নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সবার কথা

আহমেদ রশীদ

আহমেদ রশীদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

নেতার মৃত্যুতে শোকবই খোলা হচ্ছে! জোটে থাকতে চাই না জামাত

২৭ শে অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ৮:৪০

জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের লাশ নিয়ে গতকাল দিনভর ছিল টান টান উত্তেজনা। বোমা বিস্ফোরণ, কফিন লক্ষ্য করে জুতা নিক্ষেপ, ঘৃণা প্রকাশ, বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিবাদ, স্লোগান আর বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যার প্রধান পরিকল্পনাকারী গোলাম আযমের মরদেহ রাজধানীর মগবাজারের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।এর আগে বাদ জোহর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে সাজাভোগী এই যুদ্ধাপরাধীর নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। তার চতুর্থ ছেলে আবদুল্লাহিল আমান আযমী জানাজায় ইমামতি করেন। জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতারা ছাড়াও দলীয় কর্মীরা এতে অংশ নেন। তবে বিএনপির প্রথম সারির কোনো নেতাকে জানাজায় অংশ নিতে দেখা যায়নি। তবে শোক মিছিলে দেখা গেছে বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে। জানাজা শেষে শোকমিছিল করে গোলাম আযমের লাশবাহী গাড়ি মগবাজারে নেওয়া হয়। জানাজার সময় বায়তুল মোকাররমের আশপাশের রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে দেয় পুলিশ। পুরো এলাকায় মোতায়েন ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য।মহান মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনাকারী হিসেবে চিহ্নিত করে গোলাম আযমকে ৯০ বছর কারাদণ্ড দেন যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সাজা ভোগ অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান গোলাম আযম। মৃত্যুর পর তার পরিবারের পক্ষ থেকে জানাজা ও দাফনের স্থান ঘোষণা করা হলে সারা দেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে স্বাধীনতাবিরোধী শীর্ষ এই নেতার জানাজা না পড়ানোর দাবি জানানো হয় বিভিন্ন মহল থেকে। জানাজা প্রতিরোধের ঘোষণা দেয় বেশ কয়েকটি সংগঠন। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যার শিরোমণি গোলাম আযমকে এ দেশের মাটিতে দাফন না করারও দাবি ওঠে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে জাতীয় মসজিদে জানাজা অনুষ্ঠানের ঘোষণায় প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। বাংলাদেশ সম্মিলিত ইসলামী জোটের সভাপতি মাওলানা জিয়াউল হাসান গত শুক্রবার রাতে জানিয়েছিলেন, যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের জানাজা জাতীয় মসজিদে হতে দেওয়া হবে না। এটা প্রতিহত করা হবে। বাংলাদেশ ব্লগার অ্যান্ড অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট ফোরাম এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছিল, বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে বায়তুল মোকাররমের সামনে গিয়ে সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে তারা। এ ছাড়া শাহবাগ আন্দোলন, গণজাগরণ মঞ্চ, জাসদ (ছাত্রলীগ), ছাত্র আন্দোলন, ছাত্র মৈত্রী, ছাত্র ফেডারেশনসহ বিভিন্ন সংগঠন জানাজা প্রতিরোধের কর্মসূচি ঘোষণা দেয়। এ নিয়ে উত্তেজনা দেখা দেয় শুক্রবার রাত থেকেই।বোমা বিস্ফোরণ, আতঙ্ক : গতকাল সকাল থেকেই বায়তুল মোকাররম মসজিদ ও আশপাশ এলাকা ছিল থমথমে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রচুর সংখ্যক সদস্যকে প্রস্তুতি নিয়ে থাকতে দেখা যায়। সকাল ১০টার পর থেকে বিচ্ছিন্নভাবে জামায়াতের কর্মীরা মসজিদের আশপাশে অবস্থান নিতে শুরু করেন। অন্যদিকে বেলা ১১টার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে টিএসসি কেন্দ্রিক সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের নেতা-কর্মীরা অবস্থান নেন। নেতারা সেখানে মাইকে জানাজা ঠেকানোর ঘোষণা দেন। বেলা ১২টার দিকে সম্মিলিত ইসলামী জোটের কর্মীরা জানাজা ঠেকাতে বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটের দিকে অবস্থান নিতে থাকেন। এরই মধ্যে বায়তুল মোকাররম উত্তর ও দক্ষিণ গেট এবং পল্টনে একই সময়ে পর পর ছয়টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। এতে বিরাজমান থমথমে পরিবেশের সঙ্গে যোগ হয় শঙ্কা ও আতঙ্ক। কে বা কারা বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে তা পুলিশ জানাতে পারেনি। বেলা ১২টার দিকে গোলাম আযমের লাশবাহী গাড়ি মগবাজার বাসা থেকে বায়তুল মোকাররমের উদ্দেশে রওয়ানা হয়। এ সময় আÍীয়স্বজন ছাড়াও নেতা-কর্মীদের লাশবাহী গাড়ির সঙ্গে যেতে দেখা যায়। নির্বিঘেœ লাশ বায়তুল মোকাররমে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন রাস্তা বন্ধ করে দেয় পুলিশ। দুপুর সোয়া ১টায় লাশবাহী গাড়ি বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে এসে পৌঁছায়।জুতা নিক্ষেপ : গোলাম আযমের লাশবাহী গাড়ি মসজিদের দিকে আসার সংবাদ পৌঁছে যায় বিক্ষোভকারীদের কাছে। তারা পৃথক পৃথক মিছিল নিয়ে বায়তুল মোকাররমের দিকে রওয়ানা হন। পল্টন পুলিশ বক্সের সামনে তাদের বাধা দেয় পুলিশ। তারা সেখানে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। লাশবাহী গাড়ি যখন মসজিদের দিকে যাচ্ছিল, তখন বিক্ষোভকারীরা দাঁড়িয়ে গোলাম আযমের বিরুদ্ধে স্লোগানের মাধ্যমে ঘৃণা প্রকাশ করছিলেন। লাশবাহী গাড়ি বায়তুল মোকাররম মসজিদের কাছাকাছি পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গেই ভিড়ের মধ্য থেকে কফিন লক্ষ্য করে জুতা নিক্ষেপ করা হয়। নিক্ষেপিত জুতাটি কফিনবাহী গাড়ির ওপর পড়ে। এ সময় জামায়াতের কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। উত্তেজিত কর্মীরা এক পথচারিকে ধরে মারধর করতে থাকেন। পুলিশ দ্রুত এসে আক্রান্ত ব্যক্তিকে তাদের রোষানল থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন এমন বেশ কয়েকজন বলেছেন, ভিড়ের ভিতর থেকে জয় বাংলা বলে কেউ একজন জুতাটি নিক্ষেপ করেন। উল্লেখ্য, এই বায়তুল মোকাররম মসজিদেই ১৯৮১ সালের ১ জানুয়ারি জুতাপেটা করা হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যার এই খলনায়ককে।জানাজা : জোহর নামাজের পর বেলা ১টা ৫০ মিনিটে গোলাম আযমের জানাজা শুরু হয়। তার ছেলে আবদুল্লাহিল আমান আযমী তার জানাজায় ইমামতি করেন। এর আগে জানাজায় অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমার বাবা জীবদ্দশায় জ্ঞাত হয়ে কখনো কাউকে দুঃখ দেননি, কষ্ট দেননি। অথচ তাকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে কারাবন্দী করে রাখা হয়েছিল। আপনারা দোয়া করবেন আমার বাবাকে যেন আল্লাহ শহীদের মর্যাদা দান করেন। জানাজা শেষে বায়তুল মোকাররমের উত্তর ফটক দিয়ে বের করা হয় কফিন। ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মীরা কফিন আনা-নেওয়ার সময় ঘিরে রাখে। কফিনসহ শোক মিছিল মগবাজার অভিমুখে যাত্রার সময় পুরানা পল্টন মোড়ে কয়েকটি ছাত্র ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মীরা গোলাম আযমবিরোধী স্লোগান দিচ্ছিলেন। তবে পুলিশ তাদের কফিনের কাছে ঘেঁষতে দেয়নি।দাফন : বেলা ৩টায় লাশবাহী গাড়ি পৌঁছে মগবাজারে। ৩টা ৩০ মিনিটে পারিবারিক কবরস্থানে গোলাম আযমকে তার বাবার কবরের পাশে দাফন করা হয়। গোলাম আযমের জানাজায় জামায়াত নেতাদের মধ্যে ছিলেন এ টি এম মাসুদ, সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, তাসনীম আলম, জসিমউদ্দিন সরকার, সেলিম উদ্দিনসহ জেলা আমিররা। যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে শামীম সাঈদী, গোলাম আযমের ভগ্নিপতি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাবেক পরিচালক মোফাজ্জল হোসেন খানসহ পরিবারের সদস্যরাও অংশ নেন জানাজায়। জানাজায় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী উলামা দলের সভাপতি হাফেজ আবদুল মালেক, সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ, রুহুল আমিন গাজী, আবদুল হাই শিকদার ও জাহাঙ্গীর আলম প্রধান। ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর মধ্যে ইসলামী ঐক্যজোটের আবদুল লতিফ নেজামী, কামাল উদ্দিন জাফরী, মুসলিম লীগের নুরুল হুদা, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, হামদুল্লাহ আল মেহেদি, শামসুদ্দিন পারভেজ, মাসুদ খান, বিজেপির সালাহউদ্দিন মতিন প্রকাশ, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের এ টি এম হেমায়েতউদ্দিন, বাংলাদেশ কওমি ওলামা পরিষদের চেয়ারম্যান মুফতি ফোরকান মানতেকী প্রমুখ জানাজায় অংশ নেন।বিএনপির প্রতি ক্ষুব্ধ জামায়াত : জামায়াত নেতা অধ্যাপক গোলাম আযমের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ ও নামাজে জানাজায় অংশগ্রহণ না করায় জোট প্রধান বিএনপির বিরুদ্ধে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা। গতকাল বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে বাদ জোহর জানাজার নামাজের আগে ও পরে এবং আগের দিন বিকালে মগবাজারের গোলাম আযমের বাসায় উপস্থিত হাজার হাজার নেতা-কর্মীদের মধ্যে মাঝারি পর্যায়ের নেতারা এ ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ সময় তারা জামায়াতের কেন্দ্রীয় শীর্ষনেতাদের প্রতি বিএনপি জোট ছেড়ে আসার দাবি জানিয়ে বলেন, ‘দুর্নীতিবাজদের ধিক্কার দিয়ে চলে আসুন। এদের সঙ্গে আর নয়। খালেদা জিয়ার আশপাশে এখন আর কোনো ভালো লোক নেই। দুর্নীতিবাজ, চাঁদাবাজ, টাউট-বাটপার প্রকৃতির লোকেরাই এখন তার চতুষ্পার্শ্ব ঘিরে রেখেছে। এদের কথায়ই খালেদা জিয়া নিজে চলেন এবং দল পরিচালনা করেন। কাজেই এই দলের জোটে আর থাকা যায় না। জোটকে ধিক্কার জানিয়ে চলে আসতে হবে। এ সময় সেখানে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক মজিবুর রহমান, ডা. আবদুল্লাহ মো. তাহের, নূরুল ইসলাম মণ্ডল, শিবিরের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম খান মিলন, রেজাউল করিম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনজুরুল ইসলাম ভূইয়া, নূরুল ইসলাম বুলবুল, জায়েদুল ইসলাম, জসিমউদ্দিন সরকার, অ্যাডভোকেট হেলাল উদ্দিন, নূর মো. মণ্ডলসহ জামায়াত ও শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এমনকি গোলাম আযমের ছেলে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আমান আজমীও উপস্থিত ছিলেন। তাদের সামনেই অসংখ্য নেতা-কর্মী দুই দিন ধরে উচ্চৈঃস্বরে এই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির মৃত্যুতে যে দল ন্যূনতম একটু শোক পর্যন্তও প্রকাশ করেনি- তাদের সঙ্গে আবার জোট কিসের?শোকবই : জামায়াতের সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযমের মৃত্যুতে দলের পক্ষ থেকে শোক বই খোলা হবে ২৭ অক্টোবর। গতকাল দলের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ওই দিন শোক বইতে স্বাক্ষর করতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদেরকে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টার মধ্যে মরহুমের বাসভবনে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.