![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
৫ ফেব্রুয়ারিতে শাহবাগে শুরু হওয়া গণজাগরণের দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে সরকার মানবতাবিরোধী বিচারের জন্য গঠিত ট্রাইব্যুনালের কতিপয় আইন সংশোধনের কাজ হাতে নেয়। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার অধিকারী হবে বাদী-বিবাদী সমানভাবে। অর্থাৎ রাষ্ট্রপক্ষও রায়ের বিরুদ্ধে এখন আপিল করতে পারছে। অন্যদিকে আপিলটি দ্রুত শেষ হতে পারে এভাবে সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। প্রজন্ম চত্ব¡রের মহাজাগরণের এটাই প্রাথমিক বিজয়ের সূচনা। সামাজিকভাবেও সাফল্য ঘরে আসা শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে জাতীয় প্রেসক্লাব কাদের মোল্লা এবং কামরুজ্জামানের সদস্যপদ বাতিল করেছে। সঙ্গে সঙ্গে সরকারও বাধ্য হয়েছে নতুন প্রজন্মের দাবিকে মেনে নিতে। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ যদি যাবজ্জীবন কারাদ-ের বিরুদ্ধে আপিল করে এবং উচ্চতর আদালত যদি কাদের মোল্লার দ- পরিবর্তন করে ফাঁসির আদেশ প্রদান করে তবেই হবে শাহবাগের প্রজন্ম চত্ব¡রের বিজয়, এ দেশের সাধারণ জনগণের বিজয়। এখন শুধু অপেক্ষা করা সেই দিনটির জন্য, যেদিন বাস্তবায়িত হবে কাদের মোল্লাসহ অন্য যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির আদেশ। প্রজন্ম চত্ব¡রের দাবিতে আরো যেগুলো এসেছে তার মধ্যে জামাতের রাজনীতি বন্ধ এবং জামাতের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বর্জন। নির্বাচন কমিশন এবং সরকার এ বিষয়েও চিন্তা-ভাবনা করছে।
প্রজন্ম চত্ব¡রের গণজাগরণের প্রতি সরকার এবং আওয়ামী লীগ সংহতি প্রকাশ করেছে। কমিউনিস্ট ব্লকের রাজনৈতিক দলগুলো সংহতি প্রকাশ করেছে। কিন্তু অনেক রাজনৈতিক দল সংহতি জানালেও প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং ১৮ দলের অন্য কোনো দল সংহতি জানায়নি। গণজাগরণ নিয়ে বরং বিএনপি বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য পেশ করে তরুণ প্রজন্মের জাগরণকে বাঁকা চোখে দেখার চেষ্টা করেছে। একধাপ এগিয়ে গিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েসনের প্রাক্তন সভাপতি এবং বিএনপি নেতা খন্দকার মাহবুব বর্তমান ট্রাইব্যুনালকে বাতিল করে জাতিসংঘের অধীনে নতুন ট্রাইব্যুনাল গড়ার আহ্বান জানিয়েছেন। বিএনপির আরেক নেতা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হান্নান শাহ (অব.) এই জাগরণকে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার কারসাজি বলে উল্লেখ করেছেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে অনেক সময়ই বলা হয় যে, এখানকার নেতা-নেত্রীরা এতোটাই মিথ্যা বক্তব্য প্রদান করেন যে প্রকাশ্যে কালো বোর্ড দেখেও তাকে সাদা বোর্ড বলে অভিহিত করেন। জনাব হান্নান শাহের বক্তব্য শুনে মনে হয়েছে প্রচলিত ধারণাটি মিথ্যা নয়। বিবেক এবং ন্যূনতম সত্য তথ্যের তোয়াক্কা করলে শাহবাগের গণজাগরণ নিয়ে জনাব হান্নান শাহ এতো বড় মিথ্যা কথা বলতে পারতেন না। যেখানে সারা দেশের মানুষ দেখছে কিভাবে স্বতঃস্ফূর্তভাবে হাজার হাজর বাঙালি শাহবাগ প্রজন্ম চত্ব¡রে জমায়েত হচ্ছে, সেখানে জনাব হান্নান শাহরা দেখেছেন টাকা-পয়সা খরচ করে সরকার মানুষ জড়ো করেছে। মিথ্যার ওপর বসতি করে এমন ধরনের অপরাজনীতি যারা করেন তারা জনগণের সামনে কিভাবে দাঁড়াতে পারেন ভোটের সময় তা ভাবতেও অবাক লাগে। বিএনপির মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান (অব.) এবং এম কে আনোয়ার প্রজন্ম চত্ব¡রের জাগরণকে স্বাগত জানিয়ে সঙ্গে যোগ দিয়েছেন যে, তাদের সংগ্রামের সঙ্গে গণতন্ত্র রক্ষা এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার দাবিও থাকা প্রয়োজন। সর্বশেষ বিএনপির অফিসিয়াল বার্তায় জানানো হয় যে, তারা তরুণ প্রজন্মের জাগরণ সমর্থন করে তবে সেখানে তারা আরো কিছু দাবি সংযোজন করার আহ্বান জানায়। প্রজন্ম চত্ব¡র অরাজনৈতিক গণজাগরণ। অরাজনৈতিক চরিত্র বলেই এখানে জড়ো হতে পেরেছে লাখ লাখ মানুষ। এদের একটিই দাবি, একটিই সেøাগান; আর তা হলো যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে তারা জড়ো হয়েছে প্রজন্ম চত্ব¡রে। তাই এর সঙ্গে অন্য কোনো রাজনৈতিক ইস্যু যোগ করার বিষয়টি তারা চিন্তাই করে না।
বিশ্লেষকরা অনেকেই মনে করছেন কোথায় যাবে এই নবজাগরণ? কিভাবে শেষ হবে এই গণজাগরণ? কোথায় গিয়ে শেষ হবে এই সংগ্রাম? অনেক ব্লগাররা সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, তারা একটি জাগরণের শুরু করেছে কিন্তু শেষ করার অধিকার রাখে জনতা। কেননা এই জাগরণের নিয়ন্ত্রক এখন জনগণ। সর্বস্তরের জনগণ এখন এই সংগ্রামের সঙ্গে একাত্ম। জনতা কখন শেষ করবে, কিভাবে শেষ করবে তা কেউ বলতে পারে না। নেতৃত্ববিহীন কোনো জাগরণের কথা তো এমনটাই হবে। কোনো ইস্যু তৈরি করে এখানে কোনো নেতা তৈরি করা হয়নি। একজন ডাক দিয়েছে আর সেই ডাকে সাড়া দিয়ে একে একে ঘর ছেড়েছে হাজার হাজার মানুষ। অঙ্ক কষে এখন তাই বলা যাবে না কখন এবং কিভাবে তারা শেষ করবে তাদের কর্মকা-। এটা নির্ভর করবে আগামী দিনের ঘটনার ওপর। জনতার দাবিÑ কাদের মোল্লার ফাঁসি, অন্য যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি, জামাতের রাজনীতি বাতিল। এই দাবিগুলো পাওয়া গেলেই মানুষ মাঠ ছেড়ে দেবে। এখন প্রশ্ন হলোÑ দাবি আদায় হবে কবে? দাবিগুলো আইনি প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত। যাবজ্জীবন কারাদ- ফাঁসিতে বদল করতে হলে প্রথমেই আসছে আইনের পরিবর্তন যা শুরু হয়ে গিয়েছে ইতোমধ্যেই। তারপর আসছে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে কাদের মোল্লার কারাদ-ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল এবং সেই আপিল থেকে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পাওয়া রায় (যদি সেটি হয় ফাঁসি)। অন্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে তাদের ফাঁসি দেখার জন্য (যদি আদালত থেকে ফাঁসির রায় পাওয়া যায়)। অন্যদিকে জামাতের রাজনীতি বন্ধের বিষয় পুরোটাই নির্বাচন কমিশন বা সরকারের হাতে। নির্বাচন কমিশন তাদের গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করতে বলেছিল এবং সে জন্য তারা জামায়াতকে ইতোমধ্যে ছয়বার সময় দিয়েছে। এখন নির্বাচন কমিশন জামায়াতের গঠনতন্ত্র বাংলাদেশের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিবেচনা করে জামাতের নিবন্ধন বাতিল করতে পারে। অন্যদিকে, বর্তমান সরকার ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করে সংবিধান পরিবর্তন করার বিল উত্থাপন করতে পারে সংসদে। সংসদ সংবিধান পরিবর্তন করে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করলে জামায়াতের রাজনীতি স্বয়ংক্রিয়ভাবেই বাতিল হয়ে যেতে পারে। তবে রায়ে ফাঁসির আদেশ পাওয়া কিংবা ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা উভয়ক্ষেত্রেই সময় একটি বিবেচ্য বিষয়। কোনোটাই রাতারাতি সম্পন্ন হওয়ার বিষয় নয়। অন্যদিকে, দাবি আদায় না হলে ঘরে ফিরবে না বলে তরুণ প্রজন্মের ঘোষণা। তাহলে যথাযথভাবেই প্রশ্ন আসবেÑ কতোদিন চলবে এই গণজাগরণের অবস্থান।
প্রজন্ম চত্ব¡রে তরুণ প্রজন্মসহ সাধারণ মানুষ কতোদিন আন্দোলন চালিয়ে যাবে তা ভবিষ্যৎই জবাব দেবে। তবে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল গত ৫ ফেব্রুয়ারি এবং যে আন্দোলন আজো চলছে সমান গতিতে, তার ফলাফল নিয়ে কিন্তু কোনো প্রশ্ন করার সুযোগ নেই। এই আন্দেলনের উদ্দেশ্য ছিল কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে গণজাগরণ। আর সেই গণজাগরণ ইতোমধ্যে হয়েছে। প্রজন্ম চত্ব¡রে, ঢাকার রাজপথে, মানুষের ঘরে ঘরে, বাংলাদেশের গ্রামে-গঞ্জে-শহরে-নগরে, পৃথিবীর যেসব দেশে বাঙালি আছে সেইসব দেশে সর্বত্রই সম্পন্ন হয়েছে গণজাগরণ। জনতা জেগে উঠেছে এবং ঘৃণা জানাচ্ছে জামাত-শিবিরকে। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে আজ অনড় সব বাঙালি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বেলিত আজ বাংলাদেশের মানুষ। এটাই ছিল এই আন্দোলনের চাহিদা এবং এটাই ছিল এই আন্দোলনের প্রাপ্তি। কাজেই আন্দোলনটি ইতোমধ্যেই গণজাগরণ ঘটিয়ে সফল পরিণতিতে পৌঁছে গিয়েছে। প্রজন্ম চত্ব¡রে আর কতোদিন এভাবে মানুষ থাকবে সেটি এখন বড় প্রশ্ন নয়। এখন তো শুধু শাহবাগ বা দেশের জেলা শহরগুলোতেই এই আন্দোলন সীমাবদ্ধ নেই বরং এই আন্দোলনের ব্যাপ্তি ছড়িয়ে গিয়েছে বাঙালির ঘরে ঘরে। সুতরাং দৃঢ়ভাবে বলা যায়, এই গণজাগরণের শেষটা হবে যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে সফল পরিণতি। আদালত ফাঁসির আদেশ শোনাবেন কিনা, সরকার জামাতের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করবে কিনা এ বিষয়গুলো এই আন্দোলনের বাই প্রোডাক্ট। এই আন্দোলনের মূল প্রোডাক্ট ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় মানুষের জাগরণ। আর সেই গণজাগরণ এখন বাংলাদেশের বাস্তবতা। এই গণজাগরণ এমন একটি আত্মিক এবং মানসিক বিষয় যে, মানুষ এখন প্রজন্ম চত্ব¡রেই থাকুক আর নিজ ঘরে বসেই থাকুক মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তার সঙ্গী হয়েই থাকবে। সুতরাং আজকের চলমান তরুণ প্রজন্মের এই আন্দোলন একটি সফল এবং কার্যকরী আন্দোলন হিসেবে ইতোমধ্যেই স্বীকৃত হয়েছে। তাই এর সফলতার জন্য শেষটা দেখার প্রয়োজন নেই। ৫ ফেব্রুয়ারির পর প্রতিদিনই এর সফলতা ঘরে আসছে। জয়বাংলা মানুষের কণ্ঠে ফিরে এসেছে, প্রজন্ম চত্ব¡রের আহ্বানে সরকার ট্রাইব্যুনালের আইন পরিবর্তন করেছে, তিন মিনিটের নীরবতা পালনের আহ্বানে পুরো দেশ তিন মিনিটের জন্য থমকে দাঁড়িয়েছে, মানুষের হৃদয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আগুন জ্বলছেÑ তবে আর কি চাই! এই তো প্রাপ্তি, এই তো সফলতা।
প্রজন্ম চত্ব¡রÑ তোমরা আছ এবং তোমরা থাকবে। তোমাদের সঙ্গে আছে বাংলার ১৬ কোটি মানুষ। হাতে গোনা গুটিকয়েক যুদ্ধাপরাধী এবং তাদের সাহায্যকারী ব্যতীত অন্য সকলেই তোমাদের সঙ্গে আছে। যতোদিন পার ঠিক এইভাবে রাজনৈতিক লেজুরবৃত্তির বাইরে থেকে তোমাদের সেøাগান বজায় রেখে যাও। তোমাদের চেতনা, তোমাদের আবেগ হোক তোমাদের পথের সাথী। তোমরা জয়ী হয়েছ ইতোমধ্যে। এখন শুধু সেই জয়ের পতাকা ধরে রাখা। যে যাই বলুক, যে যতোই হিসাব-নিকাশ করুক, আমরা জানি তোমাদের এই জাগরণ দুদিনের জাগরণ নয়। তোমরা পারবে, তোমাদের পারতেই হবে। কেননা তোমাদের দিকে চেয়ে আছে যারা এতো বছর ধরে এই কাজটি বুকে লালন করলেও বাস্তবে করে দেখাতে পারেনি। তোমাদের পেছনে তাকাবার প্রয়োজন নেই। তোমাদের ভাবতে হবে না এই প্রজন্ম চত্ব¡রের শেষটা কোথায়। সময়ই তোমাদের বলে দেবে কখন তোমরা ঘরে ফিরবে।
২| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:৫৩
ওমেগা পয়েন্ট বলেছেন: মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কথাটার আসলেই কি কোন অর্থ আছে? মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল মূলত পাকিস্তানীদের আমাদের উপর চাপিয়ে দেয়া অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বৈষম্যের প্রতিবাদ হিসেবে। কিন্তু এখনতো মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে যা হচ্ছে তা হলো পৌত্তলিক সংস্কৃতির চর্চা।
সত্যিকার অর্থে যে মতাদর্শে রয়েছে বৈষম্যমুক্ত সমাজ গড়ার মূলমন্ত্র তাকেই তো এখন এ চেতনার কথা বলে প্রত্যাখান করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সবার প্রত্যাশা এই কথা এখন সস্তা রাজনৈতিক স্লোগানে পরিণত হয়েছে। এর অর্থ আসলে কি তা মনে হয় চেতনার স্লোগানধারীরা নিজেরাও ঠিক উপলদ্ধি করতে পারেনি।
©somewhere in net ltd.
১|
২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:১৭
আবু তাশফীন বলেছেন: 'মুক্তিযুদ্ধের চেতনা' কি - এনিয়ে একটি বিশদ পোস্ট আশা করছি। রাজনৈতিক কারণে এর আসল মিনিং বুঝা কষ্টকর।