নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সবার কথা

আহমেদ রশীদ

আহমেদ রশীদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুসলমানদের কাছে ধর্মের ফেরিওয়ালারা বহুদিন ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করেছেন।

০৭ ই এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ১১:১৭

হেফাজতকে মাঠে নামাতে জামায়াতের পাশাপাশি তাদের মুখপত্র ‘দৈনিক আমার দেশ’, দৈনিক নয়া দিগন্ত’ ‘দৈনিক সংগ্রাম’ ও ‘দিগন্ত টিভিকে’ জামায়াত বেশ সফলতার সাথে কাজে লাগিয়েছে। এই চারটি মিডিয়া প্রতিদিন লাগামহীন অসত্য তথ্য প্রচার করে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বিভ্রান্ত করে। তারা বলে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি বিধানে দাবিতে বর্তমানে শাহবাগ চত্বরে যে তরুণরা আন্দোলন করেছ তারা নাস্তিক এবং তারা নিয়মিত পবিত্র ইসলাম ধর্মকে অবমাননা করে ব্লগ লিখছে । এই পত্রিকাগুলো নিয়মতি তাদের তৈরি নিজস্ব বক্তব্য ব্লগারদের বলে চালিয়ে দেয়। যেমন ক’দিন আগে একটি পত্রিকায় লিখেছে ব্লগাররা নাকি তাদের ব্লগে এই কথা লিখেছে দেশের সকল মসজিদকে টয়লেট বানানো হবে (নাউজুবিল্লাহ) । যার ব্লগ সম্পর্কে সামান্যতম ধারণা আছে তিনি জানেন যে কেউই ইচ্ছা করলে বিশ্বের যে কোন প্রান্তে বসে যে কারও নামে একটা ব্লগ তৈরি করে সেখানে যা ইচ্ছা তা লিখতে পারে। একটি ব্লগ তৈরি করতে পাঁচ হতে দশ মিনিট সময় লাগে। সম্প্রতি লন্ডনের ইন্ডিপেন্ডন্ট পত্রিকায় একটি বেশ বড় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে যাতে বলা হয়েছে, পবিত্র মক্কা ও মদিনা নগরীর ইসলাম ও মহানবীর অনেক স্মৃতিবিজড়িত স্থান সৌদি সরকার বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। জামায়াতের এই মিডিয়াগুলো সে সম্পর্কে কখনও দু’কথা বলে না বা লেখে না। আর এই বিষয়ে হেফাজতে বা জামায়াতের কোন বিবৃতি বা বক্তব্য এই যাবত চোখে পড়েনি। সাহস থাকলে এর প্রতিবাদে হেফাজত সেখানে গিয়ে লংমার্চ করুক না। তখন বুঝা যাবে ইসলামের জন্য তাদের কত দরদ। কিছুদিন আগে আমি একজন বিএনপির নীতিনির্ধারকের সাথে একটা টিভি টকশোতে অংশ নিয়েছিলাম। তাকে বললাম আপনি চাইলে আমি আপনার নামে একটা ব্লগ খুলে আপনার নেত্রীর বিরুদ্ধে দুচারটি ভালমন্দ কথা লিখে দিতে পারি এবং যেহেতু আপনার নেত্রীর ব্লগ বিষয়ে কোন জ্ঞান আছে বলে আমার মনে হয় না তাতে আপনার বড় ধরনের বিপদ হতে পারে, পার্টি হতে বহিষ্কারও হয়ে যেতে পারেন। ভদ্রলোক বেশ চিন্তায় পড়ে গেলেন। হেফাজতওয়ালাদের ব্লগ বিষয়ের অজ্ঞতার বেশ ভাল ফায়দা লুটেছে জামায়াত-বিএনপি। অবশ্য আমার ধারণা এই ক্ষেত্রে বিএনপি মঞ্চে পরে প্রবেশ করেছে। তারাও অনেকটা জামায়াতের পাতা ফাঁদে পা দিয়েছে বলে মনে হয় এবং জামায়াত এই কাজটি বেশ বুঝে শুনেই করেছে যাতে বিএনপি তাদের কোন অবস্থাতেই পরিত্যাগ করতে না পারে। এই মুহূর্তে বিএনপি মোটামুটি জামায়াতের মাঝে বিলীন হয়ে গেছে। হেফাজতকে তাদের লংমার্চ হতে বিরত রাখতে সরকার চেষ্টার কম করেনি। একজন মন্ত্রীকে একাধিকবার আল্লামা শফির কাছে পাটিয়েছে। শুনেছি মন্ত্রী আল্লামা শফির আত্মীয় হন। কিন্তু তিনি সেখানে গিয়েছেন সরকারের একজন প্রতিনিধি হয়ে। আল্লামা শফি আর তার সাগরেদরা মন্ত্রীকে যথাযথ মর্যাদা দিয়েছেন বলে মনে হয় না। পত্রিকায় ছবি দেখে অন্তত তাই মনে হয়। সরকার ভুলভাবে মনে করেছে হেফাজতকে তাদের কর্মসূচী হতে বিরত রাখা যাবে। আসলে সরকার সম্ভবত এখনও জামায়াতের কূটকৌশলের কাছে নস্যি। খবর আছে জামায়াত চট্টগ্রাম হেফাজতের পেছনে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্য কমপক্ষে পঞ্চাশ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। টাকা সব দেশে সব সময় কথা বলে। জামায়াতের শেখানো বুলি অনুযায়ী হেফাজত সরকারের কাছে তেরটি দাবি পেশ করেছে যার মধ্যে যেসব ব্লগাররা তাদের ভাষায় ইসলাম ও হযরত মুহাম্মদ (দ.) কে অবমাননা করে ব্লগ লিখেছে তাদের গ্রেফতার ও শাস্তি দিতে হবে, সংবিধান পরিবর্তন করে তাতে ‘আল্লাহ ওপর আস্থা বিধান’ সংযোজন করতে হবে ইত্যাদি। সরকারও অনেকটা জামায়াতের পাতা ফাঁদে পা দিয়েছে। তারা মনে করেছে তাদের দাবি-দাওয়ার দু’একটা মেনে নিলে সম্ভবত হেফাজত তাদের কর্মসূচী প্রত্যাহার করবে। পাকড়াও করা হলো চার ব্লগারকে। সাধারণ সন্ত্রাসীর মতো তাদের মিডিয়ার সামনে হাজির করা হলো, তারপর রিমান্ডের ব্যবস্থা করা হলো। সরকার যদি মনে করে থাকে তাদের এই অপরিণামদর্শী কর্মকা-ের ফলে হেফাজতওয়ালারা শুধু তাদের কর্মসূচীই প্রত্যাহার করবে না আগামী নির্বাচনেও তারা সরকারকে তাদের সমর্থন জানাবে তা হলে তারা মস্ত ভুল করবে। একটা কথা সরকার কেন বুঝতেই চায় না শুধু জামায়াত নয় যারা ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করে তারা কখনও আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে না ।

আজকের মসজিদের ইমাম সাহেব ইসলাম রক্ষার কথা বলে বেশ কায়দা করেই বললেন খোদাদ্রোহী না হয়ে প্রয়োজনে রাষ্ট্রদ্রোহী হোন। সেই ইমাম বা তার অনুসারীরা আমার এই লেখা পড়বেন তা আশা করি না। তারপরও ইতিহাসের পাতা হতে একটি ঘটনার উল্লেখ করতে চাই। ১৯৫৩ সালে পাকিস্তানের লাহোর ও পাঞ্জাবের অন্যান্য শহরে জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা আবুল আলা মওদুদীর প্ররোচনায় আহম্মদীয় মুসলিম জামায়াতের অমুসলিম ও নাস্তিক ঘোষণা করার দাবি জানিয়ে দলটি এক ভয়াবহ দাঙ্গার সৃষ্টি করে। এতে কয়েক হাজার নিরীহ মানুষ প্রাণ হারায়। তৎকালীন পাকিস্তান সরকার স্থানীয়ভাবে পাঞ্জাবে সামরিক আইন জারি করে এবং জেনারেল আজম খানকে সামরিক আইন প্রশাসক নিযুক্ত করা হয়। জেনারেল আজম খান পরে পূর্ব পাকিস্তানের গবর্নর হয়ে এসেছিলেন। তিনি বাঙালীর একজন ভাল বন্ধু হিসেবে পরিচিত ছিলেন। মওদুদীকে গ্রেফতার করা হয় এবং সামরিক আদালতে তাকে মৃত্যুদ- দেয়া হয়। পরে অবশ্য সৌদি বাদশাহর চাপে মৃত্যুদ- রহিত করে তাকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেওয়া হয়। অবশ্য সেই কারাদ- পুরো ভোগ করার আগেই তাকে মুক্তি দেয়া হয়। এই দাঙ্গা পরিস্থিতি তদন্ত করার জন্য পাকিস্তান সরকার বিচারপতি মুহাম্মদ মুনির ও বিচারপতি কাইয়ানিকে নিয়ে দু’সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিশন গঠন করে। বিচারপতি মুনির পরে পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি হয়েছিলেন। দু’জনই প-িত ব্যক্তি ছিলেন যদিও বিচারপতি মুনিরের আদালতে দেওয়া একাধিক রায় তাকে পরে বিতর্কিত করেছিল। সেই কমিশন মুসলমানের সংজ্ঞা কী তা জানার জন্য সতের জন বিজ্ঞ আলেমকে কমিশনের সামনে ডাকেন। তারা প্রত্যেকেই মুসলমান সম্পর্কে নিজস্ব একটা সংজ্ঞা হাজির করেন। একজন আলেম কমিশনের কাছে উত্তর দেয়ার জন্য কিছু সময় প্রার্থনা করেল জবাবে বিচারপতি কায়ানি বলেন, চৌদ্দশত বছরের বেশি হলো ইসলাম কায়েম হয়েছে। এই চৌদ্দশত বছরেও যদি আপনারা সর্বজন গ্রাহ্য মুসলমানকে সেই সম্পর্কে একটি সংজ্ঞা দিতে না পারেন তা হলে আর কখনও পারবে না। কমিশন ১৯৫৪ সালে ৩৮৭ পৃষ্ঠার একটি ঐতিহাসিক প্রতিবেদন সরকারের কাছে পেশ করেন যাতে তারা বলেন, ‘মুসলমান কে এই সম্পর্কে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি সংজ্ঞা হাজির করা অসম্ভব। শিয়ারা মনে করেন সব সুন্নি কাফের আবার সুন্নিরা ঠিক তার উল্টোটা মনে করেন। ওলামাদের ফতোয়ার ওপর ভিত্তি করে মুসলমান খুঁজতে গেলে মুসলমান হিসেবে কাউকে পাওয়া যাবে না।’ কেউ চাইলে মুনির কমিশনের সেই রিপোর্ট ওয়েবসাইট হতে ডাউনলোড করে নিতে পারেন। ১৯৮০ সালে দিল্লী হতে বিচারপতি মুনিরের ঐতিহাসিক গ্রন্থ ‘পাকিস্তান ফ্রম জিন্নাহ টু জিয়া’ প্রকাশিত হয় যেখানে তিনি তার এই কমিশনের প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করেছেন। হেফাজত হতে শুরু করে বেগম জিয়া এমন কী কবি ফরহাদ মজহার পর্যন্ত যে নাস্তিক নাস্তিক বলে বাংলাদেশকে ওলটপালট করার ব্যবস্থা করেছেন তাদের তা করার কোন ক্ষমতা নেই। কে নাস্তিক আর কে আস্তিক তা বিচার করার মালিক একমাত্র আল্লাহ। যেমন ইসলামকে রক্ষা করার মালিকও আল্লাহ। বাংলাদেশের সরল ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে ধর্মের ফেরিওয়ালারা বহুদিন ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করেছেন। এখন দেশের স্বার্থে তা বন্ধ করার সময় হয়েছে। আর তা যদি না পারেন তাহলে সময় হয়েছে তাদের আফগানিস্তান অথবা পাকিস্তানে হিজরত করা। সরকার শাহবাগ চত্বরের গণজাগরণ মঞ্চের তরুণদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে একটি বড় ধরনের কৌশলগত ভুল করেছে। হেফাজত বলেছে তাদের কর্মসূচিতে যে বাধা সরকার দিয়েছে তার জবাব তারা আগামী নির্বাচনে দেবে (তারা কোন দিনই আওয়ামী লীগের সমর্থক নয়)। আর প্রজন্ম চত্বরের যোদ্ধারা বলেছে তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার মাসুল সরকারকে আগামী নির্বাচনে দিতে হবে। প্রথম পক্ষ কী বলল তাতে কিছু আসে যায় না। কিন্তু দ্বিতীয় পক্ষের মন্তব্য আওয়ামী লীগের জন্য অশনিসংকেত। ২০০৬ সালের খেলাফত মজলিসের সাথে সম্পাদিত চুক্তি করার মতো সরকার ২০১৩ হেফাজতকে নিয়েও একটি ভুল সিদ্ধান্ত নিল। আওয়ামী লীগের ডজনখানেক উপদেষ্টা আছেন। তারা কী উপদেশ দল বা সভানেত্রীকে দেন তা দেশের মানুষের কাছে এক রহস্য। সরকার বর্তমান পরিস্থিতি কিভাবে সামাল দেন তা এখন দেখার বিষয়।



মন্তব্য ৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ১১:৩১

ছাত্তির ইন্জিনিয়ার বলেছেন: Click This Link

২| ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ১১:৩২

পরিবেশ বন্ধু বলেছেন: অদ্ভুদ উটের পিষ্টে চলছে দেশ
দু রম্নির আউলা কেশ
আর মাঝখানে নাছে ক্ষুদে মোল্লা বেশ
বাদ বাকিরা না বুঝেই কয় সব শেষ

রাজনীতি এখন জগাখিচুড়ি
আর নষ্টরা খেয়েদেয়ে বাঁড়ায় ভুরি
সব অচল হিসাব নাই
কথা কইলেই গলা বাজখাই

এভাবে চললে
দেশ হবে শ্মশান
আর কত শুনব
মিথ্যার আউলা গান

৩| ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৩৫

ওছামা বলেছেন: আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিক্রি করোনা, আমাদের ধর্মবিশ্বাস বেচে দিওনা। আমাদের শ্বাস নিতে দাও।আমরা সাধারন মানুষ আজ ক্লান্ত, বিধ্বস্ত, বিভ্রান্ত।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.