নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সবার কথা

আহমেদ রশীদ

আহমেদ রশীদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আলাদীনের চেরাগ পেলেন হেফাজত আমিরপুত্র!

০৬ ই জুলাই, ২০১৪ সকাল ৯:০৯

দেড় বছর আগেও যার পরিচিতি কেবল হাটহাজারী বড় মাদ্রাসাকেন্দ্রিক সীমাবদ্ধ ছিল, তার নাম এখন দেশজুড়ে। রাতারাতি বিত্তবান বনে যাওয়া এই হেফাজত নেতা একসঙ্গে নির্মাণ করছেন ৫টি ভবন। মাত্র এক বছরের মধ্যে কি এমন ‘আলাদীনের চেরাগ’ পেলেন হেফাজত আমির শাহ আহমদ শফীপুত্র আনাস মাদানী? একাধিক বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য এত টাকা আনাস মাদানীর পকেটে এসেছে কোথা থেকে- সে প্রশ্ন সর্বত্র।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে এবং সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, দেশের রাজনীতিতে অল্পদিনের জন্য বহু গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠা হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির শাহ্ আহমদ শফীর ইমেজ ব্যবহার করে আনাস মাদানী ‘জিরো থেকে হিরো’ বনেছেন। একজন দ্বীনি আলেম থেকে হয়েছেন কোটি কোটি টাকার মালিক।

নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে, তথাকথিত ১৩ দফা দাবি নিয়ে রাজপথে অঘোষিত সরকারবিরোধী আন্দোলনে জামায়াতসহ ১৯ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে হেফাজতকে বিপুল পরিমাণ অর্থ দেয়া হয়। এ অর্থ লেনদেন দলের আমির শফীপুত্র আনাস মাদানীর মাধ্যমে হয়েছে বলেও অনেকেই মনে করেন। বিএনপি-জামায়াতপন্থী একাধিক হেফাজত নেতা অর্থের বিনিময়ে আনাস মাদানীকে সিঁড়ি বানিয়ে কওমি আক্বিদাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামকে সরকারবিরোধী শক্তি হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন। তবে আরেকটি গোপন সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে শফীপুত্র আনাস মাদানীকে ‘গোপন সমঝোতার বিশেষ দূত’ হিসেবে ব্যবহার করে হেফাজতের ১৩ দফাসহ অন্যান্য দাবি নিয়ে করে আসা রাজপথের আন্দোলনে আপাতত বিরত রাখতে রাজনৈতিক কৌশল নিয়েছে সরকার। এ সমঝোতাতেও হেফাজতের প্রচার সম্পাদক আনাস মাদানীর আর্থিক লেনদেন হয়েছে বলেও খবর বাতাসে উড়ছে। পাশাপাশি সংগঠনের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরীসহ অন্যান্য নেতাকর্মীদের মামলার অগ্রগতিও একপ্রকার কচ্ছপ গতির। পিতার ইমেজ কাজে লাগিয়ে যেভাবে বিএনপি নেতা তারেক রহমান দুর্নীতির বরপুত্র হয়েছিলেন, সেভাবে হেফাজত আমির শাহ আহমদ শফীর নাম কাজে লাগিয়ে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন আনাস মাদানী। এ ছাড়া তিনি চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় অনেক বহুতল ভবনের মালিকও হয়েছেন।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, বছর ঘুরতে না ঘুরতেই অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। বহুল আলোচিত-সমালোচিত ৫ মে উপলক্ষে কেন্দ্রীয়ভাবে হেফাজতের ব্যানারে কোন অনুষ্ঠান পর্যন্ত করতে পারেনি সংগঠনটি। এ উপলক্ষে সমাবেশের ঘোষণা দিয়েও সরকারী চাপ ও সংগঠনটির আমির শাহ্ আহমদ শফীর অনিচ্ছায় ‘আল আমানাহ ফাউন্ডেশন’ নামে একটি সামাজিক সংগঠনের ব্যানারে আলোচনাসভা ও দোয়া মাহফিল করে দায় সেরেছে হেফাজত। এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হলেও প্রকাশ্যে কেউ কিছুই বলছে না। তবে গত এক বছরের হেফাজতের ইমেজকে কাজে লাগিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন আহমদ শফীর পুত্র এবং সংগঠনটির প্রচার সম্পাদক আনাস মাদানী।

অভিযোগ রয়েছে, ঢাকার মতিঝিল শাপলা চত্বরের ঘটনার পর থেকে সরকারের সঙ্গে এক প্রকার গোপন সমঝোতার মধ্য দিয়ে চলছে হেফাজতের শীর্ষ নেতৃত্ব। সংগঠনের যে কোন সিদ্ধান্ত ও অনুদানের অর্থের হিসাব-নিকাশ সবই শাহ্ আহমদ শফীর তালুবন্দী রয়েছে। বয়সের ভারে ন্যুব্জ হেফাজত আমিরের সব সিদ্ধান্তই নেপথ্যে থেকে নিয়ে থাকেন তার ছেলে ও হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা আনাস মাদানী। ফলে, হেফাজতের ব্যানারে দেশ-বিদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছ থেকে সংগৃহীত যাবতীয় আর্থিক অনুদানও যাচ্ছে আমিরের নাম করে আনাস মাদানীর পকেটে। আর সাংগঠনিক কর্মকান্ড থেকে নিরাপদ দূরত্বে থেকে শফীপুত্র গত এক বছরে শুধু অর্থকড়ির পেছনেই ছুটেছেন। হেফাজতের নামে এসব টাকা এলেও শাপলা চত্বরে হতাহত নেতাকর্মীদের স্বজনদের দিকে না তাকিয়ে নিজের আখের গোছাতেই মাওলানা আনাস মাদানী ব্যস্ত আছেন বলে জোরালো আলোচনা খোদ দলের অভ্যন্তরে।

হেফাজতের বিভিন্ন সূত্র জানায়, নেতাকর্মীদের প্রবল আগ্রহ ও ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও মাওলানা আনাস মাদানীর একক সিদ্ধান্তের কারণে শাপলা চত্বরের ঘটনার বর্ষপূর্তি গত ৫ মে হেফাজতের ব্যানারে কোন কর্মসূচী পালন করা হয়নি। ‘আল আমানাহ ফাউন্ডেশন’ নামে একটি সংগঠনের ব্যানারে সম্প্রতি হাটহাজারী পার্বতী হাইস্কুল মাঠে একটি ইসলামী সম্মেলনের মাধ্যমে কোন রকম দায় সেরেছেন হেফাজত। অপরদিকে, সরকারের নামে বেলুন ফুলিয়ে সরকারকেও খুশি করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

আগে থেকে গত বছরের এ দিনে শাপলা চত্বরের ঘটনায় হতাহতদের স্মরণে হেফাজতের ব্যানারে কর্মসূচী পালনের পরিকল্পনা ছিল দায়িত্বশীল নেতাদের। গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তা নেতাকর্মীদের বিষয়টি জানিয়েও ছিল সংগঠনটি। সমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে আমিরের নির্দেশনা নিতে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কয়েক নেতা শাহ আহমদ শফীর সঙ্গে বৈঠকও করেন। ওই বৈঠকে আমির শফী দোয়া দিবস কর্মসূচী পালনের মাধ্যমে নগরীর আন্দরকিলা মসজিদে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু পরে পাল্টে যায় দৃশ্যপট। এ কর্মসূচী পালনে বাধা হয়ে দাঁড়ান আনাস মাদানী। সরকারের চাপ আছে তাই হেফাজতের ব্যানারে কোন কর্মসূচী পালন করা যাবে না এমন কথা জানিয়ে আনাস মাদানী তার বাবা আহমদ শফীকে এ কর্মসূচীর সিদ্ধান্ত থেকে সরিয়ে আনেন। এরপরও নেতাকর্মীদের প্রবল ইচ্ছা ও সমালোচনার ভয়ে হাটহাজারী উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা নাসির উদ্দিন মুনীরের প্রতিষ্ঠিত ‘আল আমানাহ ফাউন্ডেশনের’ ব্যানারে একটি দায়সারা সমাবেশ করেন আল্লামা শাহ্ আহমদ শফী।

এ প্রসঙ্গে হেফাজত ইসলামের মুখপাত্র ও সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, ‘দলের ব্যানারে কোন কর্মসূচীর উদ্যোগ নেয়া হয়নি। তবে আল আমানাহ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সংগঠনটির নেতাকর্মীরা সমাবেশের আর্থিক সহযোগিতা করছেন বলে তাদের ব্যানারে এ সমাবেশ করা হয়।’

এ ছাড়া অভিযোগ রয়েছে, সরকারের সঙ্গে গোপন আঁতাত থাকায় আনাস মাদানীর প্রভাবে গত বছর সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত ফটিকছড়ির বাবুনগর মাদ্রাসায় হেফাজতের ওলামা মাশায়েখ সম্মেলনের কোন সিদ্ধান্ত কার্যকর করা সম্ভব হয়ে উঠেনি। ওই সম্মেলনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সংগঠনটিকে ঢেলে সাজানো, মজলিশে শূরা গঠন, প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় কমিটি গঠন এবং দলের গঠনতন্ত্র তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। শাপলা চত্বরের ঘটনায় নিহত ও আহতদের তালিকা তৈরি করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল প্রতিটি জেলা কমিটিকেও। কিন্তু এক বছরে এ সবের কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি আমিরের অনীহার কারণে। আর তাকে এ সব কাজে বরাবরই প্রভাবিত করছেন আনাস মাদানী।

গত বছরের ৫ মে আহমদ শফীর ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে শাপলা চত্বরে হতাহতের ঘটনা ঘটে। আর এতে তাদের পরিবারের ভাগ্যের চাকা বন্ধ হয়ে গেলেও গত এক বছরে হেফাজতের কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরার সদস্য আনাস মাদানী ও তার সহযোগীদের সম্পদের চাকা দ্রুত সচল হয়েছে। আনাস মাদানী ও তার সহযোগীরা ইতোমধ্যে হাটহাজারী ঈদগাঁহ মাঠের দক্ষিণ পাশে প্রায় ২০ কাঠা জায়গায় পাঁচটি বাড়ির নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন। কাঠা প্রতি ৪০ লাখ টাকা মূল্যের এই জমিতে ইতোমধ্যে তিন তলা পর্যন্ত নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

তবে আনাস মাদানীর দাবি, পাঁচটি নয় তিনি একটি নির্মাণ করছেন। বাকিগুলোর মালিক তিনি নন। ৫ মের পর হেফাজত আমির আহমদ শফীকে ভক্তদের দেয়া টাকায় এ ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, হাটহাজারী সদরের ঈদগাঁহ মাঠের দক্ষিণে পাশপাশি তৈরি হচ্ছে পাঁচটি ভবন। সেখানে কর্মরত নির্মাণ শ্রমিকরা জানিয়েছেন এই পাঁচটি বাড়ি ছয়তলা পর্যন্ত নির্মাণ করা হবে। আনাস মাদানীর মালিকানাধীন এসব বাড়ির নির্মাণ কাজ দেখাশোনা করছেন তার বন্ধু আহসান উল্লাহ। তার কাছ থেকেই জমিগুলো কিনেছেন আনাস। মাঝে মাঝে আনাস মাদানীও নির্মাণ কাজ দেখতে আসেন বলে জানান শ্রমিকরা।

হাটহাজারীর এসব ভবন ছাড়াও রাঙ্গুনীয়া উপজেলার চন্দ্রঘোনা লিচু তলায় ১১ শতক জমির ওপর রয়েছে চারতলা সুপরিসর ভবন। এক বছর আগেও ভবনটি ছিল একতলা। হেফাজতের ৫ মে’র আন্দোলনের পর এ ভবনটিও চারতলা পর্যন্ত উঠে যায়। বর্তমানে এটির পাঁচতলার নির্মাণ কাজ চলছে। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, ‘মাদানী মঞ্জিল’ নামে এ ভবনটি জামায়াতপন্থী লোকজনের কাছে ভাড়া দিয়েছেন তিনি। সেখানে একটি প্রাইভেট হাসপাতালের কার্যক্রম চলছে। হাটহাজারী বড় মাদ্রাসার ভেতর সপরিবার নিয়ে আহমদ শফীর স্থায়ী বাস হলেও রাঙ্গুনীয়ার শিলক তার জন্মস্থান। সেখানেও রয়েছে একটি বাড়ি ও দুটি দ্বিতল পাকা ভবন সমৃদ্ধ মাদ্রাসা।

নানা অভিযোগ সম্পর্কে জানতে আনাস মাদানীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। তবে তার পক্ষে হেফাজতের মুখপাত্র মাওলানা আজিজুল হক বলেন, ‘হেফাজতের টাকায় হুজুর বা আনাস মাদানীর সম্পত্তি অর্জন করার কথা ঠিক না। তাদের বর্তমান সম্পত্তি ও টাকা পয়সাগুলো হুজুরের ভক্ত ও ছাত্ররা দিয়েছেন। এসব দিয়ে হয়ত আনাস মাদানী বাড়ি-ঘর নির্মাণ করছেন। একই সঙ্গে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের তীব্র নিন্দাও জানান হেফাজতের এই মুখপাত্র।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই জুলাই, ২০১৪ সকাল ৯:৪২

নীল আকাশ ২০১৪ বলেছেন: লাস্ট প্যারাগ্রাফ সম্পর্কে আমার আপত্তি আছে। শফী হুজুর তো কোন পীর না যে তার মুরীদানরা তাকে অর্থ সাহায্য করবে, ার সেই টাকায় নিজে বাড়ি গাড়ি করবে।

তাছাড়া, হাঠাজারী মাদ্রাসার ছাত্ররা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে নিজেরাই দান - সদকা, কোরবানির চামড়া এগুলো সংগ্রহ করে মাদ্রাসা চালানোর জন্য। তাদের অবস্থা যদি সচ্ছলই হত, তবে মাদ্রাসায় তারা নিজেরাই দান করতে পারত, দল বেঁধে ভিক্ষা করতে হতোনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.