেকে বিয়েও ঠিক । রইস একটু নিজের পায়ে দাঁড়ালেই বিয়ে ।



২৫ মার্চ । শুরু হয় বর্বরতা, নিরস্ত্রদের উপর সশস্ত্রদের হোলি খেলা । রইস-সাহাবুদ্দিনরা এর কিছুই জানতে পারে না । পরদিন জানতে পারে যখন পুরো দমে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে ।



দিন চলে যাচ্ছিল ভয়াবহতার আতংকে,জানে না তাদের কী করার আছে । সন্ধ্যায় সাহাবুদ্দিনের বাড়ি থেকে ফিরে শুয়েছিল । রইসের মা মামাবাড়ি গেছে । পরদিন সকালে উঠেই গঞ্জে যেতে হবে । শেফালী কিছু চুড়ি-ফিতার বায়না ধরেছে । কিন্তু সাহাবুদ্দিনকে জানানো চলবে না ।



রইস ততক্ষণে ঘুমিয়েই পড়েছিল বোধ হয় । হঠাৎ কিসের যেন গগন বিদারী আওয়াজে আচমকা জেগে ওঠে সে । মুহূর্তেই চারিদিকে শোরগোল বাড়তে থাকে । দিকে দিকে বাঁচতে চেয়ে খোদার দ্বারে শেষ ভিক্ষা । সর্বস্ব নিয়ে যাও, তবু প্রাণটুকু দাও ।



রইস ঘর ছেড়ে সোজা সাহাবুদ্দিনদের বাড়ি । কিন্তু কোথায়, সব তো আগুনে পুড়ে ছারখার । তবে কি ওরা সব আগুনে পুড়ে মরেছে !! রইস আগুণের দিকে এগিয়ে যায় প্রাণের সন্ধানে । মুহূর্তেই কয়েকটি গুলি তার গা ঘেঁষে যায় । রইস আর আগাতে পারে না । পিছু হটে । প্রাণবন্ধু আর প্রিয়তমাকে বোধ হয় মৃত্যুকূপে রেখেই ।



রইস এখন ছোট খাটো একটা মুক্তিবাহিনীর দলের সাথে আছে । শীঘ্রই ক্যাম্পে ফিরবে । সেখানে প্রশিক্ষণ পর হিজলদীঘিতে অপারেশন । সেখানে রইসকে বড় একটা ভুমিকা রাখতে হবে ।



পরদিন মধ্যরাতে রওনা হল ওরা । কিলো সাতেকের সোজা রাস্তা । কিন্তু পথে মিলিটারি ক্যাম্প থাকায় বেশ খানিকটা ঘুরে যেতে হবে, পুরোটাই হেঁটে ।



পৌছালো ফজরের কিছু আগে । সকালে উঠে ক্যাম্প লিডারের সাথে দেখা, জানালেন হিজলদিঘির আরেকজনও ক্যাম্পে আছে । লিডার ছেলেটিকে ডেকে পাঠালেন । কিন্তু যখন এসে ছেলেটি দাঁড়ালো তখন যেন দিকে দিকে আকাশচুম্বী বিদ্যুৎ খেলে গেলো । দুই জোড়া চোখের জল যেন তখন মুক্তো দানা বেঁধে দ্যুতি ছড়াচ্ছে । দুজনের তখন হৃদালিঙ্গন, দেহে সঞ্জীবনী উল্লাস, প্রাণের মাঝে আত্মা ফিরে পাওয়া ।



হ্যাঁ, সেদিন সাহাবুদ্দিন মরেনি । সেও ছুটে গিয়েছিল রইসের বাড়ি । কিন্তু ততক্ষণে রইস সাহাবুদ্দিনের বাড়িতে । দেখা হয়নি কারো । শেফালীও বেঁচে আছে, এখন মামাবাড়িতে, কাছেই । রাতেই একবার দেখতে যাবে দুজন ।



মামাদের গ্রামে ঢুকতেই দেখা কাদেরের সাথে । কাদের ওদের গ্রামেরই, অনেক সাদা-সিধে আর সরলমনা, সবার সাথেই হৃদ্যতা । এগ্রামে রইসদের আসার হেতুও জানল কাদের ।



শেফালী আর রইস পরস্পরে জড়িয়ে ধরে জন্মের কাঁদা কেঁদেছিল । সেদিনের চুড়ি-ফিতা দিতে না পারার সেকি হিমালয়সম আর্তনাদ, পাঁজর ছিঁড়ে অশ্রুধারা বেড়িয়ে আসতে চায় । জীবন এমনি নির্দয়, কাউকে সুখ দিতে চায় না । সুখ সাধ্যের বাইরেই থাকে, এই সুখের রীতি ।



সাহাবুদ্দিন হাত-মুখ ধুয়ে ঘরে ঢুকতেই ওরা পরস্পরকে ছাড়িয়ে নিল । তখনও ওদের চোখ ভেজা, ঘরে স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়া, যেন এইমাত্র এক পসলা বারি বয়ে গেছে ।



রইস-সাহাবুদ্দিন খেতে বসেছে, সামনে বসে শেফালী খাবার বেড়ে দিচ্ছে, আয়োজন যৎসামান্য । খাওয়া শেষেই ফিরতে হবে । সহসাই বাইরে কাদেরের কণ্ঠ, দরজা খুলতেই সাবু রাজাকার, সাথে দুজন মিলিটারি । কাদের শান্তিবাহিনীর লোক ।



রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে ওদেরকে বেঁধে রাখা হয়েছে । মুক্তিক্যাম্প কোথায় জানতে চেয়ে ওদের উপর খুব অত্যাচার চলছে । কিন্তু যে যুব দেশমাতৃকার নামে শপথ করেছে তার মুখে ঘৃণা আর ক্রোধ ছাড়া কিছু রোচে না ।



ওদেরকে রেখে পাশের ঘরে শেফালীকে নিয়ে যাওয়া হয় । শেফালীর আত্মচিতকার মানবতাকে ক্রমাগত লাথি মেরে ধিক্কার জানাতে থাকে । কিন্তু জারজ-শুয়ারের মাঝে মানবতা জাগার প্রশ্নই তখন ওঠেনি । যেন বুকের বাপাশে কেউ ফুটো করে হৃদপিণ্ডটা ছিঁড়ে নিতে চাইছে । ইতিমধ্যেই সাবু’র মুখে এক দলা থুথু বিসর্জন দেয় সাহাবুদ্দিন । সাথে সাথেই গুলি করে মাটিতে লুটিয়ে ফেলে মানুষরূপী চারপেয়ে ইতর সাবু...



...এসব বলতে বলতেই পাগলা রইস পাগলা প্রলাপ বকতে শুরু করে । নিয়ম করে গড়ে তোলা এই সভ্যতায় সেই প্রলাপ ভীষণ অসভ্য । চাটুকারদের এই ভদ্র সমাজ সেসব উক্তিকে অশ্রাব্য ঘোষণা করেছে । কীসব বকতে বকতে দৌড়ে চলে যাচ্ছিল রইস পাগলা । সজীব আটকাতে পারেনি তাকে । পড়ে রইল ওর জন্য আনা খাবার । শুধু দূর থেকে ভেসে আসছিল,"আর কতদিন? আর কতদিন??"



নিজের চোখের সামনে নিজের প্রাণাধিক প্রিয় বন্ধুকে রক্তাক্ত শ্বাস নিতে দেখেছে রইস, অস্তিত্বের সঙ্গিনীকে মেহেদীতে না রাঙ্গিয়েই নিথর বিবস্ত্র হতে দেখেছে । কিন্তু তারপর কি হয়েছিল?? কীভাবে বেঁচে গিয়ে প্রতিদিন মৃত্যুকে বরণ করে নিচ্ছে রইস?? কে জানে এসব প্রশ্নের উত্তর??



রফিক স্যার । তিনিই বলতে পারবেন সব বৃত্তান্ত । আইয়ুব সজীবকে নিয়ে গেল রফিক স্যারের কাছে । স্যার প্রথমটা ইতস্তত করলেও পরে বলতে শুরু করলেন...



...রক্তাক্ত সাহাবুদ্দিন ততক্ষণে নিস্তেজ, স্বাধীন জন্মভূমিকে দেখতে তার চোখ তখনও উন্মুখ চেয়ে । পাশের ঘরের আর্তনাদ ক্ষণেই নীরবতা নিয়েছে । রইসের প্রাণ প্রদীপও নিভে যাওয়ার কথা ছিল । কিন্তু মুক্তিবাহিনীর একটা কমান্ডো দল এসে মুহুর্মুহু আক্রমণে গুঁড়িয়ে দেয় পাকিস্তানী পতিতালয় । প্রাণে বেঁচে যায় রইস ।



মুক্তিবাহিনীকে খবর দেওয়ার কাজটা করে কাদের । এমন নৃশংসতা দেখে নিজেকে আটকে রাখতে পারেনি । ধর্মের দোহায় দিয়েই তাকে রাজাকারে নাম লেখান হয়েছিল, আর ছিল হাহাকারের দিনে নগদ টাকার লোভ । কিন্তু এযে অধর্ম, অন্যায়, ধর্মের নামে হায়েনা সেজে স্বার্থ শিকার । কাদেরও বাঁচেনি, গণকবর দেওয়া হয় গ্রামের সেই মিনারের পাশে । কিন্তু সেদিন বেঁচে গিয়েছিল সাবু রাজাকার ।



তারপর থেকেই কি রইস পাগল হয়ে গেছে??



না । তাঁকে পাগল করা হয় স্বাধীনতার ৬-৭ বছর পর, যখন দেশে পরাজিত শক্তি আবার মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে ।



সাবু রাজাকার এলাকার চেয়ারম্যান হন । কিন্তু তার নগ্ন কালো কুৎসিত আর ধর্মের লেবাছে মুখোশ পড়া চেহারা দেখেছিল রইস । হারামিটার বিরুদ্ধাচরণ শুরু করে । কিন্তু সাবু আগুনটাকে দাউ দাউ করে জ্বলে উঠতে দেয়নি । তার আগেই নিভিয়ে দিয়েছে আরেক আগুন জ্বেলে ।



স্বাধীনতার পর টিউশনি করেই চলত । এক ছাত্রীর সাথে প্রণয়ের অবৈধ সম্পর্কের অপপ্রচার করে পাক-বীর্যের সাবু । শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মেয়েটা আত্মহত্যা করে পরম লজ্জায় । রইসকেও ন্যাড়া করে গলায় জুতা ঝুলিয়ে এলাকায় ঘোরানো হয় । চরম অপমানে রইস ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে, অদ্যাবধি রইস পাগলা নামেই পরিচিত...



সজীবরা শহরে ফিরেছে । আইয়ুবের থেকে সাবু রাজাকারের পরিচয় জেনেছে । প্রথমে আইয়ুব নির্বাক প্রত্যুত্তরহীন হয়ে ছিল । পরে নতমুখে জানায় এই সাবু রাজাকারই তার দাদা, আব্দুস সোবহান !! বুকের মাঝে একরাশ ঘৃণার দাবানল চেপে রেখেই গ্রাম থেকে ফিরেছে সে ।



প্রতিদিনই হয়ত রইস পাগলারা রুটি চুরিতে ধরা পড়ে, মার খায়, বেঁধে রাখা হয় । শুধু এক রাশ করে ঘৃণা জমা করে এদেশের মানুষগুলোর প্রতি । শেফালীকে তার পাওয়া হয়নি, সাহাবুদ্দিনের সাথে আর খেজুরের রস চুরি করা হয়নি । লাল ফিতা, রেশমি চুড়ি কিনে দুহাতে ভালোবাসা অর্পণ করা হয়নি । বেনারসি পড়িয়ে ঘরে তোলা হয়নি । শুধু একটা সন্তুষ্টিই হয়ত বুকের মাঝে খোঁচা দেয়-দেশটা তো স্বাধীন হয়েছে, তবুও যে মুক্তি মেলেনি কালের হারাম সময়ে জন্ম নেওয়া কুকুরদের থেকে । মুক্তির আবেদনে ছুঁড়ে দেওয়া ঢিলটা ওদের গাড়িকে এখন আর ছোঁয় না ।



৫ ফেব্রুয়ারি’১৩ । কামরুল সাহেব ফোন দিলেন সজীবকে,



-কোথায় বাবা?? এতো শোরগোল কেন??

-আমি শাহবাগে ।

-ওখানে কী?

-রাজাকারদের ফাঁসির দাবীতে...

-এসবে তোমার কী? চলে আসো...যত্তসব ফালতু কাজ-বাজ !!

-আর কতদিন বাবা, আর কতদিন !!



কামরুল সাহেব থমকে গেলেন । পায়ের তল থেকে যেন মাটি সরে যাচ্ছিল । পাশ থেকে মেয়ে কণ্ঠে স্লোগান ভেসে আসছিল...



ফাঁসি, ফাঁসি, ফাঁসি চাই...রাজাকারের ফাঁসি চাই !!



ফিরে এসেছে জয় বাংলা, সজীবরা জানে, একে ধরে রাখতে হবে...!!

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ১:৩১

আরজু পনি বলেছেন:

শেষটা খুব সুন্দর করেছেন।
সাধুবাদ রইল।

:)

১৮ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ২:৫৬

রক্তাক্ত-আমি বলেছেন: ধন্যবাদ... :)

২| ১৮ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ২:৫৭

রক্তাক্ত-আমি বলেছেন: এটা খসড়া ছিল । পুরনাঙ্গ করেছি লেখাটা...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.