![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মামলা, বার্ধক্য ও অসুস্থতাসহ নানা কারণে সক্রিয় হতে পারছেন না বিএনপির শীর্ষ অনেক নেতা। দলের শীর্ষ নেতাদের অনেকেই নানা রোগে আক্রান্ত। চিকিৎসার জন্য তাদের মাঝে মধ্যে যেতে হয় দেশে-বিদেশের হাসপাতালে। অনেকে আবার বার্ধক্যজনিত কারণে বাইরে খুব বেশি চলাফেরা করতে পারেন না। বিভিন্ন মামলায় জেলে আছেন বেশ কিছু নেতা। গ্রেফতার এড়াতে বিদেশেও অবস্থান করছেন কেউ কেউ। অনেকে আবার দেশে থাকলেও রাজনৈতিক কর্মকান্ডে খুব বেশি সক্রিয় নন। এসব সমস্যা থেকে দলকে বের করে আনতে সুস্থ, যোগ্য ও তরুণ নেতৃত্বের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। কেন্দ্র থেকে শুরু করে সারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ কমিটিগুলোতে তরুণদের স্থান দিতে চান তিনি। এজন্য কাজ শুরু হলেও নানা জটিলতায় তা সফল হচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। দলীয় সূত্রমতে, গত বছর সরকার পতন আন্দোলন এবং এ বছর ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও মাঠে নামেননি বিএনপির বেশিরভাগ সিনিয়র নেতা। দলের চেয়ারপারসনের নির্দেশনা সত্ত্বেও অসুস্থতাসহ নানা অজুহাতে ঘর থেকে বের হননি অনেকে। একই অজুহাতে ২২ ও ২৩ এপ্রিল তিস্তা অভিমুখে অনুষ্ঠিত লংমার্চ কর্মসূচিতেও যোগ দেননি শীর্ষ অনেক নেতা। প্রবীণ ও অসুস্থ নেতাদের পাশাপাশি নানা অজুহাতে বর্তমানে দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচিতে দেখা মেলে না শীর্ষ অনেক নেতার। আগামীতে এসব নিষ্ক্রিয় ও অসুস্থ নেতা তাদের পদ থেকে বাদ পড়তে পারেন বলে আভাস দিয়েছে দলীয় সূত্র। এ ব্যাপারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, নেতাদের অসুস্থতা ও বয়স্ক হওয়া একটি স্বাভাবিক বিষয়। এটাকে অন্যভাবে দেখার কোনো সুযোগ নেই। তবে তিন বছর পর যে জাতীয় কাউন্সিল হওয়ার কথা, তা অনেক আগে ডিউ হয়ে থাকায় কিছুটা সমস্যা হয়েছে। সামনে যে কাউন্সিল হবে, তাতে অনেক পরিবর্তন আসবে। এতে তরুণরা যেমন আসতে পারেন, তেমনই নিষ্ক্রিয়, অসুস্থ ও বয়স্করা না-ও থাকতে পারেন। প্রবীণরা উপদেষ্টা পরিষদে যেতে পারেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচি পালনে রাজপথে সক্রিয় না থাকলেও অসংখ্য মামলার শিকার হন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অনেক নেতা কয়েক দফা জেল খেটেছেন। শীর্ষ ৯০ নেতার বিরুদ্ধে দায়ের করা তিনটি মামলার শুনানিতে রোববারও আদালতে হাজির হন অনেকে। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে এখনও জেলে আটক আছেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ফাঁসির দন্ড প্রাপ্ত হয়ে কারাগারে আছেন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বেশ কিছু মামলা বিচারাধীন। চিকিৎসার উদ্দেশ্যে দীর্ঘদিন ধরে তিনি বিদেশে অবস্থান করছেন। বর্তমানে তিনি লন্ডন থেকে মালয়েশিয়ায় গেছেন চিকিৎসার জন্য। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যানদের মধ্যে সৈয়দা রাজিয়া ফয়েজ মৃত্যুবরণ করেছেন। বিভিন্ন মামলার বোঝা নিয়ে বিদেশে অবস্থান করছেন শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ। দীর্ঘদিন কারাগারে আছেন আবদুস সালাম পিন্টু।
বার্ধক্য ও অসুস্থতাও বিএনপি নেতাদের নিষ্ক্রিয়তার অপর কারণ বলে উল্লেখ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এসব কারণে সাংগঠনিক কর্মকান্ডে বেশ ব্যাঘাত ঘটে বলে ওই সূত্রের দাবি। দলীয় সূত্রমতে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির ১৭ সদস্যের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই বার্ধক্যসহ নানা রোগে আক্রান্ত। এছাড়া দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও ১৫ ভাইস চেয়ারম্যানের মধ্যে একজন মৃত এবং অনেকে অসুস্থ। চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের অনেকেরই একই অবস্থা।
বয়স বাড়ার পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে নানা সমস্যায় আক্রান্ত খোদ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। প্রায়ই তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে হয়। শারীরিক দুর্বলতার কারণে তিনি দলীয় সব কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারেন না। ৩১ মে অসুস্থতার কারণেই জিয়াউর রহমানের শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীতে দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ কর্মসূচির দ্বিতীয় দিন যোগ দিতে পারেননি তিনি। পায়ের ব্যথা এবং শারীরিকভাবে ক্লান্ত থাকায় তিনি ওই কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারেননি বলে তার প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বর্তমানে মোটামুটি সুস্থ থাকলেও মাঝে মধ্যে বিভিন্ন সমস্যায় চিকিৎসা নিতে তিনি বিদেশে যান। এ বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি শারীরিক অবস্থার পরীক্ষা ও চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে যান তিনি।
চিকিৎসার জন্য বর্তমানে নিউইয়র্কে অবস্থান করছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও ঢাকা মহানগর আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা। বিভিন্ন সময় শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হন তিনি। কয়েক দিন আগে তিনি নিউইয়র্কে যান। সেখানে স্থানীয় হাপসাতালে শারীরিক চেকআপের পাশাপাশি কিছুদিন চিকিৎসা শেষে ১২ জুন খোকার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। তার সহকারী মনির হোসেন সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ চোখ এবং রক্তচাপ সংশ্লিষ্ট চিকিৎসার জন্য ১৯ মার্চ লন্ডনে যান। এর আগেও তিনি মাঝে মধ্যে বিদেশে গেছেন চিকিৎসার জন্য। দুদকে তার বিরুদ্ধে মামলা চলছে। বর্তমানে রাজনৈতিক কর্মকান্ডে তাকে কম দেখা যাচ্ছে। এপ্রিলে কারাগারে থাকা অবস্থায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। বুকে ব্যথাসহ নানা সমস্যায় তাকে বেশ কিছুদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেলের আইসিইউতে থাকতে হয়। কিছুদিন জামিনে মুক্ত থাকলেও বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন।
বর্তমানে সুস্থ থাকলেও কিডনি সমস্যাসহ নানা রোগে আক্রান্ত মির্জা আব্বাস। ডায়াবেটিস ও পিঠে ব্যথাসহ বেশ কিছু সমস্যা আছে নজরুল ইসলাম খানের। অসুস্থতার কারণে সম্প্রতি বেশ কিছুদিন বাসা থেকে বের হতে পারেননি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আসম হান্নান শাহ। এছাড়া মাঝে মধ্যে নানা সমস্যায় আক্রান্ত হন দলের স্থায়ী কমিটি সদস্য এমকে আনোয়ার, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকারসহ আরও কয়েকজন। বয়স্ক ও অসুস্থতার কারণে যারা রাজনৈতিক কর্মকান্ডে ঠিকমতো সময় দিতে পারেন না, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন ড. এআর গণি, এম শামসুল ইসলাম, তরিকুল ইসলাম, ড. মঈন খান ও নজরুল ইসলাম খান।
বার্ধক্য ও অসুস্থতার কারণে রাজনৈতিক অঙ্গনে খুব বেশি সময় দিতে পারেন না বিচারপতি টিএইচ খান, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনসহ বেশ কয়েকজন। এছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের ৩৪ সদস্যের অনেকে প্রবীণ ও অসুস্থ। কেউ কেউ আবার ব্যবসা-বাণিজ্যসহ ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত। হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া উপদেষ্টা পরিষদের বেশিরভাগ সদস্য বর্তমানে দলীয় কর্মকান্ডে নিষ্ক্রিয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের অভিযোগ।
©somewhere in net ltd.