![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মহান মুক্তিযুদ্ধের উপ সেনাপতি এ কে খন্দকারের বহুল আলোচিত ‘১৯৭১: ভেতরে বাইরে’ এর সব বক্তব্যকে শতভাগ সত্য বলেই উল্লেখ করেছে বিএনপি।এই বই নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে চলছে নানা বিশ্লেষণ ও তোলপাড় । গত কয়েকদিনে দেশের সংবাদমাধ্যম, সামাজিক মাধ্যম, রাজনৈতিক অঙ্গন, অফিস-আদালত, চা-খানা মাঠে ময়দানে একে খন্দকারের এই অভিনব তত্ত্ব ও তথ্যটিই প্রধান আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। আর সে বিতর্ককে পুঁজি করে বিএনপি নেতারাও সব ধরনের ‘উষ্কানি’ দিয়ে চলছেন।
অভিজ্ঞ মহল ও রাজনৈতিক সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, বিতর্কিত বিষয়টি নিয়ে বিএনপি যতটা উচ্ছ্বসিত, ঠিক ততটাই নির্লিপ্ত স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে জিয়াউর রহমানের নামকে উড়িয়ে দেওয়ার প্রসঙ্গে। এর মধ্য দিয়ে দলটির রাজনীতির প্রধানতম স্লোগান ‘স্বাধীনতার ঘোষক জিয়া’ বক্তব্যটি কি তাহলে বাতিল হতে চলেছে এই প্রশ্ন সবার ?
অভিজ্ঞ মহল বলছে, এ কে খন্দকারের এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে নিশ্চিত হয়েছে জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করা অবান্তর। আর কেবল তাই নয় জিয়াউর রহমানকে একজন অনুপযুক্ত ব্যক্তি হিসেবেও চিহ্নিত করেছেন বইয়ের লেখক।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, এ বিষয়ে সামান্য প্রতিবাদ না করে বইয়ের বক্তব্যকে শতভাগ সত্য বলে একে খন্দকারের বক্তব্যকেই মেনে নিচ্ছেন বিএনপি শীর্ষ নেতারা।এবং এর মধ্য দিয়েই বিএনপি’র দীর্ঘ দিনের দাবী ‘ স্বাধীনতার ঘোষক জিয়া’ অবশেষে মিথ্যা প্রমাণিত হতে চলেছে ।
অনেকের মতে, বইটির ব্যাপারে বরং বিএনপির মধ্যে একটি উচ্ছ্বসিত ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দলটির নেতারা জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে গ্রাহ্য না করার ব্যাপারে কোনো প্রতিবাদ জানাচ্ছেন না। বরং তারা বইয়ে ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের শেষে ‘জয় পাকিস্তান’ কথাটি বলা-না-বলা নিয়ে বিতর্কে উষ্কানি দিচ্ছেন।
বিতর্কিত ওই বইয়ের ৬০ পৃষ্ঠায় একে খন্দকার বলেছেন, ‘মেজর জিয়ার ঘোষণাটিকে কোনোভাবেই স্বাধীনতার ঘোষণা বলা চলে না। মেজর জিয়া রাজনৈতিক নেতা ছিলেন না বা ঘোষণা দেওয়ার মতো উপযুক্ত ব্যক্তিও ছিলেন না। যে ঘোষণা চট্টগ্রাম বেতার থেকে তিনি দিয়েছিলেন ঠিক একই ধরনের একাধিক ঘোষণা ২৬ ও ২৭ মার্চ চট্টগ্রাম বেতার থেকে বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক ও ছাত্রনেতাও দিয়েছিলেন, এমন কি বেতারকর্মীরাও একই ধরনের ঘোষণা দিয়েছিলেন।’
এ কে খন্দকারের ‘১৯৭১: ভেতরে বাইরে’ প্রকাশের পরের দিন ৩ সেপ্টেম্বর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের নেতা-কর্মীদেরকে বইটি পড়ার পরামর্শ দেন।
বইটির উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের যে ভাষণকে আওয়ামী লীগ হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবে প্রচার করে আসছিল তার ভিত্তিতে মুক্তিযুদ্ধ আরম্ভ হয়নি।
বহুল বিতর্কিত বইয়ের ওই অংশটি দলের পক্ষে যাওয়ায় গত ৫ সেপ্টেম্বর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত মিলাদ মাহফিলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আবারও কথা বলেন। তিনি বলেন, ৭ মার্চের ভাষণে শেখ মুজিবুর রহমান ‘জয় পাকিস্তান’ বলেছেন- সেটি শতভাগ সত্য। সেদিন রেসকোর্স ময়দানে উপস্থিত থেকে এই ভাষণ আমি নিজেই শুনেছি।
এদিকে , রোববার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ বলেন, এ কে খন্দকার তার বইয়ে যা বলেছেন তা শতভাগ সত্য।
সোমবার দুপুরে অনলাইন গনমাধ্যম বাংলা নিউজের সংবাদ সুত্রে জানা যায় , ‘ ৪৩ বছর আগে শোনা ভাষণের এই অংশটি নিয়ে এতদিন বিএনপি কোনো কথা বলেনি কেন? ‘ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা এ ব্যাপারে কখনো কথা বলিনি সেটি ঠিক নয়। বিএনপির নেতারা এ বিষয়ে অসংখ্যবার কথা বলেছেন।’
এসময় ফখরুল বলেন, ‘১৯৭১: ভেতরে বাইরে’ বইয়ের কিছু অংশে এ কে খন্দকার ইতিহাস ও তথ্যের সন্নিবেশ করেছেন। কিছু অংশে নিজের মতামত ব্যক্ত করেছেন। জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে তিনি তার মতামত ব্যক্ত করেছেন। এ ব্যাপারে আমাদের কিছু বলার নেই। কারণ, মত প্রকাশের স্বাধীনতা সবারই আছে।সোমবার মির্জা ফখরুল আরও বলেন, স্বাধীনতার ঘোষণা প্রসঙ্গে তাদের মতামত দেওয়ার কিছু নেই।সর্বশেষ তিনি বলেন, এ কে খন্দকার তার বইয়ে যে ইতিহাস তুলে ধরেছেন সেটি সত্য না মিথ্যা তা প্রমাণের দায়ভার আমাদের নয়।
প্রসঙ্গত- এ কে খন্দকারের ‘১৯৭১: ভেতরে বাইরে’ বইয়ের ৩২ পৃষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ সম্পর্কে বলা হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণেই যে মুক্তিযুদ্ধ আরম্ভ হয়েছিল, তা আমি মনে করি না। এই ভাষণের শেষ শব্দ ছিল ‘জয় পাকিস্তান’। তিনি যুদ্ধের ডাক দিয়ে বললেন ‘জয় পাকিস্তান’! এটি যে যুদ্ধের ডাক বা স্বাধীনতার আহ্বান, তা প্রচণ্ডভাবে প্রশ্নবিদ্ধ।
©somewhere in net ltd.