নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সবার কথা

আহমেদ রশীদ

আহমেদ রশীদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

এরা কারা, চাঁদে ভেলকি দেখাচ্ছে?

১০ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ৯:০৩



১৯৬৯ সালে যখন মানুষ প্রথম চাঁদে অবতরণ করেছিল, জুলাই মাসে, পৃথিবী জুড়ে সে এক উত্তেজনার বিষয় হয়ে উঠেছিল। তৎকালীন পাকিস্তানের পূর্ব অংশে অর্থাৎ পূর্ব পাকিস্তানেও মানুষজন শহর এলাকায় (মূলত ঢাকা শহরে) টেলিভিশনের মাধ্যমে সে দৃশ্য দেখেছিল। এবং আশ্চর্য হলেও সত্য, সেদিনও একদল মানুষ মানুষের এই চাঁদে অবতরণকে মানতে অনাগ্রহী ছিলেন। তাঁদের বক্তব্য, মানুষ কখনই চাঁদে যেতে পারে না; কোন মরুভূমিতে ‘চন্দ্রতরী’ নামিয়ে ছবি তোলা হয়েছে এবং সেটাই নাকি টেলিভিশন, পত্রপত্রিকায় প্রচার করা হচ্ছে। ধর্মভিত্তিক সেই দলগুলো এবার নতুন তত্ত্বে নেমেছে- সেটি ঐ চাঁদকে কেন্দ্র করেই! তবে বিজ্ঞানের প্রযুক্তিকে বেশ কাজে লাগিয়ে এবার ’৬৯ সালে যে বিজ্ঞানকে ওরা বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়েছিল, ২০১৩ সালে এসে সেই বিজ্ঞানের ওপরই নির্ভর করে বেশ এক চমক সৃষ্টি করে সরলপ্রাণ, ধর্মপ্রাণ মানুষকে উসকে দিচ্ছে- চাঁদে সাঈদী সাহেবের মুখচ্ছবি দেখা গিয়েছে!

আমরা গত বেশ কিছু মাস যাবত এক অনিশ্চিত রাজনৈতিক পরিস্থিতির পথে চলেছি। শাহবাগে তার প্রথম উন্মিলন। তারপরের ঘটনা পুরো দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছে কিংবা স্বশরীরে এসে শাহবাগ জনজোয়ারে একাত্মতা ঘোষণা করেছে।

গত তিন/চার দিনে যে সহিংসতা অবলোকন করা যাচ্ছে তাতে ভীত না হয়ে উপায় নেই। হিন্দু-মুসলমান যে সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে দিনাতিপাত করছিলেন সেখানে যেমন হঠাৎ দমকা হাওয়া উপস্থিত, ঠিক তেমনি আশ্চর্যভাবে সাঈদীর চেহারা চাঁদে দেখা যাওয়াও এক অভাবনীয় উদ্ভাবন বটে! আমরা বুঝতে ব্যর্থ বার বার, কেন ধর্মকে নিয়ে এক বিশেষ শ্রেণী এই খেলায় মাতেন? কেন নিরীহ জনগোষ্ঠী যারা গাঁ-গেরামে ধান বুনের গরু চরিয়ে, ক্ষেতের ফসল ফলিয়ে নির্লোভ এক জীবনে অভ্যস্ত তাদের কেন এমন ধরনের এক অদ্ভুত কথা শুনিয়ে কিংবা ছবি দেখিয়ে বিব্রত করে তোলার প্রয়াস চালানো হচ্ছে? পৃথিবী জুড়ে চাঁদ তো একটাই? তা সে চাঁদে শুধু একটি নির্দিষ্ট এলাকার (সেটা বাংলাদেশেই!) মানুষই কারও মুখ দেখতে পেল? এ ধরনের গল্পগাথা সম্ভবত কল্পলোকের কাহিনীকেও হার মানাবে।

কে কত বড় ধার্মিক, এটা কি পরিমাপের বিষয়? তাহলে কোন একজনের ফাঁসির আদেশ হলে তারই ছবি ভেসে উঠবে চাঁদে কেন? সূর্যের মধ্যে নয় কেন? অলৌকিক হলে সূর্যও তো তার বুকে ছবির স্থান দিতে পারে, নাকি সূর্যতাপ ঐ ফাঁসির আসামিকে স্থান দিতে লজ্জিত? শেষ পর্যন্ত চাঁদই ভরসা হলো? ‘প্রত্যেক মানুষ তার কৃতকর্মের ফল ভোগ করবে।’ অথবা ‘প্রত্যেক মানুষকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে’- এগুলো পবিত্র কুরআনের আয়াত! যে বা যারা জীবনে যা করেছেন, তার কর্মের ফল ভোগ করার জন্য তার প্রস্তুতি থাকা প্রয়োজন। তিরিশ বছরের একজন দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী যে কর্ম করেছিলেন তার ফল যদি বিয়াল্লিশ বছর পর তাকে ভোগ করতে হয় তার জন্য জনতার এক অংশ কেন এত মারমুখী? ধরে নেয়া যাক তিরিশ বছর আগে কেউ একজন প্রচ- কোন আঘাত পেয়েছিলেন, কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে তিনি সামান্য চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে বহাল তবিয়তে বেঁচে রইলেন; কিন্তু সত্তর বছর বয়সে যেসব উপসর্গ দেখা দিল তাতে ডাক্তার তার পূর্বইতিহাস খুঁজে বের করলেন এবং জানলেন সেই দুর্ঘটনার কথা। এবং নিঃসন্দেহভাবে তিনি সেই আঘাতকেই দায়ী করে তার চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করলেন, কিন্তু দেহের ক্ষতি তো ভেতরে কুরে কুরে চল্লিশ বছর বাসা বেঁধেছে? এর থেকে তো পরিত্রাণ নেই!ু তো ডাক্তারের ক্ষেত্রে যদি চল্লিশ বছর আগের ঘটনা আমলে আনা হয় তবে বিচারকের রায় মানতে বাধা কোথায়? তার জন্য জ্বালাও-পোড়াও, চাঁদে অলৌকিক মুখচ্ছবি দেখিয়ে দেয়া- এসব কেন হচ্ছে? এর ফল কি?

আমরা আবারও বোঝাতে চাই- বাংলাদেশে মানুষ ইসলাম ধর্ম অত্যন্ত সততার সঙ্গে পালন করে। মসজিদের শহর ঢাকাসহ প্রত্যেকটি জেলা, গ্রামে কত মসজিদ টিনের, টালির, মার্বেল পাথরের এমনকি ছাপড়া বেড়ায় মাটির মসজিদও অগণিত? এখানে পুরুষরা নামাজ পড়েন। মহিলারা ঘরে ঘরে ইবাদত করেন। রোজা করেন। গরিব-দুঃখীকে খাওয়ান। বাংলাদেশের মানুষ নিজে না খেয়েও অতিথিকে খাওয়ায়, নিজে আরাম না করে অতিথিকে আরামে থাকার ব্যবস্থা করে দেয়। ইসলামের মহান আদর্শ থেকেই তো এসব করা; তাহলে আজ একদল উন্মত্ত মানুষ কেন প্রমাণ করতে চাইছে মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ এই মুহূর্তে বিপন্ন? ইসলাম এক সঙ্কটাপন্ন সময়ে উপস্থিত?

এ ধরনের প্রপাগান্ডা, আমার ধারণামতে, আল্লাহ্্ রাব্বুল আলামীনের পছন্দের বিষয় নয়। স্বয়ং হযরত মোহাম্মদ (সা.) তাঁর বিদায় হজের ভাষণে নির্দেশ দিয়েছেন, ‘ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করো না।’ তাহলে আজ কেন এই সর্বাত্মক হিংস্র উন্মাদনা ছড়ানো হচ্ছে? যেসব ছোট শিশু এবং মহিলাদের সামনে রেখে মিছিল পরিচালিত হচ্ছে তাদের কেন ভুল পথে নেয়ার অপচেষ্টা চলছে? ওদের কেন বুঝানো যাবে নাÑএকজন সাঈদীর চেহারা চাঁদে থাকলে তা পৃথিবী থেকে দেখা সম্ভব নয় খালি চোখে। যারা দেখেছেন তারা সব টেলিস্কোপ নিয়ে দেখেছেন কি? (টেলিস্কোপ ওরা চেনে বলে তো মনে হয় না!)

সত্য দিয়ে সত্যকে প্রতিষ্ঠা করতে হয়। মিথ্যা কখনও সত্যের ভিত্তি হতে পারে না। ইসলামের প্রাথমিক যুগে অসংখ্য যুদ্ধ হয়েছে, স্বয়ং রসুল করিম (সা.) বহু যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছেন; এমনকি বিধর্মীদের সঙ্গে সন্ধি করেছেন। কিন্তু কোনটাই এমন অদ্ভুত গল্পগাথা থেকে করা হয়নি। কারণ সত্য চিরকাল সত্য। সে চকমকি পাথর হাজার বছর মাটির নিচে থাকলেও তাকে তুলে পরিষ্কার করলেই সে ঝকমক করে। মিথ্যার ক্ষেত্রে তা ক্ষণকাল স্থায়ী হতে পারে বটে, কিন্তু মহাকাল কখনই তাকে স্থান দেয় না। ইসলাম তার প্রকৃত মহিমায় উদ্ভাসিত। তাকে যারা মিথ্যা, বুজরুকি গল্পকাহিনী সাজিয়ে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় তারা ইসলামের মূল আদর্শই অবহিত নয়। ধর্ম কোথাও এ ধরনের অনুমোদনও দেয় না। কাজেই গ্রামে-গঞ্জে তথা সমগ্র দেশে যে ভয়ানক মিথ্যার প্রচার ধর্মের নামে চালানো হচ্ছে সে বিষয়ে সহনশীল হওয়া প্রয়োজন। যারা ধর্মের প্রতি বিশ্বাসী হয়েও ভাংচুর করছেন অন্য ধর্মের বিশ্বাসের স্তম্ভ, তারা কেন ভুলে যাচ্ছেন সুরা ‘কাফেরুন’-এর অংশবিশেষ? আমাদের বিনীত প্রার্থনা, সৃষ্টিকর্তার কাছেÑ তোমার সৃষ্টিকে যারা ধ্বংসের ছাই বানিয়ে দিতে বদ্ধপরিকর তাদের তুমি তোমার সৃষ্টিরহস্য অনুধাবন করার জ্ঞান, প্রজ্ঞায় সমৃদ্ধ কর। ইসলাম শান্তির ধর্ম, সে ধর্মকে গুটিকয় স্বার্থান্বেষী অবিবেচক মানুষ নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে পারে না। কোন একজন ব্যক্তির জন্য পবিত্র ধর্মের সুনাম নষ্ট হতে পারে না। আমরা এখনও বিশ্বাস করিÑ আল্লাহর আদালত বড় আদালত। তিনি বিচারক শুধু নন, সর্ববিজ্ঞ বিচারক। চল্লিশ বছর কেন, পৃথিবীর ইতিহাসে অনেক অনেক নজির রয়েছে যেখানে অত্যাচারীর বিচার কয়েক শ’ বছর পরও হয়েছে। তিরিশ বছর পূর্বে এক যুবক ধর্মান্ধ হয়ে ‘নিরপরাধ’ আল্লাহর সৃষ্টিকে যে যন্ত্রণা এবং অপমান করেছিল বা করতে সাহায্য করেছিল তার বিচার কাজ সমাধা হয়েছে। একে নিয়ে ধর্মের কোন ভুল ব্যাখ্যা ইসলামবিরুদ্ধ। আপনারা ধর্মবিশ্বাসী সকল মানুষ আল্লাহর সৃষ্ট উজ্জ্বল চাঁদের আলোকেই বিচ্ছুরিত হতে দেখুন দয়া করে একজন মানুষের চেহারা সেখানে দেখানোর ভেলকি থেকে বিরত থাকুন।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-১

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ১১:৪৯

কৃষি এবং কৃষক বলেছেন: সাইদী ও খাদেলারে একলগে চাদে দেহা গেলেতো বড়ই মুশকিল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.