নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সবার কথা

আহমেদ রশীদ

আহমেদ রশীদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

রমজানের মাহিমায় মহিমান্বিত হোক আমাদের প্রাণ

৩০ শে জুন, ২০১৪ সকাল ৯:২০

পৃথিবীতে মনে হয় আমরাই একমাত্র জাতি যারা সব সময় উল্টো চলি। এমনটা বলার অনেক কারন আছে। আপাতত: তিনটি কারন বলছি। প্রথম দুটি কারন এই লেখার সাথে সংগতিপূর্ণ না। তারপরও বলছি।



এক. যেখানে সারা পৃথিবী আগামী ১০০ বছর পর তারা নিজেদের কোথায় দেখতে চায় তা নিয়ে ভাবছে, সেখানে আমরা ১০ দিন পর কোথায় যাবো সেটাও ভাবতে পারছি না। এখনও পড়ে আছি অতীতে কে কি করেছিল, না করেছিল তা নিয়ে।



দুই. কয়েকটি উন্নত দেশে দেখছি, ওরা আমাদের পারিবারিক ব্যবস্থা, পারিবারিক বন্ধনের কথা শুনে নিজেদের অবস্থা নিয়ে হা হুতাশ করে। আমাদের মত করে একটা পরিবার ব্যবস্থা পেতে উম্মুখ থাকে, সেখানে আমরা স্বাধীনতা আর আধুনিকতার নামে সেই ব্যবস্থা, বন্ধনগুলিকে ভেংগে চলেছি অনবরত, সম্পর্কগুলিকে করে তুলছি যান্ত্রিক ভালোবাসাহীন।



তিন. রোজার মাসটাকে রহমত আর সংযমের মাস বলা হয়। বলা হয় আত্মশুদ্ধির মাস। কিন্তু আমাদের দেশে রমজান আসে হরিলুটের মাস হিসাবে। বিশেষত: আমাদের ব্যবসায়ী সমাজ এই মাসটিতেই কেমন যেন মরিয়া হয়ে ওঠে। বিভিন্ন পর্যায়ে সারা বছর যে দুর্নীতি অনিয়ম চলে সামনে ঈদ এই অজুহাতে ‘ঈদ বকশিশ’ নামে সেটার মাত্রাও বেড়ে যায়।



আমারা যারা মধ্যপ্রাচ্য বা সৌদি আরব প্রবাসী তাদের অধিকাংশেরই তাদের স্পন্সরদের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। সারা বছর স্পন্সর ব্যক্তিটি যেমনই হোক, কিন্তু রোজার মাসাটিতে ওকে দেখা যায় একটু অন্য রূপে। সবচেয়ে খারাপ যে স্পন্সরটি মাসের পর মাস তার অধীনস্থ বিদেশী মানুষটিকে শোষন করেছে নানা ভাবে, সেই লোকটিও রোজা শুরুর আগের দিন একটা ৫ কেজির খেজুরের টিন পৌঁছে দেবে তার কাছে। বকেয়া বেতনগুলি শোধ করে দিবে অনেকে। সাধারন সময়ের চেয়ে কাজের সময় কমিয়ে দেবে কয়েক ঘন্টা। অন্তত: একবার হলেও সবধরনের ইফতার সামগ্রী নিয়ে এসে একসাথে বসে ইফতার করবে। দোয়া চাইবে, সারা বছরের ভুল ভ্রান্তির জন্য ক্ষমা চাইবে। যদিও বিদেশী মানুষটি জানে ওর এই চেহারা রোজার মাসের পর আর হয়তো থাকবে না। তবে অনেককে সত্যি সত্যিই বদলে যেতেও দেখা যায়। এটাই রোজার মাহাত্ব।



আমাদের দেশে কি হয় এই মাসটিতে? আমাদের দেশের শ্রমিকের বেতন বোনাস ঈদের আগে পরিষোধ করার জন্য সরকারকে চাপ দিতে হয় মালিকদেরকে। ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, সরকারি প্রনোদনা না পেলে ঈদের আগে শ্রমিকের বেতন দেয়া সম্ভব না। কি এক অদ্ভূত আব্দার। অধীনস্থ কর্মচারিটির সাথে বসে অথবা বাসার কাজের সহযোগী মানুষটিকে সাথে নিয়ে এক সাথে বসে ইফতার করছে এমন দৃশ্য বিরল। ইফতারির সময় সামান্য ইফতার চাইতে আসা অসহায় দরিদ্র মানুষটিকেও অনেকে একটু ইফতার না দিয়ে ফিরিয়ে দিচ্ছে। অনেকে দিলেও দিচ্ছে নিজেদের উচ্ছিষ্ট গুলি। আমাদের টিভি চ্যানেলগুলির রোজা শুরুর কয়েক দিন আগের খবর থাকে, ‘ব্যবসায়িরা আশ্বাস দিয়েছে এবার রোজায় জিনিষপত্রের দাম বাড়বে না। সরকার বলছে পর্যাপ্ত মজুদ আছে, দাম বাড়ালে কঠোর ব্যবস্থা।” প্রতিবছর একই ডায়ালগ। কিন্তু বাস্তবতা সম্পুর্ণ ভিন্ন।



সারা বছরের ব্যবসার লাভ লোকসান পুষিয়ে নিতে আমাদের দেশের ব্যাবসায়ি সমাজ বসে থাকে এই রমজান মাসটির জন্য। সংযম আর আত্মশুদ্ধির এই মাসটিতে কোথায় নিজের লালসাটাকে একটু নিয়ন্ত্রণ করবে, তা নয়। উল্টো হয়ে ওঠে অতি মাত্রায় রক্তপিপাসু পিচাশ। কিন্তু এখানে সরকারকে বা ব্যবসায়ি সমাজকে এভাবে সাধারন মানুষকে অশ্বস্থ করতে হয় না। মার্কেটেই দেখা যায় পবিত্র রমজানের প্রভাব। বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলির মাঝে প্রতিযোগীতার মত চলে কে কতটুকু সুন্দরভাবে তার ক্রেতাকে সেবা করবে। কয়েকটা উদাহরণ দিয়ে বলছি। যেমন, সাধারন সময়ে আমরা একটা ২.৮লিটারের রান্নার তেল কিনে থাকি ১৬ রিয়ালে (১রিয়াল = ২০.৫টাকা)। রোজা উপলক্ষ্যে এই একই তেল কোন কোন সুপার মার্কেটে দিচ্ছে একটার দামে দুটি। কেউবা একটার সাথে এক লিটারের একটি ছোট বিনামুল্যে। এখানকার রমজানের অতি আবশ্যিক যে লাবান (মাঠা জাতীয়) সেটা এক লিটারের দাম সাধারন সময়ে তিন রিয়াল। কিন্তু রোজার সময়ে দাম তো বাড়েই না বরং এক কোম্পানি একই দামে পঞ্চাশ ভাগ অতিরিক্ত দিচ্ছে তো, অন্য কোম্পানি দিচ্ছে শত ভাগ অতিরিক্ত। দইয়ের কাপ সাধারণ সময়ে এক রিয়াল। রোজাতে একই দামে পাওয়া যায় দুটি। কোন কোম্পানি দেয় ৪টার দামে ৬টা। ইফতারের অতি আবশ্যিক এই সব উপকরণগুলির দাম তো বড়বেই না, আর এই ফ্রি অফারের কারনে মানেরও কোন ঘাটতি হবে না।



রমজান উপলক্ষে পথ চলা রোজদারের কথা ভেবে মসজিদে মসজিদে তাবু টানানো হয়। সেখানে ইফতার সরবরাহ করে ছোট বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলি। পানি, খেজুর, দই, বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি জাতীয় খাবার, টিস্যু পেপার। আরও কত কি বলে শেষ করা যাবে না। ইফতার প্রসংগে যেহেতু বলছি, এখানে মদিনা শরীফের কথা না বললেই না। অদ্ভুত এক প্রশান্তির শহর এই মদিনা। কেউ যদি কখনও ওমরাহ করতে আসেন, মক্কা থেকে গাড়িতে মদিনা আসার পথে নিজের মনে যখন একটা প্রশান্তির ভাব অনুভব করবেন, ধরে নিবেন আপনি মদিনা শহরে এসে গেছেন। এমনটা আমার নিজের অনুভব। বিভিন্ন সময় যখন যে শহরেই যাই সেখানে কর্মরত প্রবাসীদের কাছ থেকে জানার চেষ্টা করি এখানকার স্থানীয়রা মানে স্পন্সররা কেমন। মদিনাতেও এক বাংলাদেশী খেজুর ব্যাবসায়ির কাছে জানতে চেয়েছিলাম। সেই বাংলাদেশীটি আমাকে একটু অন্যভাবে জবাব দিলো। বললো, ইফতারির সময়টাতে কিছুক্ষণ রাস্তায় ঘোরাফেরা করেন । যদি বুঝতে পারে আপনি একজন মুসলিম তাহলে কেউ না কেউ গাড়ি থামিয়ে আপনাকে নিয়ে যাবে একসাথে ইফতার করার জন্য। আমার আর রাস্তায় অপেক্ষা করে দেখার সুযোগ হয়নি। ওই বাংলাদেশীর জবাবেই যা বোঝার বুঝে নিয়েছিলাম। ইফতারির বেশ খানিকটা আগে থেকেই চলতে থাকে আয়োজন মসজিদ আল-নবাউয়িতে।



পৃথিবীর নানা দেশের নানা বর্ণ আর ভাষার লাখ লাখ মুসল্লিতে সরগরম মসজিদ প্রঙ্গন। নামাজের জায়গা যাতে নোংরা না হয় সেজন্য বিছানো হয় লম্বা প্লাষ্টিকের রোল। যাকে স্থানীয় ভাষায় বলা হয় ”সুফরা” বা টেবিল কাভার। প্রতিদিন শুধু এই প্লাষ্টিক ব্যবহার হচ্ছে বেশ কয়েক টন। যার অধিকাংশই আসে বড় বড় প্লাষ্টিক কোম্পনিগুলির দান থেকে। এক গ্রুপ স্বেচ্ছাসেবক এই প্লাষ্টিক বিছিয়ে যাচ্ছে। অন্য গ্রুপগুলি পর্যায়ক্রমে সাজিয়ে দিচ্ছে ইফতার উপকরণ। কি থাকছে ইফতারিতে? কোন রকমের বাড়াবাড়ি নেই। একটা দই, একটা ব্রেড, কিছু খেজুর, আর জুস। শেষে থাকছে কফি বা ”গাহওয়া”। যদি মনে করেন একটা দই বা ব্রেড এ আপনার হবে না ভাবনার কিছু নেই। দেখবেন প্রসন্ন বদনে দাড়িয়ে আছে স্বেচ্ছাসেবক আপনার সেবা করার জন্য। তার কাছে চাইলেই পেয়ে যাবেন আপনার চাহিদা মাফিক ইফতার। হাত বাড়ালেই পাচ্ছেন পবিত্র জমজমের ঠান্ডা পানি।



ইফতার শেষে নামাজের জায়গা খালি হয়ে যাচ্ছে মুহুর্তের মধ্যেই। কোথাও এক বিন্দু আবর্জনা খুঁজে পাবেন না। এমনিতে সরকারিভাবে তো ইফতারের আয়োজন থাকছেই। পাশাপাশি থাকছে বিভিন্ন কোম্পানির তরফ থেকে ইফাতারির আয়োজন। বিশাল বিশাল গাড়ি ভরে ইফতারের উপকরণ চলে আসবে প্রতিদিন। ইফতার দিয়ে যে চলে যাচ্ছে তা নয়। কোম্পানির নিজস্ব লোক দিয়ে সেই ইফতার বিতরণ করারও ব্যবস্থা করছে। কয়েক লাখ লোকের ইফতার আয়োজনের ব্যবস্থাপনাটা যে কতটা সুন্দর আর নিঁখুত হতে পারে তা না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। এত বিশাল কর্মযজ্ঞে বিন্দুমাত্র বিশৃংখলা খুঁজে পাওয়া যাবে না কোথাও। কারও মুখে কোন অভিযোগ পাওয়া যাবে না। পুরো কাজটি সম্পন্ন করতে কাজ করছে অসংখ্য স্বেচ্ছাসেবক, যাদের অধিকাংশই বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থি। ওদের ব্যবস্থপনা দেখে মনে মনে ভাবি আমাদের দেশে ২/১ শত লোকের সাধারন কোন আয়োজনেও দেখা যায় কি রকম বিশৃংখলা।



নামাজ শেষে দেখা যাবে অনেকে তার শিশু সন্তানটিকে সাথে নিয়ে ২/৪টি ফ্লাস্ক ভরে নিয়ে এসেছে চা, কফি। এসেছে রোজাদারদের চা কফি বিতরন করতে। কারও হাতে একটা কফির কাপ দিতে পেরে নিজেকে বেশ তৃপ্ত মনে করছে। কেউ আসছে ঠান্ডা পানির ছোট ছোট বোতল নিয়ে। কেউবা আসছে কিছু খেজুর নিয়ে। কয়েকজন রোজাদারকে চা কফি খাওয়াতে পেরে ওদের চেহারাতে অদ্ভুদ একটা প্রশান্তির ছায়া ফুটে উঠতে দেখা যায়।



ইফতার নিয়ে আমাদের দেশে দেখা যায় অতিরিক্ত রকমের বাড়াবাড়ি। পরিবারগুলির ইফতার আয়েজনের বাহার দেখে মনে হয় রোজার অর্থ হলো সারাদিন না খেয়ে থেকে সন্ধ্যায় বাহারি খাবারের আয়োজন করা। রোজার উদ্দেশ্য কি এটা? শুরু হবে ইফতার রাজনীতি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মিরা এই ইফতার রাজনীতির মাধ্যমে যে পরিমান টাকা খরচ করে সেটা দিয়ে কতগুলি দু:স্থ পরিবারকে পুনর্বাসন করা যেতে পারে এ নিয়ে কেউ কি একটু ভাবতে পারে না? মসজিদগুলি নির্ভর করে বসে থাকে কিছু পরিবার থেকে আসা ইফতারির উপর। কোন পানির কোম্পানি বা কোন ফুড কোম্পানির তরফ থেকে রোজার মাসটাতে মসজিদগুলিতে কিছু দান করার দৃশ্য অন্তত: আমার চোখে পড়েনি।



এবার আসি যাকাত প্রসংগে। এখানে যাকাত নিয়ে যে একদমই অনিয়ম হয় না এমনটা বলব না। আমাদের কোম্পানির কথাই বলি। রোজার প্রথম সাপ্তাহেই হেড অফিস থেকে চলে আসবে যাকাতের লিষ্ট। আমাদের কোম্পানিও যে যাকাত একদম পুরোপুরি আদায় করে সেটা বলা যাবে না। এদিক সেদিক করে সরকারি যাকাত ফান্ডের টাকা পরিশোধ করার পরও যে পরিমাণ যাকাত দেয় সেটার পরিমান ও দেড় থেকে দুই লক্ষ রিয়াল। মানে বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৩০ থেকে ৪০ লক্ষ টাকা। কিন্তু এই দুই লক্ষ রিয়াল দেয়া হয় খুব অল্প পরিমান মানুষকে। সেটাও এমন পরিমানে যাতে করে সে কিছু করতে পারে। যাকাতের উদ্দেশ্য তো এমনই হওয়া উচিত? ধর্মে এ সম্পর্কে কি বিধান আছে আমার জানা নেই। তবে আমারও এমনটাই মনে হয়।



যাকাতটা এমন ভাবে দেয়া উচিত যাতে করে আগামি বছর অন্তত একটি পরিবারও যাকাত নেবার অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে পারে। আর একটা বিষয় যা দেখা যায়। এখানকার জেলগুলিতে অসংখ্য বিদেশী বছরের পর আটকে আছে। দেখা যায় অধিকাংশেরই জেল খাটার মেয়াদ শেষ, কিন্তু জরিমানার টাকা দিতে পারছে না বলে জেল থেকে বের হতে পারছে না। অনেক সৌদি নাগরিক রোজার মাসটা এলে জেলখানা গুলিতে এমন ধরনের লোকগুলিকে খুঁজে বের করবে। তার জরিমানার টাকাটা ভরে দিয়ে তাকে জেল থেকে মুক্ত করে আনবে। এভাবেই সে তার যাকাতটা আদায় করে নিচ্ছে।



এ প্রসংগে একজন বাংলাদেশীর কথা বলি। একজন বাংলাদেশী ট্রেইলার ড্রাইভার। কয়েক বছর ধরে জেলে। একটা প্রাইভেট কারের সাথে এক্সিডেন্টে ওই কার-এ থাকা এক পরিবারের সবাই মারা পড়েছিল। এক্সিডেন্টের দোষটা ছিল ওই বাংলাদেশী ড্রাইভারের । এক্সিডেন্ট বলেই তাকে মৃত্যুদন্ডের সাজা দেয়া হয়নি। বিচারে রায় হলো কয়েক বছরের জেল আর তিন লাখ রিয়াল জরিমানা। কিন্তু ওই বাংলাদেশীর পক্ষে তিন লাখ রিয়াল জোগাড় করা ছিল অসম্ভব। যখনকার কথা তখন ইন্স্যুরেন্স সুবিধাও ছিল না। আর এখানকার আইন অনুযায়ি যতদিন জরিমানার টাকা আদায় না হবে ততদিন তাকে জেলেই থাকতে হবে যদি না বাদী পক্ষ তাকে ক্ষমা করে। সেই বাংলাদেশীটি এক সৌদির মহানুভবতায় জেল থেকে বেড়িয়ে এসেছিল এমনি এক রোজার মাসে। আর যে লোকটি এভাবে একজন বন্দিকে মুক্ত করছে সেই লোকটি নিজের পরিচয়টাও অধিকাংশ ক্ষেত্রে গোপন রাখছে। আমাদের ধর্মে তো দান এভাবেই করতে বলা হয়েছে।





একটি খ্যাতিমান শিল্পপতির যাকাত নিতে গরিবের অপেক্ষা



আমাদের দেশে যাকাতটাকে দেখা হয় নিজের সামাজিক অবস্থানটা বোঝানোর হাতিয়ার হিসাবে। ব্যবহার করা হয় নিজের প্রচারণার কাজে। দুই টাকা দান করে সম্ভব হলে দু’মাস ধরে প্রচার করে। এ সময় বিভিন্ন মার্কেটের শাড়ির দোকানগুলিতে একটা বোর্ড দেখা যায়,- এখানে যাকাতের শাড়ি পাওয়া যায়। বলতে পারেন কেউ যাকাতের শাড়িটা কি জিনিষ? আট হাত লম্বা একটুকরা কাপড়। বছরে একবার কিছু গরিব মানুষকে দান করবে সেটাতেও সেই গরিব অসহায় মানুষগুলিকে ঠকানোর প্রবনতা। ওই কাপড়ের টুকরাটি দেবার চেয়ে না দেয়াটাই উত্তম মনে হয় । সেটাও বিলির জন্য কত প্রচারণা। সেই আট হাত লম্বা কাপড়ের টুকরাটি পেতে গিয়ে ভিড়ের চাপে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে প্রতিবছর। ধর্মে কি যাকাতটাকে এভাবে আদায় করতে বলা হয়েছে? এবার তো মনে হয় যাকাত নামে প্রচারনার কাজটি আরও বড় আকারে দেখা যাবে। কারন সামনে নির্বাচন। ভোট পেতে হবে তো!



একটুকরা কাপড়ের যাকাত নিতে এসে পদপিষ্ট হয়ে গরিব নারীদের মৃত্যুবরণ



পুরো সমাজকে তো আর বলতে পারব না। এখানকার সকল ব্লগারও আমার এই লেখা পড়বেন না। অন্তত: এই ব্লগের যে ক’জন পাঠক আমার এই লেখা পড়বেন তাদের কাছে আবেদন, ইফতারের নামে বাড়াবাড়িটা পরিহার করুন। সম্ভব হলে প্রতিদিন অন্তত: একজন অসহায় মানুষকে সাথে নিয়ে ইফতার করুন। আপনার যাকাত যতটুকুই হোক সেটা দিয়ে দশ জনকে দশ টুকরা কাপড় না দিয়ে অন্তত: একটি বা দুটি পরিবারকে এমন ভাবে দান করুন যাতে করে ওই পরিবারটিকে আগামি বছর আর যাকাতের জন্য অপেক্ষা করতে না হয়। আপনার একার যাকাত পর্যাপ্ত না হলে প্রয়োজনে অন্য কারও যাকাতের অংশটা মিলিয়ে নেয়া যেতে পারে। আমার যাকাত আহামরি কিছু হয় না, তারপরও আমি নিজে এমনটাই করার চেষ্টা করি।



পবিত্র রমজানের মহিমায় মহিমান্বিত হোক প্রতিটি হৃদয়, ধুয়ে যাক সকল অপবিত্রতা, শুদ্ধ হয়ে উঠুক আমাদের সকলের প্রাণ – আমিন। আর একটা আবেদন রেখে শেষ করবো। ঈদের কেনাকাটায় ভিনদেশী মাসাক্কালি-ফাসাক্কালি বর্জন করে দেশীয় পন্যটাকে গ্রহন করুন। বড় আকারে দেশ প্রেমের কথা বড়রা ভাবুক না। আমরা যারা ক্ষুদ্র, তারা যদি সকলে নিজ সাধ্যের মধ্যে ক্ষুদ্র আকারেও দেশটাকে ভালোবাসতে পারি আমাদের এই ছোট্ট দেশটা একদিন অবশ্যই বদলে যাবে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.