![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেশের বিভিন্ন স্থানে কমবেশি তেজপাতা উত্পাদিত হলেও সিলেট অঞ্চলই এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে। সিলেটের জৈন্তাপুর ও মৌলভীবাজারের বিভিন্ন উপজেলায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে তেজপাতার চাষ হচ্ছে। উত্পাদিত এ তেজপাতা রফতানিও হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে মসলাদ্রব্যটি পাঠানো হচ্ছে।
সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, জৈন্তাপুরে ১০ হেক্টর জমিতে তেজপাতার চাষ হয়েছে। এ ছাড়া মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় ১ হেক্টর, শ্রীমঙ্গলে দশমিক ৫, কমলগঞ্জে ২, কুলাউড়ায় ১ দশমিক ৫, বড়লেখায় ১০, জুড়িতে ৫ ও রাজনগর উপজেলায় ১ হেক্টর জমিতে তেজপাতার চাষ হয়েছে।
তবে এ অঞ্চলে বছরে কী পরিমাণ তেজপাতা উত্পাদিত হয় তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কাছে নেই। সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক মহসীন উদ্দীন খান বলেন, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও মৌলভীবাজারের কয়েকটি উপজেলায় তেজপাতার চাষ হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পারিবারিকভাবে বাগান করে তেজপাতার চাষ হচ্ছে। তাই উত্পাদনের পরিসংখ্যান কৃষি অফিসের কাছে নেই।
প্রতি বছর কী পরিমাণ তেজপাতা রফতানি হচ্ছে, সে তথ্য জানাতে পারেনি সিলেট রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো। প্রতিষ্ঠানটির সিলেট অফিসের সহকারী পরিচালক শফিকুল হাসান বলেন, সিলেটের তেজপাতা যুুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রফতানি হয়। ঢাকা থেকে এগুলো রফতানি হওয়ায় সিলেট অফিসে এর কোনো তথ্য নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জৈন্তাপুরের প্রায় সব গ্রামেই তেজপাতার চাষ হয়। ফতেহপুর, হরিপুর, চিকনাগুল, আসামপুর, বাগরখলা ইউনিয়নের প্রায় প্রতি বাড়িতেই তেজপাতার বাগান রয়েছে। এ ছাড়া গোয়াইনঘাট উপজেলায়ও স্বল্প পরিসরে এর চাষ হচ্ছে।
জৈন্তাপুরের চাষীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আবহাওয়া অনুকূল থাকায় অন্যান্য বছরের তুলনায় তেজপাতার ফলন এবার ভালো হয়েছে। আশানুরূপ দামও পাচ্ছেন তারা।
এ এলাকার তেজপাতাচাষী আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আগে প্রতিটি গাছ থেকে ২০-২৫ কেজি তেজপাতা পাওয়া যেত। এবার ৩০-৩৫ কেজি তেজপাতা পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।’
একই এলাকার আখতার ইসলাম বলেন, ‘বছরের সব মৌসুমেই তেজপাতা বিক্রি করি। তবে শীতকালে বেচাকেনা বেশি হয়। এবার দামও ভালো। প্রতি কেজি তেজপাতা ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’ ভালো দাম পাওয়ার কথা জানান মৌলভীবাজারের তেজপাতাচাষী সেকু মিয়াও।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা চাষীদের কাছ থেকে এ তেজপাতা কিনে নিচ্ছেন। এসব পাতা শুকানো ও বাছাইয়ের কাজটাও তারাই করছেন। পরে ঢাকার পাইকাররা এ তেজপাতা কিনে নিয়ে বিভিন্ন দেশে রফতানি করছেন।
জৈন্তাপুরের তেজপাতা ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘চাষীদের কাছ থেকে আমরা প্রতি কেজি তেজপাতা ৬০-৭০ টাকায় কিনে থাকি। এরপর এগুলো ভালো করে শুকিয়ে ও রোগাক্রান্ত পাতা বাছাই করে ঢাকার পাইকারদের কাছে ১২০-১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করি। ঢাকার রফতানিকারকদের হাত হয়ে এ তেজপাতা বিভিন্ন দেশে চলে যায়।’ প্রতি সপ্তাহে গড়ে ১ হাজার কেজি তেজপাতা রফতানি হচ্ছে বলে জানান তিনি।
অনেক সময় আঁটি হিসেবেও তেজপাতা বিক্রি হয়। মৌলভীবাজারের ব্যবসায়ী মো. হাসিম জানান, বাজারে প্রতি আঁটি সাধারণত ২০ টাকা করে বিক্রি হয়। এক আঁটিতে তেজপাতা গাছের ছোট দুটি ডাল থাকে। ভরা মৌসুমে একেকটি গাছ থেকে ২০০-২৫০ আঁটি তেজপাতা পাওয়া যায়।
জৈন্তাপুর সাইট্রাস গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. লুত্ফুর রহমান বলেন, চাষীদের প্রশিক্ষণ ও বাগান পরিচর্যার অভাব সত্ত্বেও তেজপাতার উত্পাদন বাড়ছে। চাষীদের পর্যাপ্ত সহায়তা দিলে ভবিষ্যতে এর উত্পাদন আরও বাড়বে।
©somewhere in net ltd.